somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি চাই তোমার? শুধু আমাকে ছাড়া! (অন্যগল্প)

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত ৯ টা। শীতের রাত হিসেবে বেশ রাতই বলা যায়। ছেলেটির খুব খুব পরিচিত মেয়েটি গুলশান পেরিয়ে নির্জন লেকের পাশে পাশে একা একা দাড়িয়ে। মুখে বিষাদের ছায়া, চোখে ঘৃণার টলমলে জল, অভিব্যাক্তিতে পুরো পৃথিবীর প্রতি বিতৃষ্ণা। বেশ অনেক অনেক ক্ষণ দাড়িয়ে আছে একা একা, কোন কিছুর অপেক্ষায় কিন্তু ভাবলেশহীন! যা হয় হোক, কিচ্ছু আর যায় এসে না। ছেলেটি এগিয়ে গেল মেয়েটির দিকে।

ছেলেটি- তুমি এখানে! এতো রাতে, একা-একা, কেন, কোন সমস্যা?

এবার মেয়েটি আর তার চোখের জল ধরে রাখতে পারলোনা, দু চোখের কোন বেঁয়ে ঝরে পরতে শুরু করলো অঝোর ধারায়... সেই সাথে ফোঁপানি, গোঙ্গানি আর বুক ফাটা আর্তনাদের নিশ্চুপ অব্যাক্ত চিৎকার! আর অবিরাম ধারায় বয়ে চলা অশ্রু নদীর টলটলে জল।
ছেলেটি আর কোন কথা না বলে বা জিজ্ঞাসা না করে একটি সিএনজি দাড় করালো, অনেকটা জোর করেই। মেয়েটি সিএনজি উঠলো, কোন কথা না বলেই। উঠলো ছেলেটিও...... ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেল মেয়েটির বাসার গেটের কাছে।

কেউ কোন কথা বলেনি একবারও। মেয়েটি শুধু কেঁদেই চলেছে। ছেলেটি একবারের জন্যও বাঁধা দেয়নি! এমনকি কোন কিছু জিজ্ঞাসাও করেনি। কাঁদুক, মন খুলে কাঁদুক। ধুয়ে-মুছে যাক জমে থাকা কষ্ট আর অব্যাক্ত বেদনাগুলো, দু-চোখের নোনা জলে। হালকা হোক নিজের মত করে। ফিরে আসুক নিজের কাছে নিজ, নিজের মত করে।

মেয়েটি নেমে গেল তার বাসার গেটের কাছে। ছেলেটি সিএনজি ঘুরিয়ে নিজের বাসার দিকে। খুব ভালো লাগছে তার। একটা অজানা সুখের বাতাস তার মন-প্রান জুড়ে। যাক, মেয়েটির এতটুকু উপকার তো সে করতে পেরেছে। খুব তৃপ্তি লাগছে নিজের কাছে। বাসায় ফিরে গেল সেদিনের মত।

দুই দিন পরে দেখা হল ছেলেটি আর মেয়েটিতে। সাপ্তাহিক ছুটির শেষে। ওরা হাঁটছে হাতির ঝিলের সবুজ ঘাস মাড়িয়ে আর পানির মৃদু ঢেউ দেখে দেখে। পিজা খেতে যাবে, দুপুরের লাঞ্চের জন্য। মেয়েটি জোর করে নিয়ে এসেছে ছেলেটিকে। অথচ আজ ছেলেটি একদম আসতে চায়নি। অন্য কতদিন ছেলেটিই ডেকেছিল মেয়েটিকে পিজা খেতে কিন্তু কখনোই যায়নি মেয়েটি। আর আজ মেয়েটিই জোর করে নিয়ে চলেছে ছেলেটিকে। ওরা হাঁটছে আর কথা বলছে.........

মেয়েটি- তুমি না থাকলে সেদিন আমি যেতেই পারতাম না।

ছেলেটি- কেন? একটা সিএনজি ডাকলেই পারতে।

মেয়েটি- ইচ্ছাই হচ্ছিলনা কিছু করতে, কথা বলতে, ডাকতে, এমনকি কোথাও তাকাতেও!

ছেলেটি- কিন্তু ওর রাতে ওখানে অমন ছন্নছাড়া হয়ে দাড়িয়ে ছিলে কেন? নাহ কোন আপত্তি থাকলে বলতে হবেনা, এমনিই কৌতূহল তো জাগবেই তাই না?

মেয়েটি- নাহ, তোমাকে বলতে দ্বিধা নেই আর। তুমি আমার এতো ভালো বন্ধু আগে ভাবিনি, বুঝিনি, অনুভব করিনি।

ছেলেটি- কি বয় ফ্রেন্ড এর সাথে ঝগড়া হয়েছে, মনোমালিন্য? নাকি আরও বেশী কিছু?

মেয়েটি- আমার কোন বয় ফ্রেন্ড নাই, ভাবতাম কিন্তু সেটা ভুল, মস্ত বড় ভুল। আমি ওভাবে পারিনা, পারবোনা। আমি সেকেলে নই, আবার অতি আধুনিকও হতে পারবোনা। আমি আমার মত করে, নিজের সম্মান নিজে, নিজের বিবেকের কাছে জবাবদিহিতা ছাড়া বাঁচতে চাই। আমি পারিনা ওভাবে জোয়ারে গা ভাসাতে।

ছেলেটি- কি হয়েছিল? বল তবে শুনি।

মেয়েটি- সে চায় আমি তার সাথে লং ড্রাইভে যাই, যেখানে সে শুধু একা নয়, তার অনেক অনেক বন্ধুরাও থাকবে, তাদের মেয়ে বন্ধুরাও থাকবে। সবাই এক সাথে যাবে, হই হল্লা করবে, এ ওর গাঁয়ে পরবে, এক জনের মেয়ে বন্ধু আর একজনের সাথে মাস্তি করবে, যার যখন যাকে খুশি নিয়ে নাচবে, হাত ধরে টানবে, অনেক সময় এর চেয়েও অনেক অনেক বেশী কিছু! একেবারে গা ঘিনঘিনে ব্যাপার। আমি এসব পারিনা, পারবোনা। আর আছে রাতের উম্মত্ত পার্টি, ওহ অসহ্য, অসম্ভব, আমার দ্বারা হবেনা ওসব।

ছেলেটি- থাক থামো, থামো আর বলতে হবেনা, বুঝেছি যা বোঝার। তোমার কি মনে আছে, তোমাকে বলেছিলাম তুমি এমন কাউকে বেঁচে নিও যে তোমাকে বোঝে, তোমাকে ভাবে, তোমাকে অনুভব করে তোমার মত করে, গভীর ভাবে। তুমি নিশ্চুপ ছিলে, কোন কথা বলোনি, মনে আছে তোমার?

মেয়েটি- হ্যাঁ মনে আছে। মনে থাকবেনা কেন? তোমার সব সব কথাই মনে আছে, মনে থাকে, মনে পরে। তুমি আমার অনেক ভালো বন্ধু, একজন নিঃস্বার্থ শুভাকাঙ্ক্ষী আমি জানি।

ছেলেটি- আচ্ছা, তাই বুঝিনি তো সেটা!

মেয়েটি- বুঝবে কি ভাবে তুমিই তো দূরে সরে গেলে!

ছেলেটি- আমি দূরে সরে যাইনি, যেতে চাইনি, তুমি বাধ্য করেছিলে!

মেয়েটি- কিভাবে আমি তোমাকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করেছিলাম?

ছেলেটি- দেখ আমি তোমার বন্ধু হতে চেয়েছিলাম, সেটা তুমি জানো। তোমাকে যে আমার অনেক অনেক ভালো লাগতো বা লাগে সেটা তুমি জানতে, বুঝতে, অনুভব করতে। তোমারও যে আমাকে একেবারে মন্দ লাগতো সেটা নয়, ছিল কিছু ভালোলাগা, কিছু মুগ্ধতা। কিন্তু.........

মেয়েটি- কিন্তু, কিন্তু কি?

ছেলেটি- আমি তোমার ভালো বন্ধু হতে চেয়েছিলাম, শুধুই বন্ধু। এর বেশী কিছু নয়, সে সম্ভব নয় তুমি জানতে, তুমি জানো।
তারপরও আমি দেখেছি, তোমার ভালোলাগাটা এক সময় আকাঙ্ক্ষায় রূপ নিতে লাগলো। তাই আমি দূরে সরে গিয়েছি। নিজ থেকেই।

মেয়েটি- কেন দূরে সরে গেলে, কি এমন হত একটু আকাঙ্ক্ষা হলে? হলে একটু আকাঙ্ক্ষিত!

ছেলেটি- হত, অনেক কিছুই হত বা হতে পারতো, যেন না হয় তাই সুরে সরে গিয়েছি। তবে তোমাকে চোখে চোখে ঠিকই রেখেছি!

মেয়েটি- কি হত বলোতো?

ছেলেটি- শোন, ভালোলাগা থাকতেই পারে, খুব স্বাভাবিক। থাকবেই। সব মানুষেরই থাকে সীমাহীন ভালোলাগে, অনেক অনেক কিছুর প্রতিই। বস্তুগত বা অবস্তুগত, পার্থিব বা অপার্থিব কত কিছুর প্রতিই তো আমাদের ভালোলাগা থাকে। থাকবেই আমরণ।

তবে দেখবে ভালোলাগা যেন ভালোলাগাতেই থাকে, যেন তা আকাঙ্ক্ষায় রূপ না নেয়! কারণ পরে ঐ আকাঙ্ক্ষাই রূপ নেবে আকর্ষণে! আর আকর্ষণ হয়ে যাবে অধিকার, অধিকার থেকে চলে আসবে আকুলতা, আকুলতা থেকে ব্যাকুলতা, সব শেষে যেটা রূপ নেবে চাওয়া-পাওয়ায়। শুরু হবে একটা সঙ্কট, একটা অব্যাক্ত কষ্ট আর পরিশেষে না পাওয়ার নীরব বেদনায়। তাই দূরে সরে এসেছি।

মেয়েটি- তুমি এতো এতো গভীর ভাবে, এতো কিছু ভেবেছো? ঠিক আছে আমি তোমার বন্ধুই হব, তুমিও আমার বন্ধুই হও। আর কিছু নয়, কখনোই নয়।

ঠিক ঠিক মনে রেখ, ভুল করোনা, ভুল বুঝোনা, ভুল ভেবোনা। শুধু মনে রেখ একটি কথাই?

কি?

যা খুশি চাও, শুধু আমাকে ছাড়া.........!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×