
ইচ্ছে করেই আজ বাড়ি থেকে একটু দেরি করে বের হয়েছি । অন্যান্যদিন ৭ টা ২৫ এ বাসা থেকে বের হযে যাই । আজ পৌনে ৮ টায় বের হলাম । রাস্তায় তীব্র জ্যাম । মহাখালী এলাকা দিয়ে যারা প্রতি দিন যাতায়াত করেন তাদেরকে এই জ্যাম সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই । বিশেষ করে তেজগাঁ ফ্লাই ওভার থেকে নামার পর থেকে বিজয় স্মরণী ও তেজগাঁ ইউ র্টান থেকে মহাখালী সিগনাল পর্যন্ত । বেশ ভালো করে পর্যবেক্ষন করে দেখেছি, তীব্র জ্যামের অনেকটাই মানুষের সৃষ্টি । সকাল বেলা ভিআইপিরা জনপথ ধরে যাতায়াত করে তাই তাদের নির্বিঘ্ন যাতায়াতের জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে ট্রাফিক সিগনাল দিয়ে পথ বন্ধ করে রাখা হয় । কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে সাথে সাথে মামলা । হেনস্তা সাথে বোনাস হিসাবে থাকে ।
"গতকাল তথ্য সচিব সাহেব'কে বাধ্যতামূলক ভাবে অবসরে পাঠানো হয়েছে । আলহামদুলিল্লাহ; রাস্তায় একজন ভিআইপি কমেছে । তাই জ্যাম কিছুটা হলেও কম হবে । " যার যেখানে স্বার্থ, সে সেটা নিয়েই চিন্তা করবে । এটাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ।
মহাখালী বাস স্টপের আশেপাশের রাস্তার দু'পাশে সারিবদ্ধ ভাবে পার্ক করে রাখা বিভিন্ন কোম্পানির বাসগুলো রাস্তাটাকে আরো সংকীর্ণ করে ফেলেছে । ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র জ্যাম । দেখার কেউ নেই । ট্রাফিক পুলিশ ব্যস্ত মোটরসাইকেল ধরায় । প্রতিবাদ করতে গেলে বাস শ্রমিকেরা মেরে পিঠের চামড়া তুলে নেবে । তাই কেই কিছু বলে না ।
মহাখালীর জ্যামে আটকে আছি ।
আমার পাশের মোটরসাইকেলে দু'জন ব্যক্তি নিজেদের মধ্যে গল্প করায় ব্যস্ত । আমি কুটনা বুড়ির মতো কান খাড়া করে তাদের কথোপকথোন শুনছি । কথায় মগ্ন দু'জেনর তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নাই । যে লোকটা মোটরসাইকেল চালাচ্ছে, তার পড়নে টিশার্ট, জিন্স । পেছনের জনের শরীরে সাদা,পাঞ্জাবি পাজামা । দু'জনের বয়সই ৪০ থেকে ৪৫ এর কোঠায় । তাদের গল্পর বিষয় রাজনীতি । যেটুকু কানে আসছে তাতে বুঝলাম , তাদের আলোচনার বিষয় আভ্যন্তরীণ কন্দল। মিটিং , মিছিল নতুন কর্মসূচী,পদ, পদবী ।
পেছনের বসা লোকটা কিছু একটা বলে সামনের জনকে সর্তক থাকলে বলায়, সামনের জন সেই কথার প্রতি উত্তরে বলল," যা হবার হবে। গুলি খেলে বলবো, "বিএনপি গুলি করেছে । তাতে দু দিকেই লাভ । " পেছনে বসা লোকটা সে কথা শুনে , মাথা নেড়ে নেড়ে দাত বের করে হাসতে লাগলো । পুরো বিষয়টা দেখে মাথায় খুন চেপে যাচ্ছিলো । ইচ্ছে , করছিলো এদের পুলিশে ধরিয়ে দেই । কিছু সুবিধাভোগী, বাজে কর্মীর জন্য দলের বদনাম হয়। কিন্তু নিজেকে শাস্ত করালাম । কারণ এটাই হচ্ছে আমাদের বর্তমান রাজনীতি । সুবিধা ভোগীরা সুবিধা ভোগ করে কেটে পরবে । চাপে থাকবে প্রকৃত কর্মীরা ।
মহাখালী ফ্লাইওভার এর নিচ দিয়ে কোন আন্ডার পাস নেই । গাড়িগুলোকে ঘুরে আসতে হয় জাহাঙ্গীর গেইট থেকে । ফলে জাহাঙ্গীর গেট থেকে মহাখালী এপাশ ওপাশ দু দিকেই দিনের অধিকাংশ সময় তীব্র জ্যাম লেগে থাকে । জ্যামেই নাকি ট্রাফিকের লাভটা বেশি । বেশি বেশি মামলা করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা যায় । আর এ জন্যই বুঝি , জাহাঙ্গীর গেটের সামনের সিগনালে পেট মোটা এক সার্জেন্টের নেতৃত্বে দীর্ঘ দিন ধরে চলছে মামলা করার মহাউৎসব । আমি খেয়াল করে দেখেছি, তারা এমন ভাবে সিগনাল দেয় ও ছাড়ে, যেন প্রতিবারেই দু একটা মোটরসাইকেল জেব্রা ক্রসিং এর উপর চলে আসে । আর এলেই যাবি কোথায় ? রেডি আছে মামলা । হেনস্তা সাথে থাকবে বোনাস হিসাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




