গত ক'দিন মাথায় শুধু মৃত্যু ঘুরছে। মৃত্যু মানে মৃত্যুবিষয়ক চিন্তা। সমস্যাটা এখানে না। সমস্যা হলো মৃত্যুচিন্তা মাথায় এলেই আমার এমন সব খাবারের খিদে পায় যা আমার নাগালের বাইরে। খাবার থেকে চিন্তার গতিপথ বদলে আবার এমনদিকে চলে যায়, যেটা আমার ধরাছোঁয়ার মানচিত্রের যোজন যোজন দূরে। অবিবাহিত ব্যাচেলর জীবনে বড় খায়েশ করে বুয়াকে বলেছিলাম, 'আজ আলুর ডাল দিয়ে ডিম খেতে চাই।'
আয়েশ করে খাওয়া হবে; এই স্বপ্ন নিয়ে পাতিলের ঢাকনা খুলতেই আক্কেলগুড়ুম। দোষ বুয়ার নয়, আমার। আমাদের দিনাজপুর এর বিখ্যাত এ খাবারের খোঁজ যে বাকি দেশ পায়নি তা আমি জানবো কেন?
যাই হোক, বুয়া মশুর এর ডাল রান্না করে তাতে ঝিরিঝিরি আলু কেটে আলুর ডাল করে দিয়েছে; সাথে চিরাচরিত ডিম ভাজা।
ওহহ্, আলুর ডাল জিনিসটা কী তাই তো বলা হয়নি। অতীব সাধারণ কিন্তু ভয়ানক সুস্বাদু এক খাদ্য। আলু সেদ্ধ করুন। ভর্তার মত একদম মিহি করে ফেলুন। তারপর তাতে পরিমাণমত পানি দিয়ে থকথকে তরল করে ফেলুন।
কুচি কুচি করে কাটা পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে তাতে হলুদ, মরিচ, আদা-রসুন বাটা, গরম মশলা, গোটা মশলা এসব দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে ঐ আলুর তরল মণ্ড ঠেলে দিন। টমেটো, কাঁচা-মরিচ আর ধনে পাতা দিয়ে ফুটাতে থাকুন।
আলুর ডাল ঘন না পাতলা খাবেন তার ওপর নির্ভর করে আরও পানি যোগ করুন। তেল ওপরে ভেসে উঠলেই চুলা বন্ধ করে ফেলুন।
আর যদি, আলুর ডাল-ডিম খেতে চান, তবে সেদ্ধ ডিম তেল এ হালকা ভেজে নিয়ে আলুর ডাল এ দিয়ে দিন। তবে, কাঁচা মরিচ আর টমেটো দেবার সময় যোগ করলে মজাটা বেশি পাবেন।
সেদ্ধ ডিম পছন্দ নয়। ভাজা পছন্দ। তাও হবে। ডিম ভেজে ছেড়ে দিন আলুর ডালে। ডিমের টুকরো মুখে পুরলে মনে হবে এ যেন অমৃত।
আমাদের ছোটবেলায় ছোটদের পিকনিক মানেই আলুর ডাল আর ডিম। প্রত্যেকে বাসা থেকে হাফপট চাল, একটি ডিম আর দুটো-তিনটে আলু-পেঁয়াজ আনবে। ব্যাস।
দুপুরে খেলার মাঠে পাটি বা চাদর বিছিয়ে বসে তোফা খাওয়া। তবে, তেল কিংবা মশলার যোগান কি করে হোত তা কিছুতেই মাথায় আসছেনা।
তবে এটুকু খুব ভালো মনে আছে, যিনি রান্না করতেন সেই বড় আপুটি আর বেঁচে নেই। মরণব্যাধি ক্যান্সার তাকে খুব অল্প বয়সেই পৃথিবী থেকে নিয়ে গেছে। কাজেই আলুর ডালের সে স্বাদ ও হারিয়ে গেছে। আর, মা'র হাতের আলুর ডালের স্বাদ সে ও এখন স্মৃতি। অতঃপর, মৃত্যু টু খাদ্য টু হাহাকার। সমস্যাটা বুঝেছেন আশা করি।