আমি কয়েকদিন যাবত নেটফ্লিক্সের আওয়ার ব্লু প্ল্যানেট সিরিজটা দেখতেছি। খুব ছোট বেলায় যখন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দেখতাম তখন প্রাণীকুল কত সমৃদ্ধ ছিল সেইটা দেখাত। কিন্তু নেটফ্লিক্স এই সিরিজটাকে এমন ভাবে সাজাইছে যে আমি খুবই ভয় পেয়েছি। ডেভিড আয়্যাটনবগের ভরাট গলায় এখনকার প্রাণীকুলের বর্তমান অবস্থা দেখে আমি শিহরিত। চলেন প্রথমেই একটু ভয় পাই। ২০৩০ সালের জাকার্তা শহরটা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। কেন জানেন? এই শতকের শুরুর দিকে ইন্দোনেশিয়াতে হুট করে খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিল। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে ইন্ডাস্ট্রি লেভেলে ভূগর্ভের পানি উঠানোর অনুমতি দিল। ফলে তৈরি হল একটা পানি শিল্প। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার মানুষজন এর ভয়াবহতা টের পাচ্ছে এখন। প্রচুর পরিমাণ পানি উঠানোর কারণে নিচে ফাকা জায়গা তৈরি হচ্ছে। নিজেদের তৈরি এই মৃত্যুকূপেই শহরটা প্রতিবছর ৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার করে ডেবে যাচ্ছে। সাধারণত একটা শহর সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১.৫ মিটার মত উপর থাকে, এইটা আমি এভারেজের চেয়েও বেশি বলছি। চিন্তা করেন প্রতি বছর ৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার করে যদি শহরটা ডেবে যায় তাহলে ৬ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে শহরটা সমুদ্র গর্ভে হারিয়ে যাবে। এইতো গেল তাত্ত্বিক কথা। কিন্তু বাস্তবে যা হচ্ছে তা আরও ভয়ংকর। ইন্দোনেশিয়ার সরকার উপকুলে বাধ দিয়েও বন্যা ঠেকাতে পারছে না। কেন জানেন? মাটি চুয়ে চুয়ে পানি উপরে উঠতেছে। ফলে লবনাক্ততা বাড়ছে, সুপেয় পানির অভাব বাড়ছে, ফলে আরও বেশি ইন্ডাস্ট্রি লেভেলে ভুগর্ভের পানি তুলতে হচ্ছে যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করছে। তো আমি আমারা আর্কিটেক্ট এক ফ্রেন্ডের সাথে ব্যাপারটা আলোচনা করলাম। ও আমাকে যেইটা বলল এইজন্য ইন্দোনেশিয়ার আর্কিটেক্ট নিয়োগ দিচ্ছে যাতে পুরো জাকার্তা শহরের জন্য একটা আরবান প্লান করে। সব আর্কিটেক্ট একমত যে ওদের মাচার মত করে থাকতে হবে, ঠিক এই ধরণের একটা আরকিতেকচারাল ডিজাইন করে এই বছর দেশের প্রখ্যাত স্থপতি সাইফুল ইসলাম আগা খান এওয়ার্ড পাইছেন।
কয়দিন আগে আমাজন নিয়ে খুব কান্নাকাটি হল। আমাজন আসলে কি করে? সহজ কথায় এইখানে প্রচুর গাছ, এই গাছ বাষ্প আকারে পানি ছাড়ে, যেই কারণে শীতকালে প্রচুর পাতা ঝরে। এই পানি মেঘ তৈরি করে, যা বৃষ্টি আকারে ঝরে। শুধুমাত্র এই পানির জন্য পুরো দক্ষিণ আমেরিকা অপেক্ষা করে। কৃষি অর্থনীতি, মৎস্য শিল্প পুরোপুরি এই বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। ফলে জলাভূমি তৈরি হয়, যেইখানে এসে ভিড় করে জাগুয়ার, ক্যাপিবারা। জাগুয়ার ক্যাপিবারা শিকার করে। বিশাল লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে বন মহিষ পানি খেতে আসে, সিংহও পানি খেতে আসে। তখন সিংহ বন মহিষ শিকার করে। এইভাবে জীব বৈচিত্র্য রক্ষা পায়। এখন আমাজনের গাছ কম হওয়ার কারণে মেঘ কম হচ্ছে, ফলে বৃষ্টি কম হচ্ছে। নদীপথ ছোট হওয়ার কারণে বন মহিষ আর সিংহ এক ঘাটে পানি খাচ্ছে, ফলে ঘন ঘন শিকারের কারণে বন মহিষ কমে যাচ্ছে। এখন সিংহ হয়ত খুব খাবার পাচ্ছে কিন্তু কিছুদিন বুঝবে মজা!
এইতো গেল ডাঙ্গায় কি হচ্ছে, এইবার সাগরে কি হচ্ছে একটু দেখি। যারা একটু আধটু কসমস নিয়ে পড়েন তারা জানেন এই প্ল্যানেটে প্রাণ তৈরি হইছে কোন মহাজগতিক উল্কার ধুলা থেকে এইরকম একটা মতবাদ আছে। ঠিক এই ব্যাপারটাই সাগরে হয়। স্থল থেকে ধুলা ঝড়ো হাওয়ায় সাগরে যেয়ে পরে, সেইখান থেকে তৈরি ফাইটপ্লাঙ্কটন। এইগুলো প্রচুর পরিমাণে খায় আয়ঞ্চাইওভস, যারা ঝাঁকে ঝাঁকে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ায়। এই ঝাঁকের খোঁজে পুরো সাগর চষে বেড়ায় হোয়াল্পব্যাক তিমি। ওরা যখন এটাক করে উপর থেকে কিছু পাখি ওদের ধরার জন্য বসে থাকে। একবার বুঝতে পারছেন কি হবে বৃষ্টি কম হলে?
এইতো গেল জলের কথা। বৃষ্টি কম, পানি কম তাপমাত্রা বাড়বে। ফলে মেরুর বরফ গলবে। গলার কারণে কি হচ্ছে জানেন? ইউটিউবে অয়ারলুশ লিখে সার্চ দেন। বেচারা জলের প্রাণ, বাধ্য হয়ে স্থলে আশ্রয় নিতে যেয়ে উঁচু জায়গা থেকে পরে পরে মরতেছে। সমুদ্রের পানি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে, কার্বনডাইঅক্সাইড বাড়ার কারণে পানির এসিডিটি বাড়ছে। সাগরের প্রাণীর তো সমস্যা হচ্ছেই কিন্তু সবচেয়ে বড় ঝামেলা হচ্ছে পুরো সাগরের কোরাল রীফ সাদা হয়ে যাচ্ছে।
এইবার আমাদের দেশে আসি। রোহিঙ্গাদের কুতুপালঙ্গে যে জায়গায় রাখা হইছে ওইটা হাতীর অভয়ারণ্য ছিল, সুন্দরবনে পাওয়ার প্লান্ট হচ্ছে। জাকার্তা ২০৩০ এ তলায়ে গেলে এই দেশের কি হবে জানেন? ছোট্ট একটা পরীক্ষা কইরেন, এক বালতি পানিতে একটা পাথরের টুকরো ফেলে দেন পানি যেভাবে উপচায়ে পরে ওইটাই এদেশের ভবিষ্যৎ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৩০