somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি, আমরা এবং একজন বৃদ্ধ রিকশাচালক

২৮ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের দিন। আমি আমার এক বন্ধুর সাথে রিকশায় যাচ্ছি। রাস্তাঘাট ফাঁকা। রাস্তাঘাট ফাঁকা হলেও আমাদের রিকশা যাচ্ছে খুব ধীরে ধীরে। ঈদের দিন রিকশা ছুটে যাবে তুখোড় গতিতে, সুন্দর বাতাস লাগবে শরীরে এমনটা আশা ছিল। আমরা বেশ বিরক্ত, আশেপাশের সব রিকশা আমাদের চেয়ে আগে চলে যাচ্ছে। আমি বেশ মেজাজ খারাপ করে রিকশা চালকের দিকে তাকালাম। আগে খেয়াল করা হয়নি, আমাদের রিকশাচালক বেশ বৃদ্ধ। আমি হতাশ হলাম, এমন বৃদ্ধ রিকশা চালকের রিকশায় আমি সাধারণত উঠি না।

কিন্তু এত বয়সের মানুষটা রিকশা চালাচ্ছে কেন, তাও আবার ঈদের দিনে। উনার কী ছেলেমেয়ে কেউ নেই? আমি বেশ কৌতূহল বোধ করলাম।

জিজ্ঞেস করলাম, “চাচা এই বয়সে রিকশা চালান কেন? ছেলেমেয়ে কেউ নেই?”

চাচা পিছনে ফিরলেন। ফিরেই আবার সামনে তাকিয়ে রিকশা চালানো শুরু করলেন। বুঝলাম এই প্রশ্নের উত্তর উনাকে প্রায়ই দিতে হয়।

একটু পর বেশ শ্লেষ্মা জড়ানো গলায় বললেন, “বাবা, আমার দুইটা ছেলে আছিল। দুইটাই এখন অনেক বড়লোক, ঢাকা শহরে বাড়ি আছে, দামী গাড়ি চালায়। তয় আমারে আর ওদের মায়েরে দেখে না। বিয়া কইরা বউ নিয়া আলাদা হইয়া গেছে।”

আমি আর আমার বন্ধু চুপ করে গেলাম। মুহূর্তেই পরিবেশটা কেমন গুমোট হয়ে গেল।
চাচা বলতে থাকলেন, “এখন আমার বউকে নিয়া একটা বস্তিতে থাকি। আমার বউয়ের অসুখ, কাজ করতে পারে না। আমি রিকশা চালাইয়া যা পাই তাই দিয়া কোনমতে চলি। রিকশা টানতে না পারলে ভিক্ষা শুরু করতে হইব।”

চাচাকে কে,এফ,সি এর সামনে থামতে বললাম। আমরা সব ফ্রেন্ডরা মিলে এখানে আড্ডা দেয়ার কথা।

আমি চাচাকে বললাম, “আসেন চাচা একসাথে এখানে কিছু খাই।”

আমি ভেবেছিলাম চাচা অনেক খুশি হবেন। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে চাচা বললেন, “না বাবা, আমি একা খাব না, আমার বউ বাসায় শুয়ে আছে। ওরে রাইখা আমি খাই কেমনে?”

আমি বললাম, “ঠিক আছে আপনি আমাদের সাথে খান, আর আপনার স্ত্রীর খাবার প্যাকেটে করে নিয়ে যান।”

চাচা বললেন, “আমি এক বেলা এত দামী খাবার দিয়া কী করব? এর চেয়ে এখন রিকশা টানলে তিন বেলা পেট ভইরা খাইতে পারতাম।”

আমি বললাম, “চাচা কিছু মনে না করলে আমরা কয়েকজন আপনাকে কিছু টাকা দেই?”

চাচা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর কিছু না বলে এদিক ওদিক মাথা নেড়ে চলে যেতে থাকলেন।

একটু দূর যাওয়ার পর চাচা একটা গাড়ির সাথে রিকশা লাগিয়ে দিলেন। রিকশার চাকা লেগে গাড়ির রঙ একটুখানি উঠে গেছে।

বুঝতে পারলাম চাচার অবস্থা খারাপ আছে। সাথে সাথেই গাড়ি থেকে একটা ছেলে নামলো। বেশ অবাক হলাম, কারণ ছেলেটা আমাদেরই বন্ধু আশিক। আশিকের পাশ থেকে ওর বান্ধবী শ্রেয়াও নামলো।

আশিক গাড়ি থেকে নেমেই বেশ চিৎকার করে চাচাকে গালাগালি করতে থাকল। পাশে দাঁড়িয়ে শ্রেয়া মিটিমিটি হাসছে। একটু পর আমাদের বেশ অবাক করে দিয়ে আশিক চাচার গালে একটা চড় বসিয়ে দিল।

চড় বসিয়ে আশিক চলে আসছিল। আমাদের দেখতে পেয়ে বলে উঠল, “দেখ তো হারামজাদাটা কী করল। ব্র্যান্ড নিউ গাড়িটা একদম নষ্টই করে দিল।”

আমি হতবাক হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। এত মুরুব্বি একজন মানুষকে আমারই বন্ধু চড় দিল!

আমি চাচার দিকে তাকালাম। চাচা আমার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে, একদম কাছে এসে বলল, “বাবা আমাকে টাকা দিতে চেয়েছিলে না? আমাকে না দিয়ে টাকাটা তোমার বন্ধুকে দিয়ে দিও।” বলেই রিকশা টেনে চলে গেলেন।

আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই চলে যাওয়া দেখলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×