শুক্র-শনিবার সকল মেলা, পার্ক, বাজার, বিনোদন কেন্দ্র, শপিং মল......ইত্যাদিতে প্রচুর ভিড় থাকে। তাই অতি সাবধানে ঐসব স্থানে শুক্র-শনিবার আমি যেতে চাই না কিংবা বলতে পারেন যাই না। এতো লোকজনের ভিড়ে ঠিকমতো হাঁটাই দুষ্কর। কিন্তু গত শনিবার (১৬.০২.২০১৯) বিকেল বেলা কোন কাজ না থাকায় এবং ছোট ভাইয়ের মতো পিয়াসের অফিস বন্ধ থাকার কারণে হুট করেই সিদ্ধান্ত নিলাম বই মেলা ঘুরে আসি। যদিও আরো একটি কারণ ছিল যে, শুক্র-শনিবার গেলে সামুর বিভিন্ন ব্লগারদের সাথে দেখা হতে পারে। তাই সময় করে চলেই এলাম, একুশে বইমেলা' ২০১৯ ঘুরতে।
বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ঢুকে পড়ি মেলার একাডেমীর প্রাঙ্গনে। ছিমছাম-সারি বদ্ধ স্টলগুলো ঘুরে দেখতে ভালো লেগেছে। তখন মেলার এপাশের এলাকায় ছিল হালকা ভিড়। ছোট-বাচ্চাদের বইয়ের প্রতি আকর্ষণ বা কৌতুহল ছিল চোখে পড়ার মতো এবং তাদের জন্য মেলায় ছিল প্রচুর বই। ছোট বেলা থেকেই ছোট সোনামনিদের বই পড়ার অভ্যস গড়ে উঠুক। সেক্ষেত্রে প্রতিটি অভিভাবককে তাদের সন্তানের হাতে তুলে দিতে হবে যথাযথ বই।
ঘণ্টা-খানেক সেখানে ঘুরে চলে আসি মেলার প্রাণকেন্দ্র সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গনে। এখানে এসে মেলার আমেজ অনুভূত হলো। পাঠক-লেখক-ক্রেতা-বিক্রেতা-দর্শনার্থীতে মুখরিত ছিল সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গন।
সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গনে কিছু স্টলে ঘোরা-ফেরা আর কিছু বই হাতে নিয়ে নাড়া-চাড়া করে মনে হলো, আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। চলে যাই, আমাদের প্রিয়সব ব্লগারদের সাথে দেখা করতে। খুঁজে নিলাম, এক রঙ্গা এক ঘুড়ি স্টল। পথেই দেখা হয়েছিল নীল'দার সাথে। এরপর স্টলে গিয়ে প্রথমে দেখা পেলাম ব্লগার অগ্নি সারথী, নেক্সাস ও হামিদ আহসানকে। একটু পরেই দেখা হলো, ব্লগার মাহবুবুল আজাদ, জাহিদ অনিক, শিখা রহমান, রাবেয়া রাহীম, মনিরা সুলতানা আপু। তারপর সবাই মিলে "লেখাজোকা সংকলন" বইটি হাতে নিয়ে ছবি তুললাম। সবার সাথে দেখা হওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। এর ফাঁকেই কিনে নিলাম, লেখাজোকা সংকলন, নজরবন্দী এবং কঙ্কাবতীর কথা। তার একটু পরে এসে হাজির ব্লগার উম্মে সায়মা।
ছবি-০১।
ছবি-০২।
ছবি-০৩।
এরপর মনিরা আপু, সায়মা, আজাদ, অনিক সহ চলে এলাম ঋদ্ধ তিন সংগ্রহ করতে। মনিরা আপু নিজে এক কপি নিলেন এবং সায়মা ও আমাকে এক কপি করে উপহার দিলেন। না করে ছিলাম, তবুও......আপুদের ধন্যবাদ দিতে হয় না। এরপর আপুর ব্যস্ততার কারণে মেলায় থাকতে পারেনি, চলে গিয়েছিল। অনিক, আপুদের এগিয়ে দিতে চলে গেল।
আমি আবার চলে আসি এক রঙ্গা এক ঘুড়ি স্টলে। সেখানে এসে আড্ডা আর অনেক কথা হলো ব্লগার অগ্নি সারথী এবং নেক্সাসের সাথে। দেখা হয়েছিল রেজা ঘটক এবং চারু মান্নান ভাইদের সাথে। পরিচয় ছিল না বলে, কথা হয়নি। এরমাঝে আমাদের সাথে এসে হাজির হয় ব্লগার রেজওয়ান তানিম। সবাই মিলে অনেক আড্ডা দিলাম। তানিম ভাই, অগ্নি সারথী ভাইয়ের বইটি হাতে নিয়ে উনাকে বই সম্পর্কে কিছু উপদেশ নিলেন। পরে নেক্সাস ভাই আমাকে নিয়ে উনার এক বন্ধুর সাথে দেখা করার জন্য নিয়ে গেলেন। বন্ধুকে আইসক্রিম আর আমাকে কফি খাওয়ালেন। মূল আড্ডাটা হয়েছে এক রঙ্গা এক ঘুড়ি স্টলে।
ছবি-০৪।
ছবি-০৫।
ছবি-০৬।
ছবি-০৭।
এরপর আসলেন আমাদের সবার প্রিয় ব্লগার কাওসার চৌধুরী। পরিচিত হলাম, আড্ডা হলো, ছবি তুললাম, ঘুরলাম এবং আবার আড্ডা হলো। আমাদের আড্ডা যেন শেষ হয় না। এরপর আসলেন জনপ্রিয় ব্লগার হাসান মাহবুব এবং তারপর এলেন ব্লগার মাহমুদ ০০৭। এ যেন সামুর পূর্ণমিলনী। সবার চোখে-মুখে ছিল অনেক আনন্দ। যাক, আমার শনিবারের যাওয়া বৃথা হয়নি। শুভ'র "ঈর্ষার পাশে তুমিও জুঁইফুল" বইটি সংগ্রহ করতে ভুলে যাইনি।
এখানে কাউকে আলাদা করে প্রশংসা কিংবা ধন্যবাদ করা বা বলা হয়নি। সবাই ছিল অমায়িক ভালো এবং আন্তরিক। মনে হয়েছিল, আমরা অনেক দিন ধরে পরিচিত এবং খুব কাছের মানুষ। যদি বলা হয়, ব্লগিং করে কি পেয়েছ ?? আমি বলব, অসাধারণ কিছু মনের এবং কাছের মানুষ পেয়েছি।
কাওসার ভাই নিয়ে গেলেন তার বইয়ের স্টলে। সেখানেও কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম এবং সংগ্রহ করে নিলাম উনার বায়স্কোপ বইটি। সবার সাথে আড্ডা দিয়ে, রাত সাড়ে আটটার দিকে মেলা থেকে অনিককে নিয়ে বের হয়ে গেলাম।
ছবি-০৮।
ছবি-০৯।
মেলা থেকে আসার সময় মজার একটি ঘটনা ঘটেছিল। ইত্যাদি'তে একজন মজার সব কৌতুক করেন কিন্তু আমরা কেউ উনার নামটি মনে করতে পারিনি, উনি এসেছিল আমাদের সাথে বেতার বাংলা'র পক্ষে সাক্ষাৎকার নিতে। আগে কোন দিন সাক্ষাৎকার দেইনি। আজ দিয়েই দিলাম। প্রথমে অনিক দেয়নি। আমি দেবার পর, এসে দিয়েছে। নতুন একটা অভিজ্ঞতা হলো। সব মিলিয়ে মজাই হলো।
সুন্দর একটি দিন অতিবাহিত করলাম। স্মৃতির পাতায় এর কথা কখনো হারাবে না। তবুও সামুতে রেখে দিলাম যত্ন করে।
ছবি-১০।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৮