নারী এবং পুরুষ উভয়ের প্রতি উভয়ের যে আকর্ষণ, তা সম্পূর্ণ সহজাত। বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও ধার্মিক এবং নাস্তিক উভয়েই এ বিষয়ে একমত।
পরস্পরের প্রতি এই আকর্ষণ যদি না থাকতো তবে পৃথিবীতে মানবসভ্যতার বিকাশ অসম্ভব ছিল। নারী-পুরুষের এই আকর্ষণ মূলত দুই ধরনের, ১. আত্মিক, ২. দৈহিক।
মজার কোন দৃশ্য দেখলে বা মজার কোন কথা শুনলে মানবদেহে এনডোরফিন নামক এক ধরনের হরমোনের নিঃসরণ হয়,যার কারণে হাসি পায়। একইভাবে উন্মুক্ত বা খোলামেলা নারী দেহ দর্শনে পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয়ে যৌনাকাঙ্খার সৃষ্টি করে। এটা একেবারেই পুরুষের সৃষ্টি গত বৈশিষ্ট্য। এখন কেউ যদি বলে, নারীদের এটা ওটা দেখেই যদি কোন পুরুষের যৌনাকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয় তবে সে কেমন পুরুষ। তাহলে সেটা তাঁর বায়োলজি বিদ্যার অজ্ঞতা।
বরং যদি কোন পুরুষ বলে, খোলামেলা নারীদেহ তাঁর মধ্যে কোন আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করে না, তবে হয় সে মিথ্যা বলছে না হয় তাঁর হরমোন কাঠামো স্বাভাবিক পুরুষ হতে আলাদা।
কাজী নজরুল তার কাব্যের ভাষায় বলেন,
বন্ধু, কহিনি মিছে,
ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব হ’তে ধ’রে ক্রমে নেমে এস নীচে-
মানুষের কথা ছেড়ে দাও, যত ধ্যানী মুনি ঋষি যোগী
আত্মা তাঁদের ত্যাগী তপস্বী, দেহ তাঁহাদের ভোগী!
নারী শরীরকে খোলামেলা বা আকর্ষণীয় অবস্থায় দেখলে টেস্টোস্টেরন নিঃসৃত হবেই, এবং টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হলে পুরুষের মধ্যে যৌনাকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হবেই। পুরুষের বায়োলজিক্যাল প্রোগ্রামিং এভাবেই করে দেয়া।
এখন কথা হচ্ছে, যৌনাকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হলেই কি কারো প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে? কিংবা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে হবে? না, এটাকেও আমি সমর্থন করতে পারছি না।
জন্তু জানোয়ার 'স্বজাতি বিপরীত লিঙ্গের' কারো প্রতি আকাঙ্ক্ষা জাগলেই বিচার-বিবেচনাহীন ভাবে তা চরিতার্থ করে। মানুষ হয়েও যদি একই কাজ করে, তবে মানুষ আর জন্তু জানোয়ারের পার্থক্য কী?
মানুষ তো বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ প্রাণী। যে জানে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ। ভালো-মন্দ বিচার করে মন্দ কাজ হতে নিজের ইচ্ছে-আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাই তো মানুষকে অন্যসব প্রাণী হতে আলাদা করেছে। সেই নিয়ন্ত্রণই যদি না থাকলো তবে সে মানুষ কী করে হয়?
আসলে প্রতিটা মানবদেহই মানুষ ধারণ করে না। কিছু মানবদেহ জন্তু ধারণ করে, এমটা সব জাতিতে সব দেশেই আছে। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের যে কথাটি বলা হয়, তা আসলেই বাস্তবসম্মত নয়। বরং এটাই সত্য যে, জন্তু কখনোই তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারে না। যদি তাই হতো তবে বিশ্বের অত্যন্ত সভ্য জাতি খ্যাত স্ক্যান্ডেনেভিয়ানরা ধর্ষণে শীর্ষ দশে আসতো না।
বিবেক, বিবেচনা, শালীনতা, বুদ্ধি, যুক্তি, এসব মানুষের জন্য। সকল মানবদেহ মানুষ ধারণ করে না। তাই যত কথাই বলা হোক, আর যত যুক্তিই দেখানো হোক, যারা পোশাককে কারো উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার অযুহাত হিসেবে ব্যবহার করে, কিংবা পোশাক দেখে খারাপ মন্তব্য করে, তাঁরা তা করবেই। আবার যার মাথায় মধ্যে একেবারে কট্টর ভাবে গেঁথে গিয়েছে, যত যাই হোক তাকে শরীর দেখাতেই হবে। সে কোন যুক্তি, কিংবা বায়োলজি-টায়োলাজি মানবে না, সে শরীর প্রদর্শন করবেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২৬