অন-লাইন নিয়ে প্রতারণার গল্প নতুন কিছু না। পৃথিবীর সব দেশে এ নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা গল্প গপ্প হয় বা হচ্ছে। এখন চুরি, ডাকাতি করতে দলবদ্ধ হয়ে ব্যাংক বা বাসা বাড়িতে ঢুকতে হয় না। সিকিউরিটি সিস্টেম ব্রেক করে কারো একাউন্টে ঢুকে যেতে পারলেই হলো। কয়েক সেকেন্ডে হাতিয়ে নেওয়া যায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বা কোটি কোটি টাকা । বিষয়টা এখন শিশুদের ও জানা । তবুও প্রতিনিয়ত আমরা কোন না কোন ভাবে প্রতারিত হচ্ছি । আজকাল অনেক পোলা পান নাকি ভার্চুয়াল সন্তানের বাপ, মা ও হয়।
"শুনেছি এখন চুরি, ডাকাতি
প্রেম ভালবাসা সবই নাকি
অন লাইন হয় ;
সকালে ভাব ভালবাসা করে
দুপুরে চা খায় ;
রাত্রি বেলা তালাক দিয়ে
যে যার ঘরে ফেরত যায়। "
অন লাইন বা প্রযুক্তির কি শুধু খারাপ দিকটা ই দেখবো? খারাপটাই বলবো? সেটা করলে ঠিক হবে না । বর্তমান সময়টাকে বলা চলে কমিউনিকেশন ডেভেলপমেন্টের স্বর্ণযুগ । এই কমিউনিকেশন ব্যাপারটা গত এক দশকে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যা নি:সন্দেহে বিজ্ঞানের অসাধারণ অবদান । বলতে, গেলে মানব সভ্যতার সর্ব শ্রেষ্ঠ সময় আমরা অবস্থান করছি । প্রযুক্তি বা অন-লাইনের সহায়তা নিয়ে হাজার হাজার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন পেশার দক্ষ জনবল সৃষ্টি হচ্ছে। কোটি কোটি লোকজন নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে ৷ কত হাজার রকমের কর্মসংস্থানের দার যে খুলে গেছে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে তা বলে, ক'য়ে শেষ করা যাবে না। তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে যারা আছেন বলতে গেলে তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান বিশ্বের । তারাই নির্ধারণ করছেন, দেশের ভবিষ্যৎ । তারাই বিশ্বে ধনীর শীর্ষে অবস্থান করছেন।
সর্ব ক্ষেত্রেই ভাল মন্দ দুটি দিক আছে, বিষয় হচ্ছে, আপনি কোন দিকটা বেছে নিবেন। তার উপর নির্ভর করবে আপনার ভবিষ্যৎ। এতো এতো সাফল্যের পরেও যখন চুরি, চামারি,প্রতারণার ঘটনাগুলো সামনে আসে তখন মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। নিরাশ হয়ে যায়। বাংলাদেশে অন লাইন মার্কেটিং এর নামে যা হচ্ছে, তা এক কথায় প্রতারণা । তা সে যতো ছোট কোম্পানি থেকে শুরু করে যতো বড় শপ ই হোক না কেন । আর কিছু বুঝুক বা না বুঝুক সবাই বুঝে গেছে, অন-লাইনে বিক্রি করবো ডাবল, ডাবল লাভ করবো । মানে বিক্রেতা সব সময় নিজেকে চালাক আর ক্রেতাকে বোকা মনে করেন । এক জিনিষ দেখিয়ে অন্য জিনিষ দিয়ে দেওয়া নতুন কোন ঘটনা নয় । দশ টাকার জিনিস একশ টাকা বিক্রি করা আরো বড় প্রতারণা । তবে , আশার কথা হচ্ছে, এই যে, কেউ আপনাকে ততোক্ষণ পর্যন্ত ঠকাতে পারবে না , যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি নিজে লোভের ফাঁদে পা না দেন কিংবা অন্যকে বিশ্বাস না করেন । মনে রাখবেন, অন্যকে বিশ্বাস করেছেন তো মরেছেন । সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে ই কর্মাস নামে যা হচ্ছে, তা মোটেও ই কর্মাস নয় । স্রেফ ধাপ্পাবাজি । একটা চক্র কাজ কর্ম না পেয়ে অন্যকে ঠকিয়ে অর্থ হাতাবার জন্য অন লাইনে নেমে পরেছে । আর একটা চক্র কিছু না বুঝেই বাহাবা নেবার জন্য সেটাকেই বলে দিচ্ছে, ই কর্মাস ।
ই ভ্যালির ব্যবসার ধরণ দেখে অনেককেই সর্তক করেছি। কিন্তু কে শুনে কার কথা৷ লোভে চকচক করা জিহ্বা নিয়ে একেক জন লাখ লাখ টাকা ইনভেস্ট করে এখন হায় হায় করছে। দোষ দিচ্ছে, কপালের । তাই দোষটা , ই ভ্যালি মতো চোর, বাটপারদের আগে নিজের লোভটাকে দোষ দিন । অতিরিক্ত লোভই মানুষের পতনের কারণ। লোভ করেছেন তো মরেছেন। কথায় আছে, লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।
তাই বলবো, অন লাইন থেকে কিছু কেনা কাটার আগে মনে রাখবেন,আপনার চেয়ে বিক্রেতার লাভ বেশি থাকছে। দশ টাকার জিনিষ আপনি স্বেচ্ছায় ৯০ টাকায় কিনতে যাচ্ছেন। তাই হাত পা, নাড়ান দোকান বা বাজারে গিয়ে নিজ হাতে, নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসটা দেখে শুনে টিপে চেপে তারপর কিনুন। অন লাইনে নিজের বাপকেও বিশ্বাস করবেন করেছেন, তো ঠকেছেন ।
ইন্জি.সাখাওয়াত হোসেন
রিসোর্স পারসন, এটুআই
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:৩২