somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Returns of হৈমন্তী (একটি আষাঢ়ে গল্প)

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু
আমার বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না ।
তিনি দেখিলেন যে, তাহার গুনধর পুত্র ধানমন্ডি লেকে লুকাইয়া লুকাইয়া প্রেম
করিয়া বেড়ায়, তথাপি কন্যার পিছনে DU ,
BUET , DMC এর পোলাপাইন ঘুর ঘুর করে যা তাহাকে অস্থির করিয়া তুলিয়াছিল ।

আমি ছিলাম ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর
ছাত্র। সুতরাং ২০০০০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক যন্ত্রও কিভাবে সাহসের সহিত নাড়াচাড়া করিতে হয় তাহা ভালই জানিতাম । কিন্তু বিবাহের
কথা শুনিবা মাত্রই আমার ভিতরে ভয়ানক আনন্দ এবং উত্তেজনা কাজ করিতেছিলো।

হবু বউয়ের নাম ছিল হৈমন্তী। শর্টকাটে সবাই হৈম বলিয়া ডাকিত। বিবাহের আগে তাহার হট এন্ড সেক্সি ছবি দেখিয়া আমার মন তাহাকে কাছে পাবার আশায় নাচিয়া উঠিল । কিন্তু সবই যে ফটোশপের আকাম, ইহা বুঝি নাই । বিবাহের পূর্বেই হৈমর সহিত পার্কের ঝোপ আর সিনেমা হলের চিপায় ডেট করিবার ব্যাপক খায়েশ ছিলো, কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি । আজকাল কোন চিপাচুপা ফাকা জায়গা পাওয়া যায় না।

যাহা হউক, অনেক
যল্পনা কল্পনা শেষে আমাদের বিবাহ হইল ।
বিবাহের রাত্রে তাহার হাত
ধরিয়া আমি কহিলাম, ” আমি পাইলাম, আমি তোমাকে পাইলাম । ”
হৈম কহিলো, ” শুধু আমারে না, সাথে দশ লক্ষ
টাকা আর আট ভরি স্বর্ণও পাইছো ।“

কথা বেশী বাড়াইলাম না ।
তাড়াতাড়ি করিয়া ফেসবুকে বসিয়া স্ট্যাটাস
দিলাম, ” এই মাত্র হৈমর ঘোমটা তুলিলাম । “
বলাবাহুল্য, আমার বন্ধুবান্ধব, ভার্সিটির জুনিয়র সিনিয়র সবাই পরের স্ট্যাটাসটি পড়িবার
আশায় সারারাত অনলাইনে থাকিল । কিন্তু
শেষ রাত্রিতে যখন স্ট্যাটাস দিলাম ” মেকাপ
উঠাইতে উঠাইতেই রাত পার হইয়া গেলো ” ,
তখন তাহারা এক প্রকার হতাশই হইল ।

যাহা হউক, দুই তিন বারে ইয়ার ফেল খাইয়া আমি যখন ছোট ভাইদের সহিত ক্লাশের পিছনে বসিয়া তাস পিটাইতাম তখন হৈমর দেওয়া নকলের আশ্বাস পাইয়া ব্যাপক উৎসাহে পড়াশুনা শুরু করিলাম । শেষ পর্যন্ত
B.SC. ইন ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ
করিয়া নিকটস্থ একটি কোম্পানীতে কাজ
নিলাম । সারাদিন নষ্ট
যন্ত্রপাতি গুতোগুতি করা ছাড়া আমার তেমন কোনো কাজ ছিল না ।

এদিকে আমি বাসায় থাকিতাম না, আর এই
সুযোগে হৈম আর আমার মা বিস্তর সমস্যা বাধাইলো । আমার মা আর মাসিরা সারাদিন স্টারপ্লাস আর জি বাংলায় বস্তাপচা সিরিয়াল দেখিতে চাহিত । কিন্তু হৈম শুধু ইংলিশ
মুভি দেখিতে চাহিত । আমার মা-মাসীরা সারাদিন ষড়যন্ত্র করিতো কিভাবে হৈমকে আইক্কাওয়ালা বাঁশ
দেওয়া যায় !

হৈমর নিঃসঙ্গতা কাটাইতে তাহার বাপ
আমাকে ডাকিয়া একখানা ডেবিট কার্ড ধরাইয়া দিয়া কহিল, “ওকে মাঝে মাঝে বসুন্ধরা আর পিঙ্ক
সিটি তে লইয়া যাইয়ো । “
মুখে বলিলাম, যে আজ্ঞে, তলে তলে কহিলাম, “
মুড়ি খাও শ্বশুর আব্বা, মুড়ি খাও ! ” :p
কিন্তু আমার শ্বশুর আব্বাও কম ব্রিটিশ ছিল
না , সে আমার কুমতলব বুঝিতে পারিয়াছিল ।
তাই ওই ডেবিট
কার্ডে সে কোনোদিনই টাকা পাঠায় নাই ।

এদিকে হৈমর উপর আমার পরিবারের অত্যাচার
বাড়িতে থাকিল । আর রাতে ওকে সোহাগ
করিতে গেলে ওই অত্যাচার আমার সহ্য
করিতে হইত । বাধ্য হইয়া হৈমকে সময়
কাটাইতে একটা ল্যাপটপ আর একটা বাংলালায়নের মডেম কিনিয়া দিলাম ।
সে তাহার বাপের সহিত চ্যাট করিবার
কথা বলিয়া ধুমসে পোলাপাইনরে রিকোয়েস্ট
পাঠাইত আর চ্যাট করিত।

দিন রাত চ্যাট করিতে করিতে হৈম
শুকাইয়া যাইতে লাগিল ।
আর আমি ২-৩ মাস পর পর চাকরি বদলাইয়া বদলাইয়া নতুন কোম্পানীতে যাইতে লাগিলাম । আমার
বেতনও বাড়িতে থাকিল । অতঃপর এক ইন্ডাস্ট্রির মালিকের মাইয়ারে পটাইয়া তাহার
হৃদয়পটে জায়গা করিয়া লইলাম।

কিন্তু একদিন সব জানাজানি হইয়া গেল ।
আমার ফ্যামিলির সবাই হৈমর কুকীর্তির কথা শুনিয়া ফেলিল । তাহারা হৈমর বাপ মা তুলিয়া গাল পাড়িতে লাগিল ।
হৈমও চেতিয়া গিয়া কহিল,” আপনাদের পুত্রও
তো কম লম্পট নহে, সেও
তো পরকীয়া করিয়া বেড়ায় । “
আমিও চ্যালেঞ্জ করিলাম, ” প্রমান
দিতে পারিলে কাটিয়া ফেলিবো । “
হৈম কহিলো, ” কী কাটিবা ? “
আমি বললাম, ” ওইটা “
হৈম উত্তর দিলো, ” আর কী কাটিবা ? আছে টাই
বা কী ? “
আমি বলিলাম, ” যতটুকু আছে , ততটুকুই কাটিবো ।
Any problem ? “
কহিলো, ” তবে কাটার জন্যে প্রস্তুত হও ।
যাহার সহিত তুমি প্রেম করিতে, আমি তাহার
ফ্রেন্ড লিস্টে আছি । তাহার ওয়ালে তোমার
সব পোষ্ট আমি দেখিতাম, এতদিন কিছু
বলি নাই, কিন্তু আমি আর সহ্য করিবো না । “
এই বলিয়া হৈম আমার উপর দা নিয়া ঝাপাইয়া পড়িল, আমিও কম কি !
দিলাম মাইর ।

এর কয়েক দিন পর হৈম এক ছেলের
সহিত ভাগিয়া গেল, আমার রাস্তাও ক্লিয়ার
হইল । আমি নতুন বউ ঘরে আনিলাম, সেই ইন্ডাস্ট্রির মালিকের মেয়ে ।

কিছুদিন পর আমার শ্বশুর আব্বা পটল তুলিল, আর আমি হইলাম পুরা আস্তা একটা ইন্ডাস্ট্রির মালিক ।
সাথে গাড়ী পাইলাম, আর নারীও পাইলাম । আর
আনন্দের সহিত বাচ্চা ফুটাইতে লাগিলাম ।:D

[কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "হৈমন্তী" গল্পের ছায়া অবলম্বনে রচিত]

বি:দ্র: সবচরিত্র এবং কাহিনী কাল্পনিক।কোন জীবিত, মৃত, অর্ধমৃত বা কারো চৌদ্দ গুষ্টির সহিত মিলে গেলে কেউ দায়ী নয়। :-) :-P
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×