somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরআনিক ব্যাখ্যায় দয়াদর্শন : সূরা বাকারা, আয়াত : ৬

০৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোরআনিক ব্যাখ্যায় দয়াদর্শন : সূরা বাকারা, আয়াত : ৬

কুফুর এবং কুফরির প্রকারভেদ

{৬} إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ

উচ্চারণ : ইন্নাল্লাযিনা কাফারু সাওয়উন আলাইহিম আ-আনযারতাহুম আমলাম তুনযিরহুম লা ইউমিনুন
অর্থ : যারা কুফরি করেছে,তুমি তাদেরকে সতর্ক করো কিংবা না, তাদের পক্ষে উভয়ই সমান। তারা ঈমান আনবে না।

মুত্তাকিদের পরিচয় এবং মুত্তাকিদের প্রতি সুসংবাদ দেওয়ার পর সূরা বাকারার ছয় নম্বর আয়াত থেকে অবিশ্বাসীদের সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই আয়াতে ‘কাফারো’ শব্দ এসেছে, যার অর্থ কুফরি। এখন প্রশ্ন হলো-কুফরি কি? কুফর শব্দের অর্থ কোন কিছু ঢেকে বা লুকিয়ে রাখা। আরবদেশে রাতকে এবং ক্ষেতে বীজ রোপনকে কুফরি বলা হয়। অকৃতজ্ঞতা, না-শুকুরি ইত্যাদিও কুফরি। মুফতি মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান (র.)-র মতে, নবী করিম (স.) কর্তৃক আনীত বিষয়াদি যা অকাট্যভাবে দ্বীনের অঙ্গ বলে প্রমাণিত এ সবের কোন একটি অস্বীকার করাকে কুফরি বলে। (কাওয়াইদুল ফিক, পৃষ্টা ৪৪৫)। মুফতি শফি (র.)ও সমার্থক কথা লিখেছেন, যে সমস্ত বিষয়ে ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন ফরয, সেগুলো অস্বীকার করাকে কুফর বলে। (তফসীরে মাআরেফুল কোরআন)। শায়খুল হাদিস আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (র.) ‘কুফুর’ কে চারভাগে বিভক্ত করেছেন,

১) কুফরে ইনকারী : মুখে এবং অন্তরে সত্যকে অস্বীকার করা। মনে মনে সত্যকে বিশ্বাস না করা এবং মুখে স্বীকারও না করা।
২) কুফরে জুহুদ : হক বা সত্যকে অন্তর দিয়ে সত্য জানা, কিন্তু মুখ দিয়ে স্বীকার না করা।
৩) কুফরে মুআনাদা : সত্যকে সত্য জেনে স্বীকার করার পরও তা গ্রহণ না করা, তার অনুসারী না হওয়া।
৪) কুফরে নিফাক : মুখে সত্যকে স্বীকার করা কিন্তু অন্তরে অস্বীকার করা। (ফায়যুর বারী শহরে বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃ.৭১)।

যে কুফুরি করে তাকে কাফের বলা হয়। প্রকৃত অর্থে কাফের কোন গালি নয়, তা কোন কিছু গোপনকারীদের পরিচয়। তবে প্রত্যেক জিনিষের ভালো-মন্দ নির্ভর করে যে বলে তার নিয়তের উপর। ভালো কথাকেও যদি খারাপ নিয়তে বলা হয় তবে তা শোনতে খারাপ-ই লাগে। সুরা বাকারার ছয় নম্বার আয়াতের সরাসরি অর্থ করলে স্পষ্ট হয়, যারা কুফরি করেছে তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে লাভ নেই, কারণ তারা ঈমান আনবে না। এখানে শব্দ এসেছে ‘এনযার’, যা দিয়ে বুঝায় ঐ দয়াময় সতর্ককারীর সতর্কবার্তা, যা মানুষকে ভুল পথ থেকে রক্ষায় মনে ভয়ের সঞ্চার করে। মুফতি শফি (র.) তফসীরে মাআরেফুল কোরআনে এই ভয় প্রদর্শনকারীর উপমায় মায়ের কথা বলেছেন। নবী ও রাসুলেরা প্রকৃত অর্থে মা থেকেও বেশি দয়ার বিশ্বাসী। তাই তাদেরকে ‘নাযির’ বলা হয়েছে। কারণ, তারা দয়া ও সতর্কতার ভিত্তিতে মানুষকে আগামীর বিপদ থেকে রক্ষার জন্য সর্বদা সতর্ক রাখতে চেষ্টা করেছেন, বেহেস্ত ও দোযখের ভয় দেখিয়েছেন, দাওয়াতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন দায়ী ইলালল্লাহর দায়িত্ব হলো দয়ার পরশে মমতা ও সমবেদনা সহকারে আল্লাহর পথে, সৎ পথে, আলোর পথে মানুষকে দাওয়াত দিবে। হযরত মুহাম্মদ (স.) তাঁর দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে পালনের পর কিছু জেদিÑআহংকারী সত্য জেনেও অহংকারবশত অসত্যে দৃঢ় থেকে গেলে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। আয়াতের ভাষা থেকে যদিও পরিস্কার নয় যে, এই হুকুম সকল কাফিরদের জন্য, না বিশেষ কারো কারো জন্য? যদি তা সবার জন্য হয় তবে আর দাওয়াতী কাজ করে লাভ কি? কোন কাজ যখন করা না করা সমান হয়ে যায় তখন আর এই কাজ করার কোন অর্থ থাকে না। আল্লাহ যখন বলেই দিলেন, ওদেরকে সতর্ক করা, না করা সমান, তখন আর সতর্ক করার কোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু হযরত রাসুল (স.) এবং তাঁর সাহাবীরা তো থেমে থাকেন নি, থেমে নেই আমাদের সময়েও দাওয়াতের কাজ। এই আয়াতের শানে নুজুল থেকে স্পষ্ট, প্রকৃত অর্থে এ আয়াতের হুকুম সব কাফেরের জন্য প্রযোজ্য নয়। এখানে ‘যারা কুফরি করেছে’ বাক্যটা অতীতের খবর। এই খবরে সরাসরি বুঝা যাচ্ছে না কথাটি কাদেরকে ইঙ্গিত করে এবং যাদেরকে এখানে ইঙ্গিত করা হচ্ছে তারা জীবিত না মৃত। কোন কোন কোরআন ব্যাখ্যাকারীর মতে, এই আয়াত তাদের সম্পকের্, যারা কুফরির মধ্যে মারা গিয়েছে। তবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মতে হযরত রাসুল (স.)-এর সময়ে মদিনার উপকণ্ঠে বসবাসকরি ঐ ইহুদিদের তিরস্কার্থে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, যারা জানতো হযরত মুহাম্মদ (স.) সকল মানুষের কল্যাণার্থে প্রেরিত আল্লাহর রাসুল, অথচ অস্বীকার করতো। আর হযরত রাবী ইবনে আনাস (রা.) বলেন, এই আয়াত কাফের দলপতিদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাখ্যাকারী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কথাকে সঠিক বলে মত দিয়েছেন। ‘যারা কুফরি করেছে’ বাক্য দিয়ে বুঝা যায় আগে তারা কুফরির মধ্যে ছিলো না, তারা নতুন করে করছে। আর যদি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-র কথা সত্য হয় তবে ‘যারা কুফরি করেছে’ একথা সঠিক। কারণ ইহুদিরা তো প্রথমে তাওহিদের বিশ্বাসী ছিলো, পরে বিভ্রান্ত হয়ে কুফরি করেছে। আর যদি আমরা ধরে নেই একথাটি সকল ইহুদিদের জন্য, তবু তা সত্য। কারণ, আজও সত্য বলে প্রমাণিত যে, ইহুদিদেরকে সতর্ক করা এবং না করা সমান। তারা ঈমান আনবে না। কেন তাদের জন্য সতর্ক করা, না করা সমান? তা পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে,
(চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪০



সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×