somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প - আমাদের শহরের সেই সব নাগরিক গল্পখোরেরা

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের নগর প্রধানের হঠাৎ মনে হলো শহরে একজন গল্পখোর দরকার ।


নগর সভার সবাই ভাবচ্যাকা খেয়ে গেলো । গল্পখোর আবার কি ?? কেউ কখনও এমন শোনেনি । নগর প্রধান গোঁফের তলায় মুচকি হাসলেন । বললেন , গল্পখোর হলো গল্প খাদক । সবার ভ্রু প্রশ্নবোধক, নগর প্রধান আবার মুচকি হাসি দিলেন । ষড়যন্ত্র করার ভঙ্গিতে বললেন, “আমাদের সবার পেটভর্তি নানারকম গল্প । গোপন গোপন গল্প । কাউকে বলা যায় না এমন গল্প” । বলে দ্রুত নিঃশ্বাস ফেললেন নগর প্রধান, “গল্পখোরদের আমরা সে গল্পগুলোই বলবো । কিন্তু গল্পখোরেরা কাউকে সে গল্প বলতে পারবে না” । সবাই বলে উঠলো, বাহ বাহ নগর প্রধানের কি বুদ্ধি ! নগর প্রধান তৃপ্তির হাসি হাসলেন ।


বিরোধী দল শুনেই আঁতকে উঠলো ! একি সর্বনাশের কথা । নগর প্রধান কি এর মাধ্যমে বিরোধী দলের গোপন পরিকল্পনা জানতে চাচ্ছে ?? তারা রাজপথ থেকে বিকেলের রোদ পড়া ছাদে আওয়াজ তুলল, এতে নগরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে । বাহিরের লোকেরা বলবে , এই শহরের লোকেরা গোপন কথাটি রাখতে জানে না গোপন । শহরের একদল বুদ্ধিজীবী , গাছের হলুদ পাতায় লিখলো, অতি চমৎকার উদ্যোগ । এর মাধ্যমে শহরের লোকের মানসিক শান্তি ফিরে আসবে! আরেক দল পাতার উপরে নীল রঙ দিলো । তারপরে বিকল্প প্রতিবাদী নামে লিখলো, ব্যক্তিস্বাধীনতার এমন হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া যায় না, শহরে বেড়ে যাবে অবিশ্বাস ! ব্যথিত, ভঙ্গুর গাছগুলো ক্লান্ত পলক মেলে দেখলো, শহরের জোকারেরা নতুন রঙ্গে মেতে উঠেছে । কেউ তা দেখছে, কেউ দেখছে না । তাতে কারই কিছু আসছে না, যাচ্ছে না ।



এক শুভদিন দেখে ঘোষণা করা হলো, গল্পখোরের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে কাল থেকে । মনোনয়নপত্র থেকে বাছাই করা হবে সাত জন প্রাথমিক গল্পখোরকে । তাদের এক মাস পর্যবেক্ষণ করে চূড়ান্তভাবে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে, নাগরিক গল্পখোর । সবাই প্রবল উৎসাহে মনোনয়নপত্র যোগাড় করতে লাগলো । এমনকি বিকল্প প্রতিবাদীরাও ঘুষ দিয়ে কিনে নিলো কিছু পত্র, তারপর মুখ উদাস করে বলল, এটা তাদের নতুন ধরনের প্রতিবাদের প্রাথমিক ধাপ । এক দিনেই শেষ হয়ে গেলো সব , অন্যের গোপন কথা শোনার আগ্রহ সবারই অপরিসীম !




আরেক শুভদিনে ঘোষণা করা হলো, প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত সাত জনের নাম । তাদের মুখে আকাশগঙ্গা জয়ী সম হাসি । জানানো হলো, কাল থেকে সাত জনের কাছে জানানো যাবে আমাদের গোপনতম গল্প । গল্পখোরদের হাসি বিস্তৃত হলো ।



আমরা পরের দিন থেকে দলে দলে যেতে শুরু করলাম গল্পখোরদের কাছে । সেজে গুজে সবচেয়ে সুন্দর কাপড় পরে আমরা গেলাম আমাদের গোপন গল্পগুলো শুনাতে । তারপর লম্বা ভিড়, দীর্ঘ অপেক্ষা । সবার গল্পই অনেক বড় । অপেক্ষা আমাদের ক্লান্ত করে কিন্তু ফিরিয়ে নেয় না । আস্তে আস্তে সেখানে এসে গেলো পাখার ব্যবসায়ী , পানির ব্যবসায়ী, খাবারের ব্যবসায়ী । হরেকরকম প্রয়োজনে হরেকরকম সমাধান । শহর যেনও মেলার শহর । নগর প্রধানের কোষাগার ভরে উঠছে তাই তিনি তৃপ্ত । বিরোধী দল সেই কোষাগার দেখে শঙ্কিত । আর আমরা আমাদের গোপনতম কথাটি সুযোগ মতো উগড়ে দিয়ে মুক্তো , হঠাৎ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার মতো আনন্দিত ।



কিন্তু আমাদের গল্পখোরদের দিকে আমরা অবাক তাকিয়ে রই । যত দিন যাচ্ছে তারা তত নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে । ক্লান্তি তাদের চোখজুড়ে । ফ্যাকাসে চামড়ায় কিসের যেনও আকুতি । নির্মম আর্তনাদ প্রতিটা পায়ের পদক্ষেপে । তাদের জন্য মেডিক্যাল বোর্ড বসলো , শহরে গুজব, মানুষের গোপন কথা গোপন রাখার চাপে তাদের এই পরিণতি । তবে গল্প খাওয়া থামলো না । গল্প শেষে আমরা সুখী হয়ে বের হয়ে আসি । আর গল্পখোরেরা আরও বিবর্ণ হয় । এমনকি শহরের সেরা মেকআপ বিশেষজ্ঞরাও তা লুকাতে পারে না । অথচ আমাদের গল্প ফুরায় না ।



অবশেষে এলো সেই দিন । ঘোষণা হবে, নগরের প্রথম নাগরিক গল্পখোর । নগর প্রধান এসে দাঁড়ালেন নগরের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় । তিনি বললেন, কিভাবে তিনি ভাবলেন, একজন গল্পখোরের কথা । আমরা তার বুদ্ধির প্রশংসা করলাম । তিনি দুঃখ ভরা কণ্ঠে বললেন, কতভাবে বাঁধা দেওয়া হয়েছে । আমরা দুঃখিত হলাম । তিনি বললেন, আমাদের সুখী মুখ দেখে তিনি কত সুখী । আমরা অপেক্ষা করি। সবশেষে নগর প্রধান বললেন , তিনি প্রত্যেক গল্পখোরের কাজেই সন্তুষ্ট । তাই জনগণের চাহিদা অনুসারে সাতজনকেই নাগরিক গল্পখোর ঘোষণা করা হলো । আমরা আনন্দধ্বনি করে উঠলাম । আর গল্পখোরেরা করে উঠলো আর্তনাদ ! আমরা অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকাই । নগর প্রধান বিরক্ত হলেন । তিনি জোরে জোরে হেসে বললেন, ফুর্তি ফুর্তি ! আমরাও দুই হাত তুলে বললাম, ফুর্তি ফুর্তি ! আমাদের সম্মলিত উচ্ছ্বাসের নিচে চাপা পরে গেলো গল্পখোরদের অস্ফুটতা ।



পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা চমকে গেলাম । শুনলাম, গতরাতে আমাদের নাগরিক গল্পখোরেরা একসাথে আত্মহত্যা করেছে !
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×