somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ সাজুর রুপকথা (শেষ অংশ)

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্ব
এইভাবে পর পর ছয়দিন কেটে যায়, বাড়ি ফেরা দরকার, দুইদিনের কাজে এসে ছয়দিন আটকে থাকা কোন কাজের কথা নয়, রতনকে ফোন করে একটা দারুন নিউজ পায় সাজু, গ্রামের আক্তার চাচার ছেলে কানাডা প্রবাসী সে নাকি বেশ মোটা অংকের টাকা ডোনেট করেছে স্কুলের জন্য, এই দিয়ে বিভিন্ন অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে, রুহুলকে বলতে সেও আনন্দিত হল, কিন্তু রুহুলের চাকরী হয়ে গিয়েছে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে এরিয়া ম্যানেজার পোস্টে, শেষবারের মত আজ বইমেলায় যেয়ে দূর থেকে রূপকথাকে দেখে বাড়ি রওয়ানা দেবে ঠিক করে ও।
আজ রুপকথার থেকে চোখ ফেরানো দায়, একটা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছে, খোঁপায় পড়েছে গাঁদা ফুল, মেয়েদের শাড়িতে যে কত সুন্দর লাগে তারা জানলে প্রতিদিন নিশ্চয়ই শাড়ি পড়ে থাকতো, অথবা রুপকথা যদি তার হত একেদিন একেক রকম শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে রাখতো; কখনো লাল; কখনো নীল; কখনো মেরুন; কখনো বেগুনী, অবশ্য এমন অসম্ভব দিন তো বাস্তবে কখনো আসবেনা, এই কয়দিনে বুঝে গেছে বেশ, একটা মুহূর্তের জন্য সামনে দাঁড়াবার সাহসই হলনা।

- আপনি কি আমার অটোগ্রাফ নিতে এসেছেন? স্টলের রুমকি আমাকে জানালো আপনি নাকি গত ছয়দিন ধরে আমার বই নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে চলে যান? কথা গুলো বলে ভালো করে তাকায় সাজুর মুখের দিকে রুপকথা, চিনতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে না,
আশাহত চোখে চেয়ে দেখে সাজু; ভাবে জীবনে একজনকে ভালবেসে যে অবহেলা পেয়েছে দ্বিতীয় ও শেষবারের মতন ওর এই একমাত্র ভালবাসা থেকে অবহেলা সইতে পারবেনা, যদি ওর ভালোবাসার কথা শুনে মুখ ঘুরিয়ে নেয়! সাজু প্রচন্ড জড়তা থেকে নিজেকে তুলে এনে ধীরে বলে;
- আমি সাজু আড়িয়াল খাঁর তীরে দাঁড়িয়ে একদিন গান শুনিয়েছিলাম তোমাকে, সাথে বলেছিলাম আমার কষ্টগুলোও, অদ্ভুত রহস্যময় চেহারা করে চুপ করে সাজুর মুখের দিকে প্রথমবারের মতন যেন তাকায় রুপকথা,তবে সরে ও যায় না সামনে থেকে।

এই সামান্য প্রশ্রয়ে ভেতরে ভেতরে উথাল পাথাল ঢেউ ওঠে সাজুর চোখ ছলছল করে, বলে আমাকে শুধু একটিবার তোমার হাত ধরতে দেবে? যতক্ষণ না লোকজন খারাপ ভাবে নোটিশ না করে ব্যাপারটা??
বুদ্ধিমতী মেয়ে রুপকথা সাজুর ভেতরটা নিমিষেই পড়ে ফেলে, রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে ওর চোখে মুখে; তারপর হাত গুটিয়ে নিয়ে বলে
-মানুষ সেই কখন থেকেই তো নোটিশ করছে তুমি শুধু বলেই যাচ্ছ বলেই যাচ্ছ, বাই দ্যা ওয়ে ফেইসবুকে অমন ছোট বেলার ছবি দিয়ে রাখলে কে চিনবে! কণ্ঠ শোনার পর চিনতে পারলাম। ঢাকা এসেছ কতদিন?
- আজ সাতদিন হলো, আজই চলে যাব,
- স্কুল কেমন চলছে তোমার একদিন ফেইসবুকে দেখলাম স্কুল করেছ,
- ওই জন্যই যেতে হবে, এক ছোট ভাইকে দায়িত্ব দিয়ে এসেছি, কত কাজ বাকী।
আচ্ছা আজ যাও তবে, বলেই চলে যাচ্ছিল রুপকথা,
তারপরই ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, বাসায় তোমার বাবা মা'কে পাঠাতে পারো, আমার আপত্তি নেই। একি সাথে অবিশ্বাস! আনন্দ! বিস্ময়! বেদনার এক চেহারা ফুটে ওঠে সাজুর চোখে মুখে, এরপর একদম জনসমক্ষে কিছুক্ষন অশ্রু বিসর্জন করে রূপকথাকে হতবিহব্বল করে বেরিয়ে আসে মেলা থেকে।

এই ঘটনার বছর খানেকের মাথায় সাজুর আর রুপকথার বিয়ে হয় জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, সাজুর স্কুলের প্রতিটা শিশু ছিল বরযাত্রীর প্রধান অতিথি, সাজু এখন স্কুল পরিচালনার পাশাপাশি চাকরী করছে, সব কিছু মিলিয়ে বেশ চলে যাচ্ছে জীবনটা, আসলে জীবনে খারাপ সময় আসে তবে সেটা চিরস্থায়ী নয়, খারাপ সময় জীবনে আসেই জীবন কতটা সুন্দর সেটা বোঝানোর জন্য, অনেকে অবাক হয়ে দেখে কিছুদিন আগেরও ছন্নছাড়া ছেলেটির গোছানো শান্তির সংসার, পাশাপাশি ওর প্রিয় আড়িয়াল খাঁ তো আছেই।

সমাপ্ত

ছবিঃ আমার তোলা
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৩৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুই পাগল তোর বাপে পাগল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



রাতে অর্ধেক কাউয়া ক্যাচাল দেইখ্যা হুর বইল্যা— মোবাইল ফোনের পাওয়ার বাটনে একটা চাপ দিয়া, স্ক্রিন লক কইরা, বিছানার কর্নারে মোবাইলটারে ছুইড়া রাখলাম।

ল্যাপটপের লিড তুইল্যা সার্ভারে প্রবেশ। বৃহস্পতিবারের রাইত... ...বাকিটুকু পড়ুন

যত দোষ নন্দ ঘোষ...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১

"যত দোষ নন্দ ঘোষ"....

বাংলায় প্রচলিত প্রবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যত দোষ করুক না কেন, সব নন্দ ঘোষের ঘাড়েই যায়! এ প্রবাদের সহজ অর্থ হচ্ছে, দুর্বল মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪১


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়

লিখেছেন বরুণা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৩


চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।

খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরও একটি কবর খোঁড়া

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৪

গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×