somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

সওদা - ভৌতিক,রহস্য গল্প - ২য় পর্ব

০৯ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দুই

১৩ নম্বর ফ্লোরে পৌঁছে দেখি শুটিং এর জন্য সেট রেডি করা হচ্ছে ।
এ'তে শামস সাহেব আমার পূর্ব পরিচিত নন । দু'একবার কাগজে ওনার ছবি দেখেছি । তবুও চিনতে অসুবিধা হলো না । ফ্লোরের এক পাশে গোল হয়ে বসে অভিনেতাদের দৃশ্য পাঠ বোঝাচ্ছেন । আমি এগিয়ে গিয়ে সালাম দিয়ে পরিচয় দিতে তিন আমার আপাদমস্তক একবার ভাল করে দেখে নিয়ে হাতের ইশারায় বসতে বললেন । আমি পেছনের দিকে একটা চেয়ার টেনে বসে পরলাম । এটা,সেটা করে পুরো সেট রেডি করতে করতে ২টা বেজে গেল ।

লাঞ্চের পর শুটিং শুরু হলো । শুটিং মানে এক এলাহি কাণ্ড । আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে শুটিং দেখতে লাগলাম । এক, একটা দৃশ্য তিন চারবার করে নেওয়া হচ্ছে । যে দৃশ্যটা আমার কাছে ওকে মনে হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে সেটাই পরিচালক সাহেব কাট করে আবার নতুন করে টেক করছেন ।
একটানা রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শুটিং চলার পর নায়িকা বারবার হাই তুলায় শুটিং প্যাক আপ করা হলো । আমার অবস্থা ততোক্ষণে কাহিল । এতো দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রতীক্ষা আমাকে আর কখন ও করতে হয়নি । কয়েক বার চলে যাবার কথা মনে এসেছিল। কিন্তু নিজের স্বপ্ন, নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চলে যেতে পারিনি । তাছাড়া সকাল বেলা স'দু ভাইয়ের সেই ভাগ্য পরীক্ষার কথা মনে আসায় কেন যেন মনে হচ্ছিলো , দেখি না কি হয় । হয়েও তো যেতে পারে । এছাড়া মানুষটা যে ব্যস্ত সেটা তো দেখতেই পাচ্ছিলাম। নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়ে বেঁধে রেখেছিলাম যে,“কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না ।”

রাত প্রায় পৌনে ১২টার সময় আমার ডাক পড়লো । পুরো সেট তখন প্রায় খালি হয়ে গেছে । শুধু প্রোডাকশনের লোকজন এটা ওটা খুলে ব্যাগে ঢোকাচ্ছে । এ'তেশামস সাহেব বেশ রাশ গম্ভীর মানুষ । অপরিচিত জনের সঙ্গে খুব একটা কথা বলেন না । পুরো শুটিং চলাকালীন সময় তাকে একবারের জন্যও হাসতে দেখিনি । শুনেছি ভদ্রলোক পাকিস্তানি । ভারত পাকিস্তানের অনেক বড় বড় আর্টিস্ট ওনার ছবিতে কাজ করেছে ।

আমাকে নিয়ে তিনি বসলেন পরিচালকদের রুমে । ওনার হাতে ছোট একটা গ্লাস । তাতে রঙ্গিন পানি। আমি রুমে ঢুকে সালাম দিতে উনি মাথা নেড়ে বসতে বললেন । তারপর হাতের গ্লাসটা নাকের সামনে নিয়ে একবার গন্ধ শুকে আলতো করে চুমুক দিয়ে বললেন, কতদিন ধরে লেখালেখি করছো ?
আমি একটু আড়ষ্ট হয়ে বললাম, ছোটবেলা থেকেই টুকটাক লেখালেখি করি ।
ছোটবেলা থেকে ! বলো কি হে । বলেই তিনি ঠোট উল্টে তাচ্ছিল্যের একটা ভঙ্গি করে আমার দিকে ঝুঁকে এসে বললেন, দু’একটা নাটক,ফাটক কি টিভিতে গিয়েছে ?

আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, জি না । কথাটা শুনে তিনি এমন এক হাসির ভান করলেন যা দেখে আমার পিত্ত জ্বলে গেলো । মনে হলো টিভির জন্য নাটক না লিখে মস্ত অপরাধ করে ফেলেছি ।
মৃদু হেসে হাতের গ্লাসটা ঘুরাতে ঘুরাতে তিনি বললেন, টিভিতে না লিখে একেবারে চলচ্চিত্রে চলে এসেছো ? ছোট থেকে না শুরু করতে হয় । তারপর গ্লাসে চুমুক দিলেন ।
আমি মুখে কিছু না বলে মনে মনে বললাম, আমি বড় থেকে ছোটর দিকে যাবো বলে ঠিক করেছি । সুযোগ পেলেই মানুষ উপদেশ ঝাড়তে শুরু করে । তার উপর হাতে যদি রঙ্গিন পানির গ্লাস থাকে তাহলে তো আর কথাই নেই । উপদেশের বন্যা বইতে থাকে ।

আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে গ্লাসে আরেকটা চুমুক দিয়ে এ'তে শামস সাহেব বললেন, দেখি দাও, পড়ে দেখি কি এনেছ আমার জন্য । কথাটা বলে তিনি হাত বাড়ালেন । আমি ব্যাগ থেকে চিত্রনাট্যের কপিটা বের করে ওনার হাতে দিলাম ।

তিনি গ্লাসটা টেবিলে রেখে আমার কাছ থেকে লেখাটা নিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে একটা একটা করে পাতা উল্টে পড়তে লাগলেন। আমার বুক তখন ধুকধুক করছে । নার্ভাস ফিল করছি । মনে মনে প্রার্থনা করছি, এবার যেন আমাকে আর প্রত্যাক্ষিত না হতে হয় । যেন খুশি মনে ফিরতে পারি ।

এ লাইনের নিয়মই হচ্ছে একবার কোন পরিচালক কারো এটা লেখা নিয়ে যদি কাজ শুরু করেন তা হলে সে লেখকে আর বসে থাকতে হয় না। ছাই পাশ যা ই লিখুক না কেন । একের পর এক কাজ আসতেই থাকে । কিন্তু সেটার জন্য যেমন ভাগ্য লাগে তেমন জানাশুনা ও লাগে । আমার এ দুটোর কোনটাই নাই । যতো সময় যাচ্ছিল তোতোই উত্তেজনার আমার হাত, পা অবশ হয়ে আসতে লাগল । তবুও কাঠ পুতুলের মতো বসে রইলাম ।

পরিচালক সাহেব খুব মনোযোগ দিয়ে একটার পর একটা পাতা উল্টিয়ে যাচ্ছেন । মনে হচ্ছে, সময় আর কাটছে না । ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠছি । মনে হচ্ছে , সাফল্যের খুব কাছাকাছি বসে আছি । সাফল্যে যেন আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

এক সময় এলো সেই মহেন্দ্রক্ষন । এ'তে শামস সাহেব আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, এটা তুমি লিখেছ ?
আমি মাথা নেড়ে বললাম, জি , আমি লিখেছি ।
- তোমার লেখাটা এক কথায় চমৎকার । বোঝা যাচ্ছে প্রচুর কাজ করেছো। রিয়ালি ইমপ্রেসিভ । সত্যি দারুণ হয়েছে । কিন্তু ভাই, এটা নিয়ে তো আমি কাজ করতে পারবো না । তোমার এ গল্পটা হলিউডের কোন পরিচালকের হাতে পরলে লুফে নিতো । কিন্তু আমাদের দেশের পারিপার্শ্বিক অবস্থায় এ গল্প চলবে না । এ ছবির জন্য যে বাজেট, যে সব স্পেশাল এফেক্টের প্রয়োজন হবে তার জন্য যে খরচ হবে সেটা কোন প্রডিউসার দিতে রাজি হবেন না । অতএব ,বলতেই হচ্ছে, আমি দু:খিত । তুমি অন্য একটা গল্প নিয়ে এসো । কথা দিলাম, আমি তোমার গল্প নিয়ে কাজ করবো ।

আমার মন কাচের গ্লাসের মতো ভেঙ্গে গেলো । মুখে কিছু না বলে উঠে দাঁড়ালাম ।
আমাকে উঠতে দেখে তিনি বললেন, “তোমার হাতের টার্ন ভাল । কল্পনা শক্তি পরিস্কার আমি তোমাকে একটা থিম দিচ্ছি তুমি সেটা নিয়ে কাজ করো।”

ততোক্ষণে আমার নিজের উপর রাগ চেপে গেছে । আমি সরাসরি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম , সরি স্যার, আমি নিজের থিম ছাড়া অন্য কারো থিম দিয়ে স্টোরি তৈরি করি না। চিত্রনাট্যটা ওনার হাত থেকে নিয়ে স্টুডিও থেকে বের হয়ে এলাম । সঙ্গে সঙ্গে এক ঝাঁক হতাশা এসে ঝেঁকে ধরল আমায়। মনে হতে লাগলো এ জীবনের কোন মানে হয় না । জীবনের জন্য অপেক্ষা করছে শুধুই ব্যর্থতা আর হতাশা । খ্যাতি কিংবা সাফল্যের সুখ এ ভাগ্যে নেই । প্রচণ্ড রাগে গজগজ করতে করতে হাঁটতে লাগলাম ।

নিশুতি রাত পথ ঘাট একেবারে জন শূন্য । কাক পক্ষী ও নেই। কিভাবে যে মেসে পৌঁছবো সেটাও চিন্তা করছি না। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে বিকারগ্রস্তের ন্যায়
হনহন করে হাঁটতে লাগলাম। এফডিসি থেকে বের হয়ে মগবাজারের দিকে হাঁটতে লাগলাম । বেশ কিছুটা পথ হেঁটে মাছের আড়তের সামনে আসতেই একটা লোককে দেখতে পেলাম । রাস্তা পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে আছে । পরনে কালো রঙ্গের পুরাতন ওভার কোট । পা দুটো খালি । মাথাটা কেমন অস্বাভাবিক রকমের বড় । দেখে পাগল বলে মনে হলো । ভোঁটকা গন্ধে চারিদিকের বাতাস ভারি হয়ে আছে । আমি লোকটাকে না দেখার ভান করে তার সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে লাগলাম। লোকটাকে অতিক্রম করে পেছনে ফেলে যেতেই সে আমার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গলা খাঁকারি দিল । আমি ফিরে তাকালাম, লোকটা এবার সোজা হয়ে দাঁড়ালো তারপর আমার দিকে এগিয়ে এসে কোন রকম জড়তা ছাড়াই বলল, কি রে, কিছু হলো ?
ভ্রু কুচকে তাকালাম লোকটার দিকে । ভেতরের রাগটা বেড়ে বেড়ে চূড়ান্ত পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে । একবার মনে হলো , উল্টা পালটা কিছু করলে মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে মেরে ফেলে রেখে যাবো । পাগলামি করার সাধ ভুলে যাবে । মুখে কিছু না বলে রাগি চোখে তাকালাম লোকটার দিকে ।
আমার কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে সে আবারও বলল, কিছুই হয়নি, তাই না? তারপর হাসতে লাগলো । রাগে আমার শরীর জ্বলে উঠলো । নিজেকে কোন রকম সংযত করে বললাম,
কিছু হয়নি মানে কি ?
লোকটা এবার আর একটু এগিয়ে এসে ফিস ফিস করে বলল,তোর চিত্রনাট্য তো ঐ বুড়া ভাম'টা নেয়নি, তাই না?
লোকটার কথা শুনে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম, এ লোক তো দেখছি এ'তে শামস সাহেবের কথা বলছে । তার সাথে আমার কি কথা হয়েছে সেটা তো পথের এই লোকটার জানার কথা নয় । অবাক না হয়ে পারলাম না । কৌতূহলী চোখে লোকটার আগাগোড়া একবার অবলোকন করে ক্ষীণ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, কে, কে তুমি? কি বলতে চাও ?
লোকটা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে তেজস্বী কণ্ঠে বলল, আমি কে ? সেটা বড় কথা না । আমার কথা সত্য কিনা সেটা বল ।
আমি অনিচ্ছা সত্যেও মাথা নাড়লাম, হ্যাঁ নেয়নি ।
- ঐ বুড়ো ভামটা যে তোর লেখা নিবে না সেটা আমি আগেই থেকেই জানতাম । তাই তো তোর এখানে জন্য অপেক্ষা করে আছি ।
কথাটা বলে লোকটা শেয়ালের মতো খেঁক খেঁক করে হেসে উঠলো। সে হাসির শব্দে আমার ক্যামন যেন ভয় লেগে গেল। একটু খানি নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় আমি চারপাশটা ভাল করে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম । ঠিক সে সময় মনে হলো এলাকাটা ভাল না । প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে । একটু সাবধান হতে হবে ।

একটু আগের সেই রাগি ভাবটা মুহূর্তে বিদায় নিয়ে শরীরটা যেন নেতিয়ে পরছে । লোকটার উপস্থিতি অকারণেই শরীরটা ছমছম করে ভয়ের অস্থিত্ব জানান দিচ্ছে। কোন কারণ ছাড়াই ভয় পেতে শুরু করেছি । ভয়ার্ত চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম লোকটার মুখের দিকে । সঙ্গে সঙ্গে কাচা মাছের তীব্র আঁশটে গন্ধ এসে লাগলো নাকে ।

দু’পা পিছিয়ে এসে আবার প্রশ্ন করলাম, কে আপনি ? এতে শামস সাহেবের সাথে আমার কি কথা হয়েছে , সে সব আপনি জানলেন কি করে? আমার প্রশ্ন শুনে লোকটা হাসতে হাসতেই বলল, বললাম না , আমি কে, সেটা বড় ব্যাপার না । তারপর হাসি থামিয়ে সিরিয়াস হয়ে বলল, আমি সব জানি । তোর অতীত জানি, তোর বর্তমান জানি আবারও তোর ভবিষ্যতও জানি । কথাটা বলেই লোকটা আগের মতো হাসতে লাগলো ।
এবার আমি সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেলাম । কোন এক অজানা ভয়ে ভেতরটা কেপে কেঁপে উঠতে লাগল। ভেতর থেকে কেউ একজন যেন বলে উঠলো, সামনে মস্ত বিপদ । পালা , পালা এখান থেকে । তোতলাতে তোতলাতে কোন রকম বললাম, কি চাই আপনার, কি চাই?
কি চাই ? সিনেমার ভিলেনের মতো কথাটা বলে একটু থেমে তারপর সে বলল, তোর সঙ্গে সওদা করতে করতে চাই ? কথাটা বলে হাসি থামিয়ে আরো কাছে এসে সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকালো । ভয়ংকর হলুদ দু’টো চোখের দিকে তাকিয়ে আমার পুরো শরীর কাপতে লাগলো । মনে হচ্ছে লোকটার সে দৃষ্টি আমার শরীরের শিরা উপশিরা ভেদ করে রক্তের ফোটায় ফোটায় পৌছে যাচ্ছে । এ চোখ কোন মানুষের হতে পারে না । যে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে , যার সাথে কথা বলছি সে মোটেও এ জগতের মানুষ নয় । নিজ হৃদপিন্ডের কম্পন যেনো শুনতে পেলাম । একবার ভাবলাম , জেরে একটা দৌড় দেই । কিন্তু তীব্র ভোঁটকা গন্ধে আমার নাড়ি ভুঁড়ি উল্টো এলো । দাড়িয়ে দাড়িয়ে বমি করে দিলাম । লোকটা কিন্তু সড়ে গেলো না । কয়েক মিনিট পর একটু ধাতস্থ হয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, সওদা ! কিসের সওদা ? কি বলছেন এসব ?
লোকটার অসংলগ্ন কথাবার্তাগুলো পাগলের প্রলাপ বলে মনে হলো । উঠে দাড়িয়ে পকেট থেকে রুমাল বের কমে মুখ মুছে হাটতে উদ্যত হতেই লোকটা বলে উঠলো, তোর নাম, ডাক,খ্যাতি, যশ, প্রতিষ্ঠা তোর সকল স্বপ্ন পূরণের সওদা ।
মানে ? চমকে পেছন ফিরে প্রশ্ন করলাম ।
মানে খুব সোজা । তুই উঠে যাবি খ্যাতির চূড়ায় । যেখান থেকে সব কিছু অতি তুচ্ছ বলে মনে হয়। যেখান থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় না । করবি এমন সওদা ? আমি তোকে সব দেবো । লোকটা আমার মুখের কাছে এসে ফিসফিস করে কথাগুলো বলল । মাছের বিশ্রী আঁশটে গন্ধটায় ভেতরটা আবারো গুলিয়ে উঠলো । আমি কয়েক পা' পিছিয়ে গেলাম । কিছু বলতে গিয়েও পারলাম না । মনে হলো কেউ আমার কণ্ঠ রোধ করে দিচ্ছে । হঠাৎ টের পেলাম তীব্র ভয়ে আবার হাত পা থরথর করে কাঁপছে । ভয়ংকর কিছুর শঙ্কায় আমি ছুটে পালাতে চাইলাম ।
লোকটা আমার মনোভাব বুঝতে পেরে খপ করে আমার বা হাতের কব্জি চেপে ধরল। লোহার মতো শক্ত সে হাত । মনে হলো হাতটা ভেঙ্গে যাবে , তীব্র ব্যথায় উহু করে শব্দ করে উঠলাম ।
সেদিকে খেয়াল না করে লোকটা আগের মতো হাসতে হাসতে বলল , রাজি আছিস ? রাজি আছিস ? তুই মনে মনে যে মনটা চেয়েছিস ঠিক তেমনটাই হবে । তরতর করে উঠে যাবি খ্যাতির চুড়ায় । এ সব বুড়ো ভামরা লাইন দিয়ে পরে থাকবে তোর লেখার জন্যে । বল, রাজি আছিস কিনা ? বলে ফেল, বলে ফেল ......... লোকটা ঠা ঠা করে হাসতে লাগলো । রাত্রির নির্জনতায় সে শব্দ আশেপাশের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসতে লাগলো ।
কয়েক মূহুর্তের মধ্যে আমি আমার ভবিষ্যৎ দেখে ফেললাম । সকল ঢর, ভয়কে উপেক্ষা করে বললাম , তাতে তোমার কি লাভ ? কেন করবে তুমি এসব আমার জন্যে ? কিভাবে করবে ? তোমার নিজেরই যে হাল । কথাটা বলে লোকটার পোশাকের দিকে চোখ বুলিয়ে অবজ্ঞার হাসি হেসে উঠলাম ।
আমাকে হাসতে দেখে লোকটার চোখ দু'টো মুহূর্তের জন্য জ্বলে উঠলো । তারপর কিছুক্ষন হায়েনার মতো হলুদ দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে টেনে টেনে বলল, আমার কি লাভ ..........।? কথাটা বলেই নিরব একটা হাসি দিলো । সে হাসিতে আমার পুরো শরীর আবারো কাঁটা দিয়ে উঠল । বুঝতে পারলাম, ভয়ানক কিছু একটা অপেক্ষা করছে আমার জন্য । দ্রুত এ জায়গা ত্যাগ করতে হবে। মানুষটা এখন আর স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না । নেশাখোর হতে পারে । হয়তো নেশার ঘোরে আবল তাবল বকছে ।
- আমাকে নেশাখোর ভাবছিস?
আমি চমকে উঠলাম । এ তো দেখছি, আমার মনের কথা পড়তে পারছে । আমি আরো সর্তক হয়ে গেলাম । বুঝলাম রাগারাগি করে কিছু হবে না । যা করতে হয় ঠাণ্ডা মাথায় করতে হবে । লোকটার দিকে তাকিয়ে বললাম, দেবার মতো কিছুই নেই আমার ।
আমার কথায় লোকটা যেন উৎসাহ পেয়ে গেলো , কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বলল, এখন নেই কিন্তু একদিন সব হবে । আমার যা দরকার তা আমি চেয়ে নিবো । তোর যা দরকার তুই চেয়ে নিবি , রাজি আছিস? থাকলে বলে ফেল , বলে ফেল ।
আমি মনে মনে চিন্তা করলাম । সত্যিই তো হারাবার মতো কিছুই নেই আমার । তা হলে লোকটা কি চাইছে ? কি বা দিতে পারি আমি ।? ঠিক তখনি আমার ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠল, রাজি, আমি রাজি । তোর তো ত্রিভুবনে আপন,পর কেউ নেই, যে হারাবার ভয় পাবি। রাজি হয়ে যা ।
আমি বললাম, আমি রাজি ।
মনে হলো আমার গলা দিয়ে অন্য কেউ বলল, রাজি,রাজি,রাজি ।
রাজি ? লোকটা আমার দিকে অদ্ভুত ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আকাশ বাতাস কাপিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো ।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ রাজি । দে কি দিবি , যা দিবি এখুনি দে , এখুনি দে । এবার আমি লোকটার কোটের কলার চেপে ধরলাম ।
সঙ্গে সঙ্গে লোকটা আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল, যা দিলাম । বলেই সে আমার মুখের উপর থু করে এক দলা থুতু ছিটিয়ে দিলো ।
বহুদিনের মরা, পচা বোটকা গন্ধে শরীর গুলিয়ে উঠলো আমার। সমগ্র শরীর কাপিয়ে বমি এলো । বমি করতে করতে বসে পরলাম ।
বমির দখল কিছুটা কমে আসতে তাকিয়ে দেখি লোকটা নেই । যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। ডানে বামে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না। লোকটা যেখানে দাড়িয়ে ছিলো সেখানকার কালো খুঁটিটা যেন আমার দিকে তাকিয়ে উপহাসের হাসি হাসছে । পুরো ঘটনাটিকে ভ্রম বলে মনে হলো । কিছু সময় থম মেরে বসে থেকে মাতালের মতো টলতে টলতে মেসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম ।

চলবে...............
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০২২ সকাল ৯:১৬
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আদর্শের রাজনীতি না কোটি টাকার হাতছানি...

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৫



১. আমি অনেক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ছোট দলগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। উন্নত দেশের মত ২/৩ টিতে থাকাই উত্তম। কারণ, ছোট দলের নেতাদের টকশো-তে গলাবাজি করা ছাড়া আর কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল মাদ্রাসার দেয়াল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৯



ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন।

বিস্ফোরণে মাদ্রাসার একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তেল আর জল কখনো এক হয় না......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩৫



জুলাই ছিলো সাধারণ মানুষের আন্দোলন, কোন লিডার আমারে ডাইকা ২৪'এর আন্দোলনে নেয় নাই। কোন নেতার ডাকে আমি রাস্তায় যাই নাই। অথচ আন্দোলনের পর শুনি আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড নাকি মাহফুজ। জুলাই বিপ্লবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্ল্যাং রেভলিউশন: ১৮+ সতর্কবার্তা ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩০


সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকে একটা ভাইরাল ভিডিও চোখে পড়লো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্য সালাউদ্দিন আম্মার গণজাগরণ মঞ্চ ৩.০ তে উপস্থিত হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন: দেখতে পাইলে বাকশাল, শা*উয়া মা*উয়া ছিড়া ফেল/... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×