দু'বছর আগের কোরবানি ইদ। চরম অর্থসংকটে আমরা। আমি বেকার প্রায় মাস পাঁচেক। আমার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখি দেখি করছে। এমন অবস্থায় কোরবানি কোনভাবেই সম্ভব নয়।
বাবার দিকে তাকানো যায়না। আমরা পরিস্থিতি মেনে নিলেও বাবা যে কোনভাবেই মানতে পারছেননা, সেটা তার দৃষ্টিতেই স্পষ্ট। আমাদের যতটা স্বচ্ছলভাবে তিনি বড় করেছেন, নিজে বেড়ে উঠেছেন তারচেয়েও বিলাসিতায়। জীবনে প্রথম - এহেন পরিস্থির ধাক্কায় সব্বাই বেসামাল।
ইদের আগেরদিন সন্ধ্যায় বাসার দরজায় তার আবির্ভাব। পাড়ার এক লোক। ছিঁচকে মাস্তানি এবং লোকের কাছে চেয়ে-চিন্তেই তার পরিবার চলতো। তার দোষের শেষ নেই। কিন্তু, ছেলেটিকে বড় করতে পেরেছেন মোটামুটি। ছেলে সংসারের হাল ধরতেই চাকা ঘুরে গেছে।
তিনি এসেছেন বদ্ধ মাতাল হয়ে। তার সামান্য কিছু গুণের একটি হলো আমার বাবার প্রতি তার অন্ধ ভালোবাসা। বাবা দরজা খুলতেই তার হাউমাউ কান্না।
- ভাই, আপনি আমার ভাই। আমার একটা কথা আপনাকে রাখতেই হবে। আমার দুই গালে জুতা মারেন ভাই। তাও আমার কথা শুনতেই হবে।
আমরা অবাক চিত্তে নির্বাক দর্শক। উনি বলেই চলেছেন, "আমার বেয়াদবি হলে আমাকে যা ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। তবুও ভাই..."
উনার কান্নার দমকে কাহিনীর কিছুই বুঝতে পারছিনা। শেষমেশ তার ছেলে এসেছে যা জানালো তার সার হলো, "জীবনে প্রথম উনারা এবার গরু কোরবানি করছেন। তাও পুরো। উনার ইচ্ছা আত্মীয়দের জন্য যে ভাগ তার পুরোটাই আমাদের দেবেন। কিন্তু, বাবা যদি কিছু মনে করেন..."
বাবার চোখে পানি। রাতের আবছা আলোয় বোঝা সম্ভব নয় তা লজ্জার না অন্যকিছু। মাতালের সাথে তর্কে যেতে নেই। তাই তার কথাই সই। সে ছিল আমাদের এবং তাদের অনেক প্রথমের ইদ। আর, আমার জন্য শিক্ষার। জীবনের চরমতম শিক্ষার সাথে কোরবানি ইদের প্রকৃত শিক্ষার।