somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাদিপাই ঝর্ণা, মুহূর্তের মুগ্ধতায় (লক্ষ্যহীন এডভেঞ্চারের ৪থ গল্প)

২৯ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৌষের শীতে, চৈত্রের খরতাপে আমরা হাঁটছি, সুংসাং পাড়া, পাসিং পাড়া হয়ে, জাদিপাইয়ের দিকে, শুধু নেমে যাওয়া আর নেমে যাওয়া, চড়াই তেমন একটা না, তবুও... সবাই ঘেমে, নেয়ে একাকার, কারণ শীতের লেশ মাত্র নেই, অথচ এখন পৌষ মাস! মনে বিষণ্ণতার আবেগ জাঁকিয়ে বসেছে, আজই পাহাড়ের শেষদিন তাই, জাদপাই দেখে, সোজা বগা চলে যাব, ওখানে রাতে থেকে, পরদিন ভোঁর-ভোঁর বান্দরবান হয়ে ঢাকা। তাই হাঁটছি এভাবে...... যতটা পারি, করবো দেরি, দেখবো তোকে, করবো চুরি, তোকে, তোর রূপকে আমার মনের খোরাক করে নিয়ে যাব বহুদুরে, পরবর্তী আগমনের শেষ প্রহর পর্যন্ত যেন রেশ থাকে, মায়া থাকে, আকুলতা থাকে, জড়ানো থাকে সৃতি, স্বপ্নিল যাত্রা আর নিঃশেষিত আনন্দ হয়ে.. হ্যাঁ, এভাবেই......।

জাদিপাই পাড়ায় পৌঁছে একটু চা পান, আবার নেমে যাওয়া আর নেমে যাওয়া, এতো গরম ছিল যে এটুকু আসতেই প্রায় এক লিটার পানি শেষ করে ফেলেছি! নিচে, যেতে, যেতে একসময় যখন জাদিপাই পাড়ার একদম শেষে পৌঁছে গেলাম, যেখান থেকে আবার উপরের দিকে উঠতে হবে এবং তারপরে আবার নিচে নামতে হবে, জাদিপাই এর একদম হাত ছোঁয়া দুরত্তে পৌছতে হলে। এই জায়গার টার নাম কেন “জাদিপাই ভ্যালী” হলনা? এটা নিয়ে বেশ আফসোস হল! কেন? ৩৬০ ডিগ্রী কোণের চারদিকেই পাহাড় বেষ্টিত, মাঝের বিশাল সমতল ভূমিটা কেন “জাদিপাই ভ্যালী” হলনা? এটা নিয়ে মন খারাপই হল, এর আগে তো বহু মানুষ এসেছে, অনেক এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ তো এসেছে এখানে, কারোই মনে হলনা, যে এই জায়গাটার নাম হওয়া উচিৎ “জাদিপাই ভ্যালী!” আজ থেকে আমি এই অদ্ভুদ সুন্দর, মনোরম, চারদিকের পাহাড় বেষ্টিত ভ্যালীর নাম দিলাম “জাদিপাই ভ্যালী” মন বলছিল, এখানেই থেকে যাইনা কেন, একটি দিন............ কি চমৎকার, অসাধারণ একটা পর্যটন স্পট হতে পারে, শুধু এই “জাদিপাই ভ্যালী” টাই!

সেই আফসোস মনে নিয়েই আবার শুরু করলাম, এবার চড়াই শুরু হল, প্রথম বারের মত জাদিপাই এর উদ্দেশ্যে চড়াই, বেশ কিছুটা উঠে আবার নামতে শুরু করলাম, চড়াই শেষ হতেই, জাদিপাই এর আকুল, আকুলতায় তার সুখের অশ্রু বরনের ঝমঝমে, গা ছমছমে, শরীরের ভেতর সুখের শীতল কলরব টের পেলাম! সীমাহীন সুখের ঠিক আগ মুহূর্তে, যে অপার অনুভূতির জন্ম হয়, ঠিক সেই রকম! অনুভূতি হল!

ভীষণ দ্রুত বেগে নেমে যাচ্ছি, আর অপেক্ষা, অসম্ভব! তার অশ্রুর উচ্ছ্বাস! আরও বেগবান! আরও দুর্বার, আরও আবেগে, আবেগহীন হয়ে পড়ছিল! দূর থেকে হঠাৎ উচ্ছ্বাসের উৎসমূলে রংধনুর দেখা! একি! রংধনু কেন? কোথা থেকে? খানিক আবিলুপ্ততার পরে বুঝলাম, অশ্রুর উম্মত্ত উচ্ছ্বাস! আর রবির রঙের কিরণ মিলেমিশে একাকার হয়ে এই সীমাহীন মুগ্ধতার, অসীম সৃষ্টি! দুজনের উল্লাসের বর্ণিল বর্ণনা! লাজহীন!! লাজুকতা! রঙে, রেঙে রংধনু হয়েছে.........

যখন পৌঁছগেলাম, তার হাত ছোঁয়া দুরত্তে, পাথরের উপর বসে, বিস্ময় নিয়ে ভাবছিলাম, শীতের শুষ্কতায় রুখতায়ই যার এই রূপ, বর্ষা পেলে না যেন সে কেমন হবে? মাতাল হয়ে, পাগল করে, উন্মাদ বানিয়ে ছাড়বে! এরপরে, তার আহ্বান আর উপেক্ষা অসম্ভব, নিজেকে নিমজ্জিত করলাম, অভিসারিণীর সুখের অশ্রুতলে......

এ যেন, অভিসারিণীর সুখের অশ্রুতে...... আমার অবগাহন, ফিরে এসেছিলাম, সুখের আবেশে আবিলুপ্ত হবার ভয়ে! আবার ফিরে, ফিরে ওই রূপ সুধায় নিজেকে নিমজ্জিত করার নেশায়, নেশাতুর হয়ে............

শেষের ঘটনাটুকু বর্ণনা না করলে, একটু অপূর্ণতা থেকে যাবে, তা এই রকম ছিল...... জাদিপাইয়ের সুখের তৃপ্ত নিয়ে ফিরছি, চুড়ায় উঠে-নেমে, “জাদিপাই ভ্যালী” থেকে আবার উঠতে শুরু করেছি, এমন সময় কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র-ছাত্রী জাদিপাইয়ের দিকে যাচ্ছে, এদের মধ্যে তিন জোড়া ছেলেমেয়ে যারা একসাথে, আমারা উঠছি... এমন সময় তিন ছেলের মাঝে কেউ একজন জিজ্ঞাসা করলো... “ভাই কেমন দেখলেন” বললাম “ছেলেদের মনে হবে, অভিসারিণীর সুখের অশ্রুতে তাদের আনন্দের অবগাহন” এই বলে উঠতে শুরু করেছি, এবার মেয়েদের মধ্য থেকে কোন একজনের জিজ্ঞাসা, “ভাই, আর মেয়েদের কি মনে হবে?” বললাম সেটা বলা যাবেনা... কেন? বলুন না? নাহ, আপনাদের ছেলে বন্ধুরা আমাকে মারতে আসবে, শোনার পরে! এবার ছেলেরা বলল, “না ভাই বলেন, সমস্যা নাই” বলবো, বলছেন? বুঝে নিয়েন কিন্তু, “হ্যাঁ, হ্যাঁ বলেন”

মেয়েরা, ছেলেদের হাত ধরে বলবে, “আমাকে নাও...............! আমি আর পারছিনা.............!!!”
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:১০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×