somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রান্সের তথা ইউরোপিয়ানদের তথাকথিত বাক স্বাধীনতা।

০৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রফেসর বার্নার্ড লুইস, যিনি যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা নিয়ে বেশ লেখালেখি করেন। এছাড়াও তাকে পশ্চিমা বিশ্বে একজন নামকরা ইতিহাসবিদ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশও মাঝেমধ্যে নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে তার পরামর্শ নিতেন।
যাইহোক, প্রফেসর বার্নার্ড লুইস একবার ফরাসী একটি পত্রিকাতে (Le Monde) বলেছিলেন -আর্মেনীয়ায় যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে তা গণহত্যার সংজ্ঞার সাথে সামঞ্জস্য নয়, সুতরং সেখানে গণহত্যা হয়েছে বলাটা উচিৎ হবে না। তার এই বক্তব্যে আর্মেনীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অবশ্য আর্মেনিয়ানদের ক্ষেত্রে এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই প্রতিক্রিয়ার কারনেই ফরাসী আদালত প্রফেসর লুইসকে জরিমানা করে। তিনি নানাভাবে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখা দিতে চাইলেও পশ্চিমা ইতিহাসবিদ-গবেষকরাও পর্যন্ত তা গ্রহণ করেনি।
আসুন দেখে নেয়া যাক গণহত্যার বৈশিষ্ট্য --
১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষধে গৃগীত রেজ্যুলশন ২৬০ (৩) অনুচ্ছেদ-২ এর অধীনে যেসব কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হবে তা হলো -
• পরিকল্পিতভাবে একটি জাতি বা গোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য তাদের সদস্যদেরকে হত্যা বা নিশ্চিহ্নকরণ।
• তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করবার জন্য শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিসাধন।
• পরিকল্পিতভাবে একটি জাতিকে ধ্বংসসাধনকল্পে এমন জীবননাশী অবস্থা সৃষ্টি করা যাতে তারা সম্পূর্ণ অথবা আংশিক নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
• এমন কিছু ব্যবস্থা নেয়া যাতে একটি জাতি বা গোষ্ঠীর জীবন ধারণে শুধু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি নয়, সেই সাথে তাদের জন্ম প্রতিরোধ করে জীবনের চাকাকে থামিয়ে দেয়া হয়।
• একটি জাতি বা গোষ্ঠীর শিশু সদস্যদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে তাদের জন্মপরিচয় ও জাতিগত পরিচয়কে মুছে ফেলা।

এবার সংক্ষেপে দেখে নেই, অটোম্যান তথা তুর্কিরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আর্মেনীয়দের কেনো হত্যা করেছিলো --
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আর্মেনীয়রা মিত্র পক্ষের সাথে হাত মেলাতে পারে বলে অটোম্যানদের আগেই সন্দেহ হয়েছিলো। পরবর্তীতে অবশ্য তাদের সন্দেহ'ই সত্য হলো। যুদ্ধ যখন তীব্র হয়ে উঠলো, আর্মেনীয়রা তখন ককেশাস অঞ্চলে অটোম্যানদের বিরুদ্ধে রুশ সেনাবাহিনীকে সহায়তার করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করলো। ফলে তুর্কি সরকার বিশ্বাসঘাতকতার জন্য আর্মেনীয়দের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ইস্টার্ন ফ্রন্ট জুড়ে থাকা যুদ্ধ ক্ষেত্রে আর্মেনীয়দের সরিয়ে দিতে বহু হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিলো।
কেউ কেউ অবশ্য এই হত্যাযজ্ঞকে যুদ্ধের বাই প্রডাক্ট হিসেবেও আখ্যায়িত করেছে। এটা কি যুদ্ধের বাই প্রডাক্ট নাকি গণহত্যা, আপাততো সে বিতর্কে যাচ্ছি না। যেহেতু বাক স্বাধীনতার কথা বলা হচ্ছে, সুতারং গণহত্যা বলা বা না বলার অধিকার তো সবারই থাকা উচিৎ।

এছাড়াও ফ্রান্স তথা ইউরোপিয়ান রাষ্ট্র সমূহে "ল এ্যাগিনেইস্ট ডিনায়াল অব হলোকাস্ট" নামে একটি আইন আছে। এই আইনের কারণে কেউ চাইলেই দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধে এডলফ হিটলারের নেতৃত্বে ন্যাশনাল 'সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির (নাৎসি) চালানো হত্যাকান্ডে মৃতের সংখ্যা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না! যদি তোলা হয় তবে তা ক্রিমিনাল অফেন্স হিসেবে গণ্য করা হবে।
একেবারে খাঁটি বাংলায় বলতে গেলে, ষাট লক্ষ ইহুদি হত্যার যে কথাটি বলা হয়ে থাকে তা চোখ বুঝে বিশ্বাস করতে হবে। এ নিয়ে কোনো রকম উচ্চবাচ্য চলবে না, হিসাবের ব্যাখ্যা চাওয়া যাবে না, এমনকি কোনো গবেষনাও করা যাবে না! এটা নিয়ে গবেষনার চেষ্টা করলে তা ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। জ্বী, এটা রীতিমতো তাদের সংসদে পাশ হওয়া আইন!
আর এই আইনের সূত্র ধরেই পশ্চিমা খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ ডেভিড আভিংকে রীতিমতো জেল খাটতে হয়েছিলো। তার অপরাধ, তিনি দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর চালানো হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা বলতে চান নি। এজন্য অস্টিয়ার একটি আদালত তাকে ১৩ মাসের জেল দেয়।



সেদিন দেখলাম ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো সে দেশে নতুন একটি আইন করার সিধান্ত নিয়েছে। যাতে বলা হচ্ছে, বিপরীত লিঙ্গের ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানালে জেল-জরিমানা গুনতে হবে। একজন মানুষ কার কাছে চিকিৎসা নেবে কার কাছে নেবে না, তা একান্তই তার ব্যাক্তি স্বাধীনতা! এই আইনের ফলে যদি কোনো নারী পুরুষ ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানায় বা কোনো পুরুষ নারী ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানায় তবে তাকে পাঁচ সাসের জেল ও ৭৫ হাজার ইউরো জরিমানা গুনতে হবে।
এমন অনেক আছে, তবে আর সামনে এগিয়ে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চাই না। এই হচ্ছে সভ্য এবং জ্ঞ্যান বিজ্ঞানের ধারক-বাহক ইউরোপিয়ানদের বাক স্বাধীনতা !
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৩৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×