ফি বছর বইমেলা ফুরোলেই গণমাধ্যমগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে 'বেস্টসেলার' বইয়ের খোঁজে। খোঁজ নিতে গিয়ে প্রতিবছরই তারা ভিড়মি খান। সবচেয়ে বেশি বিকিকিনি হয় 'বাংলা একাডেমি'র নিজস্ব প্রকাশনীর। আর সর্বোচ্চ বিক্রিত বই-এর তালিকাটা তো আরও চমকপ্রদ। তালিকার প্রথম পাঁচটি নামের মাঝে অবশ্যই খুঁজে পাওয়া যাবে 'বাংলা একাডেমি' প্রকাশিত অভিধান বা, ডিকশনারির নাম। বইমেলায় যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তাদের কাছে অভিধান কেনার হামলে পড়া দৃশ্যটা মোটেও অজানা নয়।
ব্যাপারটা এমন নয় যে ফেব্রুয়ারি এলেই জনতা অভিধানের খোঁজে নেমে পড়ে। বরং, এর চাহিদা বছর জুড়েই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় 'বাংলা একাডেমি'র সামনের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাবার সময় প্রায় দু-চার জনের দেখা মিলতো, যারা পথ আগলে বেশ বিনীতভাবে বলতো,'ভাই একটা ডিকশনারি কিনে দেবেন?'
ব্যাপার আর কিছুই না। ছাত্রদের জন্য 'বাংলা একাডেমি' অত্যন্ত স্বল্পদামে অভিধান বিক্রয় করে। শুধু পরিচয়পত্র দেখালেই হলো।
স্বল্পমূল্যে এভাবে অনেককেই অভিধান কিনতে সহায়তা করেছি সেসময়।
অভিধানের এ কচকচানি অবশ্য খামোকা নয়। গত ক'দিনের তীব্র গরমে ত্রাহি ত্রাহি দশা। দেশের প্রায় সবকটি গণমাধ্যমে গরমের খবর। বেশ আনন্দের সাথে তারা প্রচার করছে, "দাবদাহে অতিষ্ঠ জনগণ"।
হাতে গোণা ক'টি সংবাদ মাধ্যম বলছে "তাপদাহ" এর কথা। গোলমালটা এখানেই। জনগণ ঠিক কোনটাতে অতিষ্ঠ? 'তাপদাহ' নাকি 'দাবদাহ'।
"তাপপ্রবাহ" বা ইংরেজির "Heat wave" কে বলা হচ্ছে "তাপদাহ" কিংবা "দাবদাহ"।
গণমাধ্যমে কাজ করার সুবাদে অভিজ্ঞ এক সহকর্মীর কাছে জেনেছিলাম 'দাবদাহ' নয় সঠিক হলো 'তাপদাহ'।
কিন্তু 'বাংলা একাডেমি'র অভিধান বলছে ভিন্ন কথা। সেখানে "তাপদাহ" বলে কোন শব্দের অস্তিত্ব নেই। আর "দাবদাহ"? সেটার যে দুটো অভিধানে দেয়া আছে তার সাথে চলমান তাপপ্রবাহের সম্পর্ক নেই।
'দাবানলের তাপ' এবং 'তীব্র জ্বালাকে' অভিধানে বলা হচ্ছে "দাবদাহ"। দেশে যেহেতু দাবানলের কোন অস্তিত্ব নেই তাই তাপপ্রবাহের সংবাদে "দাবদাহ" শব্দটির ব্যবহার ভুল। আর কেউ যদি 'তীব্র জ্বালা'র দিকে ইংগিত করেন তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায় 'এ জ্বালা কিসের জ্বালা!'
দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলো বছরের পর বছর ধরেই এ ভুল করে আসছে। তাদের বক্তব্য জানতে বড় মন চায়। বিশেষ করে ভাষার শুদ্ধতা নিয়ে বড় বড় বুলি আওড়ানো....
যাকগে, হোজ্জা নাসিরুদ্দিনের একটা ছোট্ট গল্প দিয়ে লেখা শেষ করবো। তার আগে জনগণকে আরেকটু ডিকশনারি দেখিয়ে যাই। আমাদের গণমাধ্যমগুলো জ্যৈষ্ঠ মাস এলেই "মধুমাস" "মধুমাস" বলে লাফালাফি শুরু করে। অথচ, 'বাংলা একাডেমি'র অভিধান বলছে মধুমাস হলো চৈত্রমাস।
হোজ্জা নাসিরুদ্দিন গ্রামের কাজী বা বিচারক পদে আসীন হয়েছেন। বিচারকার্য চলছে। বাদীর বক্তব্য শুনে তিনি বললেন, 'ঠিক তোমার কথাই ঠিক।'
এসময় বিবাদী তার কথার প্রতিবাদ করলে তিনি বিবাদীকে বলেন, 'ঠিক ঠিক তোমার কথাই ঠিক।'
পাশ থেকে হোজ্জার সহকারী তাকে কানে কানে বললেন, 'হুজুর বাদী-বিবাদী দুজনের কথাই তো ঠিক হতে পারেনা।'
হোজ্জা বলে উঠলেন, 'ঠিক ঠিক তোমার কথাই ঠিক'।
এভাবেই হয়তো একদিন ঠিক ঠিক সব গা-সওয়া হয়ে যাবে।