somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালমোহন, সাদাটা!!! (ভ্রমণ গল্প)

০১ লা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেবার আমরা দার্জিলিং যাব, তো...... আজ মিটিং, কাল সিটিং, পরশু বাজেট তৈরি, দিনক্ষণ ইত্যাদি ঠিক করায় সবাই মাতোয়ারা।

যাইহোক, একদিন আমি একটা ভুল করে বসলাম, এবং ভ্রমণের টিম মিটিং এ সিদ্ধান্ত হল, ভুলের জন্য সবাইকে খাওয়াতে হবে! ঠিক আছে, সবাই যেহেতু বলেছে, আমি অবশ্যই খাওয়াবো, তো বললাম, আমি এখন খাওয়াবো না, আমাদের ভ্রমণের সময় এক বেলায় সবাইকে খাওয়াবো... তাতে করে, সবার একবেলার খরচ বেঁচে যাবে!

বাহ! চমৎকার প্রস্তাব... সবাই সম্মত... এবার আমি প্রস্তাব রাখলাম... যেহেতু, আমার এই ভুলের জন্য শাস্তি স্বরূপ জরিমানা ধার্য করা হয়েছে, সেহেতু, এই রকম ভুল করলে, এবং মেজরিটি মেম্বাররা যদি ভোট দেয়, তবে তাকেও একবেলা খাওয়াতে হবে? সবাই এতে রাজ হল...... কিন্তু, কোন বেলা খাওয়াবে, সেটা ঠিক হলনা, উল্লেখ্য, আমাদের টিম লিডার সবসময়ই ভ্রমণের শেষ ডিনার টা স্পন্সর করে থাকেন, এবং সেটাই পুরো ভ্রমণের সেরা খাওয়া হয়ে থাকে। তো এটা তো আছেই, ভুলের জন্যও ক্ষমা নাই, আরও একবেলা খাওয়াতে হবে! সেও রাজী... সুতরাং শুরু হল, একে-অন্যের ভুল ধরা এবং মিটিং এ তুলে, একবেলার খাবার দেয়াতে রাজী করানোর নতুন যুদ্ধ!

যাইহোক, এভাবে... প্রায় ৬ বেলার খাবার জরিমানা হয়ে গেল, বিভিন্ন জনের, একজন কে কোন ভাবেই ভুল করাতে পারলাম না! কারণ তিনি খুব কম টিম মিটিং এ থাকেন! সুতরাং ভুলও কম করেন, তো আমার প্রস্তাব ছিল, যেহেতু, তিমি টিম মিটিং এ কম থাকেন, সেহেতু, এটাকেই একটা কারণ ধরে জরিমানা আদায় করা হোক! কিন্তু, আমাদের টিম লিডার প্রস্তাবে সায় দিলেন না! আমরা ভ্রমণ শুরু করলাম, আমার লখ্য ভুল ধরা! আর কত কম খরচে আমার বেলাটা পার করা যায় সেটাই আপাতত চিন্তা!

বেশ ভোরে বুড়িমারি পৌছালাম, ইমিগ্রেশন প্রায় ২:৩০ পরে, সবাই ফ্রেস হতে গেল, আমি বিভিন্ন হোটেলে খাবারের দাম দেখছি! যে তিন-চারটা আছে তার।

মোটামুটি ভালো, আর দামেও বেশ সস্তা! খোঁজ নিয়ে রাখলাম, কিন্তু প্রস্তাব দিলাম না! কারণ, দাম জেনে এটা আপ্প্রুভ করবেনা জানি! তাই কিছুই বললাম না, সবাই এসে, দু-একটা হোটেলে খোঁজ নিয়ে, অবশেষে বুড়ির হোটেল কে বেছে নিল, আমি মৃদু আনন্দিত! এই ভেবে যে কেউই দামের খোঁজ নেয়নি! তো গরম-গরম ভাত, পাতলা কিন্তু সুস্বাদু ডাল, শুকনা মরিচ আর সরিষার তেলের মিশ্রণে মজাদার আলুভর্তা, সাথে ডিম ভাজি দুজন একটা করে! খাবার শেষ মুহূর্তে, আমি টিম লিডার কে উদ্দেশ্য করে, অন্য সবাইকে প্রস্তাব দিলাম, যে এই খাবারের বিলটা আমি দিতে পারি কিনা? টিম লিডার রাজী এবং অন্য সবাইও সানন্দে রাজী হয়ে গেল!
আমি তো মনে, মনে “ ওই বাল্লে, বাল্লে” গান ধরলাম! সবাই ধরে নিয়েছিল, আদৌ কেউ খাওয়াবে কিনা? ওর টাতো আগে খাই! আমি বিল দিলাম......... বিল দিয়ে তো আমি আরও জোরে দুই হাত উপরে তুলে সিংদের সেই গান ধরলাম! “ওই বাল্লে-বাল্লে, ওই বাল্লে-বাল্লে!”

যাই হোক, সবাই তো আমার উপর বেশ চড়াও! “আমি বাটপারি পারি করিয়াছি অভিযোগ দিয়া! এত কম টাকায়, আমার জরিমানা শোধ করিয়াছি বলিয়া!” কিন্তু, আমাদের টিম লিডার সবাইকে বলিলেন, আমি তো কাউকে জোর করিনি, প্রস্তাব দিয়েছি, সবাই মেনে নিয়েছে! সুতরাং এটা নিয়ে আর কোন কথা নয়! সবাই কেই খওয়াতে হবে! এবার সকলে ধরলো, আমি যেহেতু কম খরচে সকালে খাইয়েছি, তারাও সকালে খাওয়াবে! ঠিক আছে, সবাই রাজি!

শুরু হল প্রতি সকালে, এক-এক জনের খাওয়ানো... উল্লখ্য, ভ্রমনে আমরা সবসময়ই সকালে সবচেয়ে বেশী এবং ভালো খাবার চেষ্টা করি, দুপুরে একেবারেই হালকা কিছু খাই, আর রাতে আবার ভালো খেয়ে থাকি, যে কারনে, এর পরের প্রতি সকালের খরচ আমার খরচের চেয়ে প্রায় তিন বা চার গুন! এতে করে সবাই আমার উপর আরও বেশী ক্ষিপ্ত! কিন্তু, একজন, এখন জরিমানার বাইরে! সুতরাং, আমার নজর তার উপর, কখন কোন ভুল করে, যেটা সবাই জরিমানা হিসেবে গন্য করবে!

এক সকালে... দার্জিলিং এর মল রোডে! (ম্যাল নয়! সে গল্প অন্য দিন!) নাস্তার টেবিলে... লুচি, আলুরডাল দিয়ে নাস্তা করছি... এখানে যেহেতু ডিম নেই, সেহেতু... আমি মিষ্টি খাব, গরম-গরম রসগোল্লা এসেছে!! উল্লেখ্য, সকল মিষ্টি জাতীয় দ্রব্যের মাঝেই গরম রসগোল্লা আমার সবচেয়ে প্রিয়, যারা গরম রসগোল্লা চেখে দেখেছেন, তারা মাত্রই জানেন, এর কি অমৃত স্বাদ! এবং একি সাথে অনেক গুলো খাওয়া যায়! আমি ৬-৮ টা খেয়ে নিলাম! অন্যরাও অর্ডার দেবে... এই সময়... দোকানি আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, গরম-গরম লালমোহন এসেছে... দেবে কিনা?

সবাই আগ্রহ ভরে, লালমোহন চাইল এবং অনতিবিলম্বে পেয়ে গেল, এইবার............ যিনি...... এখনও জরিমানার স্বীকার হননি, তিনি.........হ্যাঁ তিনিই......... দোকানিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ওনাকেও লালমোহন দিতে...... যথারীতি, দোকানিও লালমোহন দিলেন...... কিন্তু......??? উনি...... আসলে খাবেন...... রসগোল্লা!!! তাই......... দোকানিকে উদ্দেশ্য করে...... ওনার প্লেটে চোখ রেখে আর আমার প্লেটের দিকে আগুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন......... “আমি এইটা না! এইটা না!! আমি লালমোহন সাদাটা চাইছি!!!!” দুই বা তিন সেকেন্ড...... “আমরা সবাই একইসাথে...... হতভম্ব! স্তব্ধ!! বাঁকরুদ্ধ!!! হইয়া, হাসিতে ফাটিয়া পরিলাম! পেটে ব্যাথা ধরিয়া গেল, হাসিতে-হাসিতে কারো, কারো বিষমও লাগিল!”

আর দোকানির অভিব্যাক্তি?? তাহার কথা আর না বলি, তাহা হইলে, আমাকে মাইর খাইতে হইবে (এখনও যে হইবেনা তাহারও নিশ্চয়তা নাই!!), বেশ কিছুক্ষণ পরে, তিনি বুঝতে পারলেন, যে তিনি কি বলেছেন? কি চেয়েছেন? আর কি করেছেন? টিমের সবাই সাথে-সাথে সমস্বরে তার জরিমানা ঘোষণা করলো! এবং ভ্রমণের পরবর্তী সময় গুলোতে তাকে আমরা ওই নামেই ডাকতে লাগলাম... “লালমোহন সাদাটা!!”

কাণ্ড, এখানেই শেষ নয়...... আরও আছে...... চলুন দেখি......... সেটা কি?

এরপর, আমরা জরিমানা চাই আর তিনি বিভিন্ন অজুহাতে পিছিয়ে দেন... আমরাও নাছোড় বান্দা, তাকে ধরে থাকি জরিমানা পরিশোধের জন্য, তিনি কথা দিলেন... তিনি ভ্রমণের শেষ সকালে নাস্তা করাবেন, আমরা খান্ত দিলাম...

শেষ ভ্রমণ সকাল এলো... দার্জিলিং থেকে বেরিয়েছি... পথিমধ্যে... একটি বেশ মনোরম রেস্টুরেন্ট...... খাবারের দাম ও সর্বমোট কত লাগবে যেনে, তিনি টিম লিডার কে ম্যানেজ করলেন... যে এখন নয়, ও... বুড়ির হোটেলে খাওয়াবে!! যেহেতু আমার খরচ নিতান্তই কম হয়েছিল... আমরা নিমরাজী হয়েই টিম লিডারের কথা মেনে নিলাম, কিন্তু, কে জানত? এখানেও সে সবচেয়ে বড় স্বীকারে পরিনত হবে.....??

বিকেলে বুড়ির হোটেলে এলাম, সবাই ভীষণ-ভীষণ ক্লান্ত, ৬ দিনের অবাঙালি খাবার না খাওয়ার ক্ষুধা, ভেত বাঙালীর ভাতের জন্য আকুলতা আর গ্রাম্য দেশী মুরগীর অর্ধ কাঁচা পেঁয়াজ আর মশলার সমন্বয়ে গরম-গরম সদ্য নামানো প্রায়রোষ্ট!! সবাই পাগলের মত খেল, কেউ-কেউ দুটো রোষ্টও খেল!
তারপর যে বিল উঠেছিল, তা দেখে তিনি, অধিক শোকে মাননীয় স্পীকার হয়ে গিয়েছিলেন...............!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×