তিনি একজন সেনা প্রধান ছিলেন । যথেষ্ট যোগ্যতা, মেধা ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে সে পদটি অর্জন করেছিলেন । কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতা দখলের পালাবদল, সুযোগ , লিপ্সা ও নতুন মেরু করনের জন্য রাস্ট্রপতির পদটি দখল করে বসে ছিলেন । অভ্যন্তরীণ বেহাল অবস্থা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রাজনৈতিক দমন পীড়নের কারণে সাধারণ জনগণের এক অংশ তাই তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন । হ্যাঁ, ঠিক ই ধরেছেন, আমি পাকিস্তানের সাবেক সফল সেনা প্রধান ও রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশাররফের কথা বলেছি । পারভেজ মোশাররফ পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফকে অস্ত্রের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করে ১৯৯৯ সালের ১২ই অক্টোবর তারিখে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেন। নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার ও পশ্চিমা প্রভুদের গ্রীন সিগনাল পাবার পরই তিনি ২০০১ সালের ২০শে জুন তারিখে রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেন।
একটি গণতান্ত্রিক দেশে হুট করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখন করা সহজ কর্ম নয় । বুকের পাটা থাকতে হয় । শরীরের পুরোটাই কলিজায় ভরপুর হতে হয় । সেই সঙে দেশও প্রেম থাকতে হয় । শুধুমাত্র লোভ লালসার জন্য রাস্ট্র ক্ষমতা দখল করে কখনো সফল হওয়া যায় না । কারণ ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীন ও বিদেশি শক্রুরা সক্রিয় হয়ে উঠে । ষড়যন্ত্র দানা বেধে উঠতে থাকে । পদে পদে শক্ররা জাল বিছিয়ে অপেক্ষা করে । খুব কাছের মানুষের ষড়যন্ত্রের কারণে খুন হবার সম্ভাবনা থাকে । কিন্তু পারভেজ মোশারফের ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি , আমেরিকার ও তার মিত্রদের সন্ত্রাস বিরোধী হামলার নামে অন্যায় ভাবে ইরাক ও আফগানিস্তানে হামলার কারণে । কথায় আছে সুযোগ সব সময় আসে না , মাঝে মাঝে আসে । মোশারফ সেই সুযোগটি পূর্ণ কাজে লাগিয়েছিলেন ।
অন্যায় একটি যুদ্ধে আমেরিকাকে সমর্থন করে মোশারফ সাহেব পাকিস্তানের ডুবতে থাকা অর্থনীতিকে বাঁচিয়েছিলেন ঠিকই,কিন্তু নিজে ডুবে গিয়েছিলেন , অভিশাপের অতলে । আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জজ বুশ ও টনি ব্লেয়ার এই দুই খুনি মিলে মধ্যপ্রাচ্যে লাখ লাখ অসহায় মানুষকে হত্যা করেছিলো । সেই দায় ভার মোশারফেরও ছিলো । ক্ষমতায় টিকে থাকার মোহে আমেরিকাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন, এশিয়ার সবচাইতে শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট । রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বলে , তিনি পাকিস্তানের চির শক্র ভারতের সাথেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন । আর এটিই পাকিস্তানের ডুবতে থাকা অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছিলো ।
কিন্তু কথায় আছে, সাদা চামড়ার মানুষ কখনো কালো চামড়ার মানুষকে আপন ভাবে না । স্বার্থের কারণে বুকে টেনে নিলেও কার্য হাসিলের পরেই ছুড়ে ফেলে দেয় । মোশাররফের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি । দেশ প্রেমের কথা ভুলে গিয়ে পারভেশ মোশাররফ নিজের অজান্তেই আমেরিকার হাতের পুতুল হয়ে গিয়েছিলেন । আমেরিকাও তাই তাদের কার্য হাসিলের পর মোশাররফ সাহেবকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলো । পরিণতিতে দেশ ত্যাগ । নির্বাসন জীবন। এবং শেষ পর্যন্ত দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু মরণ । এদিক দিয়ে আমাদের এরশাদ সাহেব ছিলেন ভাগ্যবান । ক্ষমতা এবং জনগনের ভালবাসা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত পেয়েছিলেন ।
এতো কিছুর পরেও পারভেজ মোশাররফের শাসন পাকিস্তানের অর্থনৈতিক মুক্তি এসেছিলো । তিনি দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক দলীয় আবর্জনা দূর করেছিলেন। পাকিস্তানের জনগণ সে ফল ভোগ করলেও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তিনি তা ভোগ করতে পারেননি । সত্যি বলতে , ক্ষমতাই এমন, ক্ষমতায় থাকলে সেটা ভোগ করা যায় না । ক্ষমতার বাহিরে গেলেই বুঝা যায় , ক্ষমতা আসলে মোহ ছাড়া আর কিছুই না । কোন সন্দেহ নেই , মোশারফ ছিলেন একজন দেশ ভক্ত, দেশ প্রেমিক মানুষ । দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলেও হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেননি । ইউরোপ, আমেরিকায় বাড়ি, গাড়ি, নারী করেননি । কিন্তু তবুও তার মৃত্যু হয়েছে, কি করুণ অবস্থায় । একজন দেশ প্রেমিকের নির্বাসনে মৃত্যু সত্যিই কষ্টের । এমন পরিণতি যেন কারো না হয় ।
ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয় হিরো থেকে জিরো হতে সময় লাগে না পক্ষান্তরে কর্মই চিরস্থায়ী কর্মই মানুষকে অমর করে। এটা ভুলে গেলেই সমস্যা । গতকাল তিনি পরকালের পথে যাত্রা করেছেন ..... ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন । তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৪