ক্লাসে গাধার মুলা খাবার বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। গাধা মুলা খেলেও গাজর খায় কিনা এমন প্রশ্নে চিন্তিত অনেকে।
মুলা এবং গাজরের পার্থক্য কী? শিক্ষকের এমন প্রশ্নের জবাবে মহা চালাক এক ছাত্রের জবাব-‘তেমন কোন পার্থক্য নেই। সাদা-কালো টিভিতে যা মুলা, রঙ্গীন টিভিতে তাই গাজর।’
পার্থক্য খোঁজার সবচেয়ে বড় বিষয় হলো দৃষ্টিভঙ্গি। কারো কাছে যা ভালো, অন্যের কাছে আবার তাই খারাপ। তাই ছাত্রের উত্তরে শিক্ষককে বোকা বনতেই হয়।
গাধা আর চালাক প্রসঙ্গ এলেই প্রিয় রম্য লেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীবের একটি গল্প মনে পড়ে।
শহরের এক বিশাল অ্যাপার্টমেন্টে দুই পরিবারের বাস। এক পরিবারের বাস একতলায় এবং অপর পরিবার বিশতলায়। পরিবার দুটোর মধ্যে রেষারেষিও দেখবার মত। এক অন্যকে হেয় করতে তারা সর্বদাই তৎপর। হাজারো অমিল সত্ত্বেও তাদের মাঝে মিল একটাই সেটা হলো তাদের ঘটের বুদ্ধিতে। যেটা একেবারেই অপ্রতুল।
একবার তাদের অ্যাপার্টমেন্টের লিফটের মেরামতের কাজের জন্য সারাদিন তা বন্ধ থাকবে এমন নোটিশ চোখে পড়তেই বিশ তলার পরিবারটি একতলার পরিবারটিকে দাওয়াত দিলো দুপুরে তাদের বাসায় চারটে পোলাও মাংস খাবার জন্য(লেডিস ফার্স্ট বলে বুদ্ধিটি এলো বিবি সাহেবার মাথায়)।
যথারীতি সেই দিনে লিফট বন্ধ থাকায় সিড়ি ডিঙিয়ে বিশ তলায় গিয়ে একতলার পরিবারটি দেখলো দরজায় লেখা- ‘জরুরি কাজের জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে বলে দু:খিত’। অত:পর ব্যর্থ মনোরথে আবার বিশতলার সিড়ি মাড়িয়ে একতলায় নেমে আসা।
কিন্তু এভাবে অপমান মেনে নিতে পারা যায়না বলে একতলার বিবি সাহেবা স্বামীর হাতে পাল্টা আরেকটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন তা বিশতলার ফ্ল্যাটের দরজার লাগিয়ে আসতে। স্বামী বেচারা আবার বিশতলার চড়াই-উতরাই করে হাঁপানি রোগির মত নেমে এলো।
বিশতলার অধিবাসীরা রাতে ফিরে দেখলেন দরজায় লেখা- ‘লিফট বন্ধ থাকার জন্য দাওয়াত খেতে আসতে পারলামনা বলে দু:খিত।’
নোটিশ দেখে বিশতলার অধিবাসীদের মাথায় হাত। একতলার অধিবাসীদের হেনস্তা করার এহেন পরিকল্পনা মাঠে মার গেলো দেখে দু:খে কাতর তারা। অপরদিকে একতলার লোকজন আনন্দে উল্লসিত প্রতিপক্ষকে বোকা বানিয়ে।
প্রতি গল্পেই শিক্ষণীয় কিছু থাকে। এখানেও আছে। যেমন গাধার সামনে মুলা না গাজর ঝুলল গাধা তা টের পেলেও তার বিশেষ কিছুই এসে যায়না। কারণ, বোকারা কখনই জেতেনা। আর চালাকেরা জেতার পর বোকা বনে যায়। অত:পর, যেই মুলা সেই গাজর। পার্থক্য শুধুই রঙ্গীন দৃষ্টির।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৩৮