somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাক্তার সাপে কামড় দিছে

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিসে না গিয়া সকাল বেলা জ্বরে আক্রান্ত এক বন্ধুকে নিয়া পিজি হাসপাতালে গেলাম । থুক্কু এখন তো পিজি আর পিজি না । লিখতে হইব, "শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।" এই রকমই নাকি আদেশ জারি করা আছে । ক্ষমতার দাপটে হাসপাতালের নামটা কাগজ, কলম আর ব্যানারে পরির্বতন করা হলেও মানুষের মুখে মুখে এতো বছর পরেও পিজি হাসপাতাল পিজিই নামেই রয়ে গেছে । শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল বললে এখনও অনেক রিকশা, সিনএজি ওয়ালা চিনতে পারে না ।

আমার এই গরীব বন্ধু গত ১৫ দিন যাবত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঘরে পরে আছে । এতদিন মহল্লার এফসিপিএস পাশ করা এক চিকিৎসকে দেখিয়েছে । লাভের লাভ কিচ্ছু হয় নাই । পনেরো দিনে গাদা গাদা এন্টি বায়োটিক দিয়ে আধ মরা করে গতকাল নাকি পিজির এক প্রফেসরের নাম উল্লেখ করে রেফার করে দিয়েছে।

গতরাতে তামিমের দেওয়া মোবাইল পার্টি শেষ করে বাসায় ফেরার সময় ওর খোজ নেওয়া জন্য ফোন করতেই ওর বউ কাইন্ধা কাইটা কইল, আপনার বন্ধুরে বাঁচান । ওনার শরীর বেশি ভাল না । জ্বর তো কিছুতেই কমতাছে না । মনে হয় আর বাচবো না ।
আমি বললাম, ভাবি কি বলেন এই সব? সিজোনাল ফ্লু । এমনিতেই সেরে যাবে । ওর সাথে তো আমার কথা হয়েছিল। তখন বলেছিলো ডাক্তার দেখাচ্ছে ।
ডাক্তার কি খারাপ কিছু বলছে ?
উনি চোখের পানি, নাকের পানি আচলে মুছে বললেন, ডাক্তার সাব রাতটা দেখে সকালে পিজিতে নিয়ে যেতে বলেছে। আমার তো আর কেউ নাই আমি কি করে সামলাবো ..... ভাবি আবার কেদে ফেললেন । ব্যস্ত হয়ে আমি বললাম, আপনি চিন্তা করবেন না ভাবি। আমি সকালেই আইসা পরমু । আমিই ওরে পিজি'তে নিয়া যামু । চিন্তা করবেন না । এখন ফোনটা ও'রে দেন,কথা বলি ।

ভাবি সাব ফোন না দিয়া কইল আপনার বন্ধু এখন জ্বরের ঘোরে ঘুমাচ্ছে ।
আমি বললাম, ঠিক আছে । সকালে আমি আসতেছি । ওকে রেডি রাখবেন ।

রাতে ঠিক মতো ঘুম হলো না । এলোমেলো নানান দু:স্বপ্নের মধ্যে দিয়া রাতটা পার কইরা সকালেই ছুটে গেলাম বন্ধুর হাজারীবাগের বাসায় । বউকে রাতেই বলে রেখেছি, অফিসে দুপুরের খাবার দিও না । জাকির'কে নিয়া পিজি হাসপাতালে যামু প্রথ্থমে । ওরে ডাক্তার দেখাইয়া তারপর যামু অফিসে । দুপুরে বাইরে কিছু একটা খেয়ে নিমু । মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম ডাক্তার দেখাতে বড় জোড় ঘণ্টা দু'য়েক সময় লাগতে পারে । ১২টার মধ্যে অফিসে পৌঁছাতে পারলে বস্ আর কিছু বলবে না ।

বন্ধুরে নিয়া পিজিতে পৌছে বহি:বিভাগ থেকে টিকিট করে ৮ তলায় উঠার জন্য নষ্ট লিফটের সামনে আধ ঘণ্টা দাড়িয়ে থেকে নিরুপায় হয়ে অসুস্থ বন্ধুরে প্রায় কাধে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ৮ তলায় ডাক্তার সাহেবের রুমের সামনে এসে দেখি বিশাল লম্বা লাইন । ছোট্ট করিডোরের দুই পাশে লোকজন কেউ দাড়িয়ে কেউ বসে আছে । এতোগুলো রোগাক্রান্ত মানুষকে একসাথে লাইনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে শরীর রি রি করে উঠলো । মনে হল, স্বেচ্ছায় এক রাশ ভাইরাসের মধ্যে ঢুকে গেলাম ।
জাকিরের শরীর তখন জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে । এমনিতেই ওকে কাধে করে আট তলায় নিয়ে আসতে জান বের হয়ে গেছে । তার উপর এই লম্বা লাইন দেখে মেজাজটা খিচে গেল । এক এক করে গুনে দেখলাম মোট ১৪ জন রোগী ও তাদের সাথের লোকেরা ডাক্তার সাহেবের জন্য অপেক্ষা করছে । কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর আমাদের সামনে দাড়িয়ে একজন বলল, ভাই টিকিট নিছেন ?
আমি মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ নিছি । বলে টিকিট কাউন্টার থেকে নেওয়া টিকিট'টা বের করে দেখালাম, লোকটা বলল, এইডা না । লাইনে দাঁড়ানোর টিকিট । মানে সিরিয়াল টিকিট ।
আমি অবাক হয়ে বললাম সেটা আবার কি ? কোথা থেকে নিতে হবে ?
লোকটা ব্যস্ত হয়ে বলল, তাড়াতাড়ি যান, দ্যাখেন ডাক্তার সাহেবের রুমে একটা লোক আছে তার কাছ থেকে সিরিয়াল নম্বর নেন । আমার নম্বর ১৩ আপনি যান নম্বর নেন । তা না হলে মাঝখানে অন্য কেউ ঢুইকা যাইবো ।

ব্যাপারটা বুঝতে পেরে জাকিরের বউ বললাম, ভাবি আপনি ওকে ধরে দাঁড়ান আমি টিকিট নিয়া আসি ।
প্রেসক্রিপশনের ফাইলটা নিয়া ডাক্তার সাহেবের বন্ধ রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম । মোটা ভারি সাদা পর্দা দিয়ে রুমটাকে অন্ধকার করে রাখা হয়েছে ।
ভেতরের দু'পাশের দেওয়ালে দুটি টিউব লাইট জ্বলছে । আমি গলা খাঁকারি দিয়া জিজ্ঞাসা করলাম, কেউ আছেন । সাথে সাথে ভেতরের রুম থেকে উত্তর এলো কে ? আমি বললাম, ডাক্তার সাহেব নাই ?

আরো দু' কদম এগিয়ে যেতেই ডাক্তার সাহেবের বসার চেয়ার টেবিল দেখতে পেলাম । সেই টেবিলের সামনে বসে মধ্য বয়স্ক একলোক কাগজ কলমে কিছু লিখছে । কাছে যেতে বুঝতে পারলাম সেগুলো ভাউচার ।

না, ডাক্তার সাহেব নাই । লোকটা আমাকে এক নজর দেখে আবার ভাউচার লেখায় মন দিলো ।
কখন আসবে ?
সেটা কইতে পারমু না । বাইরে গিয়া লাইনে দাঁড়ান । স্যার আইলে রোগী দেখবে ।
আপনারে কোন স্যার পাঠাইছে ?
আমি ডক্টরের নাম বলতে না পেরে প্রেসক্রিপশনের ফাইলটা এগিয়ে দিলাম ।
লোকটা গবীর মনোযোগ দিয়ে সেটা দেখে বলল, ও আচ্ছা । ঠিক আছে আপনি লাইনে গিয়া দাঁড়ান । আমি বললাম , স্লিপ নাকি লাগবে । লোকটা পকেট থেকে সিল মারা এক টুকরো সাদা কাগজ বের করে সেটাতে একটা নম্বর দিয়ে আমার হাতে দিয়ে বলল, যান বাইরে অপেক্ষা করেন । দারোগার চেয়ে নাকি দারোগার নৌকার মাঝির খেমতা বেশি হয় এখানেও তাই দেখলাম ।

বাইরে এসে দেখি রুগী সংখ্যা আরো অনেক বেড়েছে । দাড়াইয়া, হাইটা অপেক্ষা করতে করেতে আরো ঘণ্টা দু'য়েক কেটে গেল । কিন্তু ডাক্তার সাহেবের আসার কোন নাম গন্ধ নাই । রুমের লোকটা মাঝে মাঝে রুম থেকে বের হচ্ছে আবার ঢুকছে । ফাকে ফাকে এর ওর সাথে কথা বলছে । আমার মনে হলো হারামজাদা রুগী ভাগাচ্ছে । সবাইকে চেম্বারের রাস্তা দেখাচ্ছে । রুগীর আত্মীয় স্বজনেরা তার পিছু পিছু দৌড় দৌড়ী করছে । অপেক্ষা করতে করতে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে পরেছে। জাকিরের হাব ভাব দেখে মনে হলো, ও আর দাড়িয়ে থাকতে পারছে না ।

এইসব দেখে দেখে আমার মেজাজ খিচতে খিচতে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে বলতে পারবো না । শেষমেষ ডাক্তার সাহেবের রুমে ঢুকে লোকটাকে বললাম , ভাই ডাক্তার সাহেবকে একটা ফোন দেন না । দেখেন না, উনি কোথায় আছে ? জিজ্ঞাসা করেন কখন আসবেন ?
স্যার প্রধানমন্ত্রীর সেমিনারে আছে । আসতে দেরি হইবো । না ও আসতে পারে ।
না ও আসতে পারে ?
কানে কম শুনেন নাকি ? বললাম ই তো না ও আসতে পারে ।
তাইলে রোগী নিয়া কই যামু ?
বেশি দরকার হইলে স্যারের চেম্বারে যান । স্যার সন্ধ্যার পর চেম্বারে বসে । লোকটা একটা কার্ড বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল, এই যে গ্রিন রোড স্যারের চেম্বারের ঠিকানা ।
কার্ডটা হতে নিয়ে দেখলাম, নানান দেশের নামসমেত ডিগ্রী সম্বোলিত চ্যাটের বাল আবদুলের নাম লেখা । রাগ কট্রোল করে বললাম, চেম্বারে যেতে হলে এখানে আসলাম কেন ?
সেইডা আমি কি জানি কেন আসছেন ? যান যান বাইরে গিয়া অপেক্ষা করেন ।

ইচ্ছা করতেছিল , লোকটারে তুইলা একটা আছাড় মারি । অনেক কষ্টে রাগ দমন করে বাইরে এসে আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম । গরীব মধ্যবিত্ত মানুষের অপেক্ষার বাহিরে বের হতে পারে না । আমরাও পারলাম না । জাকির ইতিমধ্যে ফ্লোরে বসা থেকে প্রায় শুয়ে পরেছে । আরো ঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করার পর কার্ডটা দেখে আমিই ডাক্তার সাহেবকে ফোন দিলাম । দুইবার রিং হওয়ার পর উনি ফোন ধরলেন । পিজি'তে আছি শুনে উনি বললেন, সেমিনারে আছি । আসতে দেরি হবে । বেশি জরুরি হলে আমার চেম্বারে যান । সেখানে অন্য ডাক্তার আছে দেখবে।
কথাটা বলেই উনি ফোন রেখে দিলেন ।
বুঝতে বাকি রইলো না ডাক্তার সাহেবও গলা কাটতে চাইছেন । জাকিরের আর্থিক অবস্থা আমি জানি । চেম্বারের গেলে প্রথমেই ওরা ওকে ভর্তি করে নেবে । এমনিতেই ১৫ দিন হয়ে গেছে । অনেকগুলো টেস্ট ফেস্টে করাতেও অনেক টাকা লাগেছে । এখন আবার সেগুলো করানো হতে পারে। অনেক চিন্তা করে ঠিক করলাম অপেক্ষা করবো । সরকারী ডাক্তার কষ্ট হলেও টাকা খুব বেশি একটা লাগবে না ।

এর মধ্যে বসকে ফোন দিয়ে সব খুলে বলে ছুটি নিলাম । আরো ঘন্টা খানেক পর সামনের লাইনটা ফাকা হয়ে গেল । রোগীদের কেউ ক্লান্ত হয়ে কেটে পড়লো । কেউ ভেগে গেল কিংবা সেই লোকটার কারিশ্মায় ডাক্তার সাহেবের চেম্বারে গেল। আমরা পাঁচজনের মতো অপেক্ষা করতে লাগলাম ।

ডাক্তার সাহেব আসলেন সাড়ে তিনটায় । তার পেছন পেছন এলো বিশাল একটা গ্রুপ । দেখে মনে হলো কোন সভা সেমিনার করতে এসেছেন । এখুন্নি মঞ্চে উঠে বক্তিতা শুরু করবেন । পেছন পেছন আসা লোকগুলোর সাথে কথা বলতে বলতে, হাসতে হাসতে ডাক্তার সাহেব তার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন ।

জাকির তখন ফ্লোরে পেপারের উপর শুয়ে অঘোরে ঘুমাচ্ছে । ওর শরীরে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর সেই আগের মতো ই আছে । আমি ডাক্তার সাহেবের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখলাম, ডাক্তার সাহেব তার সাথে আসা লোকগুলোর সাথে গল্প করছেন । টেবিলের উপর নানান ওষুধের সেম্পল ।
আমাকে ঢুকতে দেখে বললেন, কি ?
আমি বললাম, আমার রোগীর অবস্থা খুব খারাপ । জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে । একটু দেখুন প্লিজ ...
ডাক্তার সাহের দ্বিগুণ বিরক্ত হয়ে বললেন, দেখছেন না কথা বলছি । ভেতরের লোকগুলো সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । হাবভাব দেখে বুঝলাম এরা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোক । নিজেকে অসহায়, দড়িতে বাধা জন্তু বলে মনে হলো ।
যান বাহিরে অপেক্ষা করুন ।
আমি একটু জোরেই বলে উঠলাম , সকাল দশটা থেকে অপেক্ষা করছি । এখন বাজে পৌনে চারটা । রোগী মরে যেতে পারে ।
নিজের উপর কন্ট্রোল ইতিমধ্যে হারিয়ে ফেলেছি , চিকিৎসক নামের এই পশুটার উপর ঝাঁপিয়ে পরতে পারলে ভাল হতো । কিন্তু পারছি না ....
যান অপেক্ষা করুণ, আমি ডাকছি ।

আবার বাইরে এসে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিজের বাল ছিঁড়তে লাগলাম ।

বেশ কিছুক্ষণ পর ডাক্তার সাহেবের রুম থেকে দলটা বের হয়ে গেল । আমি আর অপেক্ষা না করে জাকিরকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলাম । জাকিরের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অন্য রুগীরাই আমাকে বলল, ভাই আপনি ই আগে যান । ওনার শরীর বেশি খারাপ ।
আমাদের ঢুকতে দেখে ডাক্তার সাহেব যে চূড়ান্ত বিরক্ত সেটা ওনার মুখ দেখেই বুঝতে পারলাম । কিন্তু সেটাকে গ্রহ্য না করে জাকিরকে নিয়ে গিয়ে ওনার সামনের চেয়ারে বসিয়ে দিলাম । তারপর আমি আর ভাবি জাকিরের পেছনে দাঁড়ালাম ।
ডাক্তার সাহেব বললেন, কি সমস্যা ?
আমি বললাম, ১৫ দিন যাবত প্রচণ্ড জ্বর ।
কে দেখেছে এর আগে ?
আমি ফাইলটা এগিয়ে দিলাম । উনি উল্টে পাল্টে সেটা দেখলেন । তারপর চেয়ারে বসেই জাকিরের হাতের নাড়ি পরীক্ষা করে স্টর্থ দিয়ে কি সব পরীক্ষা করে । থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপলেন । তারপর প্রেসকিপশন লিখতে লিখতে বললেন, এই টেস্টগুলো করতে হবে । কিছু করানো আছে । কিন্তু আবার করান । মেডিনোভা,মর্ডান কিংবা পপুলার থেকে করাবেন । তার আগে এই ওষুধগুলো তিনদিন খাইয়ে দেখুন । বাসায় গিয়েই একটা সাপোজিটর দিয়ে দিবেন ।
মনে হচ্ছে টাইফয়েড হয়ে গেছে । হাসপাতালে ভর্তি করানো লাগতে পারে । সব মিলিয়ে পাঁচ মিনিট ও সময় লাগলো না । ব্যবস্থাপত্র দেওয়া শেষ ।
আমি বললাম, পরীক্ষাগুলো কি এখানে করানো যাবে না ?
যাবে । কিন্তু যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর নাম লিখলাম সেখানে করালে আরো ভাল হবে । সময়ও কম লাগবে ।
আমি মনে মনে বললাম, কুত্তার বাচ্চা তোর কমিশনের কথাটাও জানা । কত কমিশন পাবি ।
নিজেকে নিজে বললাম বাবন শান্ত হও । শান্ত থাকো । দাতে দাঁত খিচে বললাম, ডাক্তার সাহেব ওর আর্থিক অবস্থা বেশি ভাল না ।
পরীক্ষাগুলো এখানেই করানোর একটা ব্যবস্থা করে দিন, প্লিজ ।
আর্থিক অবস্থা ভাল না তো আমি কি করবো ? আমার যেটা বলার সেটা বললাম । আপনারা বন্ধুরা আছেন কেন ? বন্ধুর বিপদের সময় পাশে না দাঁড়ালে কখন দাঁড়াবেন ?
যান যান ওষুধগুলো খাইয়ে তিন দিন পর এসে দেখা করেন । দেখি পরীক্ষাগুলো করানো লাগে কিনা ।

আমি আর কিছু না বলে জাকিরের হাত ধরে ডাক্তার সাপের রুম থেকে বের হয়ে এলাম । ঘড়িতে তখন চারটা বাজে ।

ওষুধগুলো কিনে সিএনজি ওদের তুলে দেওয়ার সময় জাকির আমার হাত ধরে বলল, তোর অনেক ধন্যবাদ । আমি বললাম আর একটা কথা বললেই মাইর দেওয়া শুরু করমু । মেজাজ অনেক খারাপ হয়ে আছে । যা বাড়িতে যা । ওষুধগুলো খা, রেস্ট নে । ভাবি কিছু লাগলে জানাবেন । তিনদিন পর আমি আবার আসবো।

মাথায় ভেতর প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে । সব কিছু ক্যামন ঘেন্না ঘেন্না লাগছে । মনে হচ্চে বর্মি করতে পারলে ভাল লাগবে । বিকালের হালকা রোদ ও অসহ্য লাগছে । মনে হচ্ছে, সবকিছু দুমরে মুচড়ে ভেঙ্গে ফেলতে পারলে আরাম পেতাম । শাহবাগ দিয়ে হাটতে হাটতে মনে হলো , কুকুর নয়, বিড়ান নয় আমাকে ডাক্তার সাপে
দংশন করেছে । তারপর মনে হলো, শুধু আমাকে নয় পুরো জাতিকে দংশন করেছে এ বিষ সহজে নামবে না ।

সন্ধ্যায় জ্বর নিয়ে বাসায় ফিরে টিভিতে দেখলাম প্রধানমন্ত্রী এক ডাক্তারদের সাথে এক সভায় বলেছেন, সেবা না দিলে চাকরী ছাড়ুন । অর্থাৎ সেবা দিয়েই টাকা হালাল করতে হবে । তা না হলে চাকরী ছেড়ে যাও । একেই বলে জুতার বারি । লজ্জা শরম থাকলে এর চেয়ে বড় আর কিছু লাগে না । ডাক্তার সাপের কথা মনে হলো । ফিসফিস করে বললাম, সাপ সাপ তুই একটা সাপ । তোর বাপে সাপ তোর চৌদ্দ গোষ্টি সাপ ।

বি.দ্র: এই লেখাটির সাথে জীবিত কিংবা মৃত কোন সাপের কোন মিল নাই । নিতান্তই যদি কেউ কোন মিল পেয়ে থাকেন তাহলে নি দায়িত্বে পিটিয়ে মেরে ফেলুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৩১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×