somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পথে ঘাটে পর্ব (১০)

২১ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটা আমার মোবাইল হাইজ্যাক হওয়ার ঘটনা। আমাদের দেশে মোবাইল হারানো হাইজ্যাক হওয়া এগুলো নিত্যদিনের ঘটনা, যখনি মোবাইল হারিয়েছি আমার আশেপাশে যারাই থাকতো তারাই তাদের মোবাইল হারানোর গল্প জুড়ে দিতো। বাংলাদেশে থাকে কিন্তু মোবাইল হারায়নি এমন ব্যক্তি আমাদের দেশে বলতে গেলে এণ্টিক। বরং দেখেছি কার কতগুলো হারিয়েছে, যার যত বেশি হারিয়েছে তার যেন তত credit. যাই হোক আমিও একটু গর্ব করি! কারন আমার মোবাইল হারিয়েছে অনেক অনেক অনেক। এখন নতুন ফোন নিলেই বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন সবাই যে কথাটি আগে বলে তা হল, কিনে লাভ কি তুমি তো আবার হারাবে। একবার একসাথেই গেছে ৩টা মোবাইল। আজ আমি সেই ঘটনাই শেয়ার করবো।

বাড়িতে হঠাৎ খবর এলো আমার দূরসম্পর্কের দাদা মরণাপন্ন, তাকে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে, সন্ধ্যায় খবর এলো সন্ধ্যায়ই আমরা সবাই আমি, আব্বু, আম্মু, বড় ভাই, বড় বোন এবং বড় বোনের মেয়ে(বাড়ি থেকে রিক্সায় ৩০/৪০ মিনিটের পথ) গেলাম। মেডিকেলে সেই দাদার বউ এক ছেলে ও এক মেয়ে আরও দুই চারজন সহ অন্যান্যরা ছিল।

রাত সাড়ে ১১ টার দিকে আমরা ফেরার জন্য রওয়ানা দিলাম। সাথে রিলেটিভরাও কারন হাসপাতালে এত মানুষের তো থাকার জায়গা নাই। এসবের মাঝে এক ফাঁকে রোগীকে দেখতে গেলাম আইসিউতে, তারা বলল কাল আবার অপারেশন করতে হবে, কিডনি নাকি কাজ করছেনা, সবাই ডাক্তারের সাথে কথা বলছে, আমি চেয়ে আছি তার দিকে, তার খাটের পা এর কাছে দাঁড়ানো আমি, পেটে ব্যান্ডেজ করা, মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো, আরও কি সব ক্যাবল লাগানো শরিলে, একসময় বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে।

ফেরার পথে অনেকগুলো রিক্সা লাগলো, মানুষ অনেক। রোগীর সাথে একজন রয়ে গেলো। বাকি সব হাসপাতালে ভিড় বারিয়ে লাভ নেই তাই আমাদের বাড়িতেই রাত কাটানোর জন্য রওয়ানা দিলো।

আমার সাথে রিক্সায় আমার ভাগ্নি উঠলো। আমাদের রিক্সা ছিল সবার পেছনে, কিছুটা পথ আসতেই আমার ভাগ্নি বলল তুমি হ্যান্ডব্যাগটা ভেতরে সরিয়ে আনো, আমি কেবল বলতে চেয়েছিলাম কিছু হবেনা, কিন্তু বলতে পারলাম না, এক ঝটকায় কোত্থেকে কি হয়ে গেলো হ্যান্ডব্যাগ মনে হল যেন উড়ে গেলো একটা সাদা রঙের প্রাইভেট কারের জানালায়। আমি প্রথম থাক্কায় নিজেকে সামলাতে সামলাতে ভাবলাম মনেহয় ভুলে কারের জানালায় চলে গেছে, কারের টানে ব্যাগ তো গেলোই আমি উড়ে গিয়ে পড়লাম মহাসড়ক এর মাঝে, দেখা গেলো যে রিকশায় আমি ছিলাম সেই রিকশা ভারসাম্য সামলাতে পারলনা, আমার ভাগ্নি রিকশাওয়ালা তার রিকশাসহ আমার উপর দিয়ে উঠে গেলো, ভয়ংকর কিছুর আশঙ্কায় আমি চোখ বন্ধ করার আগ মুহূর্তে দেখলাম আমার ভাগ্নি দুই হাত দিয়ে রিকশা চেপে ধরে চিৎকার দিচ্ছে খালামনি, রিকশাওয়ালা বলছে হায় আল্লাহ হায় আল্লাহ। রাত বেশি তাই বাস ট্রাক রাস্তায় ছিল কম যা ছিল থামিয়ে দিয়েছে, আর রিকশার চাকা দুইটি আমার হাঁটুর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় ওই অংশের মাংস বেশ অনেকখানি তুলে নিয়েছিল।
কেউ আমার গায়ে হাত দিক আমি চাইনা তাই যেই দেখলাম মানুষজন আমাকে ধরে তুলতে আসতেছে আমি তাড়াতাড়ি কারো সাহায্য ছাড়াই উঠে দাঁড়ালাম, আমার ভাগ্নি চিৎকার করে কান্নাকাটি করা শুরু করলো, সারা জায়গায় রক্ত!! তুমি ঠিক আছো? তুমি ঠিক আছো? রাস্তার পিচ ভীষণ ধারালো ওইগুলোর কারনেই শরিলের বেশির ভাগ ছুলে কিছু কিছু অংশের মাংস উঠে গিয়েছিলো, কাপড়ের উপর দিয়েই।

ওখান থেকে এক পরিচিত ডাঃ এর বাসা থেকে ব্যান্ডেজ করে বাড়ি ফিরলাম, আম্মুকে ভাগ্নির মোবাইল দিয়ে ফোন করে বললাম আসতেছি একটু দেড়ি হবে, অত রাতে কোন চেম্বারই খোলা ছিলনা, পথে ফিরতে ফিরতে বেশ কয়বার বমি হল। শরিল মনে হল যেন আলগা হয়ে গেছে, কাঁপছে, কিছুতেই ভারসাম্য পাচ্ছিলাম না, বাসায় তারা অনেক আগেই ফিরেছে পথে কি হয়েছে তারা বাড়ি ফেরার পরই জানতে পেরেছে, সব শুনে কয়েক দফা আমাকে নিয়ে কান্নাকাটি, সব চাইতে বেশি কাঁদছিল আমার আম্মু আর বড় বোন, আমি শরিল মন দুই দিক থেকেই ভারসাম্যহীন হওয়াতে, ডাঃ এর দেয়া মেডিসিন খেয়ে শুয়ে পড়লাম, এবং গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম, ডাঃ সম্ভবত ঘুমের ওষুধ ও প্রেসক্রাইব করেছিলো।

এক অপার্থিব বাস্তব স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙলো, স্বপ্নে দেখি আমি হাসপাতালের সেই দাদার কেবিনে, সেই একি রকম ভাবে বিছানায় পরে আছে সে, পেটে ব্যান্ডেজ করা, মুখে অক্সিজেনের মাস্ক, হাতে স্যালাইন, এবং আরও কিছু ক্যাবল লাগানো শরীরে।

এবং হঠাৎ সে ওই অবস্থায় উঠে বসলো, আমার দিকে তাকালো কিন্তু চোখের মনি ঠিক আমার দিকে না, সে খুবি হাত নেড়ে আফসোস আর হাহাকার জড়ানো গলায় বলে উঠলো, আমার জন্য এত কষ্ট পেলি তুই আমি তো বাঁচবো নারে আমি তো বাঁচবো না।
আমি আতংকগ্রস্থ অবস্থায় ঘুম ভেঙ্গে চেয়ে দেখি ঘুটঘুটে অন্ধকার, রাতে ব্যাথার ঘোরে মনেহয় রুমের সব লাইট বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
তার কয়েক মুহূর্ত পর ফজরের আযানের ধ্বনি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো।

সকালে দাদার মৃত্যু সংবাদ এলো হাসপাতাল থেকে।

বিঃ দ্রঃ এটা কোন গল্প নয় আমার জীবনে পথে ঘাটে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×