ক্লাস সিক্স হইতে শুরু করে ক্লাস টেন পর্যন্ত স্কুলে সারা বছর টিফিন নিয়ে যেতাম। রমজান মাস আসলেও নিয়ে যেতাম, তবে সবাই মিলে আর খাওয়া হত না। ক্লাস টেন হইতে টিফিন নেওয়া বন্ধ ছিল, তাই বন্ধুরা দুপুর বেলা চনা,মুড়ি নয়তো চমুচা, সিঙ্গারা খেয়ে দুপুড়ের ক্ষিদাটা নিবারণ করতাম। কিন্তু রমজান মাসে একসাথে খাওয়া হত না, তাই যে যার মত করে খেয়ে চলে আসতাম। সন্ধ্যায় বাসায় যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে ইফতার কিনে নিয়ে যাইতাম। কারন রমজান মাসের সময় বাহারি ইফতার মন কেড়ে নিত। মা বকা দিত, বলত বাড়িতে তো বানানো হয় প্রায় সময়, তারপরেও বাইরে হতে আনিস কেন! মা যাই বলুক রমজান মাসের ইফতার বাকি বছর গুলার চাইতে মজাই আলাদা।
আমাদের গ্রামের শহরে ঝাল বিতান নামের ঐ ছোট্ট দোকানটার প্রতি মানুষের এত আগ্রহ ভীড় সামলানো মুসকিল। প্রথমে টং দিয়ে কয়েকটা চেয়ার, টেবিল দিয়ে দোকানটার যাত্রা শুরু। আস্তে আস্তে দোকানটা অনেক বড় হল, তবে সেই আগের মত স্বাদ, সেই দোকান, সেই মুরব্বি। স্কুল হইতে কলেজ জীবন কিংবা বাজার করতে গেলে অথবা যে কোন কাজে শহরে যাওয়া হলে, ঐ ঝাল বিতান ই হয় আমাদের ক্ষিদা নিবারণের উপযুক্ত স্থান। বন্ধুরা সবাই মিলে ওখানে আড্ডা হইতে শুরু করে সব ঐ ঝাল বিতানকে ঘিরে।
রমজান মাস ত্যাগের মাস, তাই ত্যাগ করুন খাবার নয়, মনের পাপ, আবর্জনা, হিংসা বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি, কুপাকুপি,জাতি ভেদাভেদ, ধর্মান্ধতা, চুরি ডাকাতি, ঘুষ, মিথ্যাচার ইত্যাদি ইত্যাদি। দেশটা আমাদের সকলের। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ, এ কথা খাতায় কিংবা সংবিধানে সীমাবদ্ধ না রেখে আসুন কাজে কর্মে করে দেখাই। এখানে কেউ বানের জলে ভেসে আসে নাই। তাই ধর্ম নিয়ে মানুষকের বিবেচনা করবেন না, কর্ম দিয়ে বিবেচনা করুন। দেশটা আপনার, আমার সকলের। আমরা চাইলেই সোনার বাংলাকে সোনাতে গড়তে পারি। আবার চাইলে পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান বানাতে পারি। মানবতার জয় হোক সবখানে। জীবনে একটা কথা মনে রাখবেন--
“ধর্মের কল্যাণের জন্য মানুষ নয়, মানুষের কল্যানের জন্য ধর্মের সৃষ্টি”
কাছে এবং দূরের, যে যেখানে, যে অবস্থায় থাকুন না কেন সবাইকে মাহে রমজানের ত্যাগীময় শুভেচ্ছা ।।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:৪৮