
নোয়াখালীর জেলা শহরে মা,মেয়েকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে এক যুবক । জনতার হাতে ধরা পরার পর সে পুলিশের কাছে বক্তব্য দিয়েছে, সে ওমানে থাকতে ওই ভদ্রমহিলা অর্থাৎ মায়ের সাথে তার পরকীয়া ছিলো । মহিলা নাকি তাকে ব্যবসা করার জন্য টাকা , থাকার জন্য ফ্লাট দিতে চেয়েছিল । এখন না দেওয়ায় সে খুন করেছে । নিউজটা দেখার পর থেকে স্থির থাকতে পারছি না । মেজাজটা চিরচিরা হয়ে গেছে।
বিশেষ করে নিউজটা যে ভাবে প্রচার করা হচ্ছে তাতে সব দায় গিয়ে পরছে নিহত ওই মহিলার উপর । হত্যাকান্ডের শিকার হলেন আবার অসতি বলে দুর্নামের ভাগিদার ও হলেন ।
আমাদের সমাজে,নারী- পুরুষ ঘটিত বিষয়গুলো হট কেকের মতো খুব যায় । যে কোন অপকর্মের পর নারীর চরিত্রের সাথে জড়িয়ে একটা ঘটনা বলে দিলেই হলো । মুহুর্তে মূল ঘটনা থেকে সকলের নজর সড়ে যায় । সেটা যদি হয় , নারী পুরুষ ঘটিত কোন ঘটনা। তাহলে তো আর কথাই নেই । সবাই বাকা চোখে তাকিয়ে ভিকটিম নারীর দিকে । মনে মনে শতবার বলে, "মরছে ভালো হইছে । এমন মাগীর মরাই উচিত । " হাসপাতালের মর্গে যখন মহিলার শবচ্ছেদ হচ্ছে আমরা তখন তার চরিত্রের ব্যবচ্ছেদ করছি । কি চমৎকার মানবতা আমাদের, তাই না?
বছর দু'য়েক আগে ধানমন্ডিতে ফ্লাটে একা বসবাসকারী ষাট ঊর্ধ্ব এক কলেজ শিক্ষিকা কাজের লোকের হাতে নিহত হন । ধরা পরার পর সেই খুনি অকপটে বলে বেড়াচ্ছিল , ওই শিক্ষিকা নাকি তাকে যৌন হয়রানি করতে । যৌন নির্যাতন থেকে বাচার জন্য সে খুন করেছে । কুচভি ???
সে সময় ঘটনাটি মিডিয়াগুলোতে খুব প্রচার করেছিলো। ওই শিক্ষিকার আত্মীয়স্বজনকে হয়তো ওই নারীর চরিত্রের জন্য এখনও কথা শুনতে হচ্ছে । আমরা এতোটাই নিকৃষ্ট চরিত্রের মানুষ হয়ে গেছি যে, ঝগড়া লাগলে আপন বোনকেও বেশ্যা বলতে দেরি করি না । ছি .।
নোয়াখালির ঘটনায় খুনি সত্য না মিথ্যা বলছে সেটা প্রমাণ হবার আগেই খুনির বক্তব্য প্রচার করে ভিকটিম নারীর চরিত্রে আরেক দফা কলঙ্ক লেপন করে দেওয়া হলো। সাধারণত অপকর্ম করে ধরা পরার পর ভিগটিম নারী হলে খুনিরা নিজেকে বাঁচাবার জন্য খুনিরা খুব সহজেই নারীর চরিত্র নিয়ে নানা বক্তব্য দিয়ে নিজের অপরাধ হালকা করার এই প্রবণতা দেখা যায় । নোয়াখালীর ঘটনাটিও আমার কাছে তেমন মনে হয়েছে ।
যেহেতু মা,মেয়ে একা বাড়িতে থাকতো তাদের সামাজিক অবস্থা ভালো ছিলো তাই তাদের বাড়ি, সম্পদ দখল কিংবা সামান্য পরিচয়ের সূত্র ধরে বাড়িতে প্রবেশ করে মা একা বাড়িতে আছে বুঝতে পেরে ডাকাতির উদ্দেশ্যে এমনটা যে করে নাই তা ওই খুনিই বলতে পারবে । এ তাকে রিমান্ডে নিয়ে নিশ্চিত শতে হবে । নিশ্চিত না হয়ে কোন মহিলা সম্পর্কে খুনির এমন বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশ করা ঠিক হয়নি । খুনের অনেক মটিভ থাকতে পারে । তাই চট করে কিছু বলে দেওয়া বা প্রকাশ করা একেবারে অনুচিত । এর ফলে নোয়াখালীতে সবাই মা, মেয়ে সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করছে । ওই নারী বেচে থাকলে হয়তো তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করতেন । খুনও হলেন আবার অপবাদ ও ঝুটলো কপালে ।
আমাদের এই মেকি সমাজে নারীদের চরিত্রে খুব সহজেই কলঙ্কের দাগ দিয়ে দেওয়া যায় । কোন নারী বা ব্যক্তি সম্পর্কে নিউজ প্রচার ও প্রকাশে দেশের আইন আরো কঠোর হওয়া উচিত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ২:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



