somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কখনও একটি কলম প্রেমে পড়েছিলো এক ভালোবাসার গল্পের – (ছোট গল্প)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মধ্যরাতের সাদা সাদা নরম জোছনা নিজের জায়গা নিয়ে ঝগড়া শুরু করেছে নিয়ন লাম্প পোস্টের হলুদ আলোর সাথে । মানুষের মুগ্ধতা কাড়ার প্রতিযোগিতায় লাম্পপোস্ট সবসময়েই পিছনের সারির একজন , কিন্তু তার এলাকায় পথের বুকটা সে একাই দখল করে রাখে । আর জোছনা, এমনকি শেষমেশ পড়ে থাকা ধুলোবালির স্পর্শও চায় প্রবলভাবে । আমি দুটি অহংকারি আলোর মিলমিশ যুদ্ধ দেখি অতি সন্তর্পণে । তাই যখন কেউ আমার পাশে এসে দাঁড়ায় আমি খেয়ালও করি না । হঠাৎ পাশে তাকিয়ে চমকে উঠে বলি, তুমি কে? সারা শরীরে অসংখ্য দুর্বোধ্য শব্দের জোড়াতালি দেওয়া একজন, খুব খেয়াল করে তাকানোর পরেও যার কোনও শব্দই ধরা যায় না, অদ্ভুত এক ঘোর লাগা কণ্ঠস্বরে সে বলে, আমি ভালোবাসার গল্প ।

পূর্বকথা অথবা আমার পরিচয়


আমি কলম । শুধু একটুকু বললে আমার পরিচয় অসম্পূর্ণ থেকে যায় । আমি লেখক আদনান শাহরিয়ারের কলম । হয়তো আপনারা তার নাম শুনেছেন অথবা শুনেননি । তারপরেও আমি একজনের লেখকের কলম হতে পেরে গর্বিত । যদিও আজকাল সেই গর্ব অনেকখানিই ম্লান । বেশ অনেকদিন যাবত লেখক সাহেব কিছু লিখতে পারছেন না । তিনি খাতা নিয়ে বসেন, কিছুক্ষণ কাগজে কলম ঘষাঘষি করেন তারপর মাথা নিচু করে বসে থাকেন দীর্ঘক্ষণ । তিনি কিছু লিখতে পারেন না, একেবারেই পারেন না । বাহিরে তিনি বলছেন, বড় লিখা আসছে কিন্তু ঘরে এসে নিস্ফল আক্রোশে পাতার পর পাতা ছিঁড়ে যাচ্ছেন , আর আমাকে ছুড়ে মারছেন অনেক দূরে । কোনোদিন নিজেকে সামলাতে না পেরে খারাপ ব্যবহার করছেন সবার সাথে, কখনও হাঁটাহাঁটি করে নির্ঘুম কাটিয়ে দিচ্ছেন সারাটা সময়। বিড়বিড় করে কি যেনও বলেন নিজের সাথেই। কিছুটা পাগলামি, কিছুটা আত্মহত্যা প্রবণতা দেখে কেমন ভয় লাগে আজকাল। আজও দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ কাগজ নিয়ে বসে থাকার পর হঠাৎ করেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন তিনি । তারপর কি এক বিষণ্ণতায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুমিয়ে পড়লেন টেবিলের উপরেই । তা দেখে কি যে কষ্ট হলো আমার তা বলার নেই । হাসছেন ?? কলমের আর কি কষ্ট ভেবে ?? লেখক মাত্রই জানেন তার কলম আসলে কতটা সংবেদনশীল । আমি রাস্তায় নেমে আসি । খুঁজে খুঁজে দেখবো আজ সারারাত । কোনও পথ মানুষের কাঁথার তলায় কিংবা হাওয়াহীন দুর্গম গলিতে কোনও অবহেলিত গল্প পড়ে রয় !

অতঃপর ভালোবাসার গল্প


বহুকাল পর দেখা পাওয়া বনলতা সেনের মতো অন্ধকার আমার গভীরে । ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর পদক্ষেপ পিছন ফেলে দেয় চেনা পথের শেষ চিহ্নগুলোও । আমার পাশে চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছে , ভালোবাসার গল্প । আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি, কই আমাকে গল্প দিবে না?? সে হাসে, বলে চাইছ না তো । আমি তো তোমার জন্যই পথে নেমে আসেছি এক তারা ঝরা কালের পর । আমি বলি, তাই বুঝি ?? আমার অন্তর্গত আবেগ আদ্র হয় । সে বলে, হ্যাঁ তাই , আমার জন্ম হয় সময়ের দায়ভারে । তারপর অপেক্ষা করি একদিন কারও মাঝে বিলীন হবার । ভালোবাসার গল্প আমার দিকে তাকায়, তারপর যেনও ডিমের সাদার মতো উজ্জ্বল কণ্ঠে বলল , আমি জড়িয়ে যাবো তোমার পরোতে পরোতে । আমিও সমুদ্রস্বরে বলি, তবে তাই হোক । এইবার ম্লান হেসে ভালোবাসার গল্প বলে, কিন্তু মনে রেখো তোমাকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে গল্পের শেষে । আমি তখন মুক্তির নেশায় বুঁদ, বলি, দিবো । তুমি শুরু করো । ভালোবাসার গল্প আমার শরীরে হেলান দেয় , প্রথম শব্দটি অপূর্ব কোমলতায় ঝরে যায় তার আবছায়া আবয়ব থেকে ।

গল্পের শুরু


“এই পাড়ার চৌকিদারকে চেনো ?? হ্যা চেনো নিশ্চয়ই । না চেনার কথা নয়, তার তো অনেক সুনাম । রোগা পাতলা হলে কি হবে বড় ভয়ঙ্কর তার সাহস । তার বাঁশির আওয়াজ পড়ার পর কোনও চোর কিংবা হাইজ্যাকার পালাতে পেরেছে এমন রেকর্ড নেই । তার ভয়ে গত ১৩ বছর এই পাড়ায় কোনও অঘটন হয়নি রাতের বেলা । তার বাঁশির আওয়াজ শুনে নিশ্চিন্তে ঘুমায় মানুষ” । আমি অবাক হয়ে ভালো বাসার গল্পের দিকে তাকাই । একেকটা লাইন ঝরে যাচ্ছে আর যেনও সে শিশিরের গায়ে প্রথম রোদের মতো মেলে দিচ্ছে ডানা । ভালোবাসার গল্প হঠাৎ থেমে যায় । রাস্তা থেকে এক টুকরো জোনাকি নিয়ে বলে, এইভাবে আমাকে দেখো না । আমি বললাম, কেনও ?? সে বলে, যত আমাকে জানবে দেখবে তোমার পরীক্ষা তত কঠিন হবে ।



“চৌকিদার এতো সাহসি কিন্তু ভীষণ একা । সারা রাত ক্লান্তিকর আর একঘেয়ে হেঁটে বেড়ানোর পর রোজ ভোরে এক বেঞ্চের উপর শুয়ে পড়ার তার মনে হতো বহুদূরে রেখে আসা এক মেয়ের কথা । অনেককাল আগেই হারিয়ে গেছে সে হারিয়ে যাওয়ার নিয়মে। আর কষ্ট পোষার নিয়মে সে থেকে গেছে বুকের খুব গহীনে । তারপরে ঘুম ভাঙ্গার পর কিংবা গভীর রাতে বের হবার আগে চৌকিদারের মনে হতো কেউ যদি অপেক্ষায় থাকতো তার । কি বিস্ময় ! আমরা সবাই জানি আমরা সবাই একা তবুও অপেক্ষা করি সেই একাকীত্বর নির্বাসনের যাবার “ । ঘুরে ঘুরে আবার ফিরে আসি সেই নিয়ন বাতিটার কাছে । জোছনা বুঝি তার অধিকার হারিয়ে হলুদ আলোর গা ঘেঁসে শুয়ে পড়েছে এখানে । আমি কান পাতি কোনও রাত জাগা পাখির ডাক শুনবো বলে । ভালোবাসার গল্প তখনও বলে চলেছে, “ হঠাৎ একদিন এই পাড়ায় এক নতুন মেয়ে আসলো । শ্যামবর্ণ , চুপচাপ মেয়েটি নিন্মবিত্তর ক্লান্তি টেনে রাখে চোখের কোণায় । থমকে দাঁড়ায় চৌকিদার । তার নির্লজ্জ পা আটকে থাকে । কোথায় যেনও বহুদিন আগের এক চাপা বেদনার ঘ্রান আবার জেগে ওঠে । অমন চেয়ে থাকতে দেখে মেয়েটা ভয় পেয়ে যায় । চলে যায় ঘরের ভিতর । চৌকিদার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার পথ ধরে” । আমি কোনও পাখির ডাক শুনতে পাই না । আশ্চর্য এই শহরে কি কোনও রাত জাগা পাখি নেই ??



তোমার গল্পের শুরুটা সুন্দর, বলি আমি , নিঃসঙ্গ এক চৌকিদার এক রহস্যময় নারী , তারপর ??

আমরা হেঁটে চলেছি নিঃশব্দের সীমানা পেরিয়ে । কোনও ধুলোকনাও বুঝি জেনে গেছে হাওয়ার দলে ভেসে যাওয়া ছাড়া কারও কোথাও কোনও গতিপথ নেই । দীর্ঘশ্বাস জেনে গেছে এই ঘুমন্ত শহর পিছনে ফিরে তাকাতে জানে না । “ চৌকিদার মাঝে মাঝেই উঠোনের সামনে এসে দাঁড়ায় । স্রেফ তাকিয়ে থাকা অথবা এক ঝলক যদি তার দেখা পাই তারই অপেক্ষা । হয়তো এই নির্বিষ চেয়ে থাকার কারনেই একদিন মেয়েটার ভয় ভাঙ্গল । তারও পরের একদিন সে চৌকিদারকে ডেকে বলে, কিছু বলবেন?? চৌকিদারের গলা শুকিয়ে যায় । কোনোদিন তো ভাবেনি কি বলবে! শেষমেশ বলে, পানি খাবো । মেয়েটা পানি এনে দেয় । তারপরের দিন আবার । তারপরের পরের দিনটিও তাই । এক গ্লাস পানি পান করতে আসা একজন চৌকিদার আর পানির গ্লাস হাতে এক অবুঝ মেয়ে” । ভালোবাসার গল্প থেমে নিঃশ্বাস নেয় । আমি এসে বসি ঘাসের উপর । একমনে যে ঘাস ছায়াপথ পাড়ি দিবে বলে লুকিয়ে রাখে ঘাসফুল, তার প্রিয়তম গুপ্তধন । “ অথচ চৌকিদার মেয়েটাকে কত কিছুই না বলতে চায় । সেই যে একবার স্রেফ বাঁশি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরেছিল নন্দু চোরার উপরে কিংবা প্রতিটা রাতে দেওয়ালের ওপাশে জমে থাকা গোপনতম কল্পকথা । অথবা একদিন কোনওকিছু মুঠোয় না পুরে বহুদূর হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন । কিন্তু তার সামনে আসলে শুধু পানি ছাড়া আর কিছুই বলতে পারে না । মেয়েটাও তো জিজ্ঞেস করতে পারতো কিছু । কিন্তু সেও যেনও অপেক্ষায় আছে । একদিন সাহস করে চৌকিদার জিজ্ঞেস করেই বসলো, বাসায় কেউ নাই?? মেয়েটি মাথা না তুলেই জবাব দিলো, আমার স্বামী ঘুমায় । থমকে গেলো চৌকিদার” ।



থমকে গেলাম আমিও । চোখ না ফেরানো সৌন্দর্য নিয়ে বসে আছে ভালোবাসার গল্প । একটু আগের ধূসর সেই গল্পটিকে এখন মধ্যযৌবনা শব্দস্রোত । আমার বুকের ভিতর খাঁ খাঁ করে ওঠে । সব ভালোবাসার গভীরতায় এতো বেশি হাহাকার কেনও থাকে?? আচ্ছা চৌকিদারও কি অনুভব করেছিলো সেই প্রবিনতম অনুভূতি ?? ভালোবাসার গল্পকে বলতেই সে বলল, “হ্যাঁ করেছিলো । আর তাইতো সে চারদিন আর ওইমুখো হয়নি । কি আশ্চর্য ! চারদিন পর যখন সবকিছু তুচ্ছ জ্ঞান করে আবার ফিরে এলো সেই পথে, মেয়েটি প্রথমবারের মতো খুব নরম সুরে জিজ্ঞেস করলো, এই কয়দিন কই ছিলেন ?? আহ মেয়েটা যদি জানতো এমন প্রশ্নেও কতটা বদলায় ঝড়ের গতিপথ । তারপর আবার সেই সেই পুরনো নিয়ম । এক তৃষ্ণার্ত চৌকিদার যার প্রকৃত তৃষ্ণা গুমরে যায় বোবা শব্দে আর একজন পানি হাতে অপেক্ষা করা নারী যার অপেক্ষা কিসের তা জানাই হয়না কোনও শব্দগুচ্ছের । তবুও দুটি দৃষ্টি এক হয় , তবুও কিছুক্ষণ অবসর মেলে সব না পাওয়া থেকে পালাবার । একদিন চৌকিদার কই থেকে যেনও একটা শিউলি ফুলের মালা নিয়ে আসলো । দেখেই ভয়ে দৌড় দিলো মেয়েটি । বিস্মিত চৌকিদার দীর্ঘ অপেক্ষার পর ফেলে দিলো ঝরা তারার মতো নিস্পাপ মালাখানি” ।



“পরের দিন মেয়েকে পানির গ্লাস হাতে অপেক্ষা করতে দেখে অবাক হয় চৌকিদার । এর আগে কখনও আগেই অপেক্ষা করতে দেখেনি সে মেয়েটিকে । মেয়েটি জিজ্ঞেস করে, কাল আপনি ফুল এনেছিলেন কেনও ?
- আপনি প্রতিদিন আমাকে পানি পান করান, তাই ভেবেছিলাম আপনাকে কিছু দেই ।
- আমি ভয় পেয়েছিলাম ।
- কেনও ??
- এর আগে কেউ আমাকে কখনও কিছু দেয়নি তো !

অতঃপর নীরবতা । হয়তো অনেক কিছুই বলার ছিল অথবা কোনও কিছুই বলার ছিল না । আবার মেয়েটিই বলে, কি করলেন সেই ফুলগুলা ?? চৌকিদার বলল, ফেলে দিয়েছি । শুনে একটু কি মন খারাপ হলো মেয়েটার” ?? মন খারাপ তো হলো আমার । এই বুক উদাস শেষ রাতের ঠাণ্ডা বাতাস , হইচইয়ের তলানিতে জমে থাকা নিখাদ নীরবতা আর পাশে এই জীবনের শ্রেষ্ঠতম গল্প । এমন রাত আর কি আসবে এই জীবনে ?? আমার কেবলই কান্না পায় । “ সারাদিন কোনও কিছুতে মন বসে না চৌকিদারের । কেবলই মনে হয় একটুকি মন খারাপ হয়েছিলো মেয়েটার ?? যদি নাই হয় তবে কেনও ম্লান হল তার মুখ ?? একসময় রাত আসে । কাজে নেমে পড়ে চৌকিদার । তার শেষ রাতের বাঁশির শব্দে নিশ্চিন্তে ঘুমায় মানুষ । হঠাৎ ঘুম ঘুম চোখে, যখন ফিকে হয়ে নেমে এসেছে রাতের পর্দা, চৌকিদার আবিষ্কার করে একজন মানুষ খুব সন্তর্পণে চুরি করতে যাচ্ছে কোথাও । চৌকিদার এগিয়ে যায় । হঠাৎ লাম্প পোস্টের আলোয় সে আবিষ্কার করে লোকটার মুখ। সেই মেয়েটির স্বামী । থমকে যায় চৌকিদার” ।



জিজ্ঞাসা করি, তারপর ?? ভালোবাসার গল্প সামনে ইঙ্গিত করে । আমি তাকাই । দেখি, চৌকিদার স্থির দাঁড়িয়ে আছে আর তার সামনে খুব সন্তর্পণে স্থির সেই চোর । আমি আশেপাশে তাকাই অবাক হয়ে । সবকিছুই আসলে থমকে আছে , ক্ষণিকের জন্য থেমে আছে মহাকাল । ভালোবাসার গল্প আমার দিকে তাকায়, বলে, বিদায় দাও । আমি বলি, কেনও??
- এই গল্পের শেষ লাইন বলার পরেই তো আমি হারিয়ে যাবো । আমার স্থান হবে তোমার লেখকের খাতায় ।
- তা হোক , কিন্তু তুমি কেনও আমার সাথে থাকবে না ?
- থাকবো না কারন অসমাপ্ত গল্পই শুধু কারও ব্যক্তিগত সম্পদ হতে পারে । থাকবো না কারন গল্প শেষ হলে সে আর কারও একার থাকে না , সে সকলের হয়ে যায় ।
- যদি না হতে দেই ??
- তাহলে গল্পের শেষ লাইন তুমি শুনতে পারবে না ।
- কেনও??
- এটাই নিয়ম । হয় তোমাকে শেষ লাইন শুনে লেখকের কাছে ফিরে যেতে হবে নয়তো এই অসমাপ্ত গল্পকে নিয়ে এভাবেই ঘুরতে হবে পথে কিংবা প্রান্তরে ।
- আর কোনও পথ নেই ??
- না এটাই আমাদের জীবনচক্র । সব গল্পের একি পরিণতি । এর বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই ।



প্রচণ্ড কষ্টে আমার সবকিছু নিঃসাড় হয়ে যেতে চায় । কেনও আমি এই গল্প শুনতে এলাম । কেনও এতো এভাবে সব বেঁধে যায় নিয়মের কাঁটাতারে ? ভালোবাসার গল্প আমার দিক তাকিয়ে নরম হাসে, বলে, বলেছিলাম না গল্পের শেষে কঠিন একটা পরীক্ষা দিতে হবে ?? আমি দেখি ফ্যাকাসে একটা চাঁদ ঝুলে আছে বুড়ো আকাশে, স্থির বাতাসে কিছু ধুলকনা এখনও নিজেকে খুঁজে বেড়ায় , শেষ প্রহরের পবিত্রতা তারাদের অস্ফুট আলোয়, সামনে দাঁড়ানো এক নিঃসঙ্গ চৌকিদার আর ভীরু পায়ের চোর, তারপরেও মনে হয় আমার মতো একা কেউ নেই এই চরাচরে, এতো একা কেউ ছিলও না কোনওকালে ।

উপসংহার



আদনান শাহরিয়ার লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামলেন । এইমাত্র ঘুমের ঘরে এক অসাধারন গল্পের আইডিয়া এসেছে মাথায় । এক নিঃসঙ্গ চৌকিদারের সাথে এক চোরের বউ এর বিচিত্র সম্পর্ক নিয়ে কাহিনি । শরীরটা কোনোমতে চেয়ারের উপরে রেখেই টেনে নিলেন কাগজ আর কলম । কলমের ক্লান্তি আর সব হারানোর অবয়ব চোখেই পড়লো না তার । একটানে লিখে যেতে শুরু করলেন পাতার পর পাতা । লিখার আনন্দে তিনি বিভোর । এই জগতে যেনও আর কেউ নেই, কিছু নেই । আবার লিখতে পারার আনন্দ আর কোনও কিছুতে নেই । কাগজের উপর কলমের খসখসে শব্দ রোমাঞ্চ জাগাচ্ছে শরীরের শিরা উপশিরায় । আহ বেঁচে থাকা এতো আনন্দের !



সেই চৌকিদারের গল্প ছাপা হয়েছে অনেক জায়গায় । গল্পের জীবনচক্র অনুসারে তা পৌঁছে গেছে পাঠকের কাছে । আর আমি, সেই পুরনো কলম, কালি ফুরাবার পর পড়ে আছি এক ঠাণ্ডা ভেজা স্যাঁতসেঁতে আলোছায়ায় । কখনও ক্ষীণ ধুলোকে আশ্রয় দিয়ে, কখনও মাকড়শার জালে নিজেকে বেঁধে অপেক্ষা করি একদিন গলে যাবো বলে । মাঝে মাঝে লেখকের কথা মনে পড়ে । একদিন তার যে আনন্দের সাথী হয়েছিলাম সে কথা ভাবলেই অদ্ভুত তৃপ্তিময় মনে হয় এই জীবন । কখনও কখনও সে ভালোবাসার গল্পের কথাও ভাবি । গল্পচক্রের নিয়মে আমাদের আর দেখা হয়নি কোনোদিন । তবুও তার কথা মনে পড়লে নিজেকে পালিয়ে নিয়ে বেড়াই । তীব্র বিষণ্ণতায় অসংলগ্ন ভাবনাগুলো খুঁজে বের করে ঠিক ভুলের অবশেষ ! অনেককিছু পাওয়ার জন্য একদিন যাদের হারিয়ে যেতে দেই , সব পাওয়ার পর সেইসব হারিয়ে যাওয়ার জন্যই মন পোড়ায় কেনও কে জানে !
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৮
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×