somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে সত্য জানতেই হবে, সাউথ এশিয়ার নীরব ঘাতক - থিন আউটসাইড ফ্যাট ইনসাইড (টোফি),পর্ব ২

০৯ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সবাইকে প্রথম পর্বটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। যদি প্রথম পর্বটি আপনার মনে এই বোধটি তৈরী করে যে ( তৈরী করা উচিত) , থিন আউট ফ্যাট ইনসাইড বডি টাইপ বেশ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা তাহলে এই পর্বটি আপনাকে সমস্যাটি সমাধানের কিছুটা পথ দেখাতে পারে।
ছোট করে একটু মনে করিয়ে দেওয়া- প্রথম পর্বে আমরা বুঝেছি যে-
১)সাউথ এশিয়ান বিএমআই সাধারণত ২৩ এর বেশী হলে ওভারওয়েট এবং ২৭ এর বেশী হলে স্থূল বা ওবেস।


২)সাউথ এশিয়ানদের শরীরে চর্বি জমার হার ওয়েস্টার্নদের চেয়ে বেশী।মানে, অল্প ওজন বাড়লেই সাউথ এশিয়ানদের শরীরে চর্বি জমে যেতে পারে।
৩) সাউথ এশিয়ানদের শরীরে জমা চর্বিগুলো ভিসেরাল ফ্যাট হিসেবে জমা হয়। মানে, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অর্গানের চারপাশে চর্বিগুলো জমা হয় যা নানা রোগের অন্যতম প্রাথমিক কারন ( আধুনিক গবেষণা বলে) চমৎকার একটি রেফারেন্স
৪) স্বাভাবিক ওজনের একজন সাউথ এশিয়ানেরও শরীরে মাসেলের পরিমাণ কম থাকতে পারে এবং ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ বেশী থাকতে পারে যাকে আমরা থিন আউটসাইট ফ্যাট ইনসাইড বলছি।


৫) সাউথ এশিয়ান আদর্শ বিএমআই হিসেবে ওভারওয়েট ব্যাক্তিরও শরীরে মাসেলের পরিমাণ কম থাকতে পারে এবং ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ বেশী থাকতে পারে যাকেও আমরা সেই একই থিন আউটসাইট ফ্যাট ইনসাইড বলছি।



আজকের পর্ব-
কিভাবে বুঝবেন একজন ব্যাক্তি টোফি পর্যায়ে পড়েন ? উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে ডেক্সা স্ক্যান নামের একটি প্রযুক্তি আছে যা শরীরের ভিসেরাল ফ্যাটের পরিমাণ বের করে দেয়। আমাদের যেহেতু নাই, তাই অনুমান ও ক্যালকুলেশনের উপর ভর করেই আমাদের বডি ফ্যাট পারসেন্টেজ বের করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে, চোখের দেখায় যদি কারো হাত ও পায়ে মাসেলের ভালো ডেফিনেশন না থাকে এবং সামনের দিকে পেট/ ভুঁড়ি উঁচু থাকে তাহলে ধারনা করা যায় যে বডি টাইপটি টোফি। এছাড়া কারও ওয়েস্ট হিপ রেশিও ০.৯৫ এর বেশী থাকলে তার ভিসেরাল ফ্যাট আছে ধরে নেওয়া যায়। অনলাইনে যে বডি ফ্যাট পারসেন্টেজ ক্যালকুলেটর পেয়েছি আমি, তার মধ্যে এই ক্যালকুলেটরটি র একুরেসি বেশী।



এখন আসি আদর্শ বডি ফ্যাট পারসেন্টেজ কেমন হওয়া উচিত ? নিচের চার্টটি দেখুন।



আরেকটু সহজ করে দেওয়ার জন্য-

( শুধু পুরুষদের একটা ভিজুয়াল শেপ দেওয়া হয়েছে, টোফি কিন্তু মহিলাদেরও সমস্যা)

এবার একটু ব্যাখ্যায় যাই- যে কথা গতপর্বেও বলেছি, আজও বলছি- ধরা যাক, পাঁচ ফিট আট ইঞ্চি উচ্চতার এক সাউথ এশিয়ান পুরুষের ওজন ৮৪ কেজি মানে এর দুটো ব্যাখ্যা হতে পারে । হয়- তার বডি ফ্যাট পারসেন্টেজ ফিট বা এক্সসেপ্টেড লেভেলের ( হাইয়েস্ট ১৫-২১%)। মানে, ফ্যাট বা চর্বির তুলনায় মাসেল বেশী। অথবা তার বডি ফ্যাট পারসেন্টেজ ওবেস লেভেলের। যার অর্থ, ফ্যাটের অংশ মাসেলের তুলনায় বেশী ( ফ্যাটের পরিমাণ ২২% এর বেশী)। এবং এই ফ্যাট বা চর্বিটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে হতে পারে ভিসেরাল ফ্যাট, যদি লোকটি সাউথ এশিয়ান হোন। বলে রাখি, সাধারণত এই পাঁচ ফিট আট ইঞ্চি উচ্চতার পুরুষের ৮৪ কেজি ওজনকে সাধারন দেখায় হেলথি ওয়েট মনে হবে।

আবার, ধরা যাক, পাঁচ ফিট আট ইঞ্চি উচ্চতার এক সাউথ এশিয়ান পুরুষের ওজন ৬৮-৭০ কেজি। যা তার উচ্চতা অনুযায়ী একজন স্বাভাবিক মনে হতে পারে। এর ব্যাখ্যায় ও উপরের কথাটি বলা যায়- তার বডি ফ্যাট পারসেন্টেজ ফিট বা এক্সসেপ্টেড লেভেলের ( হাইয়েস্ট ১৫-২১% বা এরচেয়েও কম)। মানে, ফ্যাট বা চর্বির তুলনায় মাসেল বেশী। অথবা তার বডি ফ্যাট পারসেন্টেজ ওবেস লেভেলের। যার অর্থ, ফ্যাটের অংশ মাসেলের তুলনায় বেশী ( ফ্যাটের পরিমাণ ২২% এর বেশী এমনকি ৩০% ও হতে পারে)

উপরের দুটো মানুষই কিন্তু থিন আউটসাইট ফ্যাট ইনসাইড টাইপের বডি ধারন করেন যদি তাদের বডি ফ্যাটের পারসেন্টেজ বেশী হয় এবং শরীরে মাসেলের পরিমাণ কম হয়। দ্বিতীয়জন টোফি টাইপ বডির আদর্শ উদাহরণ। এবং আমাদের দেশ সহ সাউথ এশিয়ান দেশে যা প্রতি একশত জনে প্রায় কম বেশী ষাটজন মানুষের আছে।

গত পর্বেই আমরা জেনেছি, অতিরিক্ত চর্বি শরীরের কি কি ক্ষতি করতে পারে। আজকে আমরা জানবো মাসেল কম হলে শরীরের কি কি ক্ষতি হতে পারে-
মাসেল কম থাকলে প্রথমেই কারো শর্করা মেটাবলিজমে ক্ষতি হয় মানে শরীর ব্লাড সুগার রেগুলেট করতে পারে না। কারন কি ? মেডিকেলের ভাষায় সহজ বাংলায়, যার মাসেল বা মাংসপেশি যত বেশী তার শরীরে ব্লাড সুগারের মেটাবলিজম ততোভালো। আরেকটু বললে, কারবোহাইড্রেট আমাদের শরীরের অন্যতম মূল জ্বালানি শক্তি। আমরা যা কার্বোহাইড্রেট খাই ( ভাত, রুটি, আলু, চিনি, সবুজ সবজি ইত্যাদি ) তা আমাদের শরীরে গিয়ে গ্লুকোজে পরিণত হয় । এই গ্লুকোজই আমাদের শক্তি যোগায়। প্রোটিনও কিন্তু মেটাবোলিজম হয়ে প্রোটিন থেকে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী এক পর্যায়ে গ্লুকোজে পরিণত হতে পারে। যতোবার আমরা খাবার খাই ততোবার আমাদের শরীরের অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নির্গত হয় যা গ্লুকোজকে রক্ত থেকে কোষের মধ্যে নিতে সাহায্য করে। আরেকটি ভাবেও রক্ত থেকে গ্লুকোজ কোষে যায়, সেটি মাসেল পাথওয়ের মাধ্যমে এবং এই ক্ষেত্রে ইনসুলিনের প্রভাব লাগে না।
এখন ধরা যাক- ক ব্যাক্তির মাসেলের পরিমাণ কম । বডি ফ্যাটের পরিমাণ বেশী। তার শরীরের মাসেলের চারপাশে চর্বি জমে গেছে। এই ব্যাক্তি যখন খাবার খাবে, যেহেতু মাসেলের নিজের ব্লাড গ্লুকোজ গ্রহন করার ক্ষমতা কম ( ফ্যাট ডিপোজিশন, ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের কারনে) তার অগ্ন্যাশয় খুব বেশী পরিমাণ ইনসুলিন নির্গত করবে রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমানোর জন্য। এভাবে বেশী পরিমাণ ইনসুলিন বের হতে হতে একসময় ইনসুলিন নির্গতকারী শরীরের কোষগুলো ক্লান্ত হতে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন বের করতে পারবে না। ফলে কি হবে ? ক ব্যাক্তির ওজন আদর্শ থাকা সত্ত্বেও বডি ফ্যাট বেশী এবং মাসেল কম থাকার কারনে প্রিডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিস হবে। আশেপাশে অনেক লিন এন্ড থিন ডায়াবেটিক পেশেন্ট দেখেন ? এর একটা প্যাথোফিজিওলজি উপরে আলোচনা করলাম। আবার এই যে ইনসুলিন কমার আগে অনেক বছর ধরে ইনসুলিন বেশী বেশী নির্গত হচ্ছিল, এটা একটা অস্বাভাবিক অবস্থা। যা নিজেই কিনা হার্টের রক্ত নালীকে আক্রান্ত করতে পারে, করোনারি ডিজিজ করতে পারে।
এ পর্যায়ে আমেরিকান- ইন্ডিয়ান ইন্টারভেনশনাল কারডিওলজিস্টের বিখ্যাত একটি ভিডিও ইউটিউব থেকে শেয়ার করছি। যা দেখলে আরও বিস্তারিত বুঝতে পারবেন-


তাহলে দেখা যাচ্ছে, শরীরের মাসেল কম কিন্তু ফ্যাট বেশী, এটা একটি অস্বাভাবিক অবস্থা। এর কারনগুলো কি কি ? বাজে খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রমের অভাব এবং বয়স ইত্যাদি। ঠিকই শুনেছেন, শেষের কারনটি বয়স। একে তো মাসেলের পরিমাণ কম, এরপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাসেলের ক্ষয় হয় যাকে সারকোপেনিয়া বলে। শুনলে অবাক হবেন, সাউথ এশিয়ানদের মধ্যে সারকোপেনিয়ার হার তুলনামূলক অনেক বেশী। সারকোপেনিয়া নিয়ে জানতে পড়ে আসতে পারেন- Sarcopenia With Aging

শেষে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন-
টোফি এমন একটি অবস্থা, যাকে সাউথ এশিয়ার জনসংখ্যার নীরব ঘাতক বললে কম বলা হবে। অথচ এটি সম্পূর্ণ প্রিভেন্টাবল ও মডিফাইএবল একটি অবস্থা। কেন এটা এতোদিন প্রচার পায়নি ? কারন আমরা এটা নিয়ে গবেষনার সময় সুযোগ পাই নাই। এদিকে টোফি গোপনে গোপনে প্রিডায়াবেটিস, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা সহ নানা ধরনের সমস্যা একটা বড় অংশের মানুষের করে দিয়ে গেছে। খাদ্যাভাসের পরিবর্তন, ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ ( কারডিও ও বডি ওয়েট ট্রেনিং), স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এসব মডিফাইএবল ফ্যাকটর নিয়ে নিজে থেকে কাজ করলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
আমাদের পূর্বপুরুষরা না জেনে ভুগে গেছেন, আপনি আমি কেন জেনে ভুগবো ?

প্রথম পর্বের লিংক- আমাদের স্বাস্থ্য: যে সত্য জানতেই হবে ,সাউথ এশিয়ার নীরব ঘাতক - থিন আউটসাইট ফ্যাট ইনসাইড (টোফি),পর্ব ১





সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০২২ সকাল ৯:২৫
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×