somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

আগুনের মানুষ - অনুগল্প

১১ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি থামতেই বিরক্তিটা বেড়ে গেলো । আজকাল সব কিছুতে বিরক্তি বেড়ে যায় । দেশের মানুষগুলো রাতারাতি আন কালচার, মূর্খ, গোয়ার হয়ে উঠছে । কোথাও একটু সুন্দর সিস্টেম নাই । সর্বত্র দূষণ, করাপশন, পলিউশন মিলেমিশে একাকার অবস্থা । গত মাসে ছেলে, মেয়ে বউকে কানাডায় পাঠিয়ে দিয়েছি । এই দেশে কি মানুষ থাকতে পারে নাকি ? যত্তসব,ময়লা, আবর্জনা, নোংরা কাদার ভাগার ।

কত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি । অথচ জ্যামের মধ্যে আটকে থেকে নাকাল হতে হচ্ছে । জ্যামের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে পয়েন্টমেন্টটা মিস করতে হবে। কথা দিয়ে কথা না রাখার লোক আমি না । তা ছাড়া যেখানে স্বার্থের লেনদেন আছে সেখানে তো একেবারে না । মস্ত বড় পার্টি , পলিটিকাল কানেকশন হাই । অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এ্যপোয়নমেন্ট পেয়েছি। মিস হয়ে গেলে মাথার চুল ছিঁড়তে হবে । কয়েক'শ কোটি টাকার কাজ । যদি ব্যাটে বলে হয়ে যায়, তাহলে সারা জীবন বসে খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে । টুয়েন্টি পারসেন্ট থেকে শুরু করতে হবে । পার্টি যতো বড় রেট ততো বেশি । ফোরটি - সিক্সটিতে দফারফা হয়ে গেলে খুব ভালো ।

নিজেই ড্রাইভ করছি । এ সব ক্ষেত্রে ড্রাইভারদের বিশ্বাস করতে নাই । কখন কে, কি লিক করে দেয় তা তো আর বলা যায় না । তাই যতোটা পারা যায় সাবধানে থাকতে হয় । পাশে সিটের উপর রাখা গাড়ির ক্যাটালগগুলো ঠিকঠাক করে রাখলাম । সদ্য ইমপোটেড নতুন নতুন সব গাড়ির ক্যাটালগ । দাম ৫০ লাখের উপরে । না, গাড়ি বেঁচতে যাচ্ছি না । গাড়ি বেচা আমার পেশা না । গাড়ির দাম শুনে যারা আমারে গাড়ির ব্যবসায়ী ভাবছেন তাদের জন্য বলছি , গাড়ি বেচার মতো ছোটখাটো ব্যবসা আমার সাথে যায় না ।

আপনাদের সকলের দোয়ায় ছোটখাটো একটা ঠিকাদারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে আমার । কয়েক'টা ক্যাটাগরিতে লাইসেন্স নেওয়া আছে । টয়লেট থেকে ফুটপাত, ফুটপাত থেকে বিমান বন্দর সবই বানাতে পারি । একবার মূল টেন্ডারটা হাতিয়ে নিতে পারলে ছোট ছোট অংশে পুরো কাজটাকে অন্যান্য কনট্রাকটরদের মধ্যে ভাগ, ঝোঁক করে দেওয়াই আমার মূল ব্যবসা । অবশ্য এ পর্যন্ত আসতে দীর্ঘ লাইন,ঘাট মেন্টেন করে যেতে হয় । তবুও ঝামেলা যে হয় না । তা কিন্তু নয় । নিত্য নতুন ঝামেলা লেগেই থাকে। যাত্রীবাহী পরিবহনের মতো স্টেশনে থেমে থেমে যাত্রী সেবা দিয়ে তবেই মাছ জালে তুলা যায় ।

কথাবার্তা ঠিকঠাক হয়ে গেলে, পিএস এর কাছে বিকেলে পৌঁছে যাবে তার পছন্দ করা গাড়িটি । তবে আজকাল সবাই গাড়ি নিতে চায় না ফেঁসে যাবার ভয়ে । কথায় আছে, কাকে কাকের মাংস খায় না । কিন্তু এই লাইনে গু ছাড়া সবাই কিছু সবাই খায় । বনিবনা না হলেই ফাস করে ভাইরাল করে দাও । তারপর বসে বসে মজা দেখো । ব্যাস সব শেষ । এই তো গতমাসে, আমাদের এই লাইনের গুরু'র একটা অডিও ফাঁস হয়ে কি কেলেঙ্কারিটাই হলো । তবে, গুরু বলে, সবকিছু সামলে দিয়ে রক্ষা পেয়েছেন । আমরা হলে, হাসপাতালে চিৎ হয়ে পরে থাকতে হতো ।

এই মুর্হুতে কমিশন ব্যবস্যা হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বের এক নাম্বার ব্যবসা । আমি নাম দিয়েছি, "ধরো মাছ না ছুঁই পানি ।" চোখকান খোলা রেখে লিয়াজো মেন্টেন করে ঠিক জায়গায় হাত ঢুকাতে পারলেই পকেট উপচে পরে টাকা । গাড়িতে ফুল এসি চলছে । তবুও দরদর করে ঘামছি । ইদানীং এই নতুন যন্ত্রনা হয়েছে, অল্পতেই টেনশনে পড়ে যাই । বুকের ভেতরটা ধুপধুপ করতে থাকে । আগে এমনটা হতো না । কোন কারণ ছাড়াই ঘেমে যাই ।

জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম , উল্টো দিক দিয়ে কোন ভিআইপি যাচ্ছে, তাই এই লাইনটা বন্ধ করে রাখা হয়েছে । ট্রাফিক সার্জেন্টগুলো একটু পর পর ঠুক ঠুক করে কালো কাচের গাড়িগুলোর দিকে মুখ করে করে সালাম ঠুকছে । সকাল ও সন্ধ্যায় এই সময়গুলোতে খুব কষ্ট হয় বেচারাদের । কয়েক বছরের মধ্যে দেশে এতো এতো ভিআইপি বেড়ে যাওয়ায় বেচারারা পরেছে ঘ্যারাকলে । সকাল সন্ধ্যা ঠুসঠাস । সেই রেশ গিয়ে পরে অন্য যান বহনের চালকদের উপর । চলে মামলা দেওয়ার মহা উৎসব ।

বেশ কিছুক্ষন সিগনালে ঝুলে থাকার পরে হঠাৎ একটা শোরগোল উঠলো । ডান পাশের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি, লুঙ্গির উপর কালো কোট পড়া একটা লোক দৌড়চ্ছে আর হাত নেড়ে নেড়ে চিৎকার করে কিছু বলছে । জানালার গ্লাসটা একটু নামাতেই শুনতে পেলাম , লোকটা আগুন, আগুন বলে চিৎকার করতে করতে আমার পাশেই দাড়িয়ে থাকা একটা নিশান পাজারো'র সামনে গিয়ে দাড়িয়ে নানান অঙ্গভঙ্গি করে চিৎকার করতে করতে বলছে, আগুন লাগছে , আগুন লাগছে । পাজারোর ভেতরে বসে থাকা যাত্রীদের দেখা যাচ্ছে না । ড্রাইভারকে দেখলাম, জানালা খুলে একশ টাকার একটা নোট বের করে লোকটাকে সাধছে । কিন্তু পাগল লোকটা সেদিকে তাকিয়েও দেখছে না । তার দৃষ্টি পেছনের সিটে বসে থাকা যাত্রীর উপর ।

সকাল বেলা রাস্তায় অফিস মুখী মানুষের বড্ড চাপ । সির্গনালে থেমে থাকা লোকজন বিষয়টাতে মজা পেয়ে দেখছে আর দাঁত বেড় করে হাসছে । বাঙ্গালিকে হাসির জন্য বিশ্বকাপ দেওয়া উচিত । মান,অভিমান, রোগ,শোক সব কিছু ভুলে খুব সহজেই হাসতে পারে । সেদিন নিউজে দেখলাম, সারারাত প্রসব বেদনায় ছটফট করে , সকালেই পরীক্ষায় বসেছে এক নারী । পরীক্ষা শেষে সাংবাদিকেরা তাকে ঘিরে ধরলে ,সে দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলছে, পরীক্ষা ভালো হয়েছে, দোয়া করবেন ।

মোটরসাইকেলে বসা একজন পাগলের উদ্দ্যেশে , প্রশ্ন ছুড়ে দিলো , মামা কোথায় আগুন লাগছে ? প্রশ্ন পেয়ে পাগলের উদ্দোমে বেড়ে যায়, সে নতুন উদ্দোমে চিৎকার করে বলতে থাকে, আগুন , আগুন । সর্বত্র আগুন। তেলে আগুন , জলে আগুন , মনে আগুন , পেটে আগুন । বাজারে আগুন, ঘরে আগুন । চারিদিকে আগুন আর আগুন । আগুন খা, আগুন হাগ । আগুন খেয়ে খেয়ে আগুনের মানুষ হয়ে যা ।

পাগলের কথা বার্তার ফিলোসফি ধরতে পারছি না । ব্যাটা আগুন বলতে কি বুঝাতে চাইছে । দেখে তো ভাবের পাগল বলে তো মনে হচ্ছে না । ভাবের পাগল হলে পাজারোর জানালা দিয়ে বের হওয়া নোটটা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যেতো । তাহলে ! ব্যাটার উদ্দেশ্য কি ? শুনেছি আজকাল সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন পাগল,টাগল সেজে রেকি টেকি করে । একে দেখে তো কিছুই বুঝা যাচ্ছে না ।

এই দ্যাখো ; কোন কারণ ছাড়াই ভয় পাচ্ছি । না , সব কিছু নিয়ে এতো ভাবতে নাই । ভালোয় ভালোয় মিটিংটা হয়ে গেলে রাতে রেডিসনে পার্টি দিবো । দেশের গুরুত্বপূর্ণ লোকজন থাকবে সেখানে । রাত্রি জমে উঠলেই জমে উঠবে পার্টি । আহ! কি শান্তি, শুধু পার্টি আর পার্টি ।

সিগনাল ছাড়তেই মোবাইলটা বেজে উঠলো দেখে মেজাজটা আবার খারাপ হয়ে গেলো । মা...টারে কতবার বলেছি , ফোন না করতে । দরকার হলে আমি নিজে ফোন দিবো । কে শুনে কার কথা , তবুও মা...টা ফোন দিবে । ফোনটা ধরতেই , অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো পরিচিত মোলায়েম নারী কণ্ঠ, "ভাইজান আজ কত পিস পাঠাবো।? নতুন,ফ্রেশ কিছু পাখি এসেছে । আপনার জন্য একটা টিয়া পাখি আমি নিজে বেছে রেখেছি । সাবধানে থাকবেন তা না হলে , কামড় দিবে কিন্তু .........।["

খিলখিল হাসির শব্দে কানটা ঝা ঝা করে উঠলো । "সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চমকের মতো হালকা একটা হাসির রেখা খেলে গেলো ঠোটের কোণে । ভেতরে লুকিয়ে থাকা পুশুটা একটু একটু করে নড়েচড়ে উঠলো নরম তুলতুলে মাংসের স্বাদ নেবার জন্যে । আপন মনেই বিরবির করে বলে উঠলাম, পাখি ......পাখি ........টিয়া পাখি , দেখবো তুই কত কামড়াতে পারিস রাঙ্গা ঠোটে ।

বি।দ্র : এই গল্পের চরিত্রের সাথে জীবিত কিংবা মৃত কোন ব্যক্তির মিল নাই । একান্তই কোন মিল খুঁজে পাওয়া গেলে নেহাতই তা কাকতালীয় ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:২৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফিরে দেখা ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ভারতের প্রতি একটি সতর্ক বার্তা

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০০

অতীতে গরুর মাংসে হাড় বেশি হওয়ার জের ধরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে দেখেছি,
.
ও ভাই মুজে মারো মুজে মারো নেহি মাজাক হ রাহে
.
ঢাল-সড়কি,টেঁটা-বল্লম, গুলতি, লাঠিসোটা, ইট পাটকেল নিয়ে তারা দলে দলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকা কেন শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করলো?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১১



ব্লগে কে কে বলেন, আমেরিকা শেখকে হত্যা করেছে? খুব বেশী ব্লগার ইহা বলেন না; তারা শেখের দুর্নীতি, আওয়ামী লীগের দোষ টোষ নিয়ে বলেন যে, কিছু বিপথগামী সৈনিক শেখকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গড়ে উঠুক ধর্মীয় সম্প্রিতীর মিলন মেলা

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২৩


ধর্মের নামে একি রক্তের খেলা চেতনাহীন উন্মত্ত মঞ্চে
বিবেকের প্রদীপ যেন নিভে যাচ্ছে অদৃশ্য ঘন কুটচালে
শতাব্দীর সঞ্চিত মানবতার দীপ্যমান শিখা
অন্ধকারের আবরণে ঢেকে দিচ্ছে সম্প্রিতীর গৌরব গাথা।

গোপন লালসার দাবানলে পুড়ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় বিএসএফের বর্বরতা: পঞ্চগড় সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২১

আরেকটি নিরীহ প্রাণের বলিদান

আবারও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের সীমান্তে নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আনোয়ার হোসেন নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হওয়ার ঘটনা এলাকাবাসীর মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৭

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

এতো সোজা!
চাইলেই কেউ কোনো দেশ দখল করে নিতে পারে না- তা সে যতই শক্তিধর দেশ হোক। বড়ো, শক্তিশালী রাষ্ট্র হলেই যদি ছোট এবং দুর্বল দেশকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×