ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন শিক্ষক। বলেছেন:
.
‘আপনার দলের ময়েদের কালো হিজাব পরিহিত পোষাক বাঙালি মেয়েদের প্রতিনিধিত্ব করে কি?’
.
কাহিনী হল পুরস্কার জেতা এই দলের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে দলের পাঁচ নারী সদস্যের মধ্যে ৪ জনই মাথায় হিজাব/স্কার্ফ পরে আছেন।
.
এই ছবি দেখার পর রেটোরিকাল প্রশ্নের ছলে এই ব্যক্তি বলছেন, যেহেতু এরা মাথায় কাপড় দিয়েছে তাই এরা বাঙালি মেয়েদের প্রতিনিধিত্ব করে না। আচ্ছা কালো হিজাব যদি বাঙালি মেয়েদের প্রতিনিধিত্ব না করে তাহলে তার কোট-টাই কি বাঙালি পুরুষের প্রতিনিধিত্ব করে? প্যান্ট-শার্ট পরা মেয়ে কি বাঙালি মেয়েদের প্রতিনিধিত্ব করে?
.
যাইহোক, এই কমেন্ট যিনি করেছেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের একজন অধ্যাপক। বেশ ইন্ট্রেস্টিং ক্যারেকটার।
.
আজ থেকে ৮ বছর আগে, নিজের এক ছাত্রীকে বুলি করে এই ব্যক্তি আলোচনায় এসেছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল -
.
হিজাব করার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে মৌখিক অপমান, ক্লাস অ্যাটেন্ড করা সত্ত্বেও অ্যাটেন্ডেন্স দিতে অস্বীকার করা, ক্লাস থেকে বের করে দেয়ার মতো বিভিন্ন ধরণের বৈষম্য এবং ঘৃণামূলক আচরণ করে আসছিলেন তিনি।
.
একদিন বাধ্য সেই ছাত্রী ক্লাসে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। তখনও তাকে নানাভাবে বুলি করা হয়। অন্য ছাত্রছাত্রীরা পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করে, এবং সেটা ভাইরাল হয়ে যায়।
.
এভাবেই এই লোকের আলোচনায় আসা।
.
অর্থাৎ ইসলাম, মুসলিম পরিচয় এবং হিজাব নিয়ে এই ব্যক্তির বিদ্বেষ পুরনো। ফেইসবুকে তার বিভিন্ন পোস্ট ও কমেন্ট থেকেও এটা স্পষ্ট বোঝা যায়। তার আচরণের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আছে।
.
রোবটিক্স দলের সদস্যদের নিয়ে তার সাম্প্রতিক কমেন্টও খতিয়ে দেখার মতো। তার বয়ান হল, যারা হিজাব পরে তারা বাঙালি না। অর্থাৎ যারা ইসলাম পালন করে তারা এই সমাজ ও এই দেশের মানুষ না। তারা ভিন্ন কিছু।
.
ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়কে অপরায়ন বা 'আদারিং' এর এই ন্যারেটিভের সাথে আরে. seসের বয়ানের মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। বিন্দু ত্বব। দী বয়ানের মূল কথাই হল মুসলিমরা ডারতে অনুপ্রবেশকারী। বহিরাগত আগ্রাসনকারী। এরা এখানকার সমাজ, সংস্কৃতি ও পরিচয়কে গ্রহণ করতে পারেনি। তাই এদের ‘সাইয করতে হবে’।
.
এই অধ্যাপক সেই বিন্দু ত্বব। দী বয়ানের একটি সংস্করণই তুলে ধরেছেন। ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের বিরুদ্ধে তার তীব্র ঘৃণা বিদ্বেষের পেছনে এই আদর্শের ভূমিকা থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
.
আরেকটা ইন্ট্রেস্টিং ব্যাপার হল, এই ব্যক্তির টাইমলাইনে গিয়ে দেখা যাচ্ছে তিনি কয়েক ডজন পর. নো গ্রাফ. ইক পেইজ ফলো করছেন। এই পেইজগুলোর এতোই খারাপ অবস্থা যে এগুলোর স্ক্রিনশট শেয়ার করতেও স্বাভাবিক মানুষের সংকোচ হবে।
.
‘ভুলে লাইক পড়ে গেছে’, পেইজ আগে ভালো ছিল পরে ‘হ্যাকড হয়ে’ বা অন্য কোন ভাবে হঠাৎ এমন হয়ে গেছে – এরকম অজুহাত অল্প কিছু পেইজের ক্ষেত্রে হয়তো দেয়া যায়। কিন্তু ডজন ডজন পেইজের ক্ষেত্রে বলার সুযোগ থাকে না।
.
আমি পারফিউম নিয়ে দু’একটা পেইজ লাইক দিয়েছিলাম, এর পর থেকে ক্রমাগত আমার হোম পেইজে শুধু পারফিউম নিয়ে পোস্ট দেখি। এধরণের অভিজ্ঞতা আমাদের সবার আছে।
.
যে লোক কয়েক ডজন পর. নো গ্রাফ. ইক পেইজ ফলো করে তার নিউযফিডের কেমন হবে? এমন লোক সোশ্যাল মিডিয়াকে প. র্ন দেখার জন্য ব্যবহার করছে বললে মনে হয় ভুল হবে না।
.
ক্রমাগত পর. নো গ্রাফি দেখতে থাকলে সেটা দর্শকের মস্তিষ্কে পরিবর্তন আনে। পরিবর্তন আসে তার চিন্তাচেতনায়ও। প. র্ন দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন স্বাভাবিক প্রেক্ষাপটকে যৌনায়িত করে উপস্থাপন করে। অজ। চ। র, পরকীয়া, শিক্ষক-ছাত্রী রিলেটেড বিভিন্ন ধরণের ফেটিশ প. র্ন ক্রমাগত তৈরি করতে থাকে। [৪]
.
এখন চিন্তা করে দেখুন। একজন মানুষ ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়াতে প. র্ন দেখছে। দেখতে দেখতে তার চিন্তাভাবনার বারোটা বেজে গেছে। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনাকে সেক্সুয়ালাইয করে সে ফ্যান্টাসিতে ভুগছে। এই একই লোক যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুনী ছাত্রীদের সামনে দাঁড়িয়ে ক্লাস নিচ্ছে। তাদের পোশাকআশাক নিয়ে ব্যাপক মাথা ঘামাচ্ছে।
.
ক্লাসে তরুণী মেয়েদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় এধরনের একজন প. র্ন অ্যাডিক্ট মানুষের মাথার ভেতরে কী চলে?
.
হিজাব নিয়ে বিদ্বেষের পেছনেও এই ধরণের বিকৃতির একটা ভূমিকা থাকা অস্বাভাবিক না। এ ব্যাপারে কুরআন থেকে আমরা বেশ কিছু ইনসাইট পাই। লূত আলাইহিস সালাম যখন তাঁর কওমের বিকৃতির বিরোধিতা করেছিলেন, তখন তারা উপহাস আর ঘৃণা ভরে বলেছিল, এদেরকে বের করে দাও, এরা তো ‘অতি পবিত্র’ হতে চায়।
.
এই আয়াত থেকে বিকৃতির নেশায় আসক্ত মানুষের চিরন্তন এক মনস্তত্ত্ব আমাদের চোখে ধরা পড়ে। যারা সীমালঙ্ঘন করে, নিজেদের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা তারা মেনে নিতে পারে না। অন্যদেরকেও তারা নিজেদের মতো বানাতে চায়। কারণ এটাই তাদের বিকৃতিকে স্বাভাবিক বানানোর উপায়।
.
বর্তমান বিশ্বে চলা বিকৃতির আন্দোলনের প্রধান তাত্ত্বিকদের প্রায় সবাই ব্যক্তিগত জীবনে নানা ধরণের জঘন্য কর্মকাণ্ডে আসক্ত ছিল। অবক্ষয়কাল- বইতে এ নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। [৬]
.
কাজেই যে লোক প. র্ন অ্যাডিক্ট, যে নানা রকম ফেটিশ আর ফ্যাটাসিতে ভোগে, সে তো আসলে হিজাবকে মানতে পারবে না। নিজের নফসের পূজা করা লোক তাই অবধারিতভাবেবেই হিজাবের বিরোধিতা করবে।
.
ক্লাসের মেয়েরা শরীর ঢেকে আসলে সেটা তার ভয়ারিসম বা 'চোখের সুখের' জন্য সমস্যা। অন্যদিকে আদর্শিকভাবে হিজাবকে তার পক্ষে মানা সম্ভব না। কারণ হিজাব হল আল্লাহর আনুগত্য আর আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার প্রতীক।
.
একজন ব্যক্তিকে নিয়ে এতো কথা বলার দরকার ছিল না। তবে আমার মতে এই পুরো ব্যাপারটা আমাদের সমাজের একটা স্ন্যাপশট হিসেবে দেখা যায়। আমাদের সমাজের সেক্যুলার গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য একটা অংশ এই লোকের মতোই চিন্তা করে, এবং তার মতোই বিভিন্ন রোগ ও আসক্তিতে ভোগে। তারা ঐ জায়গা থেকে ইসলামের বিরোধিতা করে যে জায়গা থেকে মহান আল্লাহর প্রেরিত নবীর বিরোধিতা করেছিল কওমে লূত।
.
নিজেদের এরা প্রগতিশীল বলে পরিচয় দেয়, তবে এদের আসল পরিচয় হল এরা নফস পূজারী। নিজেদের খেয়ালখুশিকে তারা ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছে। আর তাই বিশ্বাসীদের দেখলে তারা ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে।
লেখাঃ আসিফ আদনান
পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের ফেসবুক প্রোফাইল দেখতে এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭