somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

মায়াবিনী - সাখাওয়াত বাবনে'র ভৌতিক গল্প - ( ২য় পর্ব )

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




তিন

দুটো ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়েছিলাম । ঘুমের টেবলেট খাওয়াটা শিখেছি যূথী ম্যাডামের কাছ থেকে । এতে অবশ্য উপকারের চেয়ে অপকার হয়েছে বেশি । টেবলেট খাওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ঘুমিয়ে পরি । কোন কারণ ছাড়াই আবার মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় । এরপর আর ঘুম আসে না । বাকি রাতটুকু বিছানায় ছটফট করতে করতে কেটে যায় ।

অলস মস্তিস্ক হচ্ছে শয়তানের কারখানা । রাত্রির নির্জনতায় মনের ভেতর নানান কথা,নানান স্মৃতি উকিঝুকি মারতে থাকে। কখনো বসের অন্যায্য ঝাড়ি খাওয়ার কথা মনে করে উত্তেজিত হয়ে উঠি তো আবার কখনো ম্যাডামের মোলায়েম ব্যবহারে রোমাঞ্চিত হয়ে গলে যাই । দৈনন্দিন জীবনে নিজের টুকটাক ভুলগুলো উল্টে পাল্টে দেখি । অফিসের কর্তব্য কর্ম সমাধানের নিত্য নতুন পন্থা নিয়ে চিন্তা করি । আরো কত কি যে ভাবি তার কোন ইয়াত্তা নেই ।

নিরীহ মানুষের রাগ দেখাবার সবচেয়ে উত্তম জায়গা হচ্ছে ,বিছানা । সারাদিনের গ্লানি, যন্ত্রণা,ব্যর্থতার জবাব নিরীহ মানুষ বিছানায় শুয়ে শুয়ে দিতে চায় । কোন কথাটা মোক্ষম সময়ে বলা হয়নি,কোন কাজটা যথাসময়ে করলে পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে চলে আসতো এ সব কিছুর চুলচেরা বিশ্লেষণ চলে মাঝ রাত্রিরে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাবার পর বিছানায় শুয়ে শুয়ে ।

ইদানীং য়ূথী ম্যাডাম আমার চিন্তার মধ্যে ঢুকে পরেন । তবে সেগুলোর বেশির ভাগই সৎ চিন্তা। স্রষ্টার তরফ থেকে নারীরা বিশেষ এক গুন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন । সে গুনটি হচ্ছে, সহজে পুরুষকে মোহগ্রস্ত করে ফেলা । মোহগ্রস্ত পুরুষ মানুষের চিন্তা ভাবনার কোন হাত, পা নেই । চিন্তার সোপানে ভেসে ভেসে তারা কখন কোথায় কোন বিষয় নিয়ে ধ্যানগ্রস্ত হয়ে পরে তা কেউ বলতে পারে না ।

কতক্ষণ ঘুমিয়েছি বলতে পারবো না । অদ্ভুত এক অস্বস্তিতে ঘুম ভেঙ্গে গেছে । শুয়ে থেকেই শুনতে পেলাম, "কারা যেন ঘরের মেঝেতে বসে খুব সন্তর্পণে ফিসফিস করে কথা বলছে ।" বিষয়টা অস্বাভাবিক এবং আতংকিত হবার মতো । কিন্তু আমি আতংকিত হচ্ছি না । শোয়া থেকে উঠে বসে দেখা উচিত কারা ঘরের ভেতর প্রবেশ করেছে । কিন্তু আমার চোখ খুলে তাকাতে ইচ্ছে করছে না । ঘুমের ঘোর এখনো পুরোপুরি কাটেনি তাই হয়তো চিন্তা ভাবনা তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে । হয়তো ভুল শুনছি । চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকে বুঝতে চেষ্টা করলাম আসলেই কোন শব্দ শুনতে পাচ্ছি কিনা । কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বুঝতে পারলাম, "না; ভুল হচ্ছে না । নারী,পুরুষ মিশেল অদ্ভুত কণ্ঠস্বরগুলো নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে শলাপরামর্শে ব্যস্ত। কিন্তু কি বলছে সেটা বোঝা হচ্ছে না । ভাষার ধরনটা ভিন্ন । শব্দের এমন উর্চ্চারণ আগে কখনো শুনিনি । কান খাড়া করে মরা কাঠ হয়ে পরে রইলাম ।

যতদূর মনে পরে ঘুমাবার আগে দরজা বন্ধ করে শুয়েছি । তাই, দরজা খুলে কেউ ঘরের ভেতর প্রবেশ করবে তা এক প্রকার অসম্ভব । চোর, ডাকাত হলে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তারপর ঢুকতে হবে । জানালাটা অবশ্য খোলা । কিন্তু তাতে যে মোটা মোটা শিক লাগানো রয়েছে সেগুলো বিনা শব্দে কারো পক্ষে ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব নয় । ধীরে ধীরে অজানা এক ভয়ে পেয়ে বসলো আমাকে ।

ভয় দূর করতে যুক্তি দিয়ে মুক্তি খোজার চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম । আজই বেতন তুলেছি, প্যান্টের পকেট নগদ ২৫ হাজার টাকা আছে । টাকাটা চুরি হয়ে গেলে বিপদে পড়তে হবে । চাকরীজীবিদের কাছে মাস শেষে বেতনটাই সব । একবার সেটা হাত ছাড়া হয়ে গেলে আর পুষিয়ে উঠা যায় না । পুরো মাস ধার,দেনা করতে করতে ভিখারির মতো অবস্থা হয়ে যায়।

হঠাৎ করে ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করেছে । মনে হচ্ছে ঠাণ্ডায় হাত, পা জমে যাচ্ছে । পায়ের কাছে শরীরে দেবার চাদরটা ভাজ করা আছে । কিন্তু সেটা টেনে নিয়ে শরীরে জড়িয়ে নেবার সাহস পাচ্ছি না । মনে হচ্ছে, আমি সজাগ আছি এটা বুঝতে পারলেই কোন এক অদৃশ্য শক্তি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পরবে। তাই বরফের মতো জমে রইলাম । কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ ? একদিকে তীব্র আতংক অন্য দিকে ঘরের ভেতর কি ঘটছে সেটা দেখার দুর্নিবার কৌতূহল । এ যেন যমে মৃত্যুতে টানাটানি।

এক সময় ভয়কে দূরে সরিয়ে কৌতূহলের জয় হলো । ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালাম । দরজা,জানালার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে হালকা, আবছা আলো এসে ঘরটাকে রহস্যময় করে তুলেছে তবে অস্বাভাবিক কোন কিছু নজরে পড়লো না । একটা বিষয় খেয়াল করলাম আমি চোখ খুলে তাকাবার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ভেতরের কথাবার্তার শব্দ বন্ধ হয়ে গেছে । ফলে চারপাশে হঠাৎ করে একরাশ নীরবতা নেমে এসেছে। মনে হচ্ছে, অনাদি অনন্ত কাল ধরে আমি সে নীরবতার মাঝে বন্দি হয়ে আছি ।

রাতে'র নিজস্ব একটা ভাষা আছে । টুকটাক, ঠুসঠাস,চিনচিন, শিন শিন,ফিসফিস,পাতা ঝরার ঝরঝর, সরীসৃপের বুকে হেটে চলার খসখস নানা শব্দে রাতের নির্জনতা প্রকৃতির সাথে কথা বলে । কিন্তু এখন সে সবের কিছুই শুনা যাচ্ছে না । মাথার উপর ঘুরতে থাকা ফ্যানটা গতিও যেনো স্লো হয়ে গেছে । এমন নির্জনতা জীবনে কোনদিন উপলব্ধি করিনি । যেন,অদৃশ্য কারো ইশারায় বিশ্ব চরাচর স্থির হয়ে গেছে ।

জানি কিছু দেখতে পাবো না তবুও চারপাশে চোখ বুলাতে লাগলাম ।
এখন আর নারী পুরুষের সেই মিশেল কণ্ঠস্বর ও শুনতে পাচ্ছি না । হঠাৎ মনে হলো আমি কোন শব্দই শুনতে পাইনি । সব মনের ভুল । ঘুমের ওষুধের কারণে এমনটা হয়েছে হয়তো । শুধু শুধু ভয় পাচ্ছি । কথাটা মনে হতেই, একটু একটু করে সাহস ফিরে আসতে লাগলো । এতক্ষণ জাপটে ধরে থাকা ভয়টা যেন হুট করে পালিয়ে গেলো । বুকের ভেতর বল ফিরে পেলাম। পায়ের কাছ থেকে চাদরটা টেনে নিয়ে শরীরে জড়িয়ে নিয়ে ঘরের মেঝের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম, কুয়াশার হালকা একটা স্তর ঘরের ঠিক মাঝখানে জমাট বেঁধে ভেসে বেড়াচ্ছে । এ যেন অবিশ্বাস্য এক ব্যাপার । ঘরের ভেতর কুয়াশা আসবে কোথা থেকে ? ভাল করে তাকাতেই দেখতে পেলাম জমাট বাধা কুয়াশার দঙ্গলটা একটু একটু করে মিলিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা ভাবিয়ে তুলল আমায় । দু'চোক কচলে আবার তাকালাম সেদিকে । না ভুল দেখছি না । সত্যিই কুয়াশা । অজানা এক অতংক পেয়ে বসতে শুরু করেছে । প্রচন্ড পানির তেষ্টা পাচ্ছে ।

আরো কিছুটা সময় শুয়ে থেকে উঠে বসে চারপাশে ভালো করে তাকালাম । পরিচিত পরিবেশ । টেবিল,টেবিলের উপর রাখা হাড়ি, পাতিল,আলনা, আলনার উপর এলোমেলো ভাবে ফেলে রাখা ব্যবহৃত জামা,প্যান্টের স্তূপ । সবকিছু স্বাভাবিক । কোথাও অস্বাভাবিক কিছু দৃষ্টিগোচর হলো না । মাথার উপর ফ্যানটা শো শো শব্দ করে ঘুরছে। মনে হলো খুলে পরে যাবে । ভোল্টেজ বেড়ে গেলে ফ্যানের পাখার ঘূর্ণন বেড়ে যায় । দ্রুত ফ্যানটা বন্ধ করা উচিত। কিন্তু বিছানা থেকে নামতে ইচ্ছে করছে না ।

ইদানীং ঘুম নিয়ে মহা যন্ত্রণায় মধ্যে আছি । শুনেছি ইংরেজিতে এর নাকি একটা নামও আছে। ঘুম না হওয়া হচ্ছে ,বড় লোকদের রোগ । গরীব মানুষেরা সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হয় না । কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি গরীব হয়েও এ রোগে আক্রান্ত হয়েছি । রাতে একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আর ঘুম আসতে চায় না । রাতে ঘুম পুরা না হলে সারাদিন শরীর ম্যাজম্যাজ করে । মেজাজ, মর্জি চিরচিরা হয়ে থাকে। এর প্রভাব পরে অফিসের কাজকর্মে। ভালো কথাও তিতা লাগে । বেশ কিছুদিন ধরে সমস্যাটা হচ্ছে। ঘুম না হলে বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে করতে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে এক সময় ঘরের ভেতর পায়চারি করা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। ।

কখনো কখনো জানালার পাশে বসে থেকে রেল লাইনের দিকে তাকিয়ে ঘণ্টার পরপর ঘন্টা পার করে দেই । কু ঝিক ঝিক , কু ঝিক ঝিক করে ট্রেনের আসা যাওয়া দেখি । আকাশের মেঘ দেখি । তারাদের ঝরে পরা দেখি । আবার কখনো কখনো নিজের অজান্তেই রেল লাইনের ধারে ল্যাম্ব পোস্টের নিচে দেখা সেই মেয়েটিকে খুঁজে বেড়াই ।

সেদিনের পর মেয়েটিকে আরো কয়েকবার দেখেছি । সেই একই ভাবে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পরার দৃশ্য । দৃশ্যটা ভয়ংকর বীভৎস হলেও এখন সহ্য হয়ে গেছে । এখন আর ভয় লাগে না, আগের মতো আতংকিত হই না । বিষয়টা ভালো করে তলিয়ে দেখার জন্য বেশ কয়েকবার মেয়েটিকে দেখা যাবার জায়গাটিতে ছুটে গিয়েছি কিন্তু কাউকে খুঁজে পাইনি । মেয়েটি সম্পর্কে কেউ কোন তথ্য দিতে পারেনি । স্টেশন কর্তৃপক্ষ তো মেয়েটির অস্তিত্বই স্বীকার করতে চায় না । যার সঙ্গেই কথা বলেছি, সে, ই এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়েছে যেন আমি পাগলের প্রলাপ বকছি ।

সাধারণত এ ধরনের মিথ বা ঘটনায় দেখা যায়, কেউ একজন পরিস্থিতির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করে । এরপর তার অতৃপ্ত আত্মা প্রেতাত্মা হয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে সবাইকে ভয় দেখায় । কোথাও এমন ঘটনা ঘটলে রাতারাতি সেটা চাউর হতে সময় লাগে না। অল্প কিছুদিনের দেখা যায় সেটা ডাল পালা বিস্তার করে মানুষের মুখে মুখে প্রচার হতে থাকে । অনেকে আবার নিজেকে ঘটনার অংশ বানাবার জন্য, বানিয়ে বানিয়ে ভুত দেখার গল্প ফেদে বসে। ঘটনা স্থলের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চায়ের দোকান, মুদি দোকানে সে সব থাকে আলোচনার মূল বিষয় । কিন্তু মেয়েটি সম্পর্কে রেল স্টেশনের কর্মকর্তা, কর্মচারী কিংবা আশে পাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করেও এমন কিছু জানতে পারলাম না যাতে মেয়েটি মেয়েটি সম্পর্কে একটি ধারণা পেতে পারি ।
মনে হচ্ছে পুরো ঘটনাটা রহস্য হয়েই রয়ে যাবে।

চার

বেশ কিছুদিন হলো বসের সাথে আমার শীতল সম্পর্ক চলছে । এর কারণ অবশ্য যূথী ম্যাডাম । ভদ্র মহিলা দেখতে যেমন সুন্দরী, তেমনি স্মার্ট । নারীর রূপের সঙ্গে যদি তার ধন-দৌলত, ঐশ্বর্য খাপ খেয়ে যায় তাহলে তাকে আর পায় কে । যূথী ম্যাডাম এমনই এক নারী । বাবার একমাত্র মেয়ে । পৈত্তিক সূত্রে বিশাল গ্রুপ কোম্পানির চেয়ারম্যান তিনি । কাজ কর্মে, চলনে বলনে তার মতো করিতকর্মা রূপসী,লাবণ্যময়ী নারী পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আছে কিনা সন্দেহ আছে । বাংলায় একটা কথা আছে,"অতি বড় ঘরনি না পায় ঘর, অতি বড় সুন্দরী না পায় বর"।

যূথী ম্যাডামের ক্ষেত্রেও ঘটেছে তাই । এতো রুপসী, গুনি, ধনী একজন নারী কি করে যে বসের মতো বেটে,খাটো,টাক মাথার লোকটারে বিয়ে করলেন সেটা বুঝে আসে না।

আমার বস লোকটা কোন ভাবেই ম্যাডামের সাথে যায় না । তবুও বিয়ে সাদি করে দিব্যি সংসার করছেন । কোম্পানির সিও হিসাবে চেয়ার গরম করছেন । সবই ভাগ্য । ভাগ্য ছাড়া জগতে কিছুই হয় না । কর্মের সাথে সাথে ভাগ্যের জোড়টাও লাগে । ভাগ্য ছাড়া পদ,পদবী পজিশন কিছুই মেলে না । ভাগ্য না হলে, আমার বসের মতো এক সাথে রাজ্য ও রাজকন্যা সবার কপালে জুটে না ।

আমার মতো চুনো পুঁটিদের আবশ্য এসব নিয়ে ভাবার কথা না । কথায় আছে, আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নিয়ে লাভ নেই । কিন্তু ম্যাডামের কারণেই আমাকে আদার ব্যাপারী হয়েও জাহাজের খবর নিতে হচ্ছে । কোম্পানিতে ম্যাডামের খুব কাছের,শট লিস্টেট যে কজন রয়েছেন তাদের মধ্যে আমার নাম্বার খুব সম্ভব প্রথম দিকে । সে কারণেই যে কোন কাজে সরফরাজ'কে ম্যাডামের লাগেই লাগে । আর এ জিনিসটাই অনেকের চক্ষু শূল হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

লজিস্টিক অফিসার হিসাবে এই কোম্পানিতে কাজ করছিলাম বছর তিনেক আগে তারপর নিজের যোগ্যতা ও সততা দিয়ে এতোটা উপরে উঠে এসেছি । কোম্পানির স্বার্থেই সিও স্যারের পাশাপাশি, চেয়ারম্যান ম্যাডামের সাথেও আমাকে ফাইল পত্র বগল দাবা করে ছুটতে হয় । এটা যদি কারো কাছে ভালো না লাগে তা হলে আমার কিছু করার নেই ।

খাটো, টেকো মাথার মাথার মানুষ সাধারণত ধুরন্ধর প্রকৃতির হয় । আমার বসও এ ব্যাতিক্রম নয় । রাজকন্যাকে ঠিক মতো কট্রোল করতে না পারলেও রাজ্য ঠিক রাখার জন্য সব কিছু সন্দেহের চোখে দেখেন । কোন বিচিত্র কারণে যূথী ম্যাডাম আমাকে একটু বেশিই পছন্দ করেন । কোন ইস্যুটাকে যে বস তিল থেকে তাল বানিয়ে কিক আউট করবেন সেটা বলা যায় না । বসের বিষয়ে এ কারণে সব সময় একটু অতিরিক্ত সর্তক থাকতে হয় । তবে তিনি যতোই ক্ষমতাবান হোন না কেন কখনোই যে যূথী ম্যাডামের উপর দিয়ে কর্তৃত্ব দেখাতে পারবেন না এ কথাটা তিনি ও খুব ভাল করেই জানেন ।

ম্যাডামের আমাকে পছন্দ করাটা সিও স্যার যে পছন্দ করছেন না সেটা তার আচার আচড়নে বেশ পরিস্কার । পরপর দু'বার তিনি আমার বদলি অর্ডার করেছেন । কিন্তু ম্যাডামের হস্তক্ষেপে সেটা বাস্তবায়ন হয়নি ।

এই তো সেদিন এইচআর হেড পাপিয়া আমায় ডেকে নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝিয়ে দিলো, "চাকরী বাচাতে চাইলে ম্যাডামের কাছ থেকে দূরে থাকো । জলে বাস করে কুমিরের সাথে লাগতে যেও না । "

আমিও মুখের উপর জানিয়ে দিয়েছি, "এ ব্যাপারে আমি অপারগ , কিচ্ছু করা্র নাই আমার। কোম্পানির চেয়ারম্যান, সিও ডাকলে আমি যতন তখন যেতে বাধ্য ।" তাই বিষয়টা আমাকে না বলে ওনাদের বললে , সেটাই বেশি ভালো হবে । এর পর পাপিয়া আর কথা বাড়ায়নি নেতিয়ে গেছে । পাছে ম্যাডামকে আমি তার এ কথা বলে দেই । পাপিয়া বেশ ভালো করেই জানে, সেরের উপর সব সময় সোয়া সের থাকে । পাপিয়া যে সিও স্যারের বিশেষ পেয়ারের লোক এ কথাটা অফিসের কারো জানতে বাকি নাই । কিন্তু রহস্যজনক কারণে যূথী ম্যাডাম এ পাপিয়াকে নিয়ে কিছু বলেন না । এ বিষয়টাও আমার চোখ এড়িয়ে যায়নি ।

পাপিয়ার আমাকে দেওয়া ভদ্র হুমকির কথাটা আমি এখনও যূথী ম্যাডামের কানে তুলিনি । তবে দরকার হলে তুলতে কতক্ষন ! কর্পোরেট জীবনে চাকরী বাচাতে চাইলে শুধু কাজ করে গেলে হয় না একটু মাথাও খাটাতে হয় ।

যা বলছিলাম, আমি ঘুমের টেবলেট খাওয়া শিখেছি যূথী ম্যাডামের কাছ থেকে । সেদিন গাজীপুরে একটা ফ্যাক্টরী ভিজিটে যাওয়ার সময় আমাকে সিটে বসে উসখুস করতে দেখে , ম্যাডাম জিজ্ঞাসা করলেন, "কি ব্যাপার সরফরাজ, তুমি এমন ছটফট করছো ক্যান ? আমি ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম , "কিছু না ম্যাডাম , এমনিতেই অস্থির লাগছে ।

তিনি জহুরির মতো কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, "তোমার চোখের নিচে কালি কেন ? রাতে ঘুম হচ্ছে না বুঝি ?" আমি প্রথমে কি বলবো বুঝতে না পারলেও পরে মাথা নেড়ে হ্যা বলতেই ম্যাডাম তার হ্যান্ড ব্যাগে থেকে একপাতা ঘুমের ওষুধ বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, "রাতে খাবার খাওয়ার আধা ঘন্টা পর একটা খেয়ে মিনিট পনেরো হাটাহাটি করে শুয়ে পরবে । দেখবে চমৎকার ঘুম হবে । তবে সপ্তাহে দু'টোর বেশি খাবে না।" ড্রাইভারের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখি সে কান খাড়া করে আমাদের কথা শুনছে ।

আমি কোনদিন ঘুমের ওষুধ চোখে দেখি নাই। ম্যাডামের হাত থেকে ওষুধের পাতাটা হাতে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে রইলাম । ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছি , ঘুমের ওষুধ খেলে নাকি মানুষ মরে যায়। আমাকে ওষুধের পাতার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ম্যাডাম জিজ্ঞাসা করলেন , "কি হলো ? এমন বোকার মতো তাকিয়ে আছো কেন ? ওটা তোমার ব্যাগে রাখো । "

ম্যাডামের কথায় আমি যেন বাস্তবে ফিরে এলাম । ওষুধের পাতাটা ব্যাগের ভেতর রাখতে রাখতে আমি আপন মনেই বলে উঠলাম, "এটা খেলে যদি মরে যাই ?" কিন্তু ম্যাডাম কথাটা শুনে ফেললেন । ওনার ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত হয়ে গেল। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলেন আমি আসলে কি বোঝাতে চাইছি। তারপর হো হো করে হেসে উঠে বললেন,"এটা খেলে মরবে না। এটা তোমার মাসল রিলাক্স করবে । ফলে ঘুম ভালো হবে । মরণ নিয়ে এতো ভেবো না । মরণ যদি ভাগ্যে লেখা থাকে তাহলে পানি খেয়েও মরে যেতে পারো।"

আমি ভেবে দেখলাম ম্যাডামের কথাই সত্য । পানি খেয়ে মরণ তো আমি নিজের চোখে দেখেছি। তখন আমি ছোট । মামার বাসায় থাকি। ফাই ফরমাশ খাটি। বাবার মৃত্যুর পর ছোট মামা আমাকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন মানুষ করবেন বলে । কিন্তু মামীর অতিরিক্ত আদরে অল্প ক দিনের মধ্যে চাকরে পরিনত হলাম । আমাকে স্কুলে ভর্তি না করে মামী আমাকে তার ছেলে,মেয়েদের স্কুলের ব্যাগ আনা নেওয়ার কাজে নিয়োগ করলেন । মামার বড় মেয়ে মাইশা আর ছোট ছেলে মাহী'র ড্রেস, জুতা পরে স্কুলে যায় । আমি কাধে দুটো ব্যাগ নিয়ে জোড়া তালি দেওয়া শার্ট, প্যান্ট পরে তাদের পেছন পেছন হাটি । তাদের ফেলে দেওয়া, ছুড়ে দেওয়া টিফিন চেটেপুটে খাই । স্কুল ছুটি না হওয়ার পর্যন্ত স্কুলের সামনের লাইব্রেরীতে বসে বসে বই পড়ার চেষ্টা করি ।

সেই মাইশার এক বন্ধুর বাবা পানি পান করতে গিয়ে গলায় আটকে মরে গিয়েছিলেন। তার জেয়াফতের খানা আমি খায়েছি। আহা! তেমন খাবার বহুদিন
খাইনি ।

বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম । প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ওয়াশ রুমে যেতে হবে । মানুষ যে ক্যান প্রস্রাব পায়খানার সাথে প্রকৃতিকে টেনে আনে বুঝে আসে না । লুঙ্গি ঠিকঠাক করে টলতে টলতে দরজা খুলে দিলাম । হালকা চাদের আলোর চারপাশ ক্যামন ঘোলাটে হয়ে আছে। অনেকটা শীতের শুরুতে পাতলা কুয়াশার জাল যেভাবে প্রকৃতিকে জড়িয়ে রাখে অনেকটা সেরকম । বাতাস নেই । দম বন্ধ করা গুমট পরিবেশ ।

পাশের বাড়ির সীমানা প্রাচীর ঘেরা নারকেল গাছগুলো নিশ্চল নিথর হয়ে দাড়িয়ে আছে । গাছগুলোর ছায়া এসে পরেছে ছাদের খোলা অংশে । দেখে মনে হচ্ছে, কোন নারী এলো কেশে, কুজো হয়ে দাড়িয়ে আছে । কোন কারণ ছাড়াই অজানা এক ভয়ে শরীর,মন আচানক ছমছম করে উঠল । ভয়াল একটা ঠান্ডা স্রোত শিরদাড়া বেয়ে নেমে গেল। মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে কালচে মেঘের দঙ্গল । মনে হচ্ছে, হঠাৎ করে ভূতুরে কোন নগরীতে এসে উপস্থিত হয়েছি ।

মাথার ভেতরটা এখনো ঝিমঝিম করছে । মানসিক চাপ, অবসাদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে, ভালো ঘুমের আশায় মানুষ ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকে । কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এগুলোর কোনটাই কাজ করছে না । উল্টো হাত,পা ব্যথা করছে। মাথার ভেতরটা ঝিমঝিম করে । না ঘুমের ওষুধ আর খাওয়া যাবে না । বার কয়েক মাথা ঝাড়া দিয়ে ছাদে এসে দাঁড়াতেই বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো । চমকে উঠে মা গো অস্ফুট শব্দ করে ঘরের ভেতর ঢুকে গেলাম । শরীরটা ঝিমঝিম করছে । বুকের ভেতর থেকে আত্মাটা যেন খাঁচা ছেড়ে বের হয়ে আসবে । বন্ধ দরজার কপাট ধরে থরথর করে কাঁপতে লাগলাম । ঘোলাটে চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি , কবুতরের খাঁচার পাশের দেয়ালে পা ঝুলিয়ে একটা মেয়ে বসে আছে । ছাদে মেয়ে আসবে কোথা থেকে ।? হায় খোদা ! এসব কি দেখছি । বাড়িওয়ালার দুটো মেয়ে আছে শুনেছি । তাদের একজন থাকে হোস্টেলে অন্যজন ছোট ক্লাস ফাইভে পড়ে। এতো রাতে তাদের ছাদে আসার কথা নয়, তাহলে ? ছাদে ওটা কে ? নির্ঘাত অশরীরী কিছু হবে । বন্ধ দরজার পাল্লা ধরে ধরে রীতিমতো ঠক ঠক করে কাপতে লাগলাম ।

ঠিক এমন সময় ধুপ করে ছাদে কিছু একটা লাফিয়ে পরার শব্দ হলো । সেই সঙ্গে মৃদু চাপা হাসির শব্দ ভেসে এলো । মনে হলো কেউ মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসছে । হাসির শব্দটা এতো স্পষ্ট যে ভুল হবার কোন অবকাশ নে্‌ই । তীব্র আতংকে জমে গিয়ে দরজার সাথে মিশে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে মনে সুরা কেরাত আওড়াতে চেষ্টা করলাম কিন্তু কোন লাভ হলো না । সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ।

সুরা পড়তে গিয়ে ভুল করছি । প্রথম লাইন পড়ার পর ২য় লাইন মনে পড়ছে না । হাসির শব্দটা মিলিয়ে যেতেই হাটার শব্দ শুনতে পেলাম। মেয়েটি যেখানে বসে ছিলো সেখান হতে খসখস শব্দ করে হাটতে হাটতে কেউ দরজার কাছে এসে দাড়িয়ে পড়লো। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমি চট করে দরজা থেকে সড়ে এসে বিছানায় বসে পড়লাম । রক্ত মাংসের দেহের ভেতর হৃদপিণ্ডটা তখন ট্রেনের গতিতে দৌড়চ্ছে । পুরো শরীর ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছো । বুঝতে পারছি না এরপর কি হবে !
চলবে ...............
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিএনপি তথা তারেক রহমান কেন বলছেন না......

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ২:৩৮



জামাত, গৃহপালিত জাতীয়পার্টি, পতিত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত আম্লিগ এবং বিএনপি এই চারটি রাজনৈতিক দলই বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল। অন্য যে আরো ৩০/৪০ দল আছে সেগুলো বলতে গেলে প্যাডে পোস্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রেম-বিবাহ সমাচার !:#P

লিখেছেন আরোগ্য, ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৩০




১. আমার এক আত্মীয় ভাই প্রেম বিবাহ করে। ওগো জোড়া পুরা "রাব্ব নে বানাদি জোড়ি", মাশা-আল্লাহ! ভাইও গুন্ডা, ভাবির বাপও গুন্ডা। ভাইয়ের পরিবার বিয়াতে রাজি না দেইখা ইতিহাসের পাতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ৬০ টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম এসেছিলেন, আজ ৪৫টি কাচ্চি রেস্টুরেন্টের মালিক[/sb

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৫২





শাহাবুদ্দীন তালুকদার ২০০১ সালে বাবার দেওয়া ৬০ টাকা নিয়ে বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম এসেছিলেন কাজের সন্ধানে। তখন বয়স মাত্র ১৫/১৬ বছর।সেই শাহাবুদ্দীন তালুকদার এখন সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগে প্রসিদ্ধ ৪৫টি কাচ্চি বিরিয়ানির... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকে ধুয়ে নিজেদের গা মুছছে এনসিপি!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:২৫


আহ্, কী দিনকাল পড়লো! রাজনৈতিক দলগুলো যেন একেকটা কমেডি থিয়েটার খুলে বসেছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে 'জাতীয় নাগরিক পার্টি' (এনসিপি) নামের নতুন দলটির কাণ্ডকারখানা দেখলে মনে হয়, তারা যেন আমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

১২.৫ লিটার সিলিন্ডারে ৮লিটার গ্যাস, বাকিটা বাতাস আর পানি

লিখেছেন অপলক , ১৪ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ২:৫১



একটা ম্যাজিক স্টিক দরকার। আমার তো নেই। তাই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে লিখতে বসলাম। টপিকস হল: দেশে কি আছে , কি পাচ্ছি, কতটা ফাঁকিবাজি।



দেশে শাসক বদলেছে, শাসন ব্যবস্থা বদলায়নি:
---... ...বাকিটুকু পড়ুন

×