হযরত ঈসা ও মুসা আঃ উপর নাজিল কৃত আসমানি কিতাব ইঞ্জিল ও তাওরাতে মহান আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সা: আগমনের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন। হযরত মুহাম্মদ সঃ দেখতে ক্যামন হবেন, তার আকৃতি ক্যামন হবে, তার পিতা মাতার নাম কি হবে সব কিছু ই খুব ভাল ভাবে উল্লেখ ছিলো উক্ত দুটি আসমানি কিতাবে।
ফলে খৃষ্টান ও বনি ইসরাইলের ধর্মীয় গুরুরা মনে মনে ধরেই নিয়ে ছিলেন যে, হযরত মুহাম্মদ সা: ও তাদের কাওমেই জন্ম গ্রহণ করবেন।
কিন্তু তাদের সে ইচ্ছেয় পানি ঢেলে দিয়ে হযরত মুহাম্মদ জন্ম গ্রহণ করলেন মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশে।
তার জন্ম গ্রহণ এর পর থেকে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পরিবর্তন দুধ মাতার গৃহে গমনের পর ফেরেশতাদের নানা কর্ম কাণ্ডে ছোট বেলাতেই প্রকাশ পাচ্ছিল যে এই বালক কোন সাধারণ বালক নন। আল্লাহ তার বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ওনাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন।
জন্মের পূর্বেই পিতা এবং মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি তার মাতাকে হারান। এরপর তার দায়িত্ব নেন পিতামহ। কিন্তু মাত্র ৮ বছর বয়সে সেই দাদাকেও হারাতে হয়। এ যেনো ছিলো এক শোকের মাতম। আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন তার জন্য কোন আশ্রয়ের প্রয়োজন হয় না। আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।
এরপর মুহাম্মদ সা: চাচা আবু তালিব এর স্নেহ, ভালবাসায় ও ছায়ায় বড় হতে থাকেন রহমাতুল্লিল আলামীন।
মুহাম্মদ খুব ছোট বেলা থেকেই চারিত্রিক গুণাবলির জন্য সকলের দৃষ্টি কাড়েন। বিশেষ করে তার মধ্যে সত্যবাদিতা ও সৎ কর্মের যে গুণাবলি ও বুদ্ধিমত্তা দেখা দেয় তা অন্য কারো মধ্যেই দেখা যায়নি। এভাবে আর আট দশটা শিশুর মতোই মুহাম্মদ সা: বড় হচ্ছিলেন।
মুহাম্মদ সা: তার চাচার কাজে সাহায্য করতেন। কখনো মেষ চড়াতেন আবার কখনো বাণিজ্যিক কাজে চাচার সাথে শাম দেশে সফরে যেতেন। একবার এমনই এক সফরের পর মুহাম্মদ সা: এর জীবন অমূল পালটে যায়।
উক্ত সফরে বাজারে শিশু মুহাম্মদ সা: কে দেখে বনি ইসরাইলের এক বুজুর্গ ব্যক্তি থমকে দাঁড়ান। তাওরাত কিতাবে বনিত সেই শিশুর সাথে এই শিশুর সকল বৈশিষ্ট্য মিলে গেলে তিনি চিন্তিত ও অস্থির হয়ে পরেন। কারণ তারা পূর্বেই বুঝে ছিলেন মুহাম্মদ সা: এর আগমন ঘটেছে দুনিয়ায়। কিন্তু তিনি যে মক্কায় জন্মাবেন তা তাদের ধারনায় ও ছিলো না। নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি শিশু মুহাম্মদের চাচাকে খুঁজে বের করেন। শিশু মুহাম্মদের পিতা, মাতার নাম শুনার পর তার আর সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না যে, এই শিশুই তাদের ধর্ম গ্রন্থে বর্ণিত শেষ নবী, মুহাম্মদ সা: ।
এখানে উল্লেখ্য যে, মুহাম্মদ এর পিঠে নবুওয়াত্বের চিহৃ স্বরুপ তারকা আকৃতির একটি ছোট চিহৃ ছিলো । খুব সম্ভবত তিনি সেটিও পরখ করে দেখেন । এরপর তিনি মুহাম্মদের চাচা আবু তালিবকে তাদের কিতাবের বিস্তারিত খুলে বলেন।, "তিনি বলেন, আপনার এই ভাতিজাই হচ্ছেন, শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সা:। আফসোস তিনি আমাদের গোত্রে, আমাদের কওমে জন্ম গ্রহণ করননি।
তিনি সর্তক করে আরো বলেন যে, হে কুরাইশ বংশের আবু তালিব।, "আপনারা সৌভাগ্যবান যে, আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি আপনাদের বংশে জন্ম গ্রহণ করেছেন। তাকে সামলে রাখুন। তার হেফাজত করুন। আমার (ইহুদি ) ও মসিহের অনুসারীদের কাছ থেকে।" তারা যদি জানতে পারে যে, "এই শিশু আপনাদের কওমে জন্ম গ্রহণ করেছে, তাহলে তারা তাকে হত্যার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করবে এবং কেয়ামতের পর্যন্ত সে চেষ্টা জারি থাকবে। তাই এই শিশুর পরিচয় গোপন রাখুন ও তার নিরাপত্তার ব্যাপারে সর্তক থাকুন সর্বাবস্থায়।"
এই ঘটনার পর শিশু মুহাম্মদ সা: কে ওনার চাচা আর তার কাছ ছাড়া করতেন না। সব সময় নিজের সাথে সাথে রাখতেন। চোখে চোখে আগলে রাখতেন। পর পর ক্রমশ ই রাসুলের বৈশিষ্ঠগুলো ফুটে উঠতে থাকে ।
বন্ধুরা এখানে খেয়াল করুন, মুহাম্মদ সা: কে হত্যা বা তা ক্ষতি করার ইচ্ছে ইহুদিদের চক্রান্ত কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। সেই চক্রান্ত কেয়ামত পর্যন্ত চলবে।
আপনারা হয়তো ভাবতে পারেন, মুহাম্মদ সা: তো নেই তাই তাকে নিয়ে আর চক্রান্তের কি আছে? একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন।
ইসলাম প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ইহুদিদের প্রথম চক্রান্ত ছিলো মুসলমানদের বিভক্ত করে দেওয়া। তারা সেটা সফল ভাবে করেছে। শুনলে অবাক হবেন। হয়তো আপনাদের অনেকের চিন্তাতেও সেটা ছিলো না। শিয়া সুন্নি ইস্যুতে মুসলিমদের মধ্যে প্রথম বিভক্তি ঢুকে পরে। সে এক রক্তাক্ত ইতিহাস ।
এখানে ইহুদিরা চূড়ান্ত ভাবে সফল হয়। রসুল কে হত্যা করতে না পারলেও তার বংশধরদের (আলী,হাসান,হোসেন,কাসেম) কে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। সে ঘটনা আপনাদের সবার জানা।
এখন চলে আসবো ইতিহাস থেকে সমসাময়িক ঘটনায়। তাকান বর্তমান সৌদি আরবের দিকে, তাকান এশিয়া, ফ্রান্সসহ ইউরোপ, আমেরিকার দিকে।
কি দেখতে পাচ্ছেন? সমগ্র বিশ্ব জুড়েই আজ মুসলিম বিরোধী এক চক্রান্ত ধীরে ধীরে দানা বেধে বড় হচ্ছে।
এটা কিন্তু এখন শুরু হয়নি । সেই , শিশু মুহাম্মদ সা: যখন বাজারে খেলছিলেন তখন থেকেই শুরু হয়েছিলো । কিন্তু দু:খের বিষয় হচ্ছে , এই চক্রান্তে মুসলিমরাও জড়িত হয়ে পরেছে অনেক পূর্ব থেকেই ।
প্রথমেই বলি, দেখুন সৌদি আরবকে। কি চলছে সেখানে ? ইসলামে রাজতন্ত্রের কোন জায়গা ইসলামে না থাকলেও বছরের পর বছর সৌদিতে সেই রাজতন্ত্রই চলে আসছে। ইসলামি রাষ্ট্র হয়েও যারা মেতে আছে, মদ জুয়া আর নারীতে।
হজ্বে যে যাচ্ছেন, আল্লাহর হুকুমে। এই হজ্ব হচ্ছে, সৌদিদের জন্য ব্যবসা আর টাকা কামাইয়ের একটা ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছু ই না। মক্কার চার পাশের হোটেলগুলোর দিকে তাকান সেগুলো ধর্ম কর্মের জন্য নয় ব্যবসার জন্য গড়ে তুলা হয়েছে। আর এখন তো সিনামা হল,হালাল বার সব কিছুই আছে।
এসব হচ্ছে, কারণ ইহুদিদের প্রধান টার্গেট ছিলো সৌদিকে কব্জা করা। কারণ এ কাজটি করে ফেলতে পারলে, তাদের অনেক কাজ ই সহজ হয়ে যাবে। সে কাজটিও তারা করে ফেলেছে। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ সালমান (প্রকাশ্য ইহুদিদের সাথে যোগ দিয়েছেন। মুসলিম বিরোধী চক্রান্তে। ) মধ্যপ্রাচ্যের অনেক রাস্ট্র ধীরে ধীরে সে কাতারে শামিল হচ্ছে ।
গত কয়েক বছরে সৌদির সব ন্যায় পরায়ণ ও সত্যবাদী আলেমদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা কেউ জানে না। অনেককেই হত্যা করা হয়েছে না হয় বন্ধী রাখা হয়েছে। গোপন কোন জায়গায় ।
এখন যারা হজ পরিচালনা করছেন তারা সব সালমানের পোষা আলেম। সালমানের ইচ্ছাতেই খুতবা দিচ্ছে। রাতকে দিন বানাচ্ছে দিনকে রাত বানাচ্ছে।
এরাই রসুলের ইজ্জত নিয়ে খেলছে। এরাই মদিনা থেকে হযরত মুহাম্মদ সা: এর কবর সরিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিলো বছর দুয়েক আগেও। কিন্তু বিশ্বব্যাপী প্রবল প্রতিরোধের কারণে তা সম্ভব হয়নি বা তারা সে সাহস করেনি। তবে এ চেষ্টা আবার করা হবে কারণ চক্রান্ত কিন্তু থেমে থাকেনি।থাকবে না । কিন্তু সে কাজটি করার আগে তারা রাসুলের জনপ্রিয়তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করবে । এরপর কবরে হাত দেবে ।
যেহেতু রসুল সা: নেই। সেহেতু রসুল সা: সম্পর্কে মুসলিমদের বিভ্রান্ত করাই হচ্ছে এই ইহুদিদের একমাত্র মূল চক্রান্ত। সেটার অংশ হিসাবেই শুরু হয়েছে, মুহাম্মদ সা: জন্ম তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো। রসুল সা: কে সাধারণ মানুষের কাতারে নামিয়ে আনার দৃষ্টান্ত ও সাহস দেখাচ্ছে ইহুদি নাসারারা। মুসলমানদের বিভক্তির কারণেই এ সাহস দেখাচ্ছে তারা ।
এই চক্রান্তে সৌদি ও এদেশের আলেম নামে মূর্খরাও জড়িত হয়ে পরেছে। তারা ওয়াজের নামে, জুম্মার খুতবার নামে রসুলের জন্ম তারিখ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
ঠাণ্ডা মাথায় একবার চিন্তা করুন তো, যে রসুলের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনা লিপিবদ্ধ, তার ই কিনা জন্ম তারিখের কোন ঠিক নেই। এটা কি হতে পারে? ভাবুন একবার এরা মূর্খ, নির্বোধ, গাফেল আর জাহান্নামি। এদের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। কারণ এরা ধর্ম কে বেছে নিয়েছে প্রফেশন হিসাবে। আহার করছে অগ্নি। ধর্ম কখনো প্রফেশনের বিষয় বস্তু হতে পারে না। কারণ প্রফেশনে মিথ্যা বলতে হয়,অন্যায়কে মানতে হয়। সৌদির সেই আলেম সমাজ সব মেনে নিলে তারা গ্রেফতার হতেন না। জেলেও যেতেন না।
রসুল সা: ১২ ই রবিউল আউয়াল,রোজ সোমবার জন্ম গ্রহণ করেছেন। এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। তাই বিভ্রান্ত হবেন না ও বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। রসুলের সাফায়ত ছাড়া কিন্তু জান্নাত মিলবে না। তাই খুব সাবধান।
ভবিষ্যতে রসুল সম্পর্কে আরও অনেক নতুন নতুন চক্রান্ত প্রকাশ পাবে। তাই সর্তক থাকুন। কুরআন হাদিস আঁকড়ে ধরে থাকুন। তাহলে বিপথগামী হবেন না।
ইসলাম কিন্তু সৌদি আরব কেন্দ্রিক ধর্ম নয়। এ কথা রসুলের শেষ বক্তব্যে উল্লেখ আছে। কিন্তু এ দেশের অনেক আলেম সৌদির গোলামী করে আল্লাহর নয়। এ জন্যই এদের মধ্যে এতো বিভক্তি,এতো ঝগড়া, বিবাধ। মুসলিম হয়েও এরা গীবতে ডুবে আছে। প্রতিদিন, মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করছে। তাই এদের কাজ থেকে দূরে থাকুন।
নামাজের কোন কাফফারা হয় না, তাই নামাজ আদায় করুন। কাজা নামাজের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। গরীব আত্মীয় স্বজনকে বেশি বেশি দান করুন। মসজিদের ভিক্ষুকদের নয়। প্রকৃত আলেমগন কখনো ভিক্ষা,করেন না। নামাজের কোন বিনিময় মূল্য হয় না।
ইসলাম রসুল ও মুসলিম এখন ঘরে বাহিরে ত্রিমুখী আক্রমণের শিকার। তবে এরা যতোই চক্রান্ত করুক না কেন,আল্লাহ হচ্ছেন, সবচেয়ে বড় কৌসুলি। এরা ইসলাম,মুসলিম ও মুহাম্মদ সা: এর কোন ক্ষতি বা বদনাম ই করতে পারবে না।
"আস সালামু আলাইকুম ইয়া রসুল আল্লাহ, আস সালামু আলাইকুম ইয়া হাবীব আল্লাহ।
সাখাওয়াত বাবনের ব্লগ থেকে।
৩১.১০.২০২০
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৩৭