somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাত্র ১৫ ভাগ বিনিয়োগ করে এদেশের সুন্দরবন,অর্থনীতি ধ্বংস করে ভারত মালিকানা পাবে ৫০ ভাগ!!!-১

১৪ ই মে, ২০১৩ ভোর ৬:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের কাছে ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে ঝুঁকিতে পড়বে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানির (এনটিপিসি) সঙ্গে এ বিষয়ে পিডিবি’র ইতিমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নামকরণ করা হয়েছে ‘খুলনা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র’। এ কেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট থাকবে। সরকারপক্ষের আশাবাদ, ২০১৬ সালের মধ্যে এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে।
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশের পাশে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রামপাল। রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণের আদেশ জারি হয় ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর, ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি’র সাথে বাংলাদেশের পিডিবি’র জয়েন্ট ভেঞ্চার বা যৌথ বিনিয়োগ। সেই চুক্তি হয় ২৯ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে আর ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরিবেশগত ছাড় পত্র ছাড়াই প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেয়া হয়েছে; যা ছিল সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শুধু তাই নয় প্রকল্পের স্থান চূড়ান্তকরণ ও জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর ইত্যাদি যাবতীয় কাজ শেষ হওয়ার পর প্রকল্পের এনভাইরনমেন্টাল ইমপেক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ) বা পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ, যা রাষ্ট্রযন্ত্রে ‘গণতন্ত্র’ নামের শব্দটির ঠিক ওল্টো। এ কারণে এই ইআইএ’র উদ্দেশ্য ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মতামত যাচাই লোক দেখানো যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আদর্শের ও নীতির বিরুদ্ধে।
রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পানি আসবে সংলগ্ন পশুর নদী থেকে। এ জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারীদের লবণাক্তমুক্তকরণ প্ল্যান্ট বসানোর প্রয়োজন পড়বে। পশুর নদী এমনিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে এ নদী থেকে এই হারেপানি প্ল্যান্টে টেনে নিলে সে ক্ষেত্রে নদীর উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর সেচ কাজ বিঘিœত হবে। এই নদী সুন্দরবনের অনেকখানি অংশের জীবন প্রবাহকে টিকিয়ে রেখেছে। নদীটি শুকিয়ে যেতে থাকলে মারা পড়বে সুন্দরবনের অসংখ্য প্রাণী। আর যদি মাটির নিচ থেকে মিষ্টি পানি তোলা হয়, তাহলে ভূ-অভ্যন্তরের পানির স্তরে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জমি নিয়ে স্থানীয় কৃষিজমির মালিকদের প্রবল বিরোধিতা রয়েছে। সেখানকার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি ইউনিয়নের ৭/৮ হাজার পরিবার ক্ষতির শিকার হবে। হুমকির মুখে পড়েছে উপকূলীয় দুর্যোগের প্রাকৃতিক ঢাল সুন্দরবন। একই সঙ্গে পৃথিবীর বিরল প্রজাতির ইরাবতী ডলফিন হারিয়ে যাবে, মরে যাবে পশুর নদী, বাড়বে খুলনা অঞ্চলের লবণাক্ততা।
কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, বিভিন্ন ক্ষুদ্রকণিকা, কার্বন মনো-অক্সাইড, মারকারি বা পারদ, আর্সেনিক, সীসা, ক্যাডমিয়ামসহ পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান নির্গত হয়। আরেকটি সমস্যা-ছাই। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা পুড়ে ছাই হয় এবং কয়লা ধোয়ার পর পানির সঙ্গে মিশে তৈরি হয় আরেকটি বর্জ্য- তরল কয়লাবর্জ্য। উভয় বর্জ্যই বিষাক্ত। কারণ এতে বিষাক্ত আর্সেনিক, মার্কারি বা পারদ, ক্রোমিয়াম এমনকি তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম থাকে। সুন্দরবনের জৈবিক পরিবেশ ও বায়ুম-লকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন রামপালে এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হলে পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে এলাকার পানি, বাতাস ও মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এলাকার পানি শতভাগ, বাতাস শতকরা নববই ভাগ এবং মাটি শতকরা পঁয়ষট্টি ভাগ দূষিত হয়ে পড়বে। মাটির লবণাক্ততা এবং বাতাসে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যমান স্বাভাবিক অবস্থায় পানি ও মাটির ক্ষেত্রে দু’দশক পরে এই দূষণ হতে পারে শতকরা ২০ ভাগ করে এবং বাতাসের ক্ষেত্রে শতকরা ১৫ ভাগ মাত্র।
ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে প্রস্তাবিত ১৩২০ মেগাওয়াট রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সুন্দর বন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে।ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসিকে বাংলাদেশে সুন্দরবনের যত কাছে পরিবেশ ধ্বংসকারী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে দেয়া হচ্ছে, তা তার নিজ দেশ ভারতে হলে সেটা করতে পারতো না। আবার সুন্দরবন থেকে দূরত্ব আসলেই ১৪ কিলোমিটার কিনা সেটা নিয়েও বিতর্ক আছে, অনেকেই বলছেন, সুন্দরবন থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আসলে দূরত্ব ৯ কিলোমিটার।
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানিকৃত কয়লা সুন্দরবনের ভেতর দিয়েই পরিবহন করা হবে। এ জন্য সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে প্রায় সারা বছর ধরে হাজার হাজার টন কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ চলাচল করবে।

সরকারের পরিবেশ সমীক্ষাতেই স্বীকার করা হয়েছে, এভাবে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ চলাচল করার ফলে-
(১) কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ ও কয়লা লোড-আনলোড করার যন্ত্রপাতি থেকে দিনরাত ব্যাপক শব্দ দূষণ হবে;
(২) রাতে জাহাজ চলার সময় জাহাজের সার্চ লাইটের আলো নিশাচর প্রাণীসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চল সুন্দরবনের পশু-পাখির জীবন চক্রের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে ।
(৩) কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ থেকে কয়লার গুঁড়া, ভাঙা/টুকরো কয়লা, তেল, ময়লা আবর্জনা, জাহাজের দূষিত পানিসহ বিপুল পরিমাণ বর্জ্য নিঃসৃত হয়ে নদী-খাল-মাটিসহ গোটা সুন্দরবন দূষিত করে ফেলবে;
(৪) সুন্দরবনের ভেতরে আকরাম পয়েন্টে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে কয়লা উঠানো নামানোর সময় কয়লার গুঁড়া, ভাঙা কয়লা পানিতে/মাটিতে পড়ে, বাতাসে মিশে মাটিতে মিশে ব্যাপক পানি-বায়ু দূষণ ঘটাবে;
(৫) চলাচলকারী জাহাজের ঢেউয়ে দুইপাশের তীরের ভূমি ক্ষয় হবে;
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×