somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কষ্মিন কালের কথা

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি বাড়ী পালানো ছেলে

আমি বেশ কয়েকবার বাড়ী থেকে পালিয়েছি। বাড়ী থেকে পালানোটা আমার কাছে বেশ রোমাঞ্চকর মনে হতো। আমি ব্যপারটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতাম। আমি খুব ছোট বেলা থেকে বাড়ী পালানো শুরু করেছি। প্রথম প্রথম ছোট খাট পালানো পালাতাম। যেমন আব্বুর ভয়ে আসরের দিকে আমি আর নেই। সবাই খোঁজাখুজি শুরু। আর আমি সেটা দেখে বেশ পজা পেতাম। তখন যেটা হলো আমি পালাতাম আমাদের বাড়ীর আসপাশের কোন আত্মিয় স্বজনের বাড়ীতে। আব্বু বা আমার কোন চাচা বা চাচাতো ভাই আমাকে গিয়ে নিয়ে আসতেন এই প্রতিশ্র“তি দিয়ে যে- আমি যে অন্যায় করে পালিয়েছি সেই অন্যায় ভবিশ্যতে যদি আর না করি তা হয়ে এবারের জন্য মাফ করে দেয়া হবে আর এই যে সন্ধার পরে পড়তে না বসে এতক্ষন যে এই বাড়ীতে লুকিয়ে ছিলাম তার জন্য কিছু বলা হবে না যদি আমি গিয়েই পড়তে বসি। কখনও কখনও মা এই তথ্যটা আবার কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন আমার কাছে। তখন ঘরে যেতাম। আব্বু কিছু বলতেন না। আবার যদি কখনও কখনও অনেক দিনের জমানো রাগ থাকতো তা হলে আবার মাইরও খেতে হতো। খুবই স্বাভাবিক আব্বু যখন বাড়ীতে না থাকতেন তখন একমাত্র আমি আমিই হতাম বাড়ীর রাজা। একমাত্র আমার সেঝ চাচা রুস্তম কে ছাড়া কাউকে তোয়াজ করতাম না। তবে উনি কোন দিনই আমার গায়ে হাত তোলেন নি। তবে এক দিন তুলেছিলেন সেই গল্প আরো পরে পলব। তো আব্বু যখন বাড়ীতে থাকতেন না তখন আমি আমার ইচ্ছা মতো ইচ্ছা গুলো পুরন করতাম। খুব সম্ভবত ১৯৯৪ সালে আব্বু ঢাকায় গেলেন বিএড করতে। দশ মাসের জন্য। আমার খুশি দেখে কে। তখন আমি আমার বাড়ীর রাজা আমার প্রজা সবাই। উজির এ আজম বলেন প্রধান সেনাপ্রতি কিংবা প্রধান মন্ত্রিই বলেন তা ছিলো আমার ছোট ভাই সাইফুর রহমান শিশির। ওর আরেকটা সুন্দর নাম আছে, কচি। আমার দাদী রেখেছিলেন। তো আব্বু যখন পড়তে গেলেন তখন আমি প্রায়ই স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করতাম না। খালে মাছ ধরতে যাওয়াটা কিংবা কাইচ্চা খেলানোটাই আমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ন মনে হতো। বিকেলে পাতাকাটা গ্রামে যেতাম হাডু-ডু খেলা দেখতে। তখন আমি নিজেও বেশ হাডু-ডু খেলতাম। তো সে সময়ের এক বর্ষা কালের কথা। কি একটা বিষয় নিয়ে এমন হয়েছে যে আমি ঘরে ঢুকলেই মা ঝাপিয়ে পড়বেন। আমি আর খেলা শেষে ঘরে না ফিরে পাতাকাটাতেই আমার এক দূর সম্পর্কের নানির বাড়ীতে গিয়ে উঠলাম। নানির মুখে একটাও দাঁত ছিলো না। বাঁশের চোং আর বাটাল দিয়ে অনেক সময় ধরে পান কুচি কুচি করে তার পর খেতেন। আমি তার সেই পান খুব খেতাম। আমার ঠোট রাঙা হতো দেখে উনি খুব মজা পেতেন। তো আমি সেই নানীর বাড়ীতে গিয়ে লুকালাম। ভাবলাম মা এখানকার খোঁজ কোন মতেই পাবেন না। আর যদি কোন ভাবে ধারনাও করতে পারেন যে আমি এই নানির বাড়ীতে আছি তাহলেও আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো জন শক্তি মায়ের কাছে এখন নেই। কিন্তু রাত যত বাড়ছিলো আমার ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয় তত বাড়ছিলো। আমাদের গ্রাম ফুলঝুড়ী আর পাশের গ্রাম পাতাকাটায় তখন তো বিদ্যুত ছিলোই না এখনও নেই। তো সন্ধা, চার দিকে বেশ ঘুট ঘুটে অন্ধকার। আমি আর নানি বসে আছি। নানী চান সওদাগরের কিচ্চা বলা শুরু করলেন। আমি সেই পরিবেশটার বর্ননা দেয়ার লোভ সামলাতে পারছিনা। নানী তার স্বামীর পুড়ানো কাঠের একটা প্রাসাদ তুল্য বাড়ীতে থাকতেন। থাকেন দোতলা পাটাতনে। ঘরে আলো বলতে হারিকন। সেই আলোর বিপরীতে বলে দন্তহীন এক বুড়ী পান ছেঁচতে ছেঁচতে নেশাতুর গল্প বলছে আর আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি। হঠাৎ আমার কানে বুড়ীর গল্পের সাথে একটা চিকন বাশীর সুর ভেষে আসতে লাগল। আমার কলিজাটা যেনো উল্টে গেলো। এই বাঁশী বিষের বাঁশী। এ বাশী আমার জন্য ভালো নয়। বাঁশী ধীরে ধীরে আরো কাছে আসতে শুরু করলো। আমার প্রান আরো উতলা হয়ে উঠলো। বাঁশী আরো কাছে আসলো, আরো কাছে। আমি তো মেয়ে নই তবে কেন এই বাঁশী শুনে এত উতলা? কারনটা হলো আমি বংশি বাদককে চিনি। এই বংশি বাদক আসলে আমার মায়ের পাঠানো কোতোয়াল। বাশী বাজতে বাজতে আস্তে আস্তে নানীর দরজায় এসে কড়া নাড়ল। যা ভেবে ছিলাম তাই। আমার মায়ের কোতয়াল, দুজন কোতয়ার। একজনের নাম আফজাল আরেক জনের নাম শহিদুল। এরা আমার চেয়ে বয়সে গায়ে পায়ে অনেক বড়। এরা দুজনেই অসম্ভর ভালো বাঁশি বাজায়। দুজনই বেশ ভালো বন্ধু। আফজাল আমার প্রতিবেশী ভাই আর শহিদুল দুর সম্পর্কের ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে। মানে আমার ভাতিজা। বয়সে বড় দেখে আমি আপাতত চাচা ডাকি। একদিন তো বড় হব তখন শহিদুইল্লা বলে ডাকব। যাই হোক এদের সাথে যুদ্ধে যাওয়াটা বোকামী ভেবে সুবোধ ছেলের মতো ঘরের ছেলে ঘরে রওনা দিলাম। বুড়ীর গল্পের বাকী অংশ পরে স্কুল ফাঁকি দিয়ে শোনা যাবে। এটাই ছিলো আমার প্রথম বড় বাড়ী পালানোর গল্প। আর আমার বাড়ী আসার পর কি হলো তাতো নিশ্চই জানতে ইচ্ছে করছে তাই না? চোখ রাখুন এই পাতায় একদিন ঠিকই পেয়ে যাবেন।

Saiful Baten Tito সাইফুল বাতেন টিটো
৫ এপ্রিল, রবি বার
ঢাকা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×