বয়স যখন ৪ তখনই বাবা হারিয়েছি।অনেকে সেটা জানে না তা আমি ভাল করে জানি। কখনো প্রয়োজন ও মনে করি নাই।বাবার হাত ধরে স্কুলের যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হই নাই।কিন্ত আমার মা আমাকে আর আমার ছোটভাইকে কখনো বাবার ঘাটতি বুঝতেই দেননি।আম্মু একটা স্কুলের টিচার।মাত্র ৩৫০০ টাকার বেতনে আম্মু আমাদের ৩ সদস্যের সংসার চালাতেন।
দুই মামা জসিম আর হুমায়ুন পুরো শিক্ষাজীবন এর খরচ চালিয়েছেন।আমার বাবার দায়িত্ব এরা দুজনই আজ পর্যন্ত পালন করেছেন।আম্মু চাইলেই বিয়ে করতে পারতেন কিন্ত দুই ছেলের দিকে তাকিয়ে আর ওই পথ বেছে নেননি।এমন ও দিন দেখেছি যখন রাতে ২ জনের ভাত খাওয়ার সৌভাগ্য হত।আম্মু সুন্দর অভিনয় করে বলত ও আমার খিদা নাই,গ্যাস্ট্রিক এ সমস্যা করতেছে তোরা দুই ভাই খেয়ে নে ।
শহরে এসে প্রথমে এমনও দিন গেছে যখন পকেটে টাকা ছিল না। হোটেলে ভাত খাওয়ার জন্য দরকার ৩৫ টাকা কিন্ত পকেটে ছিল ২০ টাকা। তো কি হয়েছে ২০ টাকা দিয়ে পাউরুটি আর কলা খেয়ে রাত কাটিয়ে দিয়েছি । হ্যাঁ আমি অনেক কেঁদেছি ও রাতের পর রাত চোখের নিচে কাল দাগ আছে দেখলেই বুঝতে পারবেন। ভাবতাম এই কষ্ট আমার মায়ের কষ্টের সামনে কিছুই না।
সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া ছেলেটি আজ শাটল ট্রেনে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয় এ যায়।
২০০ টাকা দিয়ে হকারস থেকে শার্ট কেনার ছেলেটি আজ ব্রেন্ডের শার্ট পরে। উপর ওয়ালার দয়াতে, মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির ছেলেদের মন শত কষ্ট থাকলেও মুখে হাসিটা ঠিকই থাকে। আজকের এই ঝলমলে মাহাতের চাবিকাঠি ৩ টা জিনিস ই-
●☞ শিক্ষা।
●☞ কষ্ট।
●☞ মা।
জীবনে কষ্ট থাকবে ই।পাহাড় সমান কষ্ট নিয়েও হাসি মুখে সামনে এগিয়ে যেতে পারলেই সফলতা আসবেই।নিজের ইনকামের টাকা দিয়ে মা কে ৭০০ টাকার শাড়ি দিছি এই ঈদে। পুরো ঈদে আম্মু শাড়িটা পড়ছে আর সবাইকে বলছে আমার ছেলে আমার জন্য শাড়িটা আনছে। মা জিনিসটা আসলেই পারেও এতো কষ্ট করতে । উপর ওয়ালা আমার মা রে বেহেশত রাখুক।
যদি লিখতে যায় তো খুব ছোট হয়ে যাবে, তাই বলে কিছু না কিছু তো লিখতেই হয়। নিজের জীবনের বাস্তব গল্প একমাত্র তারা লিখতে পারে, যাদের সৎ সাহস থাকে এবং অতীতকে কৃতজ্ঞতার সহিত আনন্দ সহকারে মনে রাখে এমন সব মানুষ। শুভ কামনা রইল তোমার প্রতি। জীবনে অনেক বড় হও। সৎ থাক, সৎ ভাবে জীবন যাপন করে মায়ের মুখে হাসি ফুটাও সাথে সমগ্র বাংলাদেশের। আমি নিশ্চিত তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ। ধর্মান্ধ, দূর্নীতি , কালোবাজারি, ভেজাল মুক্ত একটি সমাজ, একটি জাতি, একটা দেশ উপহার দিবে হাতে হাত রেখে। আলো আসবেই, আজ না হয় কাল, আসতেই হবে।
তোমার মা সহ পৃথিবীর এমন সব মায়েদের প্রতি রইল আমার অফুরন্ত ভালবাসা সহ শ্রদ্ধা অবিরত। মা তোমাদের অনেক অনেক ভালবাসি।
মূল লেখা এবং গল্পঃ মাহতাব সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২৬