somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দা ফাউন্ডেশন অব সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন: ১০০১টি যুগান্তকারী আবিস্কার

২৪ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলামভীতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ডাচ ইসলামবিরোধী নেতা গিয়ার্ট উইল্ডার্স থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে। তাদের এই ভয়ের পিছনে রয়েছে তাদের অজ্ঞতা। তারা হয়তো জানেন না ইউরোপীয় সভ্যতা শত শত বছর ধরে ইসলামী প্রভাবে চমৎকারভাবে উপকৃত হয়েছে।

ইসলামের জন্মলাভের পর প্রায় ১০০০ বছর ধরে মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুসলিম বিজ্ঞানীদের অনেক যুগান্তকারী আবিস্কারের পথ ধরেই এসেছে আজকের আধুনিক সভ্যতা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যালজেবরা বা বীজগণিত, আকাশে উড্ডয়ন থেকে টুথব্রাশ, গিটার থেকে কফি, শল্য চিকিৎসা বা সার্জারি থেকে হাসপাতালসহ বহু অসাধারণ আবিস্কার এসেছে মুসলমানদের হাত ধরেই। মুসলিম শাসনের এক হাজার বছরে ১০০১টি যুগান্তকারী আবিস্কার নিয়ে একটি বই লিখেছেন দা ফাউন্ডেশন অব সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড সিভিলাইজেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সালিম আল-হাসানি। এই ১০০১টি আবিস্কার এখন লন্ডনের সায়েন্স মিউজিয়ামে প্রদর্শন করা হচ্ছে। সিএনএনকে আল-হাসানি বলেন, এক সময় মুসলমানরা স্পেন থেকে পর্তুগাল, উত্তর ইতালি থেকে চীনের একাংশ শাসন করতেন। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে অমুসলিম বিশ্ব মুসলমানদের অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে।এখানে ১০টি তুলে ধরা হলো।

১০টি যুগান্তকারী আবিস্কার:

১. শল্য চিকিত্সা: শল্য চিকিত্সার উদ্ভাবন মুসলিম রাজত্বের সময় স্পেনের আন্দালুসিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ডাক্তার আল-বিউকাসিস (আবু আল কাসিম) মধ্যযুগের চিকিৎসা পরিসংখ্যান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তির নাম। শল্য চিকিত্সা সর্ম্পকে তিনি ৩০ টিরও বেশি বই লিখেন। ডাক্তার রোগীর ইতিবাচক সম্পর্ক চিকিত্সা বিজ্ঞানে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে সর্ম্পকে বর্ণনা করেন দশম শতকের আরবের এই পণ্ডিত। তিনিই সর্বপ্রথম ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য একই মানের চিকিৎসা সেবার কথা প্রচার করেন। এছাড়াও তিনি মূত্রনালী, কান এবং খাদ্যনালী রোগের চিকিত্সায় অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন এবং তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম জটিল গর্ভাবস্থার বিষয় বর্ণনা করেন। তার এই উদ্ভাবনগুলো এতটা প্রভাব বিস্তার করেছিল যে, ১৬ শতক পর্যন্ত বিশিষ্ট ইউরোপীয় চিকিত্সকরা তাকে উদ্ধৃত করতেন। তার এই ধারণাগুলো আধুনিক সার্জারির পথিকৃত।


২. হাসপাতাল: সর্বপ্রথম সেবিকাসহ আধুনিক হাসপাতাল এবং ডাক্তার-সেবিকাদের প্রশিক্ষনের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কায়রোতে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৮৭২ সালে আহমেদ ইবনে তিউলান নামে কায়রোতে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ হাসপাতালে সবধরনের রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হত। হাসপাতাল হচ্ছে একটি মুসলিম ঐতিহ্য। মুসলিমরাই প্রথম এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। এর আগে বাগদাদে সামান্য কিছু চিকিৎসা সেবা নিয়ে হাসপাতালের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু কায়রোর মডেলই বিশ্বজুড়ে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত।


৩. বীজগণিত: অনেক পশ্চিমা, বিশেষ করে জার্মানরা তাদের প্রযুক্তি ও প্রকৌশলের কৃতিত্ব নিয়ে খুবই গর্ববোধ করে থাকে। কিন্তু বীজগণিত ছাড়া কে হতে পেরেছে একজন সফল প্রকৌশলী? ব্রিটেনের চেস্টারের ব্রিটিশ- অ্যারাবিক রবার্ট আরব পণ্ডিত আল-খোয়ারিজমি লেখা অনুবাদ করার মাধ্যমে দ্বাদশ শতাব্দীতে ইউরোপে গাণিতিক পদ্ধতি পরিচিতি লাভ করে। আল-খোয়ারিজমির অ্যালগোরিদম আধুনিক বীজগণিতের ডেভেলপার হিসেবে পরিচিত। এ জন্য আল-খোয়ারিজমিকে বীজগণিতের জনক বলা হয়ে থাকে।

৪. আকাশের উড্ডয়নের যন্ত্র: আকাশের উড্ডয়নের যন্ত্র বা ফ্লাইং মেশিন প্রথম উদ্ভাবন করেন আব্বাস ইবনে ফিরনাস। নবম শতাব্দীতেই তিনি পাখির আদলে উড্ডয়নের যন্ত্রপাতির নকশা তৈরি এবং তা সংযোজন করেন। তিনি স্পেনের করডোভায় এসব যন্ত্র নিয়ে কিছুক্ষণ উড়েছিলেন। উড়ত গিয়ে পড়ে পিঠ ভেঙে যায় তার। আল-হাসানি বলেন, তার এ আবিস্কার কয়েকশ’ বছর পর ইতালির শিল্পী ও আবিস্কারক লিওনার্দো দা ভিঞ্চিকে অনুপ্রাণিত করে।


৫. বিশ্ববিদ্যালয়: ৮৫৯ সালে মরক্কোর তরুণী রাজকুমারী ফাতিমা আল-ফিরহি প্রথম ফেজে ডিগ্রি অনুমোদনকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তার বোন মিরিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়টির পাশেই একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এই কমপ্লেক্সটি কারাউইয়িন মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। ১২০০ বছর পর এটি এখনো সচল। অধ্যাপক হাসানি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এই কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে শিক্ষা হলো ইসলামের প্রাণ। এই দুই বোনের কাহিনী আজ বিশ্বব্যাপী তরুণ মুসলিম নারীদের অনুপ্রেরণনার উৎস।


৬. টুথব্রাশ: ইসলাম হচ্ছে বিশ্বের ধর্মগুলোর মধ্য প্রধান ধর্ম, বিশেষ করে শারীরিক স্বাস্থ্য ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দেয়ার প্রতি। ধর্ম-কর্ম পালনের জন্য কুরআনে শরীরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, ইসলামের কারণেই দাঁত পরিষ্কারের বিষয়টি জনপ্রিয়তা লাভ করে। সর্বসম্মতভাবে সবাই স্বীকার করেছে যে, প্রাচীন মিশরীয়রাই সর্বপ্রথম দাঁত পরিষ্কারের জন্য গাছের ডাল ব্যবহার করতেন। তাদের ব্যবহার করা ডালই আজকের মেসওয়াক হিসেবে পরিচিত। হযরত মোহাম্মদ (সা) দাঁত ব্রাশ করার জন্য নিয়মিত এই গাছের ডাল ব্যবহার করতেন। এরপর থেকেই এটি বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠে।


৭. বিবর্ধক কাচ বা চশমা: আরব বিশ্ব শুধুমাত্র গণিতেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেনি, তারা বিবর্ধক কাচ বা চশমার ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। বসরা নগরীর বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত আলহাজেন (আবু আল হাসান) সর্বপ্রথম বর্ণনা করেন চোখ কিভাবে কাজ করে। তিনিই প্রথম প্রতিফলিত উপকরণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং প্রমাণ করে যে, চোখের দৃষ্টি রশ্মির সাথে পারিপার্শ্বিক অনুভূতি নেই। এছাড়াও বাঁকানো কাচের পৃষ্ঠতল বিবর্ধনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে- এই মত তিনিই প্রথম দেন। বিবর্ধক চশমা সর্ম্পকে তিনিই প্রথম ‘রিডিং স্টোন’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এর পর থেকে চশমার উন্নতি ঘটতে থাকে। এছাড়াও আলহাজেন জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং আবহাওয়া বিদ্যার উপর পাণ্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থ লিখেছেন।


৮. কফি: মুসলিম বিশ্ব থেকেই সর্বপ্রথম কফি রপ্তানি করা হয়। এটি উৎপত্তি ঘটে ইথিওপিয়ায়। এরপর খুব দ্রুত আরব উপদ্বীপ অঞ্চলে এর বিস্তার ঘটে। এখানে এটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। মনে করা হয় যে, ১৭ শতকে অটোমান বণিকরা শিম ভিত্তিক পানীয় লন্ডনে নিয়ে আসেন। ১৬৪৫ সালে ভেনিসে প্রথম কফিহাউজ স্থাপিত হয়। ১৬৮৩ সালে জার্মানি অস্ট্রিয়া থেকে পশ্চাদপসারণ করে তুরষ্কে আসার পর তারা এটি সর্ম্পকে প্রথম জানতে পারে। জনশ্রুতি রয়েছে যে, সুলতানের সৈন্যরা এ কফি বস্তায় ভরে তাদের দেশে নিয়ে যায়।


৯. কুচকাওয়াজ: ব্যান্ড সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজের সর্বপ্রথম প্রচলন হয় অটোমান সাম্রাজ্যে। যুদ্ধ চলাকালীন পুরো সময়ে এ ব্যান্ড বাজানো হতো এবং এটি বাজানো তখনি শেষ হত, যখন সৈন্যরা পশ্চাদপসরণ করত কিংবা যুদ্ধ যখন শেষ হতো। অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধের সময় এই ব্যান্ড ইউরোপীয় সৈন্যদের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলত। এরপর থেকে ইউরোপীয়রা তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য এই নীতি গ্রহণ করে।


১০. গিটার: আমরা আজকে গিটার হিসেবে যেটিকে জানি, তার উৎপত্তি হয়েছে এরাবিক উদ্ থেকে। এর নাম ছিল লিউট। মধ্যযুগে স্পেনে মুসলিম রাজত্বের সময় এটির প্রচলন হয়। বলা হয়ে থাকে যে, উমাইয়া শাসক দ্বিতীয় আবদেল রহমানের দরবারে নবম শতকে একজন সঙ্গীত শিক্ষক এটি নিয়ে আসেন। আধুনিক গিটার উন্নতি লাভ করেছে নানা পরিক্রমায়। কিন্তু এরাবিক লিউট আধুনিক গিটারের গুরুত্বপূর্ণ পূর্বসুরী।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×