ব্লগার চাঁদগাজীর পোস্টে মন্তব্যের এক পর্যায়ে আমি জাতিসংঘকে সোজা বাংলায় একটা ফ্রড হিসেবে উল্ল্যেখ করেছি, বিপরীতে তিনি বললেন, আমার ধারণা ভুল। এই পোস্টে মূলত আমি জাতিসংঘের ভন্ডামির একটা নমুনা দেখাতে চাচ্ছি। যেটা অন্যদেরও দেখা উচিত, তাই পোস্ট করা।
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কে?
উত্তর, প্রধানমন্ত্রী নিজেই। একটা দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা নিশ্চই এখানে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই! জাতিসংঘের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলা যায় নিরাপত্তা পারিষদকে, আসুন দেখাযাক সেই নিরাপত্তা পরিষদ আজীবনের জন্য কারা জিম্মি করে রেখেছে।
আসেন জাতিসংঘের গঠনতন্ত্রে ভলিয়াম ৫ এ আর্টিকেল ২৩ এর অনুচ্ছেদ ১,২,৩ দেখি। ----
নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র ১৫ টি। পাঁচটি স্থায়ী (আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স) সদস্য, যারা গায়ের জোরে সিলেক্টেড। ১০টি সদস্য ২ বছর মেয়াদে গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত। ৫+১০=১৫
এবার ভলিয়াম ৫ এ আর্টিকেল ২৭ এর ৩ নং অনুচ্ছেদ দেখা যাক--
কোনো সন্ত্রাসী দেশের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যাবস্থা নিতে হলে এই ১৫টি রাষ্ট্রের মধ্যে ৯ টি রাষ্ট্রের 'হ্যা' ভোট লাগে। এবং এই ৯টি 'হ্যা' ভোটের মধ্যে গায়ের জোরে সিলেক্টেড পাঁচটি রাষ্ট্রের 'হ্যা' ভোট অবশ্যই লাগবে। আর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত ১০ টি সদস্য রাষ্ট্রের যেকোন চারটি নির্বাচিত রাষ্ট্রের 'হ্যা: ভোট হলেই সন্ত্রাসী যেকোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া যায়।
অর্থাৎ প্রস্তাব পাশ হতে ১৫টি রাষ্ট্রের ৯টির হ্যা ভোট লাগে। কিন্তু কলমের প্যাচ ঐখানেই, ৯টির মধ্য ৫টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের হ্যা ভোট অবশ্যক।
ধরুন নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ টি রাষ্ট্রের ১৪ টি'ই হ্যা ভোট দিলো, কিন্তু 'না' ভোট দেয়া একমাত্র রাষ্ট্রটি স্থায়ী সদস্য অর্থাৎ আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এর যেকোনো একটি। তবে ১৪জন 'হ্যা' ভোট দিলেও ঐ প্রস্তাব পাশ হবে না!!!
এটাই ফ্রড জাতিসংঘের গণতন্ত্র, সারা পৃথিবীর সকল রাষ্টের ভোটে নির্বাচিত ১০ টি রাষ্ট্রের ৬ টি'ও যদি 'না' বলে তাও প্রস্তাব পাশ হবে, আর বিনা ভোটে গায়ের জোরে সিলেক্টেড ৫টি রাষ্ট্রের ১ টি রাষ্ট্রও যদি 'না' বলে তবে ঐ প্রস্তাব পাশ হবে না। অর্থাৎ সারা বিশ্বও যদি চায়, কিন্তু আমেরিকা একাই যদি বলে 'না' তাহলে ঐ 'না'ই জয়যুক্ত হবে। সুতরাং এই জাতিসংঘকে ফ্রড ছাড়া আর কি'ই বা বলা যায়।
এ পর্যন্ত মনেহয় শতবারের মতো ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে জাতিসংঘে প্রস্থাব উঠেছে, প্রতিবারই আমেরিকা ভেটো দিয়েছে। যেহেতু জাতিসংঘের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পাঁচটি স্থায়ী রাষ্ট্রের 'হ্যা' ভোট বাধ্যতামূলক, তাই সারা বিশ্বের সব দেশও যদি বলে হ্যা বিপরীতে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য অথবা ফ্রান্স, এর একটি রাষ্ট্রও যদি বলে 'না', তবে না'ই জয় যুক্ত হবে। এই হচ্ছে জাতিসংঘের হাস্যকর গণতন্ত্র।
নিরাপত্তা পরিষদে যেই স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রকে এতো ক্ষমতা দেয়া হলো, আসেন এবার দেখি এই সিলেকশনে আয়তন এবং জনসংখ্যা বিষয়টা। এটাতো আরো অযৌক্তিক।
আয়তনে সর্ববৃহৎ এবং পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫৯.৬৯% মানুষের এশিয়া মহাদেশ হতে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য মাত্র ১টি
জনসংখ্যা এবং আয়তনে দ্বিতীয় (পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৬.৩৬%) আফ্রিকা মহাদেশ হতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য হিসেবে কোনো দেশই নেই।
অথচ জাতিসংঘ নিরপত্তা পরিষদে স্থায়ী ৫টি সদস্য দেশের ৩টি'ই আয়তনে ষষ্ঠ এবং পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯.৯৪% এর ইউরোপ মহাদেশ হতে নেয়া।
এতো গেল আয়তন এবং জনসংখ্যা হিসাব, এবার ধর্মিও দিকটা একটু দেখি
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্ম ইসলাম হতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী কোনো সদস্য নেই। তৃতীয় বৃহত্তর ধর্ম হিন্দু ধর্ম হতেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী কোনো সদস্য নেই। একমাত্র চিন বাদে অন্য চারটিই খৃস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ (খৃস্টান ধর্মের সাধারণ মানুষের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে, সমস্যা হল তাদের শাসকগোষ্ঠী, যারা পৃথিবীতে সন্ত্রাসের রাজ্য কায়েম করছে।)
আরো বলা যায়, থাক আর বলতে চাইনা, শুধু এতটুকুই বলবো, জাতিসংঘ নিজেই একটা অযৌক্তিক অর্গানাইজেশন
এখানে ক্লিক করে সরাসরি জাতিসংঘের ওয়েবসাই হতেই তার গঠনতন্ত্র দেখে আসতে পারেন
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২১ সকাল ১০:৩৫