somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্যাতন-৪ সেনা নির্যাতনের তিনটি ঘটনা, এখন সময় তদন্তের

০৯ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাজী সায়েমুজ্জামান: কোন নির্যাতনেরই তদন্ত বা বিচারের নজির নেই। প্রত্যেকটি সামরিক সরকারের আমলেই এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ছিল। সেনা সমর্থিত গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সেনা সদস্যরা অনেককে আটক করে নিয়ে দিনের পর দিন রেখে দিয়েছেন। তাদের জীবন থেকেই হারিয়ে গেছে অনেক দিন। কিন্তু এসব কোন ঘটনারই বিচার বা তদন্ত কিছুই হয়নি। পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় গিয়েছেন, ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে ভুলে গেছেন সব।
মধ্যযুগের একটি উপলব্ধি হলো- সন্তানের অপরাধের কারণে পিতাকে শাস্তি দেয়া যায়না। না পিতার কারণে সন্তানকে। ভাইয়ের কারণে ভাইকেও শাস্তি দেয়া যাবেনা। আধুনিক সময়ে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায়ও এটি স্বীকৃত হয়েছে। অথচ ভেবে দেখা দরকার আমরা কি করছি। ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার কথাই বলি। খেলার মাঠে একজন সেনা সদস্যের সঙ্গে ছাত্রদের বিতান্ডা হয়। ওই সেনা সদস্য কয়েকজন সেনাসদস্যকে নিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কি ভূমিকা নিয়েছিলেন? তারা আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে আরেকজন সেনা সদস্য কর্পোরাল কামরুলকে বেধড়ক মারপিট করেন। তার মাথায় কমপক্ষে ২৪ টি সেলাই দিতে হয়েছিল। তিনি সেনা সদস্য না হয়ে সাধারণ মানুষ হলে নির্ঘাত মারা যেতেন। কি ছিল তার দোষ ? অন্য সেনা সদস্যের দোষের জন্য তাকে মারধর করলো সচেতন দাবীকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনা ঘটিয়ে দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজেদের বর্বরযুগেরও আগে নিয়ে গিয়েছিল।
পরের ঘটনা আরও হতাশাজনক। ওই রাতে সেনা সদস্যরা আজিজ সুপার মার্কেটের ওপরের ফ্লাটগুলোতে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অমানবিকভাবে পিটিয়েছিল। যদিও তারা কর্পোরাল কামরুলকে মারপিটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার অপরাধে তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। সেনা সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে দেয়া পথেই হেটেছেন। এর মাধ্যমে আমরা জাতীয়ভাবে বর্বর সমাজে ফিরে গেছি। আমি সেনা নির্যাতনের শিকার তিনজনের মর্মষ্পর্শী ঘটনা এখানে তুলে ধরলাম। দুজনই ওই ঘটনার পরবর্তীতে আটকের আগে ও পরে যেমন ব্যক্তিগতভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তেমনি তাদের পরিবারের সদস্যরাও রেহাই পাননি। দেশে বর্তমানে যা চলছে তার কুশীলবরা এ ঘটনা থেকে কিছুটা হলেও শিক্ষা নিতে পারেন।
সেনা নির্যাতনের শিকার দীন ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী দীন ইসলাম। তিনি কুমিল্লার মুরাদ নগর থানার রামচন্দ্রপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের পুত্র। ২০০৭ সালের ২১ আগস্ট শাহাবাগে একজন জেনারেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তার গাড়ি ভাংচুড়ের পর গাড়ি চালককে বেদম মারপিট করা হয়। এর আগে ওই সেনা সদস্যকে পেছন থেকে লাথি হেকেছিলেন দীন ইসলাম।

পরদিন ওই ছবি একটি ইংরেজী দৈনিকে ছাপা হলে সারা বিশ্বে হৈচৈ পড়ে যায়। অন্যান্য দেশ যেখানে সেনাবাহিনীকে শৌর্য বীর্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে সেখানে বাশেঁর পিটুনি ও লাথি খেয়ে উপুর হয়ে পড়ে যাওয়া একজন পোষাক পরিহিত সেনা সদস্যে ছবি নিজেদের দেশের গণমাধ্যমে ছাপা হয়। ছবিতে লাথিদাতার পেছনের দিকটি দেখা গেলেও মুখ দেখা যায়নি। তবে ঘটনার ৪৮ দিন পর সেনা গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েন লাথিদাতা দীন ইসলাম। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে তিনি ধরা পড়ার আগে এবং পরবর্তীতে নির্যাতিত হওয়ার রোমহর্ষক বর্ণণা দেন। তিনি তার শরীরের বিভিন্ন স্থানের আহত হওয়ার চিহ্ন দেখান। ঘটনার দেড় বছর পরেও তার পায়ে হাতে মুখে ছোপ ছোপ কালো দাগ রয়েছে। তার শ্রবণ শক্তি এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি।
দীন ইসলাম জানান, ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে তিনি শিক্ষকদের বক্তব্য শোনেন। তিনি কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক নেতাকেও তিনি চিনতেননা। এসময় অধ্যাপক ড. আনোয়র হোসেন ও অধ্যাপক ড. হারুনুর রশিদের বক্তব্য শোনেন। তাদের কাছে সাধারণ সেনা সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অপমান করেছে শুনতে পান। এরপরই তার মনের মধ্যে সেনা সদস্যদের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি হয়। পরদিন প্রতিশোধ নিতে একটি বাঁশের টুকরো হাতে শাহাবাগের দিকে এগিয়ে যান। তার সঙ্গী হন আর কিছু শিক্ষার্থী। শাহাবাগের পুলিশের বাধা পেরিয়ে দলটি আজিজ সুপার মার্কেটের দিকে এগুতে থাকে। এরপরই তার সঙ্গীরা রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর শুরু করেন । একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি এসে যানজটে আটকে যায়। এসময় গাড়ি থেকে নামেন কর্পোরাল কামরুল। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি হুমকী দিতে থাকেন। বলেন, এটা সেনাবাহিনীর গাড়ি। ভাংগলে তোদের খবর আছে। তিনি দুহাত তুলে ওই দলকে আগলে রাখার চেষ্টা করেন। এসময় সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র দীন ইসলাম এ্যাঞ্জেল হাতের লাঠি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন। আঘাত পেয়ে কর্পোরাল কামরুল দৌড় দেন। এ অবস্থায় ফুটপাথ থেকে তার পেছনে সজোরে লাথি হাকেন হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র দীন ইসলাম। লাথি খেয়ে কামরুল আজিজ সুপার মার্কেটে অবস্থান নেন। পরে দোকানীরা তাকে আশ্রয় দিলেও সুপার মার্কেটে অবস্থানরত অন্য শিক্ষার্থীদের রোষানলে পড়েন তিনি।
এ ঘটনার পর হলে ফেরেন দীন ইসলাম। পরদিন একটি ইংরেজী দৈনিকে লাথি দেয়ার ছবি ছাপা হয়। দীন ইসলাম নিজের কৃতিত্ব জাহির করতে কয়েক বন্ধুকে ফোন দিয়ে জানান, সেনা সদস্যকে লাথি দেয়া ব্যক্তিটি তিনি। এদিন হল খালি করার নির্দেশ দিলে গ্রামের বাড়িতে চলে যান তিনি । কয়েকদিন পর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার কথা শুনে ঢাকায় ফিরে পুরানো ঢাকায় বন্ধু সেতুর বাসায় ওঠেন। পরে ভুতের গলিতে একটি মেসে ওঠেন। এই সেতুই ইস্টার্ণ প্লাজায় কেনাকাটার কথা বলে ডেকে নিয়ে তাকে ধরিয়ে দেন।
দীন ইসলাম গ্রেফতারের বর্ণনা দিয়ে বলেন, সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ইস্টার্ণ প্লাজার দোতাল গিয়ে সেতুর সঙ্গে দেখা করি। তাকে এত ঘনঘন ফোন দেয়ার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই দুজন লোক আমার কোমর এবং অন্য দুজন দু হাত ধরে ফেলে। এসময় তারা জিজ্ঞাসা করে, তোমার নাম কি দীন ইসলাম। আমি বলি হ্যা। তারা একটি কার্ড আমার চোখের সামনে ধরে। একজন আমার পিঠে একটি পিস্তল ঠেকায়। অন্য দুজন আমার দু হাত তাদের কোমরে রাখা পিস্তলে ছূয়ে দেয়। বলে আমাদের সঙ্গে সোজা হেটে যাবি। পালানোর চেষ্টা করলে খোদার কসম করে বলছি গুলি করে দেবো। তারা সেখান থেকে আমাকে নিয়ে ভুতের গলিতে আমার মেসে যান । সেখানে তল্লাশী শেষে বাড়ির গৃহকর্তীকে জিজ্ঞাসা করেন, আমাকে তিনি চিনেন কিনা? তিনি অস্বীকার করেন। এসময় আমি কথা বলতে গেলেই সেনা সদস্যরা সজোরে চপটোঘাত করতে থাকেন। বলেন, তোকে মারার নির্দেশ নেই। না হলে পিটিয়ে বস্তা বানিয়ে ফেলতাম। তোকে জীবিত ধরার নির্দেশ রয়েছে। এর মধ্যেই কাঠাল বাগানের মোড়ে সেনা বাহিনীর আরও চার পাচটি গাড়ি এসে থামে। একজন সদস্য ওয়াকিটকিতে বলতে থাকেন, লাথি দেয়া ব্যক্তি দীন ইসলামকে ধরে ফেলেছি স্যার।
দীন ইসলাম বলেন, পরে আমাকে একটি গাড়িতে তোলা হয়। এসময় গাড়ির আসনে বসলে একজন সেনা সদস্য লাথি মেরে আমাকে গাড়ির মেঝে ফেলে দিয়ে একটি গামছা দিয়ে শক্ত করে আমার চোখ বাধেন। এতে সবকিছুই আমার কাছে অন্ধাকার হয়ে যায়। গাড়ি চলতে থাকে। ২০ মিনিটের মতো গাড়ি চালিয়ে একটি ভবনের ভেতরে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেনা সদস্যরা তাদের কর্মকর্তাকে জানান, স্যার এই দীন ইসলাম। এসময় ওই কর্মকর্তা আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, বাবা দীন ইসলাম তোমাকে ওরা ধরে এনেছে কেন? উত্তরে জানাই, আমি ভূল করে সেনা সদস্যের ওপর লাথি দিয়ে ফেলেছি। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করেন, তুমি এ কাজ কেন করলে? আমি বলি, স্যার আবেগের বশে করে ফেলেছি। এসময় তিনি কানের ওপর সজোরে একটি থাপ্পর দেন। এ থাপ্পরে আমার শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলেন, কুত্তার বাচ্চা, সেনা বাহিনীর গায়ে হাত দিস। ইউ হ্যাভ নো রাইট টু সারভাইভ ইন দিস ওয়ার্ল্ড। আমি বলালাম, কেন স্যার? তিনি বলেন, সারা বিশ্বে বাংলাদেশের সেনা বাহিনীর যে সম্মান ছিল তা তুই নষ্ট করে ফেলেছিস। বিশ্বের মাঝে দেশের সম্মানজনক একটি প্রতিষ্ঠানকে তুই লাথি দিয়ে নামিয়ে ফেলেছিস। এসময় ওই কর্মকর্তার ওয়াকিটকিতে একটি কন্ঠ ভেসে আসে। ওপর প্রান্ত নির্দেশ আসে, ওকে ক্রস ফায়ারের জন্য তৈরী কর। এটা শুনে ওই কর্মকর্তার পায়ে জড়িয়ে জীবন ভিক্ষা চাই। পা ধরার কারণে দুজন সেনা সদস্য এসে দুদিক থেকে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেন। বলেন পায়ে ধরবিনা। তারা গালাগালি শুরু করেন। আমি অনুনয় করতে থাকি। বলি আমার মা অসুস্থ। তিনি অনেক কষ্ট করে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। অনুনয় শুনে কর্মকর্তা বলেন, আমার কিছু করার নেই। শুনতেইতো পারছো ওপরের নির্দেশ রয়েছে। আমি অনুনয় বিনয় করতে থাকলে তিনি একটু নরম হয়ে নিজে ফোন করেন। বলেন, ছেলেটাকে ভালো বলেই মনে হচ্ছে। সে একটা পরিস্থিতির শিকার। সে ভূল শিকার করে ক্ষমা চাচ্ছে। ওপার থেকে ফের নির্দেশ আসে তাহলে ওর ডান পা কেটে ফেল। এসময় দুজন আমার পা ধরে কোন জায়গা থেকে কাটা হবে তা বলতে থাকেন। আমি বলি স্যার আমার পা কাটবেননা। আমি ভূল স্বীকার করছি। আপনার সন্তান কোন ভূল করলে কি আপনি তার পা কেটে ফেলতেন। কর্মকর্তা হুংকার ছেড়ে বলেন, আমার সন্তান তোর মতো জারজ সন্তান না। আমি বলতে থাকি, স্যার, পা না থাকলে কী করবো। তার চেয়ে ক্রস ফায়ারে দেন। আর জীবন ভিক্ষা দিতে চাইলে যত খুশি মারেন। এসময় কর্মকর্তা কিছুক্ষণ চুপ থাকেন। পরে ফোন দিয়ে জানান, ছেলেটি বলছে, আমাকে যত খুশি মারেন। অপর প্রান্ত থেকে হুকুম আসে, ব্রেক হিজ বোনস। নির্দেশ শুনে চার পাঁচ জন ইয়েস স্যার বলে স্যালুট দিয়ে এগিয়ে আসেন। তারা বলেন, স্যার কোন পা ভাংগবো। কর্মকর্তা তাদের ধমক দেন, স্টুপিড বয়েজ, ও কোন পা দিয়ে লাথি দিয়েছে। এসময় তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, বাবা তুমি কোন পা দিয়ে লাথি দিয়েছো? আমি বলি, ডান পা দিয়ে স্যার। এ কথা শোনার পরপরই পাঁচ সাতজন দাড়ানো অবস্থায় বুট দিয়ে পায়ের ওপর লাথি মারতে থাকেন। আমি দাড়িয়ে ডান পা সামনে বাড়িয়ে দেই। পায়ের ওপর হাত রাখতেই হাতের ওপরও লাথি মারেন কয়েকজন। এভাবে অনেকক্ষণ লাথি মেরে ক্লান্ত সদস্যরা বলেন, দেখছেন স্যার, এর গায়ে কত শক্তি। আগের গুলোকে দুটি দেয়ার পরই নিচে পড়লেও এ পড়ছেনা। এসময় একজন সদস্য দৌড়ে এসে মুখের ওপর লাথি মারেন। এতে সমনের পাটির দাত থুতনির ভেতরে ঢুকে যায়। গলগলিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে। লাথি খেয়ে নিচে পড়েই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি।
দীন ইসলাম বলেন, এভাবে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় কতক্ষণ ছিলাম জানিনা। সংজ্ঞাহীন হওয়ার পরও নির্যাতন হয়েছে কিনা বলতে পারিনা। তবে একসময় চোখে মুখে পানির ঝাপটায় সংজ্ঞা ফিরে পাই। পরে ওই সেনা কর্মকর্তা নির্দেশ দিয়ে যান, কুত্তার বাচ্চাকে প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর মুখের ওপর একটি থাপ্পর দিতে হবে। নির্দেশ পেয়ে সদস্যরা পাঁচ মিনিট অন্তর গালের ওপর সজোরে একটি থাপ্পর মারতে থাকেন। আমি মনে মনে সময় গুনতে থাকে। একটি থাপ্পর খেয়েই বুঝতে পারি পাচঁ মিনিট হয়েছে। একসময় তাদের বিনীভাবে বলি আমার ডাল গালে আর দয়া করে থাপ্পর না দিয়ে বাম গালে দিন। এতে তারা বাম গালে থাপ্পর দেয়া শুরু করে। এসময় সদস্যরা ব্যঙ্গ করতে থাকেন, বলেন, তোদের চরিত্র ভালনা। আমরা দেশের জন্য হাড়ভাংগা খাটুনি করি আর তোরা মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করিস। তোর বান্ধবীদের ফোন নম্বর দে। আমি বলি আমার মোবাইল ফোন তো আপনাদের কাছে। ওখানে নাম দেখে ফোন নম্বর নিতে পারেন। অন্য সদস্য বলেন, এক পায়ে হাট। আমি হাটতে চেষ্টা করতেই একজন পেছন থেকে হাটু দিয়ে পেছনে আঘাত করে । এতে আমি কিছুটা সামনে গিয়ে উপুর হয়ে পড়ি। আরেক সদস্য কলমের মতো শক্ত জিনিস আমার আঙ্গুলের ফাকে দিয়ে চাপ দিয়ে শোয়া থেকে বসায়। ফের দাড় করায়। একসময় হাত উচু করা পর জোরে চাপ দেয়।
বিকালের দিকে মেজর সামাদ আসলে থাপ্পর পর্বের বিরতি হয়। মেজর সামাদ আসার পর নতুন পর্ব শুরু হয়। তিনি আমাকে একপায়ে দাড় করিয়ে রাখেন। নাম ঠিকানা জানতে চান। বলেন, জোরে কথা না বললে মুখ সেলাই করে দেবো। আমার গায়ে তখন জ্বর চলে এসেছে। কথা বলার শক্তি নেই। তার পরও চিৎকার দিয়ে কথা বলতে হয়। আমি তাকে বলি, স্যার নামাজ পড়তে চাই। তিনি জানতে চান, আমি সবসময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি কিনা। আমি বলি সব সময় পড়িনা। এতে তিনি বলেন, তাহলে পড়ার দরকার নেই। মেজর সামাদ আমার জন্য খাবার নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। খাবার আনার পর আমার চোখ খুলে দেয়া হয। আমি তাদের জানাই, স্যার আমি রোজা রেখেছি। এতে সামনে বসা কয়েকজন অফিসারের মুখ মলিন হয়ে যায়। তারা নিজেরা বলতে থাকেন, রোজা অবস্থায় তাকে এত মারধরে কি প্রয়োজন ছিল। তারা আমার রোজা ভেংগে ফেলতে বলেন। আমি বলি, স্যার আপনারা জোরাজুরি করলে আমি হয়ত রোজা ভেংগে ফেলবো। তবে আমি রোজাটা রাখতে চাই। মাগরিবের সময় সেনা কর্মকর্তারা ১০/১২ ধরনের ইফতার পাঠান। তবে কিছুই খেতে পারিনি। এরপর মাগরিবের নামাজ পড়ি অনেক সময় নিয়ে। এতে সদস্যরা বলতে থাকেন, মারের ভয়ে এত দেরী করে নামাজ পড়িস। রাতে ওই মেজর এসে বলেন, হ্যালো ব্রাদার হ্যাভ ইউ এ্যানি প্রবলেম? আমি বলি স্যার আমার গায়ে জ্বর এসেছে। একটু ব্যাথা নাশক ওষুধ দিলে ভালো হতো। তিনি নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে দুজন সেনা সদস্যকে ওষুধ আনতে ও রাতে খাবার দিতে নির্দেশ দিয়ে যান।
তিনি যাওয়ার কিছুণ পর সেনা সদস্যরা আবার মারধর শুরু করে। বলে ওষুধ খাওয়ার আর সময় পাস নাই। তোর ওষুধ আনতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। এখন সারা রাত এ অবস্থায় ডিউটি করতে হবে। আমি তাদের জানাই, স্যারকে বলে দেবো আপনারা রাতেও আমাকে মারছেন। এতে তারা ভয় পেয়ে মারধর বন্ধ করে। আমি তাদের কাছে জানতে চাই আমি কোথায় আছি তা বললে আমি কোন অভিযোগ করবোনা। তারা জানায়, এটুকু শুধু জান তুই এখন বনানী ক্যান্টনমেন্টে রয়েছিস। পরদিন সকালে আমকে নিয়ে প্রদর্শনী শুরু হওয়ার মতো অবস্থা। প্রচুর সেনা সদস্য আর কর্মকর্তারা আমাকে দেখতে আসেন। বলেন, এই কুত্তার বাচ্চাই সেনা বাহিনীর ওপর লাথি দিয়েছে। তারা একজন করে আসেন আর গালি দিয়ে মার দিয়ে যান। এরপর আমাকে গোছল করানো হয়। বলে, পাঁচ কলাম জানিস। তাহলে পড়ে নে। তোর ক্রস ফায়ারের নির্দেশ হয়ে গেছে। এখন তোকে মারলেও কেউ জানবেনা। মরার আগে মারের হাত থেকে এক প্রকার বেঁচে গেছিস। কারণ এখন সবাই ঈদের কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত।
দীন ইসলাম বলেন, ক্রস ফায়ারের কথা বলে আমাকে একটি গাড়িতে নিয়ে তোলে। এসময় আমি চিৎকার দিয়ে প্রাণ ভিক্ষা চাইলে তারা মুখ চেপে ধরে। ৭/ ৮ মিনিট গাড়ি চালানোর পর একটি খোলা জায়গায় নেয়া হয়। এসময় তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে, গুলি কি সামনে থেকে করবো না পেছন থেকে। আমি প্রাণ ভিক্ষা চাইতে থাকি। তারা এক পর্যায়ে চুপ হয়ে যান। আমি মৃত্যূর জন্য প্রহর গুনতে থাকি। বাতাসের শব্দে প্রতি মূহুর্তে মনে হতে লাগলো এই বুঝি গুলি এসে লাগলো। একপর্যায়ে তারা ট্রিগারে টিপ দেয়ার শব্দ করে। আমি সম্বিত হারিয়ে ফেলি। পরে তারা জানায়, তোর ক্রস ফায়ার মাফ হয়ে গেছে।
সেখান থেকে মেজর কামরুলের কাছে আমাকে নেয়া হয়। কামরুল বলেন, ক্রসফায়ার থেকে বাঁচতে হলে আমি যা বলবো তাই লিখবি। তাদের কথামতো আমি সাদা কাগজে অনেক কথা লিখি। পরে সকল কর্মকর্তার পা ছুয়ে সালাম করে সেনানিবাস থেকে বিদায় নেই। তারা আটক করার তিন দিন পর আমাকে শাহাবাগ থানায় হস্তান্তর করে। থানায় হস্তান্তরের দিন থেকে আমাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। মাঝে তিনটি দিনই আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।
দীন ইসলাম বলেন, থানায় নেয়ার পর এএসআই রব্বানী আমার কাছ থেকে সেনাবাহিনীর ফেরত দেয়া মোবইল ফোন নিয়ে যায়। এ ফোনটি সে আর ফেরত দেয়নি। পরে বলে, আমার টাকার দরকার। টাকা দিতে হবে। নয়তো চেয়ারে নিয়ে বসালে কিন্তু পিটামু। আপতত: ১০ হাজার টাকা দে। আমি আমার স্বজনদের ফোন করতে বলি। সে নিজের ফোন থেকে ফোন দিয়ে তাদের থানায় ডেকে নিয়ে দুদফায় ১৫ হাজার টাকা নেয়। এছাড়াও তাকেসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে চানখার পুলের হোটেলে নিয়ে খাওয়াতে হয়। এই এএসআই রব্বানীই আমাকে ফের সেনাবাহিনী নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারে দেবে এবং আরও ৩০টি মামলায় ফাসানো হবে বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৬৪ ধারায় মিথ্যা জবানবন্দী নেয়। এ বছরের ২৩ শে জানুয়ারী জেল থেকে মুক্তি পেলেও এ মামলা এখনো চলছে।
নির্যাতনের শিকার আরেক দীন ইসলাম
একই ঘটনায় গ্রেফতার হন সাংবাদিকতা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র দীন ইসলাম এ্যাঞ্জেল। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার রতনপুর গ্রামের মো. ইদ্রিস আলী শেখের পুত্র। এ্যাঞ্জেল গত ২৭ জুন রাজধানীতে মানবাধিকার সংস্থা অধিকার আয়োজিত নির্যাতনের বিরুদ্ধে ট্রাইবুনাল শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তার ওপর সেনা নির্যাতনের বর্ননা দেন। এতে তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ৭ ই সেপ্টেম্বর আমি টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পুরোডিসি এলাকাতে আমার এক আত্মীয়র বাড়িতে যাই। এসময় রাত ১১ টার দিকে ২৫ টি গাড়িতে সেনা সদস্যরা আমাকে গ্রেপ্তারের জন্য সদর উপজেলার কেওরা গ্রামে আমার বোন শাহানাজ আক্তারের বাসায় যাওয়ার সংবাদ মোবাইল ফোনে জানতে পাই। সেনা সদস্যরা আমার বোন, ভগ্নিপতি শাহ জালাল এবং বোনের দেবর আলী হোসেনকে বেদম মারধর করে। তারা ওই বাড়ির সকল সদস্যের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। আমাকে খুঁজে বের করতে তাদের গাড়িতে তুলে আমাদের রতনপুর গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত হয়। এসময় আমার বাবা ও ভাবীর মোবাইল ফোনও তারা ছিনিয়ে নেয়। ৮ সেপ্টেম্বর রাতে আমাকে খুঁজে বের করে দিতে আমার মা ও বাবাকে তারা ব্যাপক লাঠিপেটা করে। তারা আমার ভাবীকেও নির্যাতন করে। আমার বাবাকে নিয়ে রাত ৩টার দিকে বড় ভাই নজরুলকে মাকিহাটি গ্রাম থেকে আটক করে। এরপর একদল সেনা সদস্য কেওরা গ্রামে আমার খালার বাড়ি যায়। তারা আমার খালা রোমেনা আক্তার (৪২) কে লাঠি দিয়ে পেটায়। এতে তার পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে। আজও আমার খালা ব্যাথার কারণে কোন কাজ করতে পারেন না। সেনা সদস্যরা আমার বাবা ও ভাইকে নিয়ে পুরাডিসি গ্রামে গিয়ে রাত সাড়ে ৪ টায় আমাকে আটক করে। সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে তারা আমাকে মুন্সিগঞ্জের অস্থায়ী সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে সকাল ১০টায় একটি গাড়িতে তুলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। গাড়িতে বসেই চলে জিজ্ঞসাবাদ। যাত্রাবাড়ি পৌছলেই আমার চোখ কালো কাপড় দিয়ে শক্ত করে বাধে সেনা সদস্যরা। বিকাল তিনটার দিকে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে রাখা হয়। এরপর কয়েকজন লোক এসে আমাকে চারপাশ থেকে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। অন্যরা বুট জুতা পায়ে আমাকে মাড়ায়। প্রায় ২০ মিনিট ধরে নির্যাতন চলার পর আমার চোখ খুলে দেয়া হয়। এসময় আমি চারপাশে অনেক সেনা সদস্যদের দেখতে পাই। একটু পর আবার আমার চোখ বাধা হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে একজন সেনা কর্মকর্তা এসে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এসময় শুরু হয় আমার ওপর আরেক দফা নির্যাতন। হাত পা বাধা অবস্থায় চেয়ারের ওপর পা রেখে মাথা নিচু করে কাঠ ও বেতের লাঠি দিয়ে আমাকে পেটাতে থাকে। আমাকে দুদফায় মোট ১১ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়। এসময় একই কায়দায় আমার ওপর নির্যাতন চলে। দফায় দফায় পেটানোর ফলে হাত পা ফুলে যায়। শরীরের চামড়া ফেটে রক্ত বের হয়। সেনা সদস্যরা আমকে গোছল, দাত ব্রাশ বা সেভ করার কোন সুযোগ দেয়নি। একদিন কয়েকজন র‌্যাব সদস্য আমাকে ক্রস ফায়ার করা হবে বলে জানায় এবং ওজু করতে বলে। ব্যাথার কাতর অবস্থাতেই আমি অজু করি। তারা কালো কাপড়ে আমার চোখ বেধে গাড়ি চালাতে থাকে। আমাকে বলা হয়, তাদের কথা মতো বক্তব্য দিলে আমাকে ক্রস ফায়ার দেয়া হবেনা। আমি তা স্বীকার করি। এরপর তাদের হাতে তৈরী নোট আমাকে মুখস্ত করায় এবং আদালতে গিয়ে তা বলতে নির্দেশ দেয়। এ্যাঞ্জেল বলেন, আমাকে রশি দিয়ে হাত পা বেধে চোখ বাধা অবস্থায় দিনের পর দিন মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে। খাবার দিয়েই পেটানো হতো। একারণে খাবার দেখলেই ভয় করতো। দীন ইসলাম তার বৃদ্ধ বাবা মাসহ আত্মীয় স্বজনের নির্যাতনকারীদের বিচার দাবী করেন।
নির্যাতনের শিকার এক চেয়ারম্যান
যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার ১৭ নং মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারমান এসএম আক্তার ফারুক মিন্টু। ২০০৭ সালের ৬ জুন তাকে আটক করে যশোর শহরের শংকরপুর যৌথ বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়। আক্তার ফারুক জানান, আটক হওয়ার পর আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেনা সদস্যরা। এর কিছুই আমার জানা ছিলনা। রাতে তাকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। ১২ টার দিকে একজন সেনা সদস্য দড়জা খুলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে টেবিলের ওপর ফেলে দিয়ে এলোপাতাড়ি লাঠি দিয়ে পেটাতে আরম্ভ করে। সঙ্গে চলে গালিগালাজ। পাঁচ ছয় মিনিট নির্যাতনের পর বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে চলে যায় সে। কিছুক্ষণ পর আরেক সদস্য আসে। সে বলে আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখ। আমার চেহারাটা যেমন কালা মনটা আরো কালা। সেনা সদস্যরাও পেছনে বসে আমাকে কাইল্যা বলে ডাকে। আমি তোকে এমন মার দেবো যে জীবনেও তুই আমার চেহারা ভুলবিনা। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি আমার অপরাধ কি? এতে সে আমার অন্ডকোষে সজোরে লাথি মারে। আমি দম নিতে ভুলে যাই। আমার অন্ডেকাষ ফেটে যায়। আমার দুই উরু বেয়ে রক্ত পড়তে আরম্ভ করে। সে আমার প্যান্ট খূলে ফেলে। আমাকে উপুর করে ফেলে বুটের লাথি আর লাঠিপেটা করতে থাকে। এক পর্যায়ে অন্য সদস্যরা গরম ডিম নিয়ে আসে। তিন জনে মিলে আমার মলদ্বারে গরম ডিম ঢুকানোর চেষ্টা করে। এতে রক্তপাত শুরু হলে তারা আমকে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। রাত চার টার দিকে আমাকে বাথরুমে নেয়া হলে আমি রক্ত ধুয়ে কাপড় পড়তে পারি। পরদিন সন্ধ্যায় অল্প কিছূ ভাত খাওয়ার পর হাত ধোয়ার সময় পেছন থেকে আমার চোখ ও দুহাত পিঠমোড়া করে বাধা হয়। এরপর একটি গাড়িতে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আমার কাছে অস্ত্র চাওয়া হয়। আমি কোন অস্ত্র নেই বললে ফের নির্যাতন শুরু হয়। তিন-চার জন সেনা সদস্য আমার পায়ের নিচে পেটাতে আরম্ভ করে। দুই ঘন্টা এভাবে তালুতে হাটুতে আর পায়ের নিচে পেটাতে থাকে। আমি মরন যন্ত্রণায় পানি চাইলে তারা পানির বদলে মুখে কাপড় গুজে দেয়। মুখের কাপড় ফেলে দিলে তা আবার পুরে দিয়ে মারতে থাকে। ঘন্টা খানেক পর তারা আবার ফিরে আসে। আমার কাছে অস্ত্র চায়। আমি বলি আমার কাছে অস্ত্র নেই। এবার আমার মাথা হাটুর কাছে শক্ত করে বাধে তারা। পিঠের ওপর অন্তত একশটি লাঠির আঘাত ও দুইশ লাথি মারে। এক পর্যায়ে আমি নিস্তেজ হয়ে যাই। তারাও দুর্বল হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে একই প্রশ্ন। আমি একই জবাব দেই। এসময় আমার পায়ের ওপর দুজন করে চারজন উঠে দাড়ালো। এরপর আমার মাথায় কি একটি জিনিস ঠেকানো হলে আমি শুন্যে উঠে গিয়ে ছাদে আঘাত পেলাম। তারপর আর কিছূ জানিনা। সংজ্ঞা ফিরে পাওয়ার পর দেখি ওরা আমার হাত পায়ের নখ প্লাস দিয়ে তুলে ফেলছে। আবার সংজ্ঞা হারালাম। এবার নাকের ভেতর গরম পানি ঢালতে শুরু করে তারা। পরে আমার চোখ বেধে একটি মুখোশ পরায়। পরে আমাকে ক্রস ফায়ারে দেয়ার জন্য একটি গাড়িতে ওঠানো হয়। আমি বলি স্যার, আমার জীবনটা ভিক্ষা দেন। গাড়ি অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। একজন বলে ভাই আল্লাহ আল্লাহ করেন। দুই ঘন্টা গাড়ি চলার পর আমাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়। একটি বেঞ্চের ওপর বসিয়ে রেখে তারা বলে, যাওয়ার ১০ মিনিট পর যেন চোখ খুলে আত্মীয় স্বজনদের খবর দেয়া হয়। চোখ খূলে দেখলাম তারা আমাকে কুমারঘাটা এলাকায় ফেলে গেছে। আমার পাশে তারা মোবাইল ফোন রেখে যায়। হাত দিয়ে মোবাইল ফোন টিপে কল করার মতো আমার শক্তি ছিলনা। হাতের নখগুলো তারা আগেই তুলে ফেলেছে। পরে অনেক কষ্টে দাত দিয়ে মোবাইল ফোন চেপে আমি স্বজনদের খবর দেই। আমাকে প্রথমে খুলনার ইসলামিক হাসপাতালে পরে অন্য একটি হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা রোগী বাচবেনা বলে ফিরিয়ে দেন। পরে আমাকে গোপনে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৫ দিন চিকিৎসার পর আমার হাটু থেকে পা পর্যন্ত অপারেশন করে পচা মাংস আর পুঁজ বের করা হয়। দুমাস পর ক্রাচে ভর দিয়ে একটু হাটতে পারি। এখনও দুখ কষ্টে কোনমতে বেঁচে রয়েছি।
পুণশ্চ:
আমাকে আমার সহকর্মীরা বলতেন আমি গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমর্থক। আমি বিডিআরের ডালভাত কর্মসূচীর সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলাম। ভোক্তা অধিকার আইনের খসড়ার সদস্য ছিলাম। এসময় অনেক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে আমার হৃদ্যতা তৈরী হয়েছিল। তাদের অনেকে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত হয়েছেন। মেজর হুমায়ুন, মেজর মামুন ভাইকে অফিস থেকে মাঝেমাঝেই ফোন দিতাম। ডালভাতের ও সীমান্তে গন্ডগোলের তথ্য নিতাম। তাদের জন্য এখনও আমার মন খারাপ হয়। আমি এসব এজন্য বলছি আমি তথাকথিত আতেলদের মতো সেনা বাহিনী বিরোধী নই। আমাদের গর্ব করার মতো একটি প্রতিষ্ঠানই এই সেনা বাহিনী। তবে যে কয়েকজন সদস্যদের কারণে এ বাহিনীর ভাবমূর্তিক্ষুন্ন হয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।

প্রথম কিস্তি....

Click This Link

২য় কিস্তি
Click This Link

৩য় কিস্তি
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৩
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×