somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরআনিক ব্যাখ্যায় দয়াদর্শন : সূরা বাকারা, আয়াত : ৯, প্রসঙ্গ : মুনাফিক-২

১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোরআনিক ব্যাখ্যায় দয়াদর্শন : সূরা বাকারা, আয়াত : ৯, প্রসঙ্গ : মুনাফিক-২

{৯} عُرُونَ يَخْدَعُونَ إِلاَّ أَنفُسَهُم وَمَا يَشْ نَ آمَنُوا وَمَا يُخَادِعُونَ اللّهَ وَالَّذِي

উচ্চারণ : উখাদিউনাল্লাহা ওয়াল-লাযিনা আমানু ওয়ামা ইয়াখদাউনা আনফুসাহুম ওয়ামা ইয়াসউরুন
অর্থ : তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারদের সাথে প্রতারণা করে। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রতারিত করতে পারে না, তা তারা নিজেও অনুভব করতে পারে না।

আরবী ‘খাদউন’ শব্দের আভিধানিক অর্থ, গোপন করা। যখন কোন ব্যক্তিকে তার অপছন্দনীয় বিষয় গোপন রেখে বিপরীত তার পছন্দনীয় কিছু দিয়ে ধোঁকায় ফেলে, তখন আরবরা এই শব্দ ব্যবহার করে। এই আয়াতে ‘উখাদিউনাল্লাহা’ দিয়ে বুঝানো হয়েছে তারা প্রকাশ্যে আল্লাহর উপর ঈমান আনার দাবী করলেও গোপনে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ এবং আল্লাহকে অস্বীকার করে। এখানে আল্লাহকে ধোঁকা দেওয়ার অর্থ মুফাস্সিরদের মতে আল্লাহর রাসুল (স.)-কে ধোঁকা দেওয়া। কাযি ছানাউল্লাহ পানিপথী (র.)-এর মতে, রাসুলের সাথে মুনাফিকদের এরূপ ব্যবহার করা, যেনো স্বয়ং আল্লাহর সাথেই ব্যবহার করা। কেননা রাসুল (স.) হচ্ছেন আল্লাহর প্রতিনিধি। যেমন আল্লাহ বলেছেন-কেউ রাসুলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করলো।(সুরা নিসা, আয়াত ৮০)। আল্লাহ আরো বলেন, ‘যারা তোমার নিকট বায়আত গ্রহণ করে, তারা তো আল্লাহর বায়আত গ্রহণ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর। (সুরা ফাতহ, আয়াত ১০)।’ (তাফসিরে মাযহারী, প্রথম খণ্ড)। ‘ওয়াল-লাযিনা আমানু’ দিয়ে হযরত রাসুল (স.)-এর সাহাবীদের কথা বুঝানো হয়েছে। মুনাফিকদের কর্তৃক আল্লাহকে ধোঁকা দেওয়ার চিন্তাকেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তাদের দুঃসাহস মনে করেন। কারণ, আল্লাহ তো সকলের অন্তরের খবর রাখেন। তিনি ‘ওয়ামা ইয়াখদাউনা আনফুসাহুম ওয়ামা ইয়াসউরুন’-এর ব্যাখ্যায় বলেন, তারা সাহাবীদেরকেও ধোঁকা দিতে পারতো না, কারণ আল্লাহ পাক মুনাফিকদের অন্তরের গোপন কথা জানতেন এবং তিনি তাঁর হাবিবকে ওহির মাধ্যমে জানিয়ে দিতেন। (তাফসিরে ইবনে আব্বাস, প্রথম খণ্ড)।

এই আয়াতের ভাষ্যানুসারে মুনাফিকদের কর্তৃক প্রতারিত হয়েছেন আল্লাহ এবং ঈমানদারা। অথচ আল্লাহকে ধোঁকা দেওয়ার সাধ্যতো কারো নেই, যা ইতোমধ্যে আমরা আলোচনা করেছি। সাইয়েদ কুতুব (র.) এই আয়াতের তাফসিরে আরেকটি মহাসত্যের দিকে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সেই মহাসত্য হলো, আল্লাহ ও ঈমানদারদের মধ্যকার ঘণিষ্ট সম্পর্ক। তিনি বলেন, এই সম্পর্ককে আল্লাহ এত নিকটবর্তী ও এত ঘণিষ্ট আকারে চিত্রিত করেন যে, তাদের অবস্থানকেই তিনি নিজের অবস্থান এবং তাদের পরিস্থিতিকেই তিনি নিজের পরিস্থিতি বলে অভিহিত করেন। মুমিনদেরকে তিনি নিজের কাছে টেনে নেন, তাদেরকে তাদের সকল দায়দায়িত্ব সহ আপন করে নেন, তাদের শত্র“কে তিনি নিজের শত্র“ মনে করেন, তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রকে তিনি নিজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেন। এটা তাঁর পরম অনুগ্রহ ও মহান সখ্যতা। ( ফী যিলালিল কোরআন, প্রথম খণ্ড)।

এই আয়াতে মুনাফিকদের একটি চরিত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে। এখানে ‘উখাদিউ’ দিয়ে যে চরিত্রের বর্ণনা করা হয়েছে তা অবশ্যই নিফাকের অন্তভূক্ত। এই আয়াতের মূল কথা হলো : ওরা অন্তরে কুফরি রেখে মুখে ঈমানের কথা বলে এবং লোক দেখানো আমল করে। তাদের এই কর্মটি বিশ্বাসগত নিফাক, যা কুফরি থেকেও মারাত্মক। এই আয়াতগুলোতে যে মুনাফিকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা হয়তো মদিনার এই লোক যারা মুসলমানদের কাছে এসে সুযোগ-সুবিধা লাভের আশায় বলতো আমিও তো ঈমান এনেছি আল্লাহ ও কিয়ামতের প্রতি, আমি প্রকৃত মুসলমান। আর যখন সে অমুসলিমদের কাছে যেতো তখন বলতো, ‘আমি মুসলমান নয়। আমি তো মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিতে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানের ঘোষণা দিয়ে থাকি।’ তখন ওরা মুসলমানদের বিভিন্ন তথ্য শত্র“দেরকে সরবরাহ করতো। হযরত রাসুল (স.)-এর সময়ে মুনাফিক চরিত্রের লোক বেশিরভাগ ছিলো ইহুদি সম্প্রদায়ের। তখন বিভিন্ন কারণে মুনাফিক শ্রেণীর মধ্যে অন্যরা ছিলো খুব কম। এখানে প্রথম কারণ হলো, রাসুলের বসতি ছিলো মদিনায়। মদিনার বেশির ভাগ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে নিয়েছিলো কিছু ইহুদি ছাড়া। তখন মদিনায় অনেক ইহুদির বসতি ছিলো। অবশ্য তাদেরও কেউ কেউ মুসলান হয়েছিলো। সেই সময় জন্মগত মুসলমানের সংখ্যা না-থাকায় মুসলিম জনগোষ্ঠিতে মুনাফিক হওয়ার সম্ভবনা ছিলোনা। আর তখন যারা ইসলাম গ্রহণ করতো তারা আলো-অন্ধকার বুঝে-ই করতো। ঐতিহাসিকভাবে ইহুদিরা সবসময়-ই স্বার্থপর এবং অর্থলোভী প্রকৃতির। মদিনায় মুসলমানদের প্রভাব-প্রতিপত্তি যখন বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন স্বার্থপর ইহুদিদের কিছু লোক প্রকাশ্যে মুসলমান হয় স্বার্থ হাসিলের জন্য। কিন্তু তারা গোপনে শত্রুদের কাছে সকল তথ্য সরবরাহ করতে থাকে। মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবিবকে ওহীর মাধ্যমে এই মুনাফিকদের সম্পর্কে সতর্ক করে কিছু আয়াত অবতির্ণ করেন, যা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। হযরত রাসুল (স.)-এর পর তো আর ওহী আসবে না। যুগযুগে মুনাফিক চিহ্নিত করতে হবে এই আয়াতগুলোর চরিত্রকে পর্যালোচনা করে।
আমরা পযবেক্ষকের দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করলে দেখবো, হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর সময় থেকেও বেশি রঙবেরঙের মুনাফিক বর্তমান সময়ের পরতে পরতে রয়েছে। কোরআন বর্ণিত মুনাফিক চরিত্রগুলোতে দৃষ্টি দিয়ে যদি দেখি তাবে দেখবো নিজেরাও ক্ষেত্র বিশেষ একেকজন মুনাফিক হয়ে আছি- কোথাও ইচ্ছেকৃত, কোথাও অনিচ্ছাকৃত। তবে অনিচ্ছাকৃত বিষয়গুলো ক্ষেত্রবিশেষ প্রকারে ভিন্ন হতে পারে।
উদাহরণের জন্য একটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করছি, বর্তমান সমাজে যে আমাদের নেতারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় মসজিদ, মন্দির, গির্জা, টেম্বল, মাদরাসা, ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ কিংবা সিরাত মাহফিল, পূঁজা-পর্বন ইত্যাদিতে গিয়ে ভোটারদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন কিংবা বিভিন্ন কর্ম-কাণ্ড করেন তাদের সবগুলো বক্তব্যকে একত্রিত করে মিল-বেমিলের বিবেচনা করলে সেই সময়ের মুনাফিকদের থেকে আমাদের নেতাদের চরিত্র কতটুকু উন্নত তা বিচার-বিবেচনার বিষয়। ঐসব মূহুর্তে মসজিদে-মাদরাসায় তাদের কারো কারো বক্তব্য শোনলে মনে হয় এই বুঝি ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়ে যাচ্ছে, আবার কারো কারো বক্তব্যে মনে হয়, কমপক্ষে এই ব্যক্তি কর্তৃক আর ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না। আর অনেককে তো মনে হয়, তিনি আল্লাহর ওলি। একই ভাবে তারা রাম, কৃষ্ণ, মনু কিংবা লোকনাথের আদর্শ প্রতিষ্ঠার বক্তব্য দেন মন্দিরে কিংবা পূঁজোতে গেলে। আবার যখন তারা গির্জায় যান তখন তারা মেরি ও খ্রিস্টের আদর্শ প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত প্রাণ। কেউ যদি বিশ্বাস থেকে সর্বধর্মের মানুষের মঙ্গল কামনা করতে এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন তবে আমরা তাঁকে সাধুবাদ জানাই, সে যেধর্মেরই হোক। একজন মানুষ নিজের ধর্মের প্রতি পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা রেখে অন্যান্য ধর্মের লোকদের মঙ্গলার্থে কাজ করতেই পারেন। আর এমন কাজ করা হযরত মুহাম্মদ (স.) এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও। এটাই দয়াদর্শন, এটাই জ্ঞান, বুদ্ধি, কর্ম এবং প্রেমের আন্দোলন। তবে কারো পক্ষেই সর্বধর্মের আদর্শের বিশ্বাসী হয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। যারা বক্তব্যে বলেন এক, বিশ্বাসে ভিন্ন, তারা-তো অবশ্যই মুনাফিক। যারা রাজনৈতিক মাঠে বক্তব্যে বলেন আমরা তো অসাম্প্রদায়িক, আর ‘এ্যানিমি প্রপাটি এক্ট’-এর ফাঁকে হিন্দু অসাহায় মানুষদের সম্পদ দখলে থাকেন সবার আগে, নিজের উদ্যোগে বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টিতে লাখ লাখ টাকা খরচ করেন, আবার ওরা যখন ইসলাম বিরোধী দেশী-বিদেশী শক্তির কাছে মধু দেখেন তখন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ইসলাম আর মুসলমানদের যত প্রকার ক্ষতিকর দিক আছে সবই সরবরাহ করেন, তারা কি মুনাফিক নয়? যারা ভোটের জন্য, ক্ষমতার জন্য, অর্থের জন্য হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ইত্যাদি সবধর্মের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে থাকেন-তাদেরকে আমরা কি বলতে পারি মুনাফিক ছাড়া? প্রকৃত অর্থে মুনাফিকদের কোন ধর্ম নেই। স্বার্থিক কারণে যেকোন ধর্শের লোক মুনাফিক হতে পারে। আমাদের সমাজে মুনাফিক চরিত্রের অনেক হিন্দু নেতাকে আমরা জানি, যারা দেবত্ব সম্পত্তি দখলের জন্য মুসলিম ভূমিখেকুদের সাথে একাকার। আমাদের সময়ে সিলেটের গোপাল টিলার মামলা খুঁজলে বিষয়টি অনেকের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে। সিলেট বন্দর বাজারে রাজা রামমোহন রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ব্রহ্ম মন্দির নিয়েও চলছে একশ্রেণীর ভূমিখেকু হিন্দু নেতাদের মৌন প্রয়াস। আরো অনেক ঘটনা আমাদের চোখের সামনে আছে, আর ইতিহাসের অক্ষরগুলোর স্বাক্ষীর কথা বাদই দিলাম। ক্ষমতার স্বার্থে ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ইন্দন কারা দিয়েছেন সেই বৃটিশযুগে? কারা পাকিস্তান হওয়ার পর ‘এ্যানেমি প্রপটি এ্যাক্ট’-এর সুযোগ-সুবিধায় হিন্দুদের সম্পত্তি ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পর পাকিস্তানে এবং ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের পর বাংলাদেশে দখল করেছে? একটু চিন্তা করে, একটু পর্যবেক্ষণ করে বলুন, তারা কি ওরা নয় যারা মসজিদে গিয়ে ঘোষণা করেন আল্লাহ-রাসুলের নীতি-আদর্শ ছাড়া সমাজে সুখ-শান্তি-উন্নতি সম্ভব নয়, আবার মন্দিরে গিয়ে বলেন রাম-কৃষ্ণের মিশন বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই? তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির জন্য বড় বড় কথা বলে তারাই কি আবার ভোট, জায়গা দখল কিংবা দলীয় নেতৃত্বের কোন্দলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি ধ্বংসে দুদিকে ইন্দন দিচ্ছেন না? বিষয়গুলো কেউ কি পর্যবেক্ষনে নিয়ে এসে বিচার-বিশ্লেষণ করে ভেবেছেন? এই সুবিধাবাদিরা পোশাকে, চলায়, হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ইত্যাদি হলেও তাদের মূল পরিচয়; তারা মুনাফিক। সবাই একটু অনুসন্ধান করে দেখুন, বাংলাদেশে বেশির ভাগ শত্র“ সম্পত্তি দখল করেছে যারা তারা কি সেকুল্যার হিন্দু কিংবা মুসলিম নেতাদের কেউ নয়? নাম বলবো না, প্রত্যেকে নিজের আশপাশে খবর নিয়ে সত্যতা পরীক্ষা করতে পারেন।
আমি অন্য ধর্মের মুনাফিকদের আলোচনায় এখানে যাচ্ছি না, আমি এখানে কোরআনের সাথে সম্পর্কিত লম্বা দাঁড়ি, লম্বা পাঞ্জাবী, হাতে তাসবিহ, আর মসজিদে গিয়ে নামায পড়ে কপালে সেজদার দাগ বসানোর পরও যারা মুনাফিকি চরিত্রের, তাদের কথা বলতে চাই। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, শুধু লম্বা দাঁড়ি, লম্বা পাঞ্জাবী, হাতে তাসবিহ, আর মসজিদে গিয়ে নামায পড়ে কপালে সেজদার দাগই যদি হতো ইসলাম আর মুসলমান হওয়ার লক্ষণ তবে ‘আব্দুল্লাহ বিন উবাই বিন সলূল’ সবার আগে মুসলমান বা ইসলামিক হয়ে যেতো। বিষয়টা ভেবে দেখুন, মদিনার মসজিদে ইমাম স্বয়ং রাহমাতুল্লিল আলামিন (স.), মুয়াজ্জিন হযরত বিলাল (রা.), চারদিকে আবু বকর, ওমর, আলী, ওসমান প্রমূখ অসংখ্য সাহাবী, মধ্যখানে আব্দুল্লাহ বিন উবাই বিন সলূল নামাযে, যার মাথায় লম্বা পাগড়ি, গায়ে লম্বা জুব্বা, তুতায় লম্বা দাঁড়ি, মাথায় নামাজের দাগ, সে মদিনার সর্দার, এমন কি তার ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ (রা.)ও হযরত নবী (স.)-এর বিশিষ্ট্য সাহাবী, অথচ কোরআন স্পষ্ট করে বলছে আব্দুল্লাহ বিন উবাই বিন সলূল মুনাফিক এবং জাহান্নামী। এই ঘটনা দিয়ে কি দলিল করে? নিশ্চয় মুসলমান কিংবা ইসলামিক হওয়ার জন্য কর্মের সাথে বিশ্বাসের মিল থাকতে হবে এবং কর্ম ও বিশ্বাস হতে হবে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে, হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর মতো। তিনি কার ছেলে, কার বাপ, কি পোশাকে তার দেহ ঢাকা, কত লম্বা পাগড়ি ইত্যাদির মধ্যে ইসলাম নয়। ইসলাম হলো কোরআন-হাদিস পূর্ণাঙ্গ মেনে চলার মধ্যে।
আমি আগেই বলেছি, অন্যধর্মের মধ্যে একই রোগ থাকার পরও আমি তাদেরকে নিয়ে এই মূহুর্তে আলোচনায় না গিয়ে আমাদের মুসলিম সমাজগুলোর চরিত্র নিয়ে কিছু আলোচনা করতে চাই। বর্তমানে আমাদের মধ্যে মুনাফিকি এতো ব্যাপকভাবে ঘর-বাড়ি তৈরি করেছে যা দেখলে স্বয়ং আব্দুল্লাহ বিন উবাই বিন সলূলও হয়তো লজ্জিত হতো। অথচ মুনফিকি বিষয়ে আমরা যেনো আজ নির্লজ্জ প্রায়। কোরআন পাঠে স্পষ্ট যে, মদিনার ইহুদিদের মনে এই লজ্জাবোধ ছিলো বলেই তারা গোপনে মুনাফিকি করতো। কিন্তু বর্তমানে আমাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক ময়দানে ওয়াদা ভঙের পর মাইকের সামনে মঞ্চে কিংবা মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।’ অথচ একথা চূড়ান্ত একটি মুনাফিকি। আপনি ওয়াদা করলে অবশ্যই রাখতে হবে। ইসলামে ওয়াদা ওয়াদাই, হোক তা রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তিগত। বরং ব্যক্তিগত ওয়াদা থেকে রাজনৈতিক ওয়াদা রক্ষা করার প্রতি ইসলাম বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। রাজনীতিতে শেষ কথা অবশ্যই থাকতে হবে। কাউকে ধোঁকা দেওয়া যাবে না।

যারা জেনে বা না জেনে সত্য গোপন করে তারা তো কোরআনের ভাষায় কাফের। একজন মানুষ যদি না বুঝার কারণে কাফের থাকে তার জন্য মানুষ হিসেবে দুঃখ করা যায়, তাঁকে সত্যের দাওয়াত দেওয়া যায়, কিন্তু তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ কোরআনিক দর্শনের পরিপন্থী। কোরআনের কথা হলো, যে বুঝেনি তাকে বুঝাতে হবে। তাকে অবশ্যই গালি দেওয়া যাবে না, তার উপর আঘাত করা যাবে না। সে যদি না বুঝে আঘাত করে তবে তাকে সুযোগ থাকলে নিজের ভুল বুঝার সুযোগ করে দিতে হবে। আর যদি সুযোগ না থাকে তবে অন্তরে দয়াকে জাগিয়ে আত্মরক্ষায় যেতে হবে। যদি কেউ ইচ্ছেকৃত কিংবা পরিকল্পিত আঘাত করে তবে সে জালেম হয়েগেলো। জালেম যে ধর্মের-ই হোক তাকে প্রতিরোধ করা অবশ্য জরুরী, ইসলামিক আইনের (শরিয়তের) ভাষায়Ñএই প্রতিরোধ ফরযে আইন। কেউ যখন জালেম হয়ে যায়, প্রকৃত অর্থে তার আর কোন ধর্মীয় পরিচয় থাকে না। কোন মুসলমান কর্তৃক কোন মুসলমানকে আঘাত বা ধোঁকা দেওয়া ইসলাম যেমন সমর্থন করে না, তেমনি সমর্থন করে না কোন মুসলমান কর্তৃক অমুসলমানকে আঘাত বা ধোঁকা দেওয়াকে। বিষয়টা পরিস্কার যে, ইসলাম কোন জাতীয়তাবাদের নাম নয়, ইসলাম নিচক কোন ধর্মের নামও নয়। ইসলাম একটি আদর্শ-ইসলাম একটি দ্বীন। দ্বীন হলো ইহকাল ও পরকালের জীবন ব্যবস্থার নাম। মুসলমান তাঁকে বলা যাবে যে এই দ্বীন বা আদর্শের নিয়ম-নীতির জানে এবং মানে। স্মরণ রাখতে হবে, শুধু জানার নাম ইসলাম নয়, জানা এবং মানা এই দুয়ের সমন্বয়ে ইসলাম। মানুষের অধিকারের ক্ষেত্রে ইসলামের কাছে গুরুত্ব ধর্মের নয়, বিষয় হলো ন্যায় এবং ইনসাফের। যে লোক ন্যায় বা ইনসাফের বিরোধী, তার বিরুদ্ধেই ইসলামের যুদ্ধÑজিহাদ। আবারও বলছি, ন্যায় কিংবা ইনসাফের ক্ষেত্রে তার ধর্ম পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয়। হযরত রাসুল (স.)-এর সময়ে মুসলমানদের মধ্যে কোন জালেম ছিলো না। ছোট ছোট কিছু ঘটনা ঘটে গেলেও তা মূহুর্তের মধ্যে দমন করে দেওয়া হয়েছে।

অনেকের ধারণা, সর্বদা কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরযে আইন। বিষয়টা এভাবে নয়, জিহাদের বিধান মূলত এসেছে অন্যায়-অত্যাচা-জুলুম-শোষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে। হযরত নবী করিম (স.)-এর যুগে মুসলমানদের কর্তৃক অন্যায়-অত্যাচা-জুলুম-শোষণ ইত্যাদি গজিয়ে উঠেনি এবং উঠার সুযোগও হয়নি। তাই প্রয়োজন দেখা দেয়নি সেই সময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জিহাদের। এখন যদি কেউ একথাকে দলিল করে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, জামাল নাসের, হামিদ কারযায়ি প্রমূখ মার্কা কোন শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জিহাদকে অনৈসলামিক মনে করেন তবে তা হবে মারাত্মক ভুল। অন্যায় যে করবে তাকেই প্রতিরোধ করা ইসলামের বৈশিষ্ট্য। ইসলামে বাপের অপরাধে সন্তানকে কিংবা সন্তানের অপরাধে বাপকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। যে সকল কারণে হযরত নবী করিম (স.) কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জিহাদ করেছেন কিংবা করার অনুমতি দিয়েছেন ঐসব কারণ যার মধ্যে পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ করা ইসলামের বিধান। হোক সে মুসলিম কিংবা অমুসলিম। বর্তমানে পোশাকধারী, নামধারী কোন মুসলমানের মধ্যে যদি ঐ চরিত্র পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জিহাদ করাও ইসলামে জরুরী। ইসলামে অন্যায় করে একই দল বা ধর্মের বিশ্বাসী দাবীর প্রেক্ষাপটে কারো রক্ষার সুযোগ নেই। মদিনার সেই ঘটনা অনেকের-ই হয়তো জানা, একজন মুসলমান একজন অমুসলমানের জমি দখল করেছিলো এ্যানিমি বা শত্র“ সম্পত্তি মনে করে। মুসলিম লোকটির বিশ্বাস ছিলো, এখন তো মদিনায় মুসলিম শাসন চলছে, এখন-ই তো সময় শত্রুর সম্পত্তি দখলের, যেমন ঘটেছিলো ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের পর বাংলাদেশে। যদিও ইসলামে ‘এ্যানিমি প্রপার্টি এক্ট’-এর কোন সুযোগ নেই, তবু সুবিধাবাদি মুনাফিক শাসকেরা ইসলামের কথা বলে এসব আইন পাশ করে নেয় অন্যের জমি-সম্পত্তি দখলের জন্য। পাকিস্তানের মুনাফিক সেক্যুলার সরকারের চিন্তার একজন ছিলো সেই সময় মদিনায়, সে মুসলিম হওয়ার সুযোগে একজন অমুসলিমের জমিনের কিছু অংশ দখল করে নিলো। অমুসলিম ভদ্রলোক হযরত রাসুল (স.) এর কাছে এসে বিচার দিলেন। নবী করিম (স.) মুসলমানকে ডেকে বললেন, অমুসলিম ভদ্রলোকের জমি ফেরত দিতে। এই ন্যায় বিচার মুসলমান ভদ্রলোক মানতে পারলো না। সে গেলো হযরত ওমর (রা.)-র কাছে। তার বিশ্বাস ছিলো, ওমর তো ইসলামের জন্য ধারালো তলোয়ার, ওমর তো সর্বদা ইসলাম আর মুসলমানের স্বার্থে প্রাণদানেও প্রস্তুত, বিষয়টা নিয়ে ওমরের কাছে গেলে নিশ্চয় তিনি অমুসলিমের পক্ষে রায় না দিয়ে দলীয় চিন্তা থেকে মুসলমানের পক্ষে রায় দিবেন। খুব আনন্দে মুসলিম ভদ্রলোক অমুসলিম ভদ্রলোককে নিয়ে হযরত ওমরের বাড়ি গেলেন। অমুসলিম ভদ্রলোক নিরিহপ্রকৃতির, তিনি না গিয়ে উপায় নেই। দু’জন ওমরের কাছে গিয়ে বিস্তারিত ঘটনা বললেন। সাথে তাও বললেন, হযরত রাসুল (স.) কি বলেছেন। ওমর নিজেও হযরত রাসুল (স.)-এর রায় অনুসারে মুসলমানকে বললেন অমুসলিমের জমি ফিরিয়ে দিতে। আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক মাস্তানরা যেমন অন্যায় দাবী আদায়ে নিজ দলের নেতাদেরকে বলেন, ‘লিডার, আমি তো আপনার দলের, আপনি কি আমার পক্ষে কিছু করবেন না, দল ক্ষমতায় থাকতে যদি আমরা কিছু সুযোগ সুবিধা না পাই তবে দলে থেকে লাভ কি? ইত্যাদি, তেমনি মুসলিম ভদ্রলোক হযরত ওমরকে বলতে শুরু করলেন-হে ওমর, আমি আর তুমি দুজনই মুসলমান, ঐ লোক তো অমুসলিম, তুমি আমার পক্ষে কিছু একটা করো। ভদ্রলোকের কথা শোনে ওমর ঘরে গেলেন, তলোয়ার নিয়ে এসে মুসলিম ভদ্রলোককে কিছু একটা করলেন। হযরত রাসুল (স.) এর কাছে সংবাদ গেলো ওমর একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন। হযরত রাসুল (স.) ওমরকে ডেকে বিষয় জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, হে প্রিয় রাসুল, আমি কোন মুসলমানকে হত্যা করিনি, আমি কোন মুসলমানকে হত্যা করতে পারি না। সে একজনের জমি দখল করেছে, আপনি বিষয়ের একটি ফয়সালাও দিয়েছেন, কিন্তু সে মানেনি। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স.) এর ফয়সালা মানে না সে তো মুসলমান নয়। এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট, যে আল্লাহ এবং রাসুল (স.) এর ফয়সালা মানে না সে পোশাকদারী, নামধারী হলেও মুসলমান নয়। আর সেকথাও স্পষ্ট যে, এ্যানেমি প্রপাটি এক্টের নামে হিন্দুদের জমি দখলও ইসলামে বৈধ নয়। যারা এমন কাজ করে তারা মূলত আল্লাহ ও রাসুলের ফয়সালার অমান্য করে। তারা অবশ্যই মুনাফিক। মুনাফিক বা কাফির কোন জাতী কিংবা গোষ্ঠির নাম নয়, তা হলো নিফাক কর্মের নাম। যে ব্যক্তির মধ্যে নিফাক পাওয়া যাবে সে মুনাফিক, আর যার মধ্যে কুফরি পাওয়া যাবে সে কাফের। কেউ যদি মুসলমান হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকে তবে সে মুনাফিক। মুনাফিকিকে কোরআন বলেছে ধোঁকা, আর কোরআনের ভাষায়-‘ওয়ামা ইয়াখ-দায়ূনা আনফুসাহুম ওয়ামা ইয়াসউরুন’ অর্থাৎ যে ধোঁকা দিতে চেষ্টা করে মূলত সে নিজেই ধোঁকা খায়, নিজে জানে না। ‘শাআরুন’ থেকে ‘ইয়াসউরুন’ হয়েছে, ‘শাআরুন’ বলা হয় ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কোন কিছু অবগত হওয়াকে। এই আয়াতে ‘ইয়াস-উরুন’ দিয়ে মুনাফিক শ্রেণীর অচেতন ও বোধশূন্যতা বুঝানো হয়েছে।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×