গতকাল একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে । প্রতিদিন পৃথিবীর কতো কোণেই তো কতো ভিডিও ভাইরাল হয় । সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে খবর ছড়াতে খুব একটা সময় লাগে না । ঘটনা ঘটতে দেরী কিন্তু ছড়াতে দেরি হয় না । স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েদের প্রকাশ্য প্রেম নিবেদন থেকে শুরু করে মডেলের ঝুলন্ত লাশ,রাজন হত্যাকাণ্ডসহ অনেক ঘটনার ভিডিও মুহূর্তে চলে আসে সোশাল মিডিয়ায় ।
গতকাল রাজধানী ঢাকায় যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেটিতে দেখা যাচ্ছে, একজন মহিলা গাড়িতে বসে সম্ভবত কোন সার্জেন্টকে উদ্দেশ্য করে খুব উত্তেজিত ভাবে কথা বলছেন । গাড়িটি খুব সম্ভব রাস্তার কোন সিগনালে আটকে ছিল । যদিও ভিডিওটির সাথে মন্তব্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে, উনি নাকি রাস্তা আটকে রেখেছেন । ভিডিওটি দেখে কিন্তু তা মনে হয়নি । কারণ ভিডিওটিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ওই মহিলার গাড়ীর ডানে বামে আরো গাড়ী থামা অবস্থায় রয়েছে এমনকি সামনেও একটা মোটরসাইকেল দাঁড়ানো রয়েছে । উনি যদি রাস্তা আটকে রাখতেন, তাহলে ডানের বামের গাড়িগুলো আটকে থাকার কথা নয় । সেগুলো চলে যেতে পারতো । ওনার পেছনের গাড়িগুলোর সমস্যা হতো ।
ভিডিওটি দেখে মনে হয়েছে, গাড়িগুলো সিগনালে থামলে কেউ ভিডিও করা শুরু করে । সেটা ওই মহিলার নজরে পরায় তিনি প্রতিবাদী হয়ে উঠেন । যিনি ভিডিও করছিলেন, তিনি তখন ভদ্রমহিলার দিকে এগিয়ে যান এবং তাকে কথার মারপ্যাঁচে তাকে বারবার উত্তেজিত করে তুলেন । এবং বারবার বলতে থাকেন , বলেন , আপনি আরো বলেন । আমি দুই টাকার চাকর বলেন । বোঝাই যাচ্ছিল ইনটেনশনালি এমটা করা হচ্ছিল । যেন মহিলাকে দিয়ে আরো কিছু বলিয়ে নেওয়া যায় ।
এখন কথা হচ্ছে, কারো অনুমতি ছাড়া প্রকাশ্য সিগনালে দাঁড়ানো কোন গাড়ি ও তার ভেতরে বসা কোন যাত্রীর ভিডিও করা এবং সেই ভিডিও অনলাইনে আপলোড করা আইনগত বৈধ কিনা ? একজন সার্জেন্ট যা পারেন তা হচ্ছে, গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করা । কাগজপত্র ঠিক না থাকলে মামলা করা । কোন অভিযোগ থাকলে সেই অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া । কিন্তু কোন প্রকার নির্দেশনা ছাড়া কি কোন গাড়ী, গাড়ীর ভেতরের যাত্রীর বিশেষ করে মহিলা যাত্রীর ভিডিও করা কি ঠিক ? নাকি তা তা আইনত অন্যায় । কারো অনুমতি ছাড়া আপত্তিজনক অনলাইনে ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে, সাইবার ক্রাইম । এভাবে একজন মহিলাকে রাস্তায় হেনস্তা করার অধিকার রাষ্ট্র কাউকে দেয়নি । সংবিধান, আইন-আদালত ও এটা সর্মথন করে না ।
অনেক ভেবে দেখেছি ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে । প্রথমে মহিলা সার্জেন্টকে চাকর বলেছেন । এরপর তিনি নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে, ওনার বাবা যে একজন এমপি ও হাইকোটের একজন প্রাক্তন বিচারপতি তাও বলেছেন । পরিশেষে উনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর লোক হিসাবে পরিচল দিয়েছেন। এই শব্দগুলোর কারণেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে । কেউ একজন আক্রান্ত হবার পর , নিজেকে বাঁচাবার জন্য নিজের পরিচয় ব্যবহার করলে তাতে দোষ কোথায় ? সেটা তো দোষের কিছু না । সকলের জানা থাকা উচিত, Public Servants (Retirement) Act অনুযায়ী সরকারী সকল কর্মচারীই জনগণের চাকর বা সেবক । উনি উত্তেজিত অবস্থায় বারবার ওই সার্জেন্টকে তাই মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন । ভিডিওটি অনেকট রাজনৈতিক কারণে ভাইরাল হয়েছে । যারা প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করেন না তারাই ভিডিওটি ভাইরাল করেছে ।
আমরা কথা হচ্ছে, রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের উদ্দেশ্য একজন মহিলাকে রাস্তার মাঝে হেনস্তা করে সেই ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, রীতিমতো দন্ডনীয় অপরাধ । আজ ওনার সাথে হয়েছে, কাল যে, আমাদের কারো মা বোনের সাথে এমনটা হবেনা সে গ্যারান্টি কে দিবে ?
পরিশেষে বলবো , একজন নারীকে হেনস্তা করার অধিকার কারো নেই । কারণ সে কারো মা, কারো বোন, কারো স্ত্রী । আজ যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ওই মহিলার সন্মানকে ভাইরাল করছেন , কাল আপনাদের মা বোনের সাথে এমন হলেও কেউ প্রতিবাদ করবে না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৬