somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

Shahjahan Ali
মনের ভেতর অস্থিত কল্পনাগুলোকে লেখকেরা চেষ্টা করেন বই অথবা ব্লগের পাতায় পাতায় সুস্থিত রুপ দান করাতে। আমিও তেমনই একজন হওয়ার চেষ্টা করছি। জানিনা, সামনে কী অপেক্ষা করছে। ভয় না জয়? হতাশা নাকি সফলতা? তবুও এই অজানার মধ্য দিয়ে আমি অজানার পথে হেঁটে যেতে চাই।

অদৃশ্য আততায়ী

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.
-আছিস?
-হুম।
-কততে?
-আটে।
"তোরা আর কেউ আছিস? নয়ে?" মুখ উঁচু করে প্রশ্ন করে মামুন।
বাকি দুজন সমস্বরে 'না' বলে উত্তর দেয়।
"রং কী?" আশরাফকে জিজ্ঞাসা করে মামুন।
"রুইতন।" হাতের পাঁচটা তাসের দিক থেকে নজর না সরিয়েই উত্তর দেয় আশরাফ।

আশরাফ, মামুন, রাকিব, সুজন এই চারজন 'হাতেমের বাশতলা' তে বসে তাস খেলছে। রাতের অন্ধকার ওদের বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বিশেষ ব্যবস্থায় বাঁশের কঞ্চিগুলোতে সুজনের বাবার বিদেশি টর্চটা আটকে নিয়ে আরামসে ওদের খেলা চলে যাচ্ছে। ওদেরই আরেক বন্ধু রশিদ মামুনের পাশে বসে খেলা দেখছে। দেরি করে আসাতে ওর খেলার সুযোগ হয়নি।

"তোরা খেলতে থাক। আমি ঐ ঝাড়টা থেকে আসছি।" সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে রশিদ। প্রস্রাবের বেগটা একটু বেড়েছে তাই সাময়িকের জন্য প্রস্থান আর কি!

নতুন কেনা তাস পাটির উপর জোরে জোরে পড়াতে 'চটাস চটাস' জাতীয় শব্দ হচ্ছে। রাতের ঘোর অন্ধকারে এই শব্দই আপাতত ড্রামের আওয়াজের মত মনে হচ্ছে। একটু পরেই চাপা চিত্কার শোনা যায় খানিকটা দূর থেকে। চার বন্ধু বুঝে যায় শব্দটার উত্স কোথায়। ঐদিকটাতেই তো রশিদ প্রস্রাব করতে গিয়েছিল!

এই ঝাড়টার নিকটে এসে প্রচণ্ড পরিমাণে চমকে যায় চারজনই। রশিদের লুঙ্গিটা বুকের ওপরে উঠে এসেছে। "বিশেষ" অঙ্গটা ফুলে বিশাল আকার ধারণ করেছে। অবশ্য সেটা রক্তে রঞ্জিত। রশিদ বিশেষ কায়দায় চোখমুখ নীল করে ফেলেছে। প্রচণ্ড বেদনাই যে এর মূল কারণ, তা বুঝতে বাকি থাকে না কারোরই।

"ওর মুখ নড়ছে। মনে হয় কিছু বলবে।" জোর গলাতে বলে আশরাফ। সাথে সাথেই রশিদের মুখের কাছে কান নিয়ে যায় মামুন।
"ঐ দ্যাখ কৌশিক চলে যাচ্ছে। ঐ দ্যাখ।" মৃদুস্বরে বলে রশিদ। সাথে উত্তর দিকের ঝাড়টার দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখায়।
"কই? কেউই তো নেই!" উত্তর দেয় মামুন। পরবর্তী প্রশ্নের আশায় রশিদের মুখের দিকে তাকাতেই আরো এক দফা চমকে যায় ও। চোখ দুটো বন্ধ রশিদের! নাক দিয়ে নিঃশ্বাসও নিচ্ছে না। পালস রেট চেক করে মামুন নিশ্চিত হয় ওদের ঘনিষ্ঠতম একজন বন্ধু মারা গেছে।

দুই.
রশিদের মৃত্যুর পর ওদের চারজনের মাঝেই থমথমে ভাব বিরাজ করছে। পুলিশি ঝামেলা কেটে গেছে পরেরদিনই। কোনো প্রমাণ ওদের বিরুদ্ধে ছিল না বলেই রক্ষা। খালের পাড়ে বসে আছে ওরা চারজনেই। কেউ কোনো কথা বলছে না। এজন্যই পড়ন্ত বিকেলেও পিনপতন নিরবতা এখানে।

"রশিদ মারা যাওয়ার আগে কী যেন বলেছিল?" মামুনের দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেয় রাকিব।
" 'ঐ দ্যাখ কৌশিক।' এই টাইপ কিছু একটা হবে।" সাবলীলভাবে উত্তর দেয় মামুন।
"এটা কী করে সম্ভব?" মাথা চুলকিয়ে নেয় রাকিব। "ও তো. . ." বাক্যটা অসম্পূর্ণ থাকতেই আশরাফ ওর মুখ হাত দিয়ে আটকিয়ে দেয়। তারপর বলে, "বাতাসেরও কান আছে।"

***
"আচ্ছা কাল তো স্কুল ছুটি। প্ল্যান কী?" সোত্সাহে অন্যদের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেয় সুজন।
"কী আর? তাস খেলব, আর ফুটবল।" সহজ উত্তর দেয় রাকিব।
"আমি বাপু তাস-টাস খেলতে পারব না। তাস খেলতে গিয়েই রশিদের ঐ অবস্থা হয়েছে। কৌশিক আমাদের কারও ছাড়বে না।" সভয়ে বলে মামুন।
"ধুর. . এখন হলো আধুনিক যুগ। এখন ভূত-প্রেতে ভয় পেলে চলে?" আশরাফ মামুনকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করে। উত্তরে অবশ্য অখণ্ড নিরবতাকেই পায়।

"আচ্ছা তাহলে হাতেমের বাঁশঝাড়ে ক্যারম খেলা হোক।" প্রস্তাব দেয় রাকিব।
"ভালো প্রস্তাব, কিন্তু..." বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে মামুন।
"কোনো কিন্তু নয়। আজ রাত ১০ টায় নির্দিষ্ট জায়গায় সবাই চলে আসবি।" প্রজেক্ট ফাইনাল করে সুজন।

তিন.
প্রচণ্ড বাতাস বইছে। এই ভ্যাপসা গরমেও। বাঁশঝাড়ে রীতিমতো ঝড় উঠেছে। লম্বা লম্বা বাঁশগুলো ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। ক্যারম ফেলে পালিয়ে আসতে চাচ্ছে মামুন। কিন্তু বাকি তিনজন তাকে আসতে দিচ্ছে না। তাদের ভাষ্য, "কোনো সমস্যা হলে আমরা আছি তো।" হঠাত উত্তর দিকের ঝাড়টার আড়াল থেকে কৌশিককে বের হয়ে আসতে দেখা গেল। একটা দমকা হাওয়া এসে উপরের টর্চটাকে মাটিতে ফেলে দিল। ফলশ্রুতিতে খেলার জন্য প্রয়োজনীয় আলোর উত্সটা বন্ধ হয়ে গেল। অর্ধেক চাঁদটা আকাশে থাকাতে আবছা আবছা সবকিছু দেখা যাচ্ছে। এই অল্প আলোতেই মামুন দেখতে পেল কৌশিক তার দিকে এগিয়ে আসছে। হাতে একটা লম্বা লাঠি। চারপাশে তাকিয়ে রাকিব, সুজন, আশরাফ কাউকে দেখতে পেল না মামুন। এ অবস্থাতে একটা হার্টবিট মিস করল ও। কৌশিক এগিয়ে আসছে। মামুনের মনে হচ্ছে অদৃশ্য কোনো শিকল ওকে বেঁধে রেখেছে। বিন্দুমাত্রও নড়াচড়া করতে পারছে না ও। কৌশিক লাঠিটা উঁচু করল। মামুন সর্বশক্তি দিয়ে বাঁদিকে সরে গেল।

ধড়মড়িয়ে জেগে উঠল মামুন। বিছানা থেকে গড়িয়ে পড়ে গেছে ও। সর্বশেষ কী হয়েছিল মনে করার চেষ্টা করে মামুন। খালের পাড় থেকে ফিরে এসে ভাত খেয়ে নিয়েছিলো। তারপর 'ইস্পাত' বইটা পড়ছিল। তারপর হালকা তন্দ্রামত লেগেছিল। বিছানার দিকে তাকায় ও। বইটা ওখানেই পড়ে আছে। ঘড়িতে দেখল সাড়ে নয়টা বাজে। এমন সময় ওদের সদর দরজাতে ঠক ঠক আওয়াজ শুনতে পেল। মামুনকে একা বাড়ি রেখে ওদের বাড়ির সবাই আজ বেড়াতে গিয়েছে। বুকে একরাশ ভয় নিয়ে সদর দরজার দিকে মৃদুপায়ে এগিয়ে যায় ও। ওর মনে হচ্ছে বুকের ভেতর কেউ যেন হাতুড়ি
দিয়ে পেটাচ্ছে। যথাসম্ভব নীরব থাকার চেষ্টা করছে ও। তবুও নিজের কাছে মনে হচ্ছে হার্টের ধুক ধুক শব্দটা ওপাশের লোকটা শুনে ফেলবে।
আবারও বারকয়েক কড়া নাড়ল ওপাশের লোকটা। সব ভয়-শঙ্কাকে দূর করে দিয়ে দরজাটা খুলে দেয় মামুন। সাথে সাথেই ওর মুখে স্মিত হাসি ফুটে ওঠে। দরজার ওপাশে আর কেউ নয়, আশরাফ দাড়িয়ে আছে।

***
"কিরে? দরজা খুলতে এত দেরি হলো কেন?"
"আর বলিসনা। ভয়তে ঘেমে-নেয়ে একেবারে সেঁটে গেছিলাম।" স্থির হয়ে বলে মামুন।
"তোকে নিয়ে আর পারা গেল না রে। তুইই সব গণ্ডগোলের মূল।" মামুনকে রাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আশরাফ। মামুন অবশ্য মজা হিসেবেই নেয় এই ব্যাপারটা।

আরো কয়েক কদম হাঁটতেই 'হাতেমের বাঁশঝাড়' এ চলে আসে ওরা দুজনে। এতক্ষণে রাকিব আর সুজন সবকিছু প্রস্তুত করে রেখেছে। এ বিষয়টা আশরাফকে সন্তুষ্ট না করে পারে না।
"তাহলে শুরু করা যাক। আমি আর মামুন। আর তোরা দুজনে।" বাকিদের প্রস্তাব দেয় আশরাফ। হাসিমুখেই মেনে নেয় বাকিরা।

***
অতঃপর খেলা শুরু হলো। চমত্কারভাবে এগিয়ে যাচ্ছে খেলা। আশরাফ- মামুনদের পয়েন্ট ২৬, রাকিব- সুজনদের পয়েন্ট ২৩। সুবিধাজনক স্থানে আছে রাকিবরা। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। প্রচণ্ড গতিতে বাতাস বইতে শুরু করলো। প্রকৃতির অস্বাভাবিকতা চারজনের চোখে পড়লেও মামুন ছাড়া বাকিরা খেলা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে রইলো। মামুন বুঝতে পারলো তার স্বপ্নই অদূর ভবিষ্যত্। হঠাত্ করেই সে এদের নিকট থেকে ছুটে পালালো।

বাড়ি আসলো হুড়মুড় করে। কিন্তু সে জানতো না তার জন্য একটা খুশির খবর অপেক্ষা করছে! তার মা- বাবা সহ বাকি সবাই চলে এসেছে বাড়িতে। যদিও দুই-তিন দিন বেড়ানোর কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু বিশেষ কারণে তাঁরা চলে এসেছেন। ফ্রেশ হয়ে টুক করে বিছানাতে শুয়ে পড়লো মামুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই স্বপ্নের রাজ্যের রাজকুমারী তাকে নিয়ে গেল স্বপ্নের রাজ্যে।

এলার্মের মধুর শব্দে ঘুম ভাঙ্গল মামুনের। গতরাতের কথা মনে পড়তেই ঘর হতে দ্রুত বের হয়ে গেল ও। উঠোন পার হতে না হতেই জাহানারা বেগম ডাক দিলেন ওকে। মামুন আস্তে আস্তে মায়ের সামনে এসে দাঁড়াল।
"শুনলাম, হাতেমের বাঁশঝাড়ে গত রাতে সুজন মারা গেছে।" বললেন জাহানারা বেগম।
"আমিতো এই প্রথম শুনলাম, তাও তোমার মুখ দিয়ে।" অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললো মামুন।
"না, শুনলাম তুইও ওদের সাথে নাকি ছিলি। তাই খবরটা তোকে দিলাম।"
"মা, আমি সুজনের লাশটা দেখে আসি।" বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল মামুন। জাহানারা বেগম ছেলের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলেন।

মামুন স্পষ্ট দেখতে পেল সুজনের দুই পায়ের মাঝে রক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে। দুই দুটো মার্ডারের সাক্ষী ও। আর দুটো মার্ডারই একই পদ্ধতিতে। মামুনের বুঝতে বাকি রইল না, কে খুনি।
তাড়াতাড়ি সে ছুটে গেল 'আজগার' কবিরাজের বাড়ি। লোকটা ভূতুড়ে অনেক সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে অনেকেরই। এখান থেকে ২০ মিনিটের হাঁটা পথ। দৌড়িয়ে যাওয়ার ফলে ১০ মিনিটের আগেই কবিরাজের বাড়িতে পৌঁছে গেল ও।

গিয়ে শুনল কবিরাজ বাড়িতে নেই। রামনগরে গিয়েছেন উনি। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ফিরবেন। বারান্দায় বসে অপেক্ষা করতে লাগল মামুন। আর ভাবতে লাগল কী ঘটে যাচ্ছে ওদের সাথে। যা ঘটছে তা অবশ্যই কোনো মানুষের পক্ষে করা সম্ভব না। অবশ্য এটা ভালো করেই জানে মামুন। এজন্যই পুলিশের কাছে না গিয়ে কবিরাজের কাছে এসেছে ও।

***
পাক্কা সাড়ে তিন ঘণ্টা পর বাড়ি ফিরেছেন কবিরাজ। চুলগুলো ছোট ছোট করে রাখার পরিবর্তে জটাধারী করে ফেলেছেন তিনি। দাঁড়ি-গোফের অবস্থাও বেগতিক। কিন্তু কেউ চেহারা দেখে এই কবিরাজের কাছে আসে না। নিজ গুণেই আশেপাশের দশ গ্রাম জুড়ে খ্যাতি উনার।

"কি সমস্যা মামুন? তোকে তো আমাদের বাড়ি এত সকালে আসতে দেখি না!" অবাক কণ্ঠে বলেন কবিরাজ। মামুন তাকে পুরো ঘটনা খুলে বলে।
"তোর কোনো ভয় নেই। তোকে কিছু করলে আগে থেকেই করতে পারতো।"
মামুনকে অভয় দেন কবিরাজ। যদিও কণ্ঠে তেমন জোর নেই। এরপরও কিছুটা আশ্বস্ত হয় ও।

"ওরা দুইজনেই একই সময়ে মারা গেছে?" প্রশ্ন করেন কবিরাজ।
"হু।" ছোট্ট করে জবাব দেয় মামুন।
"তাহলে আমি তোকে যা যা করতে বলব তাই তাই করবি। তাহলে তোর বাকি দুই বন্ধু বাঁচলেও বাঁচতে পারে।" মামুনকে আদেশ করেন কবিরাজ।
"আপনি যা বলবেন আমি তাই করতে রাজি।" সম্মতি জ্ঞাপন করে মামুন।
"শোন তাহলে. . ."

চার.
এখনই সেই সময়। কবিরাজের কথামতোই এখানে আশরাফ ও রাকিবকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছে মামুন। কবিরাজও ইতোমধ্যেই চলে এসেছেন। অন্যদিনের সময় অনুযায়ী আর দুই মিনিটের মধ্যেই কৌশিকের চলে আসার কথা।

হঠাত্ই গত দিনের মতো প্রচণ্ড বেগে হাওয়া বইতে শুরু করলো। কবিরাজের 'পড়ে' দেওয়া তুষ হাতে নিয়ে প্রস্তুত রইল ওরা তিন বন্ধু। একটু পরেই উত্তর দিকের ঝাড়টা থেকে কৌশিককে বের হয়ে আসতে দেখা গেল। নাগালের মধ্যে আসতেই তিনজনে মিলে কৌশিকের দিকে 'মন্ত্রপূত তুষ' ছুঁড়ে দিতে শুরু করলো। কবিরাজ কৌশিকের ডান দিকে অর্থাত্ পূর্ব দিকের আরেকটা বাঁশ ঝাড়ের দিকে লুকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কৌশিক অদৃশ্য হয়ে গেল। আনন্দের আতিশয্যে সাথে সাথেই 'হুররে' বলে চিত্কার করে উঠলো ওরা তিনজন।

কিন্তু আনন্দ বাতাসে মিলিয়ে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যেই। কৌশিককে আবারও দেখা যাচ্ছে! কবিরাজকে শূন্যে তুলে রেখে ওদের দিকেই আসছে ও। মামুনও টের পেলো এর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। কিন্তু এখন কিছু করার নেই। শূন্যে থেকে বৃথাই হাত পা ছোঁড়াছুড়ি করতে লাগলো মামুন। কৌশিক এতক্ষণে আশরাফ-রাকিবদের দিকে এগিয়ে গেছে। ওদের দুজনের কেউ চুল পরিমাণ নড়াচড়া করতে পারছে না, প্রতিরোধ করা তো দূরে থাকুক। কৌশিক প্রথমে আশরাফের দিকে এগিয়ে গেলো। আশরাফ বুঝে গেলো তার সাথে কী হতে চলেছে। কিন্তু তার পক্ষে আপাতত কিছুই করার নেই। কৌশিক এসে আশরাফের দুই পায়ের মাঝখানে সর্বশক্তিতে লাথি মারল। আশরাফ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। একই ঘটনা ঘটলো রাকিবের সাথেও। কবিরাজ ও মামুন শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলেন। কথা বলার শক্তিও তাদের কারো মাঝে নেই।

পরিশিষ্ট.
"তুই কিছু একটা লুকাচ্ছিস আমার কাছ থেকে।" আহত কবিরাজ বললেন মামুনকে উদ্দেশ্য করে।
"হ্যাঁ, এখন বলতে অবশ্য কোনো আপত্তি নেই। শুনুন তাহলে।"

***
"আপনি জানেন প্রতি মৌসুমে মাঁচানপুর ও গৌরিপুর গ্রামের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর কৌশিকের ফুটবল জাদুতে মাঁচানপুর গ্রাম ৬-৩ গোলে জিতেছিল। কৌশিক একাই ৪ গোল করেছিল। ওর জন্যই আমাদের গ্রাম গৌরিপুর হেরেছিল। আমাদের গ্রামের পাঁচ বছরের ঐতিহ্য ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল ও। আমাদের গ্রামের চেয়ারম্যান আড়ালে আমাদের পাঁচজনকে ডেকে বলেছিলেন যত কষ্ট দিয়ে কৌশিককে মারা যায় তত কষ্ট দিয়ে ওকে মারতে। ওর লাশের চেহারা যত বীভত্স হবে, আমরাও তত বেশি পরিমাণ টাকা পাব।
আমরা ওকে সেভাবেই মেরেছিলাম যেভাবে ও আমাদের মেরেছে। আমি পরে অনুতপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে টাকা নেইনি। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম।"

"কথাগুলো আগে বললে আমি ওদের দুটোকে বাঁচানের চেষ্টাও করতাম না।" মুখে মুচকি হাঁসি ফুটিয়ে তোলেন কবিরাজ আজগার।

সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ২:৩০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×