somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

সওদা - ভৌতিক রহস্য গল্প (শেষ পর্ব )

৩০ শে জুন, ২০২২ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অসংখ্য মানুষের চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো । মনে হচ্ছে, আমার চারপাশে শত শত মানুষ চিৎকার,আর্তনাদ করছে। চোখ খুলে বুঝতে কষ্ট হলো আমি কোথায় আছি । মনে হচ্ছে ,গভীর সমুদ্রের অন্ধকার কোন গহ্বরে তলিয়ে আছি অনাদী অনন্তকাল ধরে । কারা যেনো ফিসফিস করে অদ্ভূত ভাষায় কথা বলছে । বহুদূরে ক্ষীণ একটা আলোর রশ্মি দেখাতে পাচ্ছি । প্রাণপণ চেষ্টা করছি আলো রশ্মিটার কাছে পৌছাতে কিন্তু পারছি না । অবসাদে ছেয়ে আছে মন । হাত,পা পাথরের মতো ভারি হয়ে আছে । মনে হচ্ছে, শত শত টন পাথর কেউ আমার উপর চাপা দিয়ে রেখেছে । শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে । মনে হচ্ছে, আমি মারা গেছি এ বুঝি মৃত্যুর 'পরবর্তী অবস্থা । কেউ মারা গেলে বুঝি এমন ই হয় । হায় ! ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করো । প্রচণ্ড রকমের মানসিক চেষ্টার ফলে অবশেষে চোখ খুলে তাকাতে পারলাম ।

ঘরে অল্প আলোর একটা বাতি জ্বলছে । ঘরের দেয়াল, জানালা জানালার পর্দা সিলিং এ ফ্যান সব কিছু পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি । দরজা ভেতর থেকে বন্ধ । ধীরে ধীরে মনে পরে গেল সব । মনে পরে গেলো,আমি মল্লিক সাহেবের বাসায় বিছানায় শুয়ে আছি । মাথাটা পরিষ্কার হয়ে গেছে । ইতির কথা মনে হতেই আমি ওকে দেখার জন্য এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম । কিন্তু কোথাও ওকে দেখতে পেলাম না । ঘরের মেঝের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম, তিনজন লোক অনেকটা ধ্যানের ভঙ্গিতে গোল হয়ে বসে আছে । মাঝখানে কয়েকটা মোমবাতি জ্বলছে । মল্লিক সাহেব'কে দেখেই চিনতে পারলাম । তিনি বিড়বিড় করে মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে পাশে রাখা একটা বোতল থেকে পানি জাতীয় কিছু একটা একটু পর পর পুরো ঘরে ছিটিয়ে দিচ্ছেন ।

আমাকে উঠে বসতে দেখে মল্লিক সাহেব আমার দিকে একটা হাত বারিয়ে দিয়ে বললেন, এসো, আমার কাছে এসো । আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না । হঠাৎ মনে হলো, মাথার ভেতরটা ক্যামন শূন্য হয়ে গেছে । আমি আমার অতীত,বর্তমান কিছুই মনে করতে পারছি না। মাথার ভেতরে ভোতা একটা যন্ত্রণা হচ্ছে । আমি আবারও ইতিকে দেখার জন্য এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম । মল্লিক সাহেব খুব মোলায়েম কণ্ঠে আবারো ডাকলেন, এসো , আমার কাছে এসো ।
আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, পানি খাব। তিনি তার সামনে বসা একজনের দিকে তাকাতেই লোকটা উঠে এক গ্লাস পানি এনে দিল ।

পানির গ্লাসটা হাতে নিয়েই ভয়াবহ চমকে উঠে সেটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম । আমার কাছে মনে হলো, লোকটা পানি নয় এক গ্লাস তাজা রক্ত আমার হাতে এনে দিল ।
এবার মল্লিক সাহেব উঠে এসে আমার হাত ধরে ঘরের মাঝখানে আকা বৃত্তটার ঠিক মাঝখানটাতে বসিয়ে দিয়ে বললেন, তোমার কোন ভয় নেই । তোমার ভালর জন্যই আমরা এসব করছি। তারপর একটু থেমে আমাকে ভাল করে দেখে নিয়ে বললেন, রন্জু তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো ? মল্লিক সাহেব আরো কয়েকবার একই প্রশ্ন করার পর আমি মাথা নাড়ালাম, হ্যাঁ, বুঝতে পারছি ।

গুড, তাহলে শুনো । এখন আমি তোমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবে । আমি আবারও মাথা নাড়ালাম । মল্লিক সাহেব কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলেন, আমাদের চারপাশে প্রতি নিয়ত পার্থিব, অপার্থিব অনেক আত্মা ঘুরে বেড়ায়। তাদের মধ্যে কোনটা ভাল আবার কোনটা খারাপ । আমাদের জীবনে তাদের কোন ভূমিকা না থাকলেও কখনো সখনো তারা আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয় । আমাদের তাদের কব্জায় নিয়ে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে । ধর্ম গ্রন্থগুলো এ কথা স্বীকার করলেও বিজ্ঞান স্বীকার করে না । বিজ্ঞান এটাকে ম্যান্টল ডিসঅর্ডার বা মানসিক দুর্দশা বলে অভিহিত করে ।

কিন্তু প্রকৃত বিষয়টা হচ্ছে, অপ আত্মা বা শয়তানের প্রভাব । তুমি কি আমার কথার মানে বুঝতে পারছো । রন্জু , এই রন্জু ।
ঘুমে আমার চোখ ঢুলুঢুলু করছে । মল্লিক সাহেবের কথা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম । মল্লিক সাহেবের কথায় আমার তাকালাম তার দিকে তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন , তুমি কি আমার কথার অর্থ বুঝতে পারছো ?
আমি উপরে নীচে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম ।

তিনি আবার বলতে করলেন, তোমার উপরেও ঠিক তেমনি একটি দুষ্ট আত্মার দৃষ্টি পরেছে । সেই এখন তোমার চারপাশের সবকিছু বিনষ্ট করে চলেছে । মাঝে মাঝে তুমি তাকে দেখতে পাও । ভয়ংকর সে আত্মা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে । তুমি এখন মৃত্যুর খুব কাছা কাছি দাড়িয়ে আছো । রন্জু, তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো ?

আমি ঘন ঘন মাথা নাড়লাম হ্যাঁ, আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি । সঙ্গে সঙ্গে সেই ভয়াল চোখ দু’টোর কথা আমার মনে পরে গেল । আমি চাপা একটা আর্তনাদ করে ভয়ার্ত চোখে বন্ধ দরজাটার দিকে তাকালাম ।
আমাকে কেপে উঠতে দেখে মল্লিক সাহেব আমার কাঁধে একটা হাত রেখে আবারও বলতে লাগলেন, আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি তোমার জন্য । তোমার কাছ থেকে সে অশুভ দুষ্ট আত্মাটিকে তাড়িয়ে দিতে । কিন্তু একাজে তোমার সহায়তা দরকার । তোমার সাহায্য ছাড়া আত্মাটাকে তাড়িয়ে দেওয়া যাবে না । তুমি কি আমাদের সহায়তা করবে ? আমি আবারও মাথা নাড়লাম, হ্যাঁ আমি সহায়তা করবো ।

তোমার সঙ্গে যে অশুভ আত্মাটা আছে সে তৈরি হচ্ছে তোমার উপর চূড়ান্ত আঘাত হানার জন্য । যে কোন সময় সে তোমার উপর আঘাত হানবে । তবে, ভয় নেই । আমরা আছি । তোমার হয়ে আমরা তার মোকাবেলা করবো । এ জন্য চাই তোমার সাহস এবং সহযোগিতা ।
আমি কিছুটা ধাতস্থ হয়ে মল্লিক সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, আমাকে, আমাকে কি করতে হবে বলুন ।

মল্লিক সাহেব আমার কাঁধে মৃদু একটা চাপ দিয়ে বললেন, আমি এখন থেকে যা বলবো তুমি হুবহু তা তা পালন করে যাবে আর কিছুতেই এ বৃত্ত থেকে আমার নির্দেশ ছাড়া বের হবে না । মনে রাখবে বৃত্ত থেকে বের হওয়া মনেই হচ্ছে তোমার মৃত্যু । মনে থাকবে আমার কথা ?

জ্বি, মনে থাকবে। আমি মাথা নাড়ালাম ।
আত্মাটা তোমাকে অনেক প্রলোভন দেখাবে, আকুতি মিনতি করবে ভয় দেখাবে। যে করেই হোক এ বৃত্তটা থেকে তোমাকে বের করে নিতে চাইবে তুমি ভয় পাবে না । বৃত্ত থেকে কিছুতেই বের হবে না । মনে রাখবে বৃত্ত থেকে বের না হলে ও তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না । বুঝতে পেরেছো আমার কথা ?

আমার ইতির কথা মনে পড়লো , আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইতি কোথায় ? মল্লিক সাহেবকে মনে হলো একটু হাসলেন । তারপর কানের কাছে মুখ এনে বললেন, ও বাসায় চলে গেছে । ওকে নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না । ও ভাল আছে । আমি খুব শান্ত ভাবে মাথা নাড়লাম । তারপর কি মনে করে মল্লিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম, আত্মাটা যদি ওকেও মেরে ফেলে ?

না, সে ভয় নেই । ইতি, জানে কি ভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হয় । তুমি এ পানিটুকু খেয়ে চোখ বন্ধ করে থাকো । মল্লিক সাহেব ছোট একটা বোতল আমার দিকে বাড়িয়ে ধরলেন । আমি বোতলটা হাতে নিয়ে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে বোতলটা ফেরত দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। মল্লিক সাহেব আবারও মন্ত্র পড়তে শুরু করলেন ।

অনেকক্ষণ কেটে গেলো । কিছুই ঘটলো না ।
আমার কাছে মনে হতে লাগলো, এক পাগরের কথা বিশ্বাস করে অনাদি অনন্ত কাল কোন কারণ ছাড়াই বসে আছি । এর কোন মানে হয় না । লোকটা আমাকে নিয়ে মজা করছে না তো ? এসব আমি কি করছি । বিংশ শতাব্দীতে এসে ভুত প্রেত তন্ত্রমন্ত্র নিয়ে পরেছি । কাদের পাল্লায় পরলাম ।

উঠে যাবার জন্য ছটফট করতে লাগলাম । মনে হতে লাগলো এখান থেকে এখুনি চলে যেতে হবে । এসব পাগলামির কোন মানে হয় না। ধীরে ধীরে আমার ভেতরে অস্থিরতা বাড়তে লাগলো ।
হঠাৎ করে মনে পড়লো, মোবারকের কথা । আরে, আমি চায়ের দোকানে ছিলাম ? তাহলে আবার এখানে এলাম কিভাবে ? নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছি । ভয়াবহ কোন স্বপ্ন।
ঠিক সে সময়ই তীব্র শীতে পুরো শরীর কেঁপে উঠল । আমি চোখ খুলে দেখি বৃত্তটার মাঝখানে এখন মাত্র একটা মোম বাতি জ্বলছে। ঘরের দরজা হাট করে খোলা ।
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সেই ভয়াল লোকটা । দু' চোখ থেকে ঠিকরে বের হচ্ছে আগুন ।
আমি তাকাতেই আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, তুই এখানে কেন এসেছিস? ভুলে গেছিস সওদার কথা ? উঠে আয়, এক্ষুন্নি উঠে আয় বলছি । তা না হলে মেরে ফেলবো ।
মল্লিক সাহেব আমার একটা হাত চেপে ধরে বললেন, ভয় পেয়ো না । ও, এ বৃত্তর মধ্যে আসতে পারবে না । কিচ্ছু করতে পারবে না তোমার ।
লোকটার উপর থেকে চোখ সরাতে পারলাম না । চোখ, মুখ বিকৃত করে সে বলে চলেছে, ভুলে গেছিস? ভুলে গেছিস সওদা'র কথা ? তোর আত্মা, শরীর এখন আমার । আয়, চলে আয় বলছি । পুরো বাড়িটা যেনো থরথর করে কাপতে লাগলো । ভয় আমি গুটিয়ে গেলাম । ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করলো ।
হঠাৎ মল্লিক সাহেব সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে উঠলেন, যা ভাগ । ভাগ শয়তান এখান থেকে । দূর হয়ে যা ।
তুই, শয়তান, তুই দূর হয়ে যা । তুই মর । আমি তোর মাথা চিবিয়ে খাবো । দরজার কাছে দাঁড়ানো লোকটা ভয়ংকর চিৎকার করে উঠল । ওকে আমায় দিয়ে দে । আমি চলে যাবো । আর তা না হলে, তোকে ও মরতে হবে ওর সাথে । এখনো সময় আছে ওকে দিয়ে দে ।
শয়তানের কথার প্রতি উত্তরে কিছু না বলে মল্লিক সাহেব কিছু না বলে উচ্চকণ্ঠে মন্ত্র উচ্চারণ করতে লাগলেন ।

বেশ কিছুক্ষণ নীরবতার পর একটা অট্টহাসি দিয়ে লোকটা দরজা থেকে ঢুকে পড়লো ঘরের ভেতর । আমি ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম , মল্লিক সাহেব চিৎকার করে বলে উঠলেন , ওর দিকে তাকিও না । চোখ বন্ধ করে ফেলো । ভয় নেই । কোন ভয় নেই তোমার । আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম ।

মল্লিক সাহেবের উচ্চারিত মন্ত্রে কোন কাজ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না । একটা উষ্ণ দমকা হাওয়া শরীরে এসে লাগায় চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি , লোকটা ঘরের ভেতর ঢুকে শূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে । আমাকে তাকাতে দেখে, খুব কাছে এসে থমকে দাঁড়ালো । তারপর মেঝেতে আকা বৃত্তটাকে এক নজর দেখে বিকট ভাবে হেসে উঠে বলল, ভেবেছিস এটা তোদের রক্ষা করবে ? এখনো সময় আছে চলে আয় । যোগ দে আমার দলে , যোগ দে । আমি তোদের তামাম পৃথিবী দিয়ে দেবো। আয়, আমার কাছে আয় । আমার কাছে সব আছে, নিয়ে নে । নিয়ে নে । এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে লোকটা আবারও হাসতে লাগলো ।

আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলাম । মনে হলো, উঠে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাই । মল্লিক সাহেব আমার মনোভাব বুঝতে পেরে আবারও আমার হাত চেপে ধরে বললেন, ভয় নেই , ওকে ভয় পাবার কিছু নেই । ও আমাদের একটা চুলও বাঁকা করতে পারবেনা । তুমি স্থির থাকো । ইনশাআল্লাহ আমাদের কিছু হবে না ।
কিছু হবে না ? তাহলে দেখ, আমি কি পারি । বলেই লোকটা বৃত্তের ভেতর ঢুকার জন্য এগিয়ে এলো । কিন্তু, বৃত্তের উপর পা দেবার সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে পেছনে পরে গেল ।
এবার মল্লিক সাহেব হেসে উঠে বললেন; দেখলি দেখলি তোর দৌড় কতোখানি দেখলি ?
লোকটা কয়েক মূহুর্ত মাটিতে থম মেরে বসে রইল। তারপর হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, বা: বেশ জাল পেতেছিস তো ? বলার সঙ্গে সঙ্গে লোকটার আকৃতি পরিবর্তন হয়ে গেলো, লোকটা মুহূর্তের মধ্যে সদু ভাইয়ের রূপ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে পরিষ্কার শুদ্ব ভাষায় বলে উঠল, কি রাইটার সাব, আমার সঙ্গে আসবা না । এসো, এখানে থেকে কোন লাভ নাই । উঠে আসো। এরা তোমাকে ধ্বংস করে দেবো। তোমার খ্যাতি যশ কিচ্ছু থাকবে না । সব চলে যাবে । চরে আসো আমার সাথে ।
সদু ভাই দু’হাত বাড়ালেন আমার দিকে ।
আমি মল্লিক সাহেবের দিকে তাকালাম। তিনি বোতল থেকে পানি নিয়ে ছুড়ে মারলেন সদু ভাই রুপি লোকটার দিকে । সঙ্গে সঙ্গে সদু ভাই গুমরে কেঁদে উঠলেন । তারপর কান্না থামিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে করতে ঘর হতে বের হয়ে গেলো । মল্লিক সাথে বৃত্ত থেকে বের হয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন । আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।

ঠিক সে সময় ইতি'র কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম । দরজার বাহির থেকে ইতি আমার নাম ধরে বলছে, রন্জু দরজা খুলে তাড়াতাড়ি বাহিরে এসো । এখানে আর এক মুহূর্ত ও না । ওরা আমাকে অন্য ঘরে বেঁধে রেখেছে । নির্যাতন করেছে । তুমি বাঁচাও আমাকে । মল্লিক লোকটা প্রতারক, ভণ্ড ওর কথা শুনো না । চলে এসো । আমাকে বাচাও রন্জু । এরা আমাদের মেরে ফেলবে ।

ইতি'র হঠাৎ আগমনে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে মল্লিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে, মূহুতকাল দেরী না করে ছুটে গেলাম দরজার কাছে । প্রায় সাথে সাথে মল্লিক সাহেবও ছুটে এসে ধরে ফেললেন আমাকে । তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম । মল্লিক সাহেব বৃত্তের মধ্যে দাড়িয়ে থাকা লোক দুটির উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললেন, ধরো ওকে । বের হতে যেনো না পারে । ধরো শক্ত করে । হুকুম পেয়ে লোক দু'টো এসে আমাকে ধরে টেনে বৃত্তের মাঝখানে নিয়ে গেলো ।

মল্লিক সাহেব আমাকে ধরে রেখে বললেন, ওটা ইতি না ।

তুমি এখানেই বসে থাকো । আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, মল্লিক সাহেব আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন, ওটা ইতি না । শয়তান ইতির কন্ঠে কথা বলছে । ও চাইছে তোমাকে এখান থেকে বের করে নিতে । আমি ইতি'র ওর বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি । তুমি ওর ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারো । তুমি কিছুতেই এই বৃত্ত থেকে বের হবে না । একবার যদি তোমাকে ঘর থেকে বের নিয়ে যেতে পারে তাহলে আমি আর কিছু করতে পারবো না । তাই্ চুপ করে বসে থাকো । এক পা ও নড়বে না ।
আমি হুংকার দিয়ে বললাম, না , আমি বিশ্বাস করি না আপনার কথা । ওটা, ওটা ইতির গলা । কি করছেন আপনি ইতির সাথে ?
মল্লিক সাহেব উল্টো দমক দিয়ে বললেন , চুপ একেবারে চুপ । আর একটা ও কথা বলবে না ।
আমি এবার নরম সুরে বললাম, প্লিজ স্যার, ইতিকে মুক্তি করেন ।

দয়া করে ওকে ভেতরে আসতে দিন । শয়তানটা ইতিকে মেরে ফেলবে । কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে , প্রচন্ড একটা ঝাকি দিয়ে মল্লিক সাহেবের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে দরজার কাছে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি , দরজায় সত্যি সত্যি ইতি দাড়িয়ে আছে । ওর দু চোখে ভেসে যাছে চোখের চোখের পানিতে । ইতিকে দেখে বুকের ভেতরটা ক্যামন করে উঠলো । আমি ছুটে গেলাম ওকে জড়ি ধরতে । আমাকে দরজা খুলতে দেখেই ইতি হেসে বলল,আমার প্রিয়তম আমার । আমি জানতাম তুমি আমার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারবেন । এসো আমার সঙ্গে । ইতি ও এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো ।

আমার কাছে মনে হলো, কেউ গরম চাদর আমার শরীরে জড়িয়ে ধরেছে । আমি আতকে উঠে পিছিয়ে এলাম । এই প্রথম আমার মনে হলো এই মেয়েটা আর যেই হোক না কেন ইতি হতে পারে না । কাতর চোখে তাকালাম মল্লিক সাহেবের দিকে ।

ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ইতি এগিয়ে এসো আমার একটা হাত ধরে বলল, কি হলো ? ভয় পেয়েছ ? এসো, এসো আমার সঙ্গে । আমার হাত ধরে সে টানতে টানতে বাড়ির বাহিরে নিয়ে যেতে চাইলো । ইতির ধরে থাকা হাতের জায়গাটা মনে হচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে ।
আমি দু’পা পিছিয়ে এসে বললাম, কে তুমি ? তুমি, ইতি হতে পারো না । সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো এ তো সেই শয়তান । মল্লিক সাহেবের কথাই সত্য , ইতির রুপ ধরে সে আমাকে ধোকা দিয়েছে । চিৎকার করে মল্লিক সাহেবের কাছে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই, ইতি রুপি শয়তান প্রচণ্ড জোড়ে আমার গলা চেপে ধরল। আমি ছটফট করতে লাগলাম । শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে লাগল । চোখের সামনে সব গোলা হয়ে যেতে লাগলো ।

ঠিক সে সময় পেছন থেকে মল্লিক সাহেব পানি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে এসে বললেন, ছাড়, ছাড়, ছাড় ওকে শয়তান । ছেড়ে দে, ছেড়ে দে । তারপর জোরে জোরে কুরআনের আয়াত পড়তে লাগলেন ।
মুহূর্তে ইতির রূপ পরিবর্তন হয়ে গেল । আবার সেই আগের রূপ ধরে লোকটা আমাকে ছেড়ে দিয়ে মল্লিক সাহেবের দিকে ছুটে গেল । সে সুযোগে বৃত্তের ভেতরে থাকা মল্লিক সাহেবের সঙ্গি লোক দু'জন আমাকে টেনে বৃত্তের ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলেন ।

দরজার বাহিরে তখন লোকটা মল্লিক সাহেবকে মাটিতে ফেলে তার বুকের উপর চেপে বসেছে । আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম, বাচান ওনাকে । শয়তানটা মেরে ফেলবে তো .......
আমার কথা শেষ না হতেই একজন শাবল জাতীয় কিছু মল্লিক সাহেবের উপর বসে থাকা লোকটার পিঠে ঢুকিয়ে দিল । তারপর, টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে আবারো শাবলটা তার মাথায় আঘাত করে সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে মাটির সঙ্গে চেপে ধরে রাখল । লোকটার পিঠ,বুক, মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে বের হয়ে এলো রক্ত । মুর্হুতের মধ্যে পুরো জায়গাটা রক্তে মাখামাখি হয়ে গেলো ।
মল্লিক সাহেব চোখের পলক উঠে বসে হাতের বোতলের পুরো পানিটা লোকটার শরীরের উড়র ছিটিয়ে দিতে দিতে অত্যান্ত সুরালো কণ্ঠে সুরা পড়তে লাগলেন । আমি নিজের অজান্তেই আল্লাহু আকবর , আল্লাহু আকবর; বলে চিৎকার করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরলাম ।

শেষ ।
গল্পটি ২০১১ সালে লেখা ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৫:২৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×