সিরিজের প্রথমটাতে বিন বুলায়ে অনেক বিয়েতে উপস্থিত থাকার গল্প লিখলেও দিল্লীতে আমার প্রথম বিয়ে এটেনড করাটা ছিল দাওয়াত প্রাপ্ত বিয়ে।
সেই একই ডিসেম্বর বিয়ের মৌসুমে প্রথম বিয়ের দাওয়াত টা পাই আমার এক ক্লাসমেট এর বড় বোনের বিয়ের দাওয়াত। দাওয়াত পাওয়ার পর খুবই এক্সসাইটেড ছিলাম। কারন ইন্ডিয়ানদের বিয়ে খালি বলিউডি সিনেমাতে দেখেছি। তাই বাস্তবে দেখার লোভ টা সামলাতে পারছিলাম না। তাই জোরেশোরে প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। ভাবলাম প্রথম কোন বিয়েতে যাব। কোন গিফট না নিলে কেমন হয়। তাই ৫ বন্ধু মিলে সরোজিনী নগর মার্কেট থেকে বিয়ের দিন সকাল বেলা একখানা শাড়ি ও কিনে নিলাম। আমার এক্সসাইটেড হওয়ার আরেকটি কারন হল হোস্টেলে ভেজিটেরিয়ান ফুড খেয়ে আমি মুটামুটি বিরক্ত। বিয়ে মানেই তো কোর্মা পোলাও। তাও আবার পাঞ্জাবি শাদী। মাজা আয়েগা বিয়ের দিন নির্ধারিত সময়ে রাতেই উপস্থিত হলাম লাজপাত নগরের সেই বিয়ে স্থলে। আগেই বলেছি এদের বিয়েতে খাবারের জায়গা আলাদা এবং চেকলিস্ট দেয়া থাকে কোথায় কোন খাবার আছে। আমি হাজির হওয়ার পর থেকেই ধান্ধাই আছি কবে খাবার শুরু করবো। এমনি টেবিলে ওয়েটাররা যেসব চ্যাটাম্যাটটা খাবার এনে দিচ্ছিল ওগুলোতে কাজ হচ্ছিল না। চিপা দিয়ে পাঞ্জাবি কুঁড়িয়া দেখি আর খাবারের অপেক্ষা করি।
অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সবাই অবশেষে রাজি হল ডিনার করে নিতে। টিস্যু নিলাম, ফরক নাইফ নিলাম, বাসন নিলাম। এবার খালি কোর্মা আর পোলাও নিমু। কয়ি মুঝে রুখ নেহি সাকতা ভাত নিলাম। এক নাম্বার রু তে গেলাম। কচু শাকের কোর্মা। এটা নিমু না বাদ। এর পরে গেলাম। পালাক পনির। না এটাও নিমু না। এর পরে মাটার পনির। না বাদ। এর পরে লাল শাকের দুপেয়াজা, পালং শাকের ভর্তা ভাজি, আলুর দম, বেগুনের কোপ্তা, কছুর লতির রোস্ট, বিনডির রোস্ট, পটলের কাটলেট ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ। কিছুই নিলাম না।
আরও তো ডেকচি সামনে দেখছি এগুলোতে অবশ্যই কোর্মা পোলাও থাকবে। সে ভরসাতে সেগুলোও ঘাটলাম। না একই অবস্তা। পরে লাইনে দাঁড়ানো একজনরে চুপি চুপি জিজ্ঞেস করে ফেললাম ভাই ইয়ে মানে কোর্মা পোলাও কি আলাদা রুমে রাখছে? বেটায় চোখ কপালে তুলে জিগাইলো "ভাই কাহাসে আয়ি হ?" হালার বেটায় এইডা জিগায় কেন মনে মনে ভাবতে লাগলাম!!!! পরে বললাম বাইরে থেকে আসছি। কনের বোনের বন্ধু। হাসতে হাসতে বেটায় আন্সার দিল "ইয়ে ভেজিটেরিয়ান শাদী হে ইয়ার,জাহা জাওগে ইয়েই মিলেগা(এটা ভেজিটেরিয়ান শাদী, যেখানে যাবা একগুলাই পাবা)" । দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ভাবতে লাগলাম শাড়ির জন্য কত রুপি দিসিলাম ওই রুপি দিয়ে ম্যাকডি তে গেলে কি পরিমান মুরগির টেং খাইতে পারতাম। না আর হল না আমার খাওয়া। তাই হলের ভিতর ঢুকে আবার ননভেজ দেখতে লাগলাম। এই ননভেজ কোন ননভেজ জিজ্ঞেস করে লজ্জায় ফেলবেন না
কিছুক্ষন পর শুনলাম বর আসলো। ভাবলাম বর ক্যামনে বরণ করে অন্তত ওইটা দেখি। দেখি বর মিয়া ঘোড়ায় বইসা আছে। আর তার গলায় ইয়া মস্ত একটা টাকার মালা। ব্যান্ড বাজতেসে আর সবাই নাচতেছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম দুজন মুরুব্বি টাইপের ব্যক্তি যারা নাচতেছে তাদের উপ্রে রুপি ছিটাতাসে। আর নাচতে নাচতে সবাই রুপি কুড়াইতাসে। এদিক অদিক হালকা দেইখা নিয়া ভাঙ্গরা টাইপের নাচ নিয়া আমিও ডুইকা পড়লাম তাদের মাঝে। আর নাচার ভান ধইরা সমানে তুলতে লাগলাম টাকা। ১৫ মিনিটের মত নাচের ভান কইরা রুপি কুড়াইছি।
সব মিলায়ে ৪৮০ রুপি। আহা শাড়ির জন্য দিসিলাম ২০০ রুপি। যাওয়ার ভাড়া লাগেনাই। কারন বান্ধবী গাড়ি পাঠাইছিল। ২০০ রুপি ইনভেসটে ২৮০ রুপি লাভ এক বন্ধুরে কইলাম বেটা আশেপাশে আর কোথাও বিয়ে হইতেসে কিনা দেখ। বর বরণ করুম। বেকুব দোস্ত আমার রুপি ইনকাম দেইখা ভ্যাবাচেকা খেয়ে আওয়াজ হারিয়ে ফেলল।
সিরিজের প্রথমটাতে বিন বুলায়ে বরাত ছিলাম বটে। তবে ওখানকার অনেক বিয়েতেও বর বরণের নামে হালকা ইনকাম পাতি করছিলাম।