রক্ত বেঁচে কেউ ভাত খায়না কিন্তু রক্ত বেচে অনেকে নেশার দ্রব্য কিনে খায় ।
আ্মার রক্তের গ্রুপ O+
আমি যখন স্বেচ্ছায় রক্ত দান শুরু করেছিলাম তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। হাতে পায়ে লম্বা কিন্তু বয়সে ছোট হওয়ায় বয়স বাড়িয়ে,উঁচু ক্লাসের কথা বলে রক্ত দিতাম। এতে আমার কখনো কোন সমস্যা হয়নি। তবে কারো ওজন ১২০ পাউন্ডের নিচে হলে রক্ত দেওয়া ঠিক নয়, তাতে সাময়িক সমস্যা হতে পারে ।
বড় ভাইয়ের হাত ধরে ঢাকা মুক্তধারা লিও ক্লাবের মেম্বার ছিলাম,সেই সূত্র ধরে রেড ক্রিসেন্ট ও সন্ধানীতে স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়া শুরু। তখন রক্ত দিয়ে পিন সংগ্রহে রাখতাম। রক্ত দেবার পর, আপেল,কোক খেতে দিতো। সেগুলো খেতে লজ্জা লজ্জা লাগলেও মজা করে খেতাম ।
বিটিভি'তে "মুমূর্ষু রোগীকে বাচাতে রক্ত চাই" বিজ্ঞাপন দেখে অনেকবার রক্ত দিতে এগিয়ে গেছি। অচেনা, অজানা একজন মানুষকে রক্ত দেবার পর প্রতিবার যে, অনুভূতি হতো তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। জীবন বাঁচাবার একমাত্র মালিক,"আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা" কিন্তু তাতে শরীক হওয়ার আনন্দই অন্যরকম।
গতকাল কোয়ান্টাম থেকে ২৫ বার রক্ত দানের জন্য তাদের গোল্ডেন ক্লাবের মেম্বার করে নিলো। আসুন "সবাই রক্ত দেই,জীবন বাচাই।"
রক্তদানের উপকারীতা : রক্ত বেঁচে কেউ ভাত খায়না কিন্তু রক্ত বেচে অনেকে নেশার দ্রব্য কিনে খায় । ঢাকা মেডিকেল কিংবা মিডফোর্ড হাসপাতালে গেলে এদের দেখা খুব সহজেই পাবেন । তাই কোন অবস্থাতেই কেনা শরীরে রক্ত গ্রহন করা উচিত নয় । দেশের মানুষের কল্যাণে আমাদের সকলের নিয়মিত রক্তদান করা উচিত । একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ,সুস্থ ব্যক্তি ৬০ বছর পর্যন্ত নিয়মিত রক্ত দিতে পারে । চার মাস পর পর শরীরে রক্তের পরিবর্তন ঘটে । এখানে জেনে রাখা ভলো যে, নিয়মিত রক্ত দানে কখনো, কারো কোন প্রকার সমস্যা হয় না । উল্টো নিয়মিত রক্ত দানে শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে, রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না । ফলে বিভিন্ন রক্ত বাহিত রোগ থেকে বেচে থাকা যায় ।
রক্ত বাহিত রোগ : প্রাণী দেহে নানা কারণে বিভিন্ন রক্তবাহিত রোগ বাসা বাধতে পারে যেমন, থ্যালাসেমিয়া, হেপাটাইটিস বি বা সি, জন্ডিস, এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি । তাই রক্ত দেওয়ার আগে অবশ্যই পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত । তা না হলে রক্ত গ্রহিতা সেই সব রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরন করতে পারে । এ ছাড়াও কারো ডায়াবেটিস, চর্মরোগ, হৃদ্রোগ,টাইফয়েড,বাতজ্বর থাকলেও রক্ত দেওয়া উচিত নয়।
থ্যালাসেমিয়া : রক্ত বাহিত রোগগুলোর মধ্যে সব চেয়ে মারাত্মক হচ্ছে , থ্যালাসেমিয়া । কেউ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে, তার শরীরে রক্ত উৎপাদন হয় না । ফলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিদিষ্ট দিন পর পর নিয়মিত নিজ গ্রুপের রক্ত গ্রহন করতে হয় । অন্যথায় মৃত্যু অনিবার্য । সে কারণে বিয়ের আগে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করে নিতে হবে । কারণ পিতা মাতা থেকে এ রোগ সন্তানের দেহে বাসা বাধে ।
থ্যালাসেমিয়া লক্ষণ : থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে তার লক্ষণ হচ্ছে, ক্লান্তি, অবসাদ, শ্বাসকষ্ট, ফ্যাকাশে ত্বক ইত্যাদি। শরীরের রক্ত অধিক হারে ভেঙে যায় বলে জন্ডিস হয়ে ত্বক হলুদ হয়ে যায়। প্রস্রাবও হলুদ হতে পারে।
উপসংহার : বাংলাদেশে রেড ক্রিসেন্টের হাত ধরে স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে স্বেচ্ছায় রক্ত সংগ্রহের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে । তাদের সকলেরই নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে । মানবিক কথা বলা হলেও অনেক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক দিকটাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে । এ ব্যাপারে সর্তক হওয়া উচিত । সরকারের এই দিকটাতে আরো কড়া নজর রাখা উচিত ।
রক্ত দানের পর সারা বিশ্বেই রক্ত দাতাতে আধা ঘণ্টা রেস্টে রেখে আপেল, জুসসহ নানা পুষ্টিকর খাবার খেতে দেওয়া হয় । কিন্তু বাংলাদেশে এ ব্যাপারটা ইদানীং উপেক্ষিত হচ্ছে, ফলে রক্তদাতা পর্যাপ্ত রেস্ট ও খাবার না পেলে মাথা ঘুরে পরে গিয়ে আহত হতে পারেন । উপকার করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি কিছুতেই কাম্য নয় । খালি পেটে কিংবা একেবারে ভরা পেটে রক্ত দেওয়া উচিত নয় । মানবতার কল্যাণে আমরা সবাই স্বেচ্চায় রক্ত দান করতে চাই কিন্তু আমার রক্ত বিক্রি করে কেউ ধনী হোক সেটা কখনোই চাই না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩৭