somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লং-ড্রাইভ

০৯ ই জুন, ২০১৯ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- মানুষ হিসেবে আপনি কেমন?
- আর দশজনের মতই। অতি সাধারণের বাইরে অসাধারণ কিছুই আমার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
- উ হু। আমার মোটেও তা মনে হয়না।
- কী মনে হয়?
- আপনি অন্যরকম একজন। একদম অন্যরকম। আমি শিওর কেউ আপনার ভেতরের মানুষটাকে বের করে আনতে পারেনি, আমি কিন্তু এখনই বুঝেছি...
আমি মনে মনে হাসি। মেয়েগুলো এমন-ই। আজ পর্যন্ত অনেকেই আমার ভেতরের আমিটাকে বের করে আনতে চেয়েছে। ফলাফল শূন্য। না, ঠিক শূন্য নয়; অত্যন্ত আনরোমান্টিক-বেরসিক এবং বদমেজাজি মানুষটাকে ছেড়ে পালিয়ে সকলেই হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে।
বিয়ে করা বউ পাক্কা তিনবছর সংসার করার পর আমার অন্দর-সদর সব যখন তার চেনা শেষ, তখন সে ও রণে ক্লান্ত হয়ে ময়দান ত্যাগ করেছে। এ মেয়েকে এসব কে বোঝাবে?
- জানেন, আপনার লেখা পড়েই আমি বুঝতে পেরেছি আপনি মানুষটা খুব একা।
- সে তো সবাই ই একা।
- সেরকম না। আপনি সবার মাঝে থেকেও একা। আচ্ছা, আপনি নিশ্চয়ই এই একাকীত্ব উপভোগ করেন; তাই না?
আমি হাসি। সবাই এই হাসির অর্থ করে ফেলে একাকীত্ব আমার খুব পছন্দের। ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। আর স্ত্রী-পরিত্যক্ত, নিঃসন্তান এক লেখক একাকী থাকবে এটা তো নিপাতনে সিদ্ধ ব্যাপার। অথচ এই মেয়ে এটা বুঝে যেন যুদ্ধ জয় করে ফেলেছে।
- আপনাকে বলে বোঝাতে পারবোনা আমার যে কি ভালো লাগছে...
- কেন?
- ও মা, প্রিয় লেখকের সাথে লং ড্রাইভে বেরিয়েছি। ফাঁকা রাস্তা, তার ওপর ঝমঝম বৃষ্টি। উফফ্, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আচ্ছা, বৃষ্টি আপনার খুব পছন্দ না?
- হুমম।
এই মুহূর্তে বৃষ্টি নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। ঝমঝম বৃষ্টিতে বরং মেজাজ টা চড়ে যাচ্ছে। এর চেয়ে বরং ঝিরঝির বৃষ্টিতেই জমতো ভালো...
- আচ্ছা, আপনি বুঝলেন কিভাবে যে আজ বৃষ্টি হবে?
- বুঝিনি তো।
- উমমহহ, বললেই হলো। বৃষ্টি হবে এটা না জানলে আজ হঠাৎ লং ড্রাইভের কথা আপনার মাথায় এলো কেন? সেই কবে থেকে আপনাকে বলছি; গভীর রাত, ঝুম বৃষ্টি, বৃষ্টির তোড়ে চারপাশ ঝাপসা, গাড়ির কাঁচ দিয়েও ভাপ বেরোবে- আর এই দুর্যোগের রাতেও আমরা ঘুরবো আর গল্প করবো। উফফফ্।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ের আহ্লাদ যেন টিনেজ বয়সকে ছুঁয়ে গেছে। গত চার-পাঁচদিনের ভ্যাপসা গরম আর আকাশে বিজলীর অযথা ক্রন্দন মোটামুটি জানিয়ে-ই দিচ্ছিলো আজকের আবহাওয়ার খবর, আর আবহাওয়া সংক্রান্ত মোবাইল ফোনের হরেক অ্যাপ তো আছেই। তবে যে কাজে পথে নেমেছি তার জন্য ঝুম বৃষ্টি একদমই বেমানান। দরকার ঝিরঝিরি বৃষ্টি।
- আপনার বউকে নিয়ে এমন লং-ড্রাইভে অনেক এসেছেন না?
এসব ফালতু প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালো লাগেনা। অবশ্য আর কোন উত্তর দেবার প্রয়োজনও বোধহয় নেই। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো গুড়ো করা মুড়ির দানার মত ঝরছে। আর আকাশের বিজলীর চমকে চারপাশ হঠাৎ হঠাৎ দিনের মতই পরিস্কার হয়ে পড়ছে।
- জানালার কাঁচ নামিয়ে দাও। এসি অফ করে দিচ্ছি। বৃষ্টির ছাঁট মুখে লাগিয়ে দেখো, দারুণ লাগবে।
মন্ত্রমুগ্দ্ধের মত মেয়েটা খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টির গুঁড়ো মাখছে। এই রে, মেয়েটার নামটা যেন কী - তা একদম ভুলে গেছি। সে যাক্ গে, নাম-পরিচয় এসব অবান্তর জিনিস নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কী লাভ?
- ওরা কে? ঐ লোকগুলো কে?
মেয়েটি রাজ্যের বিষ্ময় নিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। আমি গাড়ির গতি একদম কমিয়ে দিয়েছি। তার চোখের বিষ্ময় ধীরে ধীরে আতঙ্কে রূপ নেবে...
ওরা রাস্তা ফুঁড়ে হঠাৎ-ই যেন এসে পড়ে। কোন হেল দোল নেই। কোন বাক্যব্যয় নেই। শুধু পুরো এক কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে রাস্তার দুপাশে বিশ-ত্রিশ গজ পরপর চার-পাঁচজন করে বিভিন্ন বয়েসী পাঞ্জাবী পড়া পুরুষ লোক দাঁড়িয়ে থাকে।
দশ বছর আগে এই রাস্তায় প্রথম তাদের দেখার পর অনেক ভেবেও কোন উত্তর পাইনি। পরে উত্তরের চিন্তা বাদে মাথায় আসে লং-ড্রাইভের চিন্তা।
বৃষ্টি মোটামুটি কমে এলেই ওরা নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকে। মেয়েগুলো এতেই ভড়কে যায়। ভয়ে চুপসে গেলেও কেউ এ নিয়ে আর কোন কথা বলতে চায়না। কেন চায়না সেটাও অবশ্য গবেষণার বিষয়।
বউকে নিয়েও অসংখ্যবার এই খেলা খেলেছি। ওর ধারণা... থাক্, যে চলে গেছে তার ধারণা জেনেই বা কী লাভ!!!
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×