গত কয়েকদিন থেকে সারা দেশে জামায়াত-শিবির আক্রমনাত্মক ভূমিকা নিয়েছে। তাদের হামলায় আহত হয়েছে অনেক পুলিশ সদস্য। তারা গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। তাদের এ কর্মকান্ড কোনক্রমেই সমর্থন যোগ্য নয়। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুবই আশ্চর্য হচ্ছি, এতোদিন তারা কিছু করেনি, এখন করছে কেন? তারা যুদ্ধাপরাধীদের (নাকি এ অপরাধে অভিযুক্ত) বিচার কে বাধাগ্রস্থ করতে কেন এই পদক্ষেপ নিয়েছে?
যদি নিজামী-সাইদী যুদ্ধাপরাধ করে থাকে তবে তো শাস্তি পাবেই। বাংলার মানুষ তাদের শাস্তি দিবে। এ প্রসঙ্গে কথা হলো আমার পরিচিত এক শিবিরকর্মীর সাথে। আমি বললাম, আপনারা সারা দেশে যা শুরু করেছেন তার জন্য তো এই দেশে থাকতে পারবেন না। সে উল্টাবললো, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরাও চাই বিচার হোক। তবে তা সুষ্ঠভাবে হোক। কেন আইনজীবিকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে? কেন সরকারপক্ষের সাক্ষী যখন সাইদীর পক্ষে কথা বলতে এলো তাকে গুম করা হলো? কেন আত্মপক্ষের কোন সমর্থন দেয়া হচ্ছেনা?
আমি বললাম, আপনারা সরকারপক্ষের সাক্ষীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কথা বলতে বাধ্য করতে এনেছিলেন। তার উত্তর, ভাই আজব গল্প শুনালেন। যেখানে সরকার ক্ষমতায়, আমাদেও উপর সরকার খড়গহস্ত, যেখানে সরকার তাকে প্রোটেকশন দিতে পারে সেখানে আমরা কিভাবে ভয়-ভীতি দেখাবো। আর ভানুসাহার ছেলে তো স্বীকার করেছে তার মা কে সাইদী হত্যা করেনি। এরপরও কিভাবে বিচার চলে যেখানে আদালত যাদেও অবর্তমানে তাদেও কথা কে নথি হিসেবে গ্রহন করেছে।তারা সেই ১৫ জনেরঅন্তর্র্ভূক্ত। যেহেতু এটা একটা ঐতিহাসিক বিষয় তাই এখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হবে। আন্তর্জাতিকভাবে কোন আইনজীবি আসতে পারে। কিন্তু সরকার সে পথ ও বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার যেভাবে কথা বলছে তাতে বোঝা যাচ্ছে কারা যুদ্ধাপরাধী তা যেন সরকার জানে, তাই বলতে পারছে ১৬ই ডিসেম্বর এর আগে তাদের ফাঁসি দিবে। কিন্তু দেখেন আদালতে এখন পর্যন্ত প্রমানিত হয়নি। তার আগেই তাদের বলা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী। তাহলে তো বোঝাই যাচ্ছে এটা সম্পূর্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।
আমি বললাম দেখেন, অনেক সময় প্রমানের অভাবে আসল অপরাধী পার পেয়ে যায়। তাই বলে কি সে অপরাধী নয়? সে প্রত্তুত্তর করলো, গোলাম আযম এর বিরুদ্ধে বলা হয়েছিলো সে বাংলাদেশের নাগরিক না। কিন্তু পরে প্রমানিত হয়েছে সে বাংলাদেশের সন্তান এবং বাংলাদেশেই তার জন্ম। তারমানে, তার নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছিলো। বর্তমান অভিযোগ ও হুবহু সেরকম। জনগন যারা বিচারের জন্য রব তুলেছে তারাও জানেনা আসলেই তারা যুদ্ধাপরাধী কিনা? আর যারা প্রত্যক্ষদর্শী তারা বলে তারা যুদ্ধাপরাধী না। এটা কি রকম হলো?
আমি বললাম, ঠিক আছে এ প্রসঙ্গ বাদ। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের উপর এমন কান্ড কেন করছেন আপনারা? তারাও তো মানুষ। সে বললো, আপনি যদি পত্র-পত্রিকা বা টেলিভিশন দেখেন(সে আমার পেশা সম্বন্ধে জানেনা), লক্ষ্য করলে দেখবেন, আমরা কখনোই আগে পুলিশের উপর হামলা করিনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে আমাদেও বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। অথচ আমরাএকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। আমাদের কোন মিছিল-মিটিং হলে সেখানেপুলিশ লাঠিচার্জ করে আমাদের মিছিল পন্ড করে দেয়। চাঁদপুরে মিছিলে পুলিশ গুলি করে মানুষ হত্যা করে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মতিঝিলে আমরা মিছিল করলে পুলিশ সামনে-পিছনে উভয়দিকে আমাদের ঘিরে ফেলে হামলা চালায়। কেউ যদি আপনাকে বারবার মারতে থাকে আপনি কতক্ষন চুপ করে থাকবেন? তাছাড়া, যারা আজ এ অভিযোগ তুলছে তারা কি দেখেনি আওয়ামী-ছাত্রলীগ পুলিশের সাথে কি আচরন করেছে? পুলিশকে দিগম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
আর আমরা কোন মানুষ হত্যা করিনি। অথচ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামীলীগ হামলা চালিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ৮জন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আপনি কি তাকে সমর্থন করেন? তারা কিভাবে বলে মানুষের উপর হামলার কথা? কোন মুখেবলে?
আর সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে মিছিলে পুলিশ আহত হলে সেখানে শিবির এর ছেলেরাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমরা সবসময় পুলিশকে সহনশীল আচরন করার কথা বলি। কিন্তু তারা আজ সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিনিত হয়েছে।
এদিকে তার সাথে কথা বলতে গিয়ে আমার অন্য কাজ এর কথা মনেপড়ে গেলো। তাই তখন তাকে আর সময় না দিয়ে দ্রুত বাসায় চলে এলাম। আসার পথে চিন্তা করলাম, তার কথা গুলো কি একেবারেই অযৌক্তিক???
জাহিদুল ইসলাম সজীব
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:২৩