সেই ন্যাংটো রাজার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। ঐ যে যিনি বিশেষ এক পোষাক পড়ে (প্রকৃতপক্ষে কিছুই না পড়ে) রাস্তায় হেঁটেছিলেন; আর এক শিশু তাকে বলেছিল - ও মা! রাজা তো ন্যাংটু-পুটু।
যাকগে। যা গেছে, তা গেছে। কিন্তু এরপর কি হয়েছিল জানেন? সেটাই বলবো। রাজাদের মান-সম্মান অনেক বড় বিষয়। একটু-আধটু ন্যাংটো হলেও তাদের সম্মানহানি হয়না। তো সেই রাজাও দিব্যি শাসন করে যাচ্ছেন। মাথায় যখন যা আসছে, তাই করছেন। একবার তার মনে হলো তিনি দুধের পুকুর বানাবেন।
যেই ভাবা সেই কাজ। মন্ত্রিপরিষদে থুক্কু রাজসভায় তিনি জানালেন তার ইচ্ছা। সঙ্গে সঙ্গে তা হাঁ জয়যুক্ত হয়েছে, হাঁ জয়যুক্ত হয়েছে, হাঁ জয়যুক্ত হয়েছে ভোটে পাস। দেশে তৈরি হবে দুধের পুকুর।
বিল পাস হলো। পুকুর খননও শুরু হলো। অতি বুদ্ধিমান মন্ত্রী, রাজকর্মচারীদের তো 'দুধের পুকুর' প্রকল্পের টাকায় দুধে-ভাতে-সরে আর ঘিয়ে-বাটারে রমরমা দশা।
সময় ঘনিয়ে এসেছে। খনন করা পুকুরে দুধ ঢেলে পূর্ণ করতে হবে। এদিকে প্রকল্পের টাকা আর টাকা দিয়ে কেনা দুধ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেট এবং বাথরুম দুটোই পার হয়ে বায়োগ্যাস হয়ে গেছে।
আর এদিকে তো দুধের পুকুর দুধের পুকুর হুজুগে দেশজুড়ে দুধ-সংকট। দুধের লিটার প্রতি দাম আকাশ ছুঁই ছুঁই।
রাজ আজ্ঞা জারি হলো। শুক্রবার দিন জুম্মার নামাজ শেষে সকল প্রজা এক বালতি দুধ এনে পুকুরে ঢালবে। না হলে যাবে গর্দান।
রাজ্য জুড়ে কানাঘুষা। দুধ আসবে কোত্থেকে? বাজারে দুধের দাম একলাফে ডাবল। রাজ্যের সবচাইতে দরিদ্র লোকটি ভাবলেন, "আমি দুধের বদলে এক বালতি পানি-ই না হয় ঢালবো। এত এত বালতি দুধের মাঝে এক বালতি পানিতে কি আর এসে যাবে?"
শুক্রবার কথামতো রাজ্য জোড়া লোক হাতে বালতি নিয়ে এলেন। পুকুর কানায় কানায় ভরে উঠলো। রাজা নিজে দাঁড়িয়ে দেখলেন, তার সাধের পুকুর ভরে উঠেছে। কিন্তু, তাতে দুধের বদলে শুধুই পানি। দুধের ছিঁটে-ফোঁটাও নেই।
তারপর? তারপর তদন্ত কমিটি হবে। তদন্ত হবে। সে এক দীর্ঘমেয়াদি গল্প, ওটা বরং আরেকদিন হবে।
মোরাল অফ দ্য স্টোরি: নীতিহীন রাজ্যে বাস করে যারা গল্পের মোরাল খুঁজে ফেরেন তাদের জন্য ছোট্ট উপদেশ। "দেশটা চালাকের ভুলেও এমনটা ভাববেননা। দেশটা হলো আপনার আমার মত সংখ্যাগরিষ্ঠ বোকচন্দরের। যারা গল্প বলি, গল্প শুনি আর দিনশেষে ন্যাংটো রাজাকে ন্যাংটু-পুটু বলে পাশবালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।"
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:২৬