somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ তার সাথে দেখা হবে কবে ( চতুর্থ পর্ব)

১৮ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃনেট
রাতে ঝরঝর করে বৃষ্টি পড়ছে একটানা কয়েক ঘন্টা ধরে, ঝরছে তো ঝরছেই শেষই হচ্ছে না, সারাদিনের নানা ব্যস্ততায় তিতির ক্লান্ত, কাল শনিবার শপিং মলে ডিউটি আছে, সেখানে আবার নতুন কি ঘটে সেই আশঙ্কায় শঙ্কিত ভেতরে ভেতরে কিছুটা।

সকালে আশরাফ স্যারের কাছে ক্লাসের সকলের প্রেজেন্টেশনের বাইন্ডিং খাতাগুলো পৌঁছে দিতে হবে, তানিমকে সেই দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে তিতির,ওরা দুজন ক্লাসের মনিটর, অফিস থেকে পড়াশোনার জন্য সবসময়ই তারা ছাড় দেয়, এরকম রুলস ও আছে যে স্টুডেন্টরা প্রয়োজনে ছুটি নিতে পারবে, শুধু নুরিয়া আপাকে আর কনভিন্স করা যায় না এই ব্যাপারে, ছুটি নেওয়ার নাম যদি তিতির একবার মুখে নেয় দশ মিনিট কথা শুনিয়ে কাজের বাহানায় তা প্রতিহত করবেই নুরিয়া আপা।


এইসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে যায় তিতির। শেষ রাতের দিকে আবারো একটা অদ্ভুত সুন্দর স্বপ্ন দেখে ও।
একটা ছেলে দাঁড়িয়ে; ভীষণ বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, কপাল, মাথা ভর্তি চুল, ফর্সা গায়ের রং আর চোখের লেন্সের রং ধূসর নীল, তিতির যে রাস্তা দিয়ে অফিসে যায় রোজ সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছেলেটা,

স্বপ্নের মধ্যে তিতিরের কি হলো কে জানে ছেলেটা দু বাহু দুদিকে ছড়িয়ে শাহরুখ খান স্টাইলে দাঁড়াতেই দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরার কয়েক সেকেন্ডের ভেতর ঘুম ভেঙে যায় তিতিরের।
হায়, এ আবার কেমন স্বপ্ন!! নিজেই নিজেকে তিরস্কার করে লাজুক আবেশে। কেন এমন একটা স্বপ্ন দেখতে গেল! এরকম কিছু তো ও একদমই ভাবেনি, তবে কেন; একবার মনে হলো, এটা হয়তো কেবল ক্লান্তি আর অবচেতন মনের কল্পনা, কিন্তু আবার মনে হলো, এত পরিষ্কার আর জীবন্ত স্বপ্ন কিভাবে হতে পারে!

বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না তিতিরের, শপিং মলের ডিউটির কথা চিন্তা করতে করতে উঠে পড়তে হলো।

তাড়াহুড়ো করে রেডি হতে হতে তিতির হঠাৎ লক্ষ্য করলো, তার মনের মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছে। রাস্তায় বেরিয়ে স্বপ্নে দেখা সেই পথে হাঁটতে হাঁটতে তিতির সেই ছেলেটার কথা মনে হতেই একটা গোপন হাসি ফুটে উঠে চোখে মুখে।

তিতির যখন শপিং মলে পৌঁছালো সেটি সকাল সকাল জমজমাট হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এসির ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে মিশে যাচ্ছে মানুষের হাঁটাচলার শব্দ, চিৎকার, হাসি, আর ক্যাশ মেশিনের টুং টাং।

তিতির ডেস্কে বসেই লক্ষ্য করলো, ফ্লোরের কর্নারে একটা ছোট স্টেজ বানানো হয়েছে। রঙিন বেলুন, ব্যানার, আর কার্টুন চরিত্রের স্ট্যান্ডি দিয়ে সাজানো হয়েছে জায়গাটা। ব্যানারে লেখা
কিডস পেইন্টিং কনটেস্ট – কালার ইউর ড্রিমস
বয়স ৫ থেকে ১২ এর মধ্যে শিশুদের জন্য এই প্রতিযোগিতা।
ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠলো।

– কাস্টমার কেয়ার, গুড আফটারনুন...
– হ্যালো তিতির, আমি তমাল.. বিরক্ত করছি না তো?
– না না, বলুন। আপনার কথা হয়নি এখনো স্যারের সাথে?
– হ্যাঁ হয়েছে হয়েছে
- তাহলে
- তাহলে কিছু না, কি করছেন?
- তেমন কিছু না, আজ বেবিদের পেইন্টিং প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়েছে এখানে, বাচ্চারা খুব আনন্দ করছে।
– বাহ্ ভালো তো,
- কি ভালো
- তিতির তিতির
- জী জী
- তিতির ভালো
- তাই?
- হা জি হা জি হা
- হিহিহি করে হেসে দেয় তিতির, নুরিয়া আপাকে আসতে দেখে দ্রুত পরে কথা হবে বলে ফোন কেটে দেয় তিতির। এয়ার ফ্রেশনার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে দ্রুত ডেস্ক ক্লিন করে দরকারি ফাইল গুলো নিয়ে বসে ও, নুরিয়া আপা কাছে এসেই বলে ওঠেন,
— তোমার পোষাকটা খুব ফিটফাট আজকে, পেইন্টিং প্রোগ্রামের জন্য? কে সিলেক্ট করেছে তোমাকে? তোমার হাসনাত ভাই বুঝি? হোস্টের দায়িত্ব বুঝি সেই তোমাকে দিয়েছে? আমরা তো শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারিনা তোমার মতন, তাই আমাদেরকে ম্যানেজমেন্ট গণনায় ধরেন না।

তিতির প্রথমবারের মতন চোখ তুলে তাকালো সামনে রাখা আজকের পেইন্টিং কনটেস্টের প্রিন্টেড কপিতে তাতে হোস্টের জায়গায় ওর নাম লেখা। হোস্টিং টাইম অলরেডি শুরু হয়েছে দেখে, তিতিরকে সব সময় এই কাজটা দেয় সিও স্যার, ও এই কাজটি করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে।
নুরিয়া আপা চোখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে, সেটা চোখেই পড়ে নাই এরকম ভাব নিয়ে দ্রুত মাইক্রোফোনের কাছে গিয়ে তিতির বলতে শুরু করলো
- প্রিয় ছোট্ট শিল্পীরা, তোমরা রংতুলি নিয়ে চলে আসো আমাদের কিডস কর্নারে! তোমাদের কল্পনার রাজ্য এঁকে দিয়ে সবাইকে চমকে দাও আজ।
তিতির হেসে হেসে বললো কথাগুলো এমন আয়োজন সে খুব ভালোবাসে, বিশেষ করে বাচ্চাদের নিয়ে।

স্টেজের সামনে শিশুরা লাইন দিয়ে বসেছে ছোট ছোট টেবিলে। কেউ মা বাবার হাত ধরে এসেছে, কেউ বাবা মার কাঁধে রঙের বাক্স ঝুলিয়ে এসে সরাসরি বসে পড়েছে টেবিলে।
একটা ছোট মেয়ে গোলগাল, চুল দুদিকে বাঁধা, পরনে হলুদ ফ্রক দাঁড়িয়ে বলছে,
– আমি তো রাজকুমারী আঁকবো! গোলাপি রাজকুমারী!
একটা ছেলে পাশ থেকে বলে উঠলো,
– আমি তো ইউএফও আঁকবো! এলিয়েন আসবে মঙ্গল গ্রহ থেকে!

পাশে দাঁড়ানো তাদের অভিভাবকেরা হাসছে, মোবাইলে ছবি তুলছে, কেউ কেউ ফেসবুক লাইভও চালু করেছে।

আবারো তিতির মাইক্রোফোন হাতে বলে উঠলো,
– প্রতিযোগিতার সময় এক ঘণ্টা, এরপর বিচারকেরা বিজয়ী বেছে নেবেন। প্রথম পুরস্কার – একটি স্কেচবুক সেট, দ্বিতীয় পুরস্কার – কালার পেন্সিল বক্স, এবং তৃতীয় পুরস্কার – একটি কিডস ক্যামেরা! সবাই সুন্দর কিছু আঁকো, আর মজা করো!

তিতির মাইক্রোফোন থেকে সরে বাচ্চাদের কাছে এগিয়ে গেলো। এইসব উচ্ছ্বাস দেখতে ওর ভালো লাগে, মনটা হালকা হয়ে যায়। কিছু সময়ের জন্য হলেও একঘেয়ে কাজ আর হিসেবি জীবন থেকে দূরে সরে থাকা যায়।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হচ্ছে ধীরে ধীরে। শপিংমলের কাঁচের দেয়ালের বাইরে সুর্যের আলোয় ভরে আছে শহরের চেনা ইট-পাথর। তিতির এখন কাস্টমার কেয়ারের ডেস্কে একা। নুরিয়া আপা অসুস্থ বলে একটু আগে বাড়ি চলে গেছেন, তার ডিউটি এখন তিতির করছে। খুব সুন্দর ভাবে পেইন্টিং প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে, বিজয়ী ঘোষনা হবে আগামীকাল।
ল্যান্ড ফোনটা আবার বেজে উঠল।

– কাস্টমার কেয়ার, গুড ইভনিং।
– হ্যালো ডিয়ার আমি তমাল চৌধুরী কলকাতার মাটি ছুঁয়ে বলছি, আপনার কাছে অজান্তেই কল চলে গিয়েছে এবার।
- মাটি পেলেন কোথায়?
- জুতা খুলে সেটার তলা থেকে
- মাটি ছিল?
- হালকা বালির মত দু একটা কনা, তাতে চলবে না?
- না চলবেনা
-তাহলে চা কফি কিছু বানিয়ে দিই?
- কিভাবে পাঠাবেন
- আপাতত আশেপাশের কোন কফি শপের কোন নাম্বার দিয়ে আপনার সেবা করার সুযোগ করে দিন ম্যাডাম।
– আমার সেবা লাগবে না
- ফ্রি কিন্তু
- লাগবেনা
- পিংকী প্রমিজ
- ধ্যাৎ
- তিতির নামে একটি মেয়ে, বসে থাকে ডেস্কে
হাসে যখন হালকা করে, মনটা আমার যায় ভেসে।

তিতির একমুহূর্ত চুপ থেকে বলল,
– আপনি সবসময় এমনই বলেন নাকি আজ একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে?
– সত্যি বলছি তিতির, কিছু কিছু মানুষ মন ছুঁয়ে যায় পরিচয় ছাড়াই। আপনি তেমন একজন।
– ফোনটা রাখি তাহলে?
– রাখার আগে একটা প্রশ্ন…
– বলুন।
– আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটা কি দেয়া যাবে?
– বাহ, মিস্টার তমাল চৌধুরী।
– বাহ, মিস তিতির।
- এত সহজে বিশ্বাস করি কি করে?
- তাহলে কি কঠিন বিশ্বাস করাতে হবে?
- ভেবে দেখি
- আমার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার আপনার ল্যান্ডফোনের ডিসপ্লেতে শো করছে, অনুগ্রহ পূর্বক সংগ্রহ করুন।
- উহু আমার বয়েই গেছে
- তাইতো
- হ্যাঁ তাইতো
দুজনের একত্রে হাসি

ফোন রেখে তিতির জানালার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ব্যস্ত শহরের আলো আর কলকাতা থেকে আসা অচেনা কণ্ঠ এক অদ্ভুত আবেশে জড়িয়ে যাচ্ছে তিতিরের বিকেলে। তিতির ডেস্কে কাজ করতে থাকে। চোখ স্ক্রিনে থাকলেও মনটা পড়ে থাকে একটু আগের কথোপকথনে। চট করে ডিসপ্লে থেকে নাম্বারটা সেভ করে নেয় ওর মোবাইলে। ( চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:৫৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×