আমার বয়স তখন ১৯ বছর। মাত্র কৈশোর পেরোলাম, ঠিক সে সময় আগমন ঘটে ছোট্ট একটি ছেলের। ওর বয়স তখন পাঁচ বছর। জীবনে প্রথম এত সুদর্শন চেহারার কাউকে কাছ থেকে দেখলাম। সে যেন পরম আনন্দের অনুভূতি। তার ছোট ছোট হাত, ছোট ছোট পা, আধো সুরে কথা বলা, সবকিছু এতটাই আকর্ষণ করেছিল যে, ও হয়ে গেল একটা হতাশ ছেলের ভালো লাগার বিশাল সমুদ্র। ওকে কাছে পেয়ে বুকের মধ্যে চেপে থাকা কষ্টগুলো ও ভুলতে থাকলাম। সারাদিন ওকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি, যখন ওর পাশে থাকতাম না ওকে নিয়েই চিন্তা করে রাত কাটিয়ে দিতাম। ও ছিলো ঠিক আমার মতো, আমাকে দেখলে সে খুব খুশি হয়ে যেতো। মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে আমাকে সাফাত ভাইয়া বলে ডাকতো। হঠাৎ ওর বাসা থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতাম, তখন খুব খারাপ লাগতো। কিছু করতে না পেরে অশান্তি লাগতো। ওর সাথে সারাদিন খেলতে ইচ্ছা করতো। তবে বিকেলবেলা, ওর সাথে খেলেই সময় অতিবাহিত করতাম। ২৬ নভেম্বর ২০১৭, ওই দিনটি আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে। ওইদিন ওকে নিয়ে ওর পরিবারের সাথে জাকারিয়া সিটিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফটোসেশন, ঘুরাঘুরি সবকিছুই ছিলো ওকে নিয়ে। তাই দিনটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে ছয় মাস কেটে গেলো। ৩০ নভেম্বর ২০১৭, ওকে ফেলে আসলাম, আমার অবস্থা কি হবে, বুঝতেই পারছেন। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে দিলাম, ওর ফুফু আমাকে ভীষণভাবে শান্তনা দিলো। সারা শরীর কাঁপতে কাঁপতে ভীষণ খারাপ অবস্থা হয়ে গেলো। ঠিকমতো পানিটা ও খেতে পারছিলাম না সেদিন। শেষবার যখন ওকে জড়িয়ে ধরলাম, আমার শরীর আবারো কাঁপতে শুরু করলো। ওকে বিদায় জানিয়ে আসলাম, সাইকেল রাইড করে বাসায় আসলাম, সারা রাস্তা কাঁদলাম, আকাশের দিকে চেয়ে নিজেকে খুব হতাশ মনে হতে লাগলো। সেদিন দুর্ঘটনা করার সম্ভাবনা ছিলো, হয়তো কারো দোয়ার কারণে আমি সেদিন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাই। বাসায় ফিরলাম, ফিরেই দিলাম ঘুম। স্বপ্নে ও ব্যালেন্স হারিয়ে ফেললাম। বিকট শব্দ করে ঘুম থেকে উঠলাম। পরে ঠিকমতো ঘুমোতে পারলাম। এটা সত্যি ভালোবাসার মানুষগুলো সবসময় কাছে থাকেনা। আগে শুনতাম, দীর্ঘদিন দূরত্বে সম্পর্কগুলো মলিন হয়ে যায়, কিন্তু আমার ওর সাথে একটু ও ভালোবাসা কমে নাই, এবং কমবে ও না। আমার ভাইটা, এতোটা ভালো থাকুক, যতোটা আমি কল্পনা করি সবশেষে বলতে চাই, আমার মনটা খোলা আকাশের মতো, ভালো মনের মানুষেরা, একটু পাগলাটে ও সরল স্বভাবের হয়।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



