somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিতরার কিছু বিধান

১৭ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফিতরার কিছু বিধান
সৈয়দ মবনু

* ফিতরা কার ওপর ফরয বা ওয়াজিব
-------------------------------------
মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক প্রত্যেক নারী ও পুরুষের জন্য ফেতরা দেওয়া ইমাম আবু হানিফা (রা.)-এর মতে ওয়াজিব। ইমাম শাফি (র.), ইমাম মালেক (র.), ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-এর মতে ফরয। ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর মতে এরূপ সম্পত্তি বর্ধনশীল হওয়া জরুরী নয়। মালিকে নিসাব তিনি হবেন, যিনি প্রয়োজনীয় ব্যয় বাদে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা কিংবা সাড়ে সাত তোলা সোনার মালিক। যা আধুনিক পদ্ধতির মেট্রেক হিসাবে রূপা ৬১৩ গ্রাম এবং সোনা ৮৮ গ্রাম হবে। কারো কাছে যদি সব মিলিয়ে রূপ কিংবা সোনার হিসাব পরিমাণ অতিরিক্ত সম্পদ থাকে তিনি মালিকে নিসাব হবেন। আর পশুর হিসাব হলো, গরুর ক্ষেত্রে ৩০টি, ছাগলের ক্ষেত্রে ৪০টি এবং উটের ক্ষেত্রে ৫টি মালে নিসাব বলে গণ্য হয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস, হযরত নবী করিম (স.) সদকাতুল ফেতর হিসেবে মুসলিম দাস, স্বাধীন ব্যক্তি, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবার উপর এক সা’ খেজুর কিংবা এক সা’ যব নির্ধারণ করেছেন। এবং সাথে সাথে তিনি আদেশ করেছেন, মুসলমানেরা যেন ঈদের যামায়াতে যাওয়া আগে তা দান করে যায়। ( বোখারি, হাদিস-৯৯৩)।

* ফিতরা কি দিয়ে আদায় করা হবে?
---------------------------------------
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, হযরত নবী করিম (স.)-এর সময়ে আমরা ঈদুল ফেতরের দিনে সদকায় ফিত্র বাবদ এক সা’ পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য দান করতাম। তখন আমাদের খাবার ছিলো যব, কিশমিশ, পনির ও খোরমা। (বোখারি, হাদিস-৯৯৮)। এই হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রত্যেক জাতি ফিত্রা আদায় করবে তার নিজের খাদ্যদ্রব্য দিয়ে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) হযরত রাসুল (স.)-এর সময় তাই করতেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, হযরত নবী করিম (স.) সদকায়ে ফেতর বাবত এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ যব প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে হযরত আমীর-এ মুয়াবিয়া (রা.)-এর যুগে এসে লোকেরা দু’মুদ গম নির্ধারণ করেছেন। (বোখারী, হাদিস-৯৯৬)। অন্য হাদিসে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, আমরা সাদকাতুল ফেতর বাবদ মাথাপিছু এক সা’ পরিমাণ খাবার আটা অথবা এক সা’ যব, অথবা এক সা’ খেজুর, অথবা এক সা’ পনির, অথবা এক সা’ কিসমিস দিতাম। (বোখারী, হাদিস-৯৯৫)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, হযরত রাসুল (স.) মুসলিম নারী-পুরুষ, স্বাধীন-ক্রিতদাস সবার উপর সদকায়ে ফেতর এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ যব নির্ধারণ করে দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ের লোকেরা অর্ধ সা’ গমকে এক সা’ খেজুরের সমান ধরে নিয়েছে। (বোখারি, হাদিস-৯৯৯)।
বিভিন্ন সূত্র থেকে ইমাম বোখারি লিখেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সব সময় খেজুর দান করতেন। একবার মদিনায় খেজুর সংকট দেখা দিলে তিনি যব দান করেন।
এই হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট, সাহাবায়ে কেরাম (রা.) হযরত নবী করিম (স.)-এর নির্দেশে ফিতরা হিসাবে নিজেদের উত্তম খাদ্যদ্রব্য দান করতেন। গম, গমের আটা, যব, যবের আটা, খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি দিয়ে ফিতরা আদায় করা যাবে। কেউ যদি অন্য খাদ্যদ্রব্য দিয়ে আদায় করতে ইচ্ছা করেন তবে তিনি যব, কিশমিশ, পনির, খোরমা ইত্যাদি দিয়ে ফিতরার মূল্য নির্ধারণ করে তা দিতে হবে।
* ফিতরার পরিমাণ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, আমরা সদকাতুল ফেতর বাবদ এক সা’ যব দিতাম। ( বোখারি, হাদিস-৯৯৪)।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, হযরত নবী করিম (স.)-এর সময়ে আমরা ঈদুল ফেতরের দিনে সদকায় ফেতর বাবদ এক সা’ পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য দান করতাম। তখন আমাদের খাবার ছিলো যব, কিশমিশ, পনির ও খোরমা। (বোখারি, হাদিস-৯৯৮)। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, হযরত নবী করিম (স.) সদকায়ে ফেতর বাবত এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ যব প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে হযরত আমীর-এ মুয়াবিয়া (রা.)-এর যুগে এসে লোকেরা দু’মুদ গম নির্ধারণ করেছেন। (বোখারি, হাদিস-৯৯৬)। অন্য হাদিসে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, আমরা সাদকাতুল ফেতর বাবদ মাথাপিছু এক সা’ পরিমাণ খাবার আটা অথবা এক সা’ যব, অথবা এক সা’ খেজুর, অথবা এক সা’ পনির, অথবা এক সা’ কিসমিস দিতাম। (বোখারি, হাদিস-৯৯৫)। এক সা’ হলো তিন সের এগারো ছটাক। চার মুদ-এ হয় এক সা, সুতরাং দু মুদ হলো এক সের সাড়ে তের ছটাক।
ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর মতে সদকায়ে ফেতর-এর পরিমাণ জনপ্রতি অর্ধ সা’ অর্থাৎ দেশীয় ওজনে এক সের সাড়ে তের ছটাক। ইমাম শাফি (র.), ইমাম মালেক (র.), ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.)-এর মতে, জনপ্রতি এক সা’ অর্থাৎ দেশীয় ওজনে তিন সের এগারো ছটাক।
* একের ফিতরা অন্যে আদায় করা ওয়াজিব নয়, তবে আদায় করলে আদায় হবে
ক্রিতদাস কিংবা শিশুরা কীভাবে ফিতরা দেবে, তারা তো নিসাবের মালিক নয়? এখানে ফকিহদের বক্তব্য হলো, ক্রিতদাসের মালিক কিংবা শিশুর পিতা-মাতা যদি মালে নিসাবের মালিক হয় তবে ক্রিতদাসের পক্ষ থেকে তার মালিক এবং শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে তার পিতা-মাতা ফিতরা আদায় করবে। এখন প্রশ্ন হলো একের ফিতরা অন্য আদায় করলে কি আদায় হবে? অবশ্যই হবে, হযরত নাফে (রা.) বলেন, ইবনে ওমর (রা.) ছোট-বড় সবার ফেতরা দিতেন। এমন কি আমার ছেলেদের ফেতরাও তিনি দিতেন। তিনি তাদেরকেই ফেতরা দিতেন, যারা তা গ্রহণ করতো। (বোখারি, হাদিস-৯৯৯)।

* ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার সময়
--------------------------------
ফিতরা ওয়াজিব হয় ঈদুল ফিতরের দিন সোবেহ সাদিকের পর। এই দিন সোবেহ সাদিকের পূর্বে কেউ মারা গেলে তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হবে না। সোবেহ সাদিকের পূর্বে কোন সন্তান জন্ম নিলে কিংবা কেউ মুসলমান হলে তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হবে। তেমনি গরীব সোবেহ সাদিকের পূর্বে ধনী হলে তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হবে । যদি ধনী সোবেহ সাদিকের পূর্বে গরীব হয়ে যায় তবে তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হবে না।

* ফিতরা আদায়ের উত্তম সময়
--------------------------------
ঈদের জামায়াতের পূর্বে ফিতরা আদায় করা মুস্তাহাব। হযরত সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দু-একদিন আগেই ফেতরা দান করতেন। ( বোখারি, হাদিস-৯৯৯)। যদি কারো পক্ষে ঈদের জামায়াতের পূর্বে আদায় সম্ভব না হয় তবে তা পরে আদায় করতে হবে।

* ফিতরা যাকে দেওয়া যাবে
------------------------------
যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়, তারা সবাই ফিতরা গ্রহণ করতে পারবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘সদকা তো শুধু ফকীর ও মিসকিনের জন্য এবং সাদকা সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত লোকদের জন্য, যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, কর্জগ্রস্থদের জন্য, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য, এটা আল্লাহর বিধান। (সুরা তাওবাহ, আয়াত ৬০)।

এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, ফিতরা দেওয়া যাবে, গরীব বা ফকিরকে, মিসকিনকে, সাদাকা আদায়কারিকে, চিত্তাকর্ষনের জন্য অমুসলিমকে বা নও-মুসলিমকে, দাস মুক্তির জন্য, কর্জগ্রস্থদেরকে, আল্লাহর পথে ব্যয়-অর্থাৎ ইসলামী কাজে, মুসাফিরকে।
আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে ফিতরা আদায়ের তৌফিন দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৫:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×