somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্রের প্রথম পলক....... (ভ্রমণগল্প)

০২ রা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিস থেকে ফিরেছি সবে মাত্র, মনটা বেশ বিক্ষিপ্ত, সামনে দুই দিনের ছুটি, কিন্তু কিচ্ছু করার নাই, মেজাজ আরো খারাপ হল, দিলাম দোস্তকে ফোন, “দোস্ত ভালো লাগছে না, চল কোথাও ঘুরতে যাই” অপর প্রান্ত থেকে দোস্তর সম্মতি “চল যাই......”

আমার উত্তর “তাহলে বেরিয়ে পর এখুনি, তুই বিমান বন্দর স্টেশনে যা, আমি কমলাপুরে যাচ্ছি”, ঠিক আছে বের হই... একটু পরে আবার ফোন দিলাম “দোস্ত বের হইছো? আমি কিন্তু বের হইছি” আসলে তখনও রেডিই হইনি! কারণ দোস্তর কোনই ঠিক নাই, যে কোন মুহূর্তে অফিস থেকে ফোন আসতে পারে! আর ফোন দিয়ে বলবে যে, না দোস্ত অফিসে জরুরী কাজ পড়েছে, সকালেই অফিসে যেতে হবে! তাই এই ভণ্ডামি! দোস্তর উত্তর “আমি এই বের হচ্ছি, ব্যাগ গুছাইতেছি”, “ঠিক আছে, তুই বের হয়েই আমাকে ফোন দিবি কিন্তু? মনে থাকবে?” হ্যাঁ থাকবে, দোস্তর উত্তর।

৩০ মিনিট পরে, দোস্ত ফোন দিল, “দোস্ত আমি বিমান বন্দরে পৌঁছে গেছি! তুই কৈ?” “দোস্ত আমি এই প্রায়, কমলাপুরে!” (আসলে তখনও বাসায়! পৌঁছে যাব বেশ দ্রুত, রাতে রাস্তা ফাঁকা থাকবে), এবার আমিও বের হলাম, আগে দোস্তর যাওয়া টা নিশ্চিত করে নিলাম!
কমলাপুরে পৌঁছে দেখি, মানুষ শুধু গিজগিজ করছে! কোন টিকেট নেই, নেই দাড়িয়ে যাবার টিকেটও! কিন্তু মাথায় যখন এডভেঞ্চারের খেয়াল, রাখবে বেঁধে কে? সাধ্য আছে কার? বহু বছরের পুরনো অভিজ্ঞতার সঠিক ব্যাবহার করলাম, উঠে পড়লাম খাবার গাড়িতে, আর উঠেই ম্যানেজ করে ফেললাম ওদের ম্যানেজার কে, ব্যাস... বসার জায়গাতো পেলাম! আর কি চাই? দোস্তকে ফোন দিলাম, “দোস্ত পার্টি অন!” মানে আমি আছি আর সব ঠিক আছে! “তুই কৈ?” “আমি স্টেশনে, তুই?” “আমি ট্রেনে”।

বিমান বন্দর থেকে দুই দোস্ত একসাথে হলাম, আর আমরা দুই দোস্ত একসাথে হলে, আমাদের আর কিছুই লাগেনা! হৃদ্যতা এমনই! চলছি, দুর্বার বেগে, তুরনা-নিশিথায় নিশাচর হয়ে! আমিতো বেজায় খুশি, যে দোস্ত অবশেষে আসতে পেরেছে, দোস্তও খুশি অনেক দিন ধরে, যাব-যাব করেও সময়-সুযোগ না মেলাতে হচ্ছিলনা। অবশেষে এসে জাওয়ায় খুশি, কিন্তু মনে সামান্ন অপূর্ণতা, সঠিক সিট না পেয়ে আরামের ব্যাঘাত ঘটছে আর নির্ঘুম রাত্রি যাপনের মৃদু আফসোসে!

সে সব কে তুচ্ছ করে, গল্পে-গল্পে কাটছে প্রহরঃ পুরনো সৃতি, কলেজের বান্ধবী, প্রেমে ছ্যাকা খাঁওয়া, প্রেমিকার কালো চুলে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ফিকে হওয়া! তার চোখের কাজল হবার বাসনা হারিয়ে ফেলা! টোল পড়া গালে নিজেকে খুঁজে না পাওয়ার ব্যাথা! ছোট্ট ঝুপড়িতে কেক আর কোকের ভাগাভাগি গুলোর স্রোতে ভেসে যাওয়া! আর চুরি করে সন্ধার তীরে হাতে-হাত ধরে হেটে যাওয়া স্বপ্ন গুলো চুরি যাওয়া! একসময়, ঘুমের কাছে, নির্ঘুমতার পরিহাস! পরিত্রাণের পলাতক প্রয়াস!! অবশ্যই ট্রেনের মেঝেতে! পেপার আর লুঙ্গি বিছিয়ে! ব্যাগ মাথায় দিয়ে! তাই ঘুম! নির্ঘুম!! আধো আচ্ছন্নতায়, কিছু তন্দ্রাচ্ছন্নতা, অন্যের গুঁতো, হকারের হাঁকডাক, পা দিয়ে মাড়িয়ে যাওয়া! মাছিদের বীভৎস ঘ্যনঘ্যনানি! বিড়ির উৎকট গন্ধ! আর বাসি খাবারের অসহ্য যন্ত্রণা! কিন্তু আরামের পরশ বুলানো ট্রেনের দুলুনি, যেন মায়ের কোলের ছোট্ট বেলা! স্বপ্নে আর কল্পনায় ফিরে আশা! ট্রেনের ঝিকঝিকে, গল্পের গুনগুনাণী! বেশ যাচ্ছি তো গন্ধে-যন্ত্রণায়! আরামে-আবেশে, আগামী দুই-তিন দিনের দিনের বর্ণিল বাঁধনে! কক্সবাজার আর সেন্ট-মারটিনে, ফাগুনে আর ভালোবাসায়! কারণ আগামী দুই দিন ১লা ফাল্গুন আর পরের দিন ভালোবাসা দিবস! বাহ, রঙে রঙিন হবে, করবই, ফেলে আসা দিনের ফিকে হওয়া যাওয়া ধূসর স্বপ্ন!

সীতাকুণ্ডের শীতল বাতাসে, ঘুম কুমারীর ঘুমের শেষে, চোখ মেলেই বিস্ময়! ধুয়েমুছে ধবধবে, গতরাতের নির্ঘুমতা! দুরের পাহাড়, সবুজ ভূমি, স্নিগ্ধ শিশির, অরুনের অরন্য ভেদ করে, আকাশকে রঙিন আর বর্ণিল করে তোলা এক আবেগিয় ব্যাঞ্জনা! সেই স্বপ্নিল আবেশের রূপ গাঁয়ে মেখে, চোখের আরামে, মনের সুখে, ভেসে এলাম চট্রলাতে।

হালকা নাস্তা সেরে, রিক্সা করে বাস স্ট্যান্ডে, কক্সবাজারের টিকেট কেটে বাসের সিটে, দুর্ভোগ, দুঃসহ যন্ত্রণা, মরতে-মরতে বেঁচে যাওয়া দুর্ঘটনা, লোকাল বাসের অবিরাম থেমে থাকা, হাস-মুরগী, গরু-ছাগল, মাছ-মাংসের মাঝে যাত্রীদের সীমাহীন সেবা করা! ড্রাইভারের মাতাল হয়ে গাড়ি চালানো, হেল্পারের দাঁত না মাজা মুখের দুর্গন্ধে, যাত্রীদের অবরাম জানালার বাইরে মুখ দিয়ে, পেটের খাবার উগড়ে দেয়া! আরও কত গাঁ ঘিন-ঘিনে অসহ্যতা! এক-একবার মনে হচ্ছিল, নেমে ফিরে যাই! নাই বা গেলাম কক্সবাজারে!

কি আর হবে সমুদ্র দেখে! এতো কষ্ট করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে! বেশী খারাপ লাগছিল, আমার দোস্তর কথা ভেবে, কারন, সে একটু আরাম প্রিয়, মা-বাবার আদরের ধন! একটু মিনমিনে আর সামান্ন তুলতুলে প্রকৃতির! যে কারনে অপরাধ বোধও হচ্ছিল নিজের ভেতর! কিন্তু সেই সবকে মেনে নিয়েই চলেছি চোখ-মুখ বন্ধ করে সেই অজানা, অচেনা আর নতুন গন্তব্যে......

কিন্তু সময় তো সরে না! রাস্তাও আর ফুরায় না! শরীর ও আর বহে না! মন বিক্ষিপ্ত হতে-হতে বিপর্যস্ত প্রায় ধৈর্যর বাঁধ! তিন ঘণ্টার জার্নি ৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে! বাস না যেন বস্তি! মানুষ না যেন মুরগীর...... ওহ, আর অসহ্য!

এই ভেবে সামনে তাকালাম একরাশ হতাশা, আশা ভঙ্গের বেদনা, মনের কোনে কালো মেঘের জমে যাওয়া আর ফিরে যাবার শেষ ভাবনা নিয়ে!! থমকে গেলাম...... দুজনেই...... দূর দিগন্তের দুই রূপ দেখে! উপরে নীল, নীল আর নীল...... নিচে সাদা, সাদা ফেনা! নামছে-উঠছে, দুলছে, হাসছে-খেলছে নিজেদের নিয়ে!

দুই দোস্ত তাকালাম দুইজনের দিকে, বিস্ময় আর প্রশ্ন নিয়ে!! কি ওগুলো? কি দেখছি! তবে কি পৌঁছে গেছি? ওটা কি সেই স্বপ্নের সমুদ্র!! ওগুলো কি ঢেউ? উপরে কি আকাশ? আর সাদা ফেনাগুলো যেখানে আছড়ে পড়ছে, সেটা কি বীচ? যাকে বলে, সি-বীচ?

আবার সামনে তাকালাম, এই বাস তো বোধয় সমুদ্রেই নেমে যাচ্ছে! নাহ ডানে মোড় নিল... কিন্তু আমাদের দৃষ্টি বামেই পড়ে রইলো.........

বাঁকি মুগ্ধতা......?? অন্যদিনে......
আলাদা গল্পে....... ভিন্ন আমেজে......
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৫২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×