somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

ভানু সিংহ বাবু ( আধি গল্প )

০১ লা আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগামী পুজো সংখ্যার জন্য গভীর মনোযোগ দিয়ে একটি পদ্য লিখছিল নিখিলেশ । লিখছিলো মানে, লেখার চেষ্টা করছিলো আর কি । অনেক ধরে বেঁধে "ভোরের কুসুম" দৈনিকের সম্পাদক মুকুন্দ বাবুকে রাজি করানো গেছে । উনি কথা দিয়েছেন, লেখা ভালো হলে আসছে পুজো সংখ্যায় ছাপবেন । পুজো সংখ্যা মানে হুলস্থুল ব্যাপার ৷ নামিদামি লেখক,কবিদের ভীড়ে টুশ করে বসে পরতে পারলেই কেল্লা ফতে। সাত জন্মের কবি জীবন সার্থক হয়ে যাবে ৷ সেই থেকে নিখিলেশ পদ্য রচনায় ব্যস্ত। দিনরাত লিখছে তো ছিঁড়ছে, ছিড়ছে তো লিখছে । এই চলছে....

কবিতার পঙক্তিগুলোও যেন সব হয়েছে একেবারে পাজির হাত,পা ঝারা। এমনিতে বাসের জানালায়, বাজারের মোড়ে, রেশনের লাইনে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথার ভেতর এমন ভাবে কিলবিল কিলবিল করতে থাকে যে মনে হয় কোনভাবে লিখে ফেলতে পারলেই সাহিত্যে নোবেলটা জুটে যাবে ললাটে।

অথচ যখন ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হবার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তখন বদমাশগুলো দলবেধে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না। হপ্তাখানেক ধরে কত রকমের কসরত, কত রকমের আয়োজন চলছে কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। কিচ্ছু হচ্ছে না। দু'টো, তিনটে লাইনের বেশি মাথায় আসছে না ।

এদিকে পল্টু পাড়ায় রটিয়ে দিয়েছে, আসছে পুজো সংখ্যায় তরুণ,নব্য কবি নিখিলেশ মুখার্জীর লেখা ছাপা হবে। ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে । পথে ঘাটে যার সঙ্গেই দেখা হচ্ছে,সেই আগ বাড়িয়ে এসে জিজ্ঞাসা করছে, কি হে কবি, লেখা ছাপা হচ্ছে তো? দেখো ভাই,লিখেটিকে বিখ্যাত হয়ে গেলে আমাদের যেন আবার ভুলে যেও না। এই সেদিন মুখার্জী বাড়ির বড় কর্তা নগেন খুড়ো ডেকে নিয়ে বললেন, দেখো বাপু তুমি লেখালেখি করছো শুনে আমি বেশ খুশি হয়েছি । বংশে দু একটা কবি সাহিত্যিক থাকা ভালো । তবে খেয়াল রেখো সাহিত্যে নোবেলটা যেন কিছুতেই চীনারা নিতে না পারে । চিং, ব্যাঙ, চুং কি সব সাপ,ব্যাঙ লিখে পুরোস্কারটা নিয়ে যায় । সহ্য হয় না আমার । দোয়া করছি, রবি বাবু'র পরে তুমি আমাদের দেশের বংশের মুখ উজ্জল করো । ইত্যাদি ইত্যাদি, আরো কত কি.....

রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে, ঘরের দরজা বন্ধ করে কাগজ কলম নিয়ে, চায়ের ফ্লাক্সে আদা চা নিয়ে ঘরের ইলেকট্রিক বাতি থাকা স্বত্বেও গোটা কয়েক মোম নিয়ে আজ বেশ প্রস্তুতি নিয়ে বসেছে নিখিলেশ। অবস্থা এমন যে, যা হোক একটা হেস্তনেস্ত আজ করেই ফেলবে৷

কবে কোথায় যেনো পড়েছিলো, গভীর রাত্রিরে মোমের কাঁপা কাঁপা আলোয় চার দেয়ালের অভ্যন্তরে যে ভৌতিক আবহ তৈরি করে তা নাকি কাব্য লেখার পক্ষে অনুকূল। টেবিলের সামনের জানালা খুলে, ঘরের বাতি নিভিয়ে দিয়ে মোমের আলো জ্বেলে নিখিলেশ বেশ ঝাকিয়ে বসলো,পৃথিবীর সবচাইতে বিখ্যাত কাব্যটি লিখতে ৷ ঘড়ির কাটা তখন টিক টিক করে রাত্রি বারোটা বলে জানান দিচ্ছে।

যেহেতু "পুজো সংখ্যা"; সেহেতু প্রথম চলল মা দূর্গাকে মলম লাগাবার কসরত। ম্যালা ভেবে, ম্যালা আবেগে গদগদ হয়ে মাকে নিয়ে খসখস করে লিখে ফেললো চারটি লাইন .....

"মাগো, জগত জননী / ক্ষমা করো মোরে /
অকূলে আশ্রয় দাত্রী / অভাগা সন্তান / তোমায় চিনিনি...
ভুল ক্ষমে যদি পদতলে দাও ঠাই /
চিতার আগুনে তবে কোন ভয় নাই/
জননী জননী / জন্ম দিয়েছ তাই / হয়েছি ঋণী ......."

ঋণী লেখার পরেই কলমের শিষ গেলো খসে। হায় হায়! এমনটাও কখন হয়৷ ? তবে, প্রস্তুতি নেওয়াই ছিলো, ছুড়ে ফেলে দিয়ে ভাঙ্গা কলম। টেবিলের ড্রয়ার থেকে নতুন কলম বের করে বিজয়ের হাসি হেসে আবার সে লিখতে শুরু করলো।

কিন্তু লিখবে কি? মাথায় যে কিচ্ছু আসছে না । একটা শব্দ ও না।

লিখতে গেলেই মনে হচ্ছে,কেউ তার কলম টেনে ধরছে। আরো ঘন্টাখানেক কসরতের পরেও যখন কিছু হলো না । তখন মাথা ভেতরটা দপদপ করে লাফাতে লাগলো। কাগজ কলম জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিছানায় গিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে পরলো । মিনিট পাচেক পরে আবার উঠে কিছুক্ষন ঘরে পায়েচারি করে । আবার লিখতে বসলো । কিন্তু না হে, না, ঈশ্বর যা চান না, তা যে কিছুতেই হয় না ।

আরো ঘন্টাখানেক বসে থেকে চায়ের ফ্লাক্সের অর্ধেকটার বেশি শেষ করার পরে নিখিলেশ বুঝল , মা আজ তার উপর প্রসন্ন নন । তাই উপরের লাইন কটা লেখার পর আর কিছু মাথায় আসছে না । মা নিশ্চয়ই তাকে অন্যকোন বিষয় নিয়ে লিখতে ইঙ্গিত করছেন ।

অন্য বিষয়ের কথা ভাবতেই মনে এলো হালদারের বাড়ির ঝি মালতীর কথা । আহা! কি রূপ, কি গুন তার। এমন মেয়ে সাত জন্মে একটা জন্মে । মালতির কথা ভাবেতেই বুকের বাম দিকটা ক্যামন লাফাতে লাগলো । আবেগে, শরমে নিখিলেশের মনটা গদগদ হয়ে উঠলো । প্রেম ...... হ্যা, প্রেমই হতে পারে পুজো সংখ্যার সবচেয় আকৃষনিয় বিষয় ...........

কপালের ঘাম মুছে । নতুন কাগজে টেনে নিজের ভেতরের কবি কবি ভাবটিকে পুনরায় জাগ্রত করে, মৃদুমন্দ হাওয়ায় খোলা জানালা দিয়ে দূর গগনের রাশি রাশি মেঘের ভেলায় দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাসিহাসি মুখ করে খসখস করে সে লিখে ফেলল-

মালতী ভগবতী, সরস্বতী, বিদ্যাবতী
মত্তের দেবী প্রাণ প্রিয় দুর্গেশনন্দিনী .....

গেল ... গেল ... গেল এই যা , আবার কলম আটকে গেলো ।

দুর্গেশনন্দিনীর পরের লাইন আর মাথায় আসছে না ............

না ; না এই ভাবে হবে না । কিছুতেই না । নিখিলেশ চিৎকার করে উঠলো ।
নিখিলেশের চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে মা জিজ্ঞাসা করলেন, হারে নিখিল, কি হলো রে ...., কি হলো ? রাত বিরাতে চিৎকার করছিস ক্যান রে বাপ ধন ?

নিজেকে সামলে নিয়ে দরজার সামনে এগিয়ে গিয়ে নিখিলেশ বলল, কিচ্ছু হয়নি মা । তুমি ঘুমোও ।

দিন রাত কি সব ছাইপাশ লিখছিস , তুই ই জানিস । শেষমেশ পাগল টাগল না হয়ে যাস । দূর্গা ..... দূর্গা ... মাগো রক্ষা করো ।

মাথাটা বার কয়েক ঝাকিয়ে। ঘরের ভেতর বার কয়েক চক্কর কেটে আবার এসে চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে মালতীর গোলগাল মুখটাকে মানস পটে ভাসিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো।

কিন্তু মালতি কই ? এতো চেনা এতো জানা মালতীও যেন হারিয়ে গেছে তিমির অন্ধকারে । কিছুতেই মালতীর মুখটা মনে করতে পারছে না । যতবার চোখ বন্ধ করে মালতীকে দেখার চেষ্টা করছে, ততবার ভয়ংকর, দাঁতালো, কদাকার একটা হনুমানের চেহারা মনের জানালায় উকি দিচ্ছে। এই যখন অবস্থা তখন মনের জানালা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় রইলো না ।

ইতিমধ্যে চায়ের ফ্লাক্সের চা শেষ হয়ে এসেছে । মোমের বাতি নিভু নিভু করছে । হতাশ হয়ে নিখিলেশ ভাবে , মুকুন্দ দাদার কাছে বুঝি আর ইজ্জত থাকবে না ।

হবে না রে নিখিলেশ। তোকে দিয়ে আর যাই হোক পদ্য রচনা হবে না । নিখিলেশ আপন মনেই হাক ছেড়ে উঠে ।

ঠিক সে সময় খুক খুক করে পরপর দু'বার কারো কাশির শব্দ শোনা যায়।

চমকে উঠে শব্দের উৎস লক্ষ্য করে পেছনে ঘুরে তাকায় । কিন্তু কিছুই দেখতে পায় না । কেউ নেই । থাকলে তো দেখবে । ঘরের চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে যখন বুঝলে কেউ নেই তখন বিরবির করে আপন মনেই বলে উঠলো - পদ্য, পদ্য করতে করতে মাথাটা বোধ হয় গেছে ।

থুক থুক করে বুকের ভেতর কয়েক বার থুতু ছিটিয়ে মালতীকে নিয়ে সদ্য লেখা লাইন দু'টো আওরাতে লাগলো -

"মালতী ভগবতী, সরস্বতী বিদ্যাবতী
মত্তের দেবী আমার প্রাণ প্রিয় দুর্গেশনন্দিনী ....."

ঠিক তখনি আবার পেছন থেকে কেউ খুক খুক করে কেশে উঠলো । না , এবার আর ভুল হবার কথা না ।
চমকে উঠে পেছন ফিরে নিখিলেশ বলে উঠলো, কে , কে .........?

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পেছন থেকে উত্তর এলো , আমি ভানু সিংহ ।

নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না । কণ্ঠস্বর অনুসরন করে পেছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না । এবার সে সত্য সত্য ভয় পেয়ে গেলো ।

কাউকে দেখা যাচ্ছে না , অথচ কেউ কথা বলছে ! নিশ্চিত হবার জন্য এবার সে আবার বলে উঠল, ভানু সিংহ, সে আবার কে ?

আমি ভানু সিংহ ঠাকুর । ভয় পেও না । এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তোমার কাব্যচর্চা দেখে ঢুকে পরেছি । তবে এখন বুঝতে পারছি কাজটা ঠিক হয়নি । ঘরে ঢুকার আগে তোমার অনুমতি নেওয়া উচিত ছিলো ।

যাচ্ছিলাম .... যাচ্ছিলাম মানে কি ? কোথায় যাচ্ছিলেন , কেন যাচ্ছিলেন ? দরজা তো বন্ধ ঘরে ঢুকলেন কিভাবে ? ঢুকলেন ঢুকলেন আপনাকে দেখা যাচ্ছে না কেন ? হায় ঈশ্বর , আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি ? চেয়ারের হাতল ধরে সে নিজেকে সামলে নিলো ।

ছি, এমন কথা বলতে হয় না । তুমি পাগল হওনি আবার স্বপ্ন ও দেখছো না । যা শুনছো, যা দেখছো তার সবটুকুই বাস্তব । অন্ধকার থেকে ভানু সিংহ ঠাকুর ঝনঝনে কণ্ঠে বলে উঠলেন ।

বাস্তব হলে , আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন ? কোন মন্ত্র বলে নিজেকে ঘায়েব করে রেখেছেন ?

কোন মন্ত্রটন্ত না । দেখা দিচ্ছি না , তাই দেখতে পাচ্ছো না । আলোটা নিভিয়ে দাও তাহলেই দেখতে পাবে ।
আলো নেভালে তো অন্ধকার হয়ে যাবে। অন্ধকারে দেখবো কি করে ?
পারবে , পারবে , আমাদের অন্ধকারেই ভালো দেখা যায় ।
দেখুন মশাই আমার কিন্তু ভয় করছে । ঝেরে কাশুন তো আপনি কে ?

বললাম তো আমার নাম ভানু সিংহ ঠাকুর । ভয় পেও না । তোমার কোন ক্ষতি করবো না । এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, তোমাকে কাব্য চর্চা করতে দেখে জানালা খোলা পেয়ে ঢুকে পরেছি .....দাও তো দেখি কি নিয়ে লিখছো তুমি ?

নিখিলেশ বলল, কেন? আমার লেখা আপনাকে দেখাতে যাবো কেন ?

আরে , দেখাও, দেখাও । আমাকে দেখালে তোমার লেখার কোন ক্ষতি হবে না । আমি খুব ভালো ব্যাকরণ জানি । ভুল হলে ঠিকঠাক করে দিবো ।

এরপর নিখিলেশ কি বলবে সেটা সে বুঝতে পারছে না । কাউকে দেখা না গেলেও ঘরের ভেতর যে কেউ একজন উপস্থিত আছে সেটা এখন পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে । ব্যাপারটা মস্তিষ্ক বিকৃতি ছাড়া আর কিছুই না। সে নিশ্চয় পাগল হয়ে যাচ্ছে । কালই বোধ হয় পাড়ার ঝুনু পাগলের মতো সেও কাপড় চোপর ছাড়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে । এক মুর্হুতে চোখের সামনে নিজের ভবিষ্যত দেখে ভয়ে আঁতকে উঠলো নিখিলেশ । মনে মনে ভাবলো কোন কুক্ষণে যে কাব্য চর্চা শুরু করেছিলো ।

কৈই দেখালে না তো কি নিয়ে লিখছো ? আমার বাপু অনেক কাজ । একবার গেলে আর আসতে পারবো না । দাও ,দাও তাড়াতাড়ি দাও দেখি তোমার লেখাটা একবার পরীক্ষা করে দেখি ।

নিখিলেশের দিতে হলো না । তার কাছে মনে হলো হালকা গরম একটা হাওয়া ওর গা ঘেঁষে টেবিলের সামনে এগিয়ে গেলো । তারপর অদৃশ্য কেউ টেবিলের উপর থেকে লেখার খাতাটা তুলে ধরে পড়তে লাগলো ...........

"মালতী ভগবতী, সরস্বতী বিদ্যাবতী
মত্তের দেবী আমার প্রাণ প্রিয় দুর্গেশনন্দিনী ....."
লাইন দুটি বার দুয়েক পড়ে ভানু সিংহ বলল, প্রেম, প্রেম পর্ব নিয়ে লিখছো । বাহ! বেশ , বেশ। তারপর উপদেশ দেবার ভঙ্গিতে অদৃশ্য ভানু সিংহ আবৃতি করলেন,

"ভালো ভালো / জগতের সবই ভালো ,
প্রেমহীন তার সবই কালো .................."

বাহ! আপনি ও কাব্য চর্চা করেন নাকি ? নিখিলেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো ।
নিখিলেশের প্রশ্নে ভানু সিংহ মনে হয় কিছুটা লজ্জা পেলেন । কিছুক্ষণ চুপ থেকে হুশ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভানু সিংহ বললেন, একদিন আমিও টুকটাক কাব্য চর্চা করতাম । লিখতে বসলে নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতাম। জল, স্থলে, অন্তরীপ চলতো কাব্যচর্চা । শুধুই কাব্যচর্চা । তুমি হয়তো আবার লেখা পড়ে থাকবে ?

তাই নাকি ? তা কোন , কোন লেখাটার কথা বলছেন যদি একটু বলতেন ?
কোন লেখাটার কথা বলবো এই মুর্হুতে তো তা মনে করতে পারছি না । আমি যে জগতে আছি , সে জগতে আবার সব কিছু মনে থাকে না ।
সে জগত ? সে আবার কি ?
নিখিলেশের প্রশ্ন শুনে ভানু সিংহ হেসে ফিসফিস করে বললেন, সে জগত মানে হচ্ছে, মৃত্যুর পরের জগত । তুমি দেখি কিছুই বুঝো না ।
দেখুন মশাই আপনাকে আবার বলছি, আমাকে কিন্তু ভয় দেখাবেন না ।
বলেছিনা ভয় পেও না ? তারপরেও কেন মেয়েদের মতো প্যানপ্যান করছো হে ?
ভানু সিংহ খেকিয়ে উঠে বললেন । নিখিলেশ এবার ভয়ে একেবারে সিঁটিয়ে গেলো ।

পরিবেশ পুরোপরি নিজের অনুকূলে বুঝতে পেরে , ভানু সিংহ এবার নরম কণ্ঠে বলতে লাগলেন । আমি যেগতে আছি সেখানে গদ্য বলো, পদ্য বলো কিছুই চলে না । খাও দাও, ঘুরো ফিরো এই হচ্ছে সেখানকার রোজকার জীবন। বেঁচে বর্তে থাকতে কাব্য চর্চার ফাকে ফুকে মাঝেমাঝে টুকটাক তন্ত্র মন্ত্র চর্চা করতাম তাই এখন একটু ঘুরে বেড়াতে পারছি । সে সুযোগটা কাজে লাগিয়ে একটু আধটু সিনেমা, থিয়েটারে ঢু মেরে বেড়াই । মাঝে মাঝে একটু শান্তি নিকেতনে যাই । আজ তোমার ঘরে ঢুকে পরলাম । এ টুকু বলে একটু দম নিয়ে ভানু সিংহ আবার বললেন, এককালে আমার বিস্তর লেখা ছাপা হতো হে ছোকড়া । লেখালেখির জন্য বিলেত থেকে পুরস্কার ও পেয়েছিলাম মেলা ।

অন্য কেউ হলে এমন পরিস্থিতিতে একেবারে চিৎপটাং হয়ে যেত । কিন্তু বিচিত্র কারণে নিখিলেশ এখন আর ভয় পাচ্ছে না । হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো । সে ভাবলো লোকটা যেই হোক না কেন । পদ্য লেখায় তার কাছ থেকে একটু আধটু হেল্প নিলে মন্দ কি ? যেমন ভাবা তেমন কাজ । নিখিলেশ এবার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনুনয়ের সুরে বলল, "দেখুন ভানু সিংহ বাবু , আপনি কে সেটা আমি জানি না, জানতেও চাই না । তবে আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, লেখালেখিতে আপনার যথেষ্ট হাত রয়েছে । এককালে হয়তো খ্যাতিও পেয়েছিলেন বেশ ।

আগামী পুজোর সংখ্যার জন্য আমি একটা লেখা লিখতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু মাথায় কিছুই আসছে না । দু'লাইন লেখার পরে কিছুতেই আর এগুতে পারছি না । অথচ আগামী কালই লেখা জমা দিতে হবে । আপনি যদি একটু হেল্প করতেন ।

ভানু সিংহ বাবু এবার হো হো করে হেসে বললেন , হেল্প ! কাব্য চর্চায় হেল্প বলে তো কিছু নেই বৎস । মৎস্য ধরতে চাইলে জলে তো তোমাকে নামতেই হবে ।
দেখুন মশাই, মৎস্য নয়। আমি কাব্য মানে পদ্য, মানে কবিতার কথা বলছি । ওই যে আপনি বললেন না, একসময় আপনিও কাব্য চর্চা করতেন । তাই একটু আপনার হেল্প চাইলাম আর কি ।

ভানু সিংহ বাবু এবার কিছু একটু গম্ভীর হয়ে বললেন, ঠিক আছে, এতো করে যখন বলছো , এককাজ করো আমি বলছি তুমি লিখো ।
নিখিলেশ মাথা নেড়ে সায় দিতেই ভানু সিংহ বাবু মিহি গলায় বলে গেলেন -

"তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার–
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।"

এ পর্যন্ত বলে ভানু সিংহ বললেন, পড়ে দেখ তো একবার কেমন হয়েছে ?
লেখা শেষ করে বার দু'য়েক পড়ে নিখিলেশ ঘুরে তাকালো পেছনের দিকে । যেখান থেকে এতক্ষণ কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছিলো সেদিকে। বন্ধ দরজার সামনে তাকিয়ে মনে হলো, সেখানো কালো অন্ধকার জমাট বেঁধে একটা দীর্ঘাকার অবয়বের সৃষ্টি করেছে । শুধু তাই নয় অবয়বটা হাসি হাসি মুখে করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ভালো করে দেখার জন্য নিখিলেশ টেবিল থেকে মোমটা তুলে পেছন ঘুরে দাড়াতেই ভানু সিংহ বলে উঠলেন, আহা ! করো কি ? করো কি ? বাতি , আলো এসব আমরা একদম সহ্য করতে পারি না ।

নিখিলেশ বাতিটা টেবিলের উপর রেখে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি আসলে কে বলুন তো ? তারপর একটু ভেবে নিয়ে বলল , লেখার ধরণটা ক্যামন পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছে । দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবয়বটা কোন উত্তর দিলো না । জানালা দিয়ে চাদের আলো এসে ঢুকছে ঘরের ভেতর । সেই সাথে মিষ্টি একটা গন্ধ ছড়িয়ে পরেছে ঘরময় ।
"ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে / আমারে কার কথা সে যায় শুনিয়ে .... " নিখিলেশের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ভানু সিংহ বাবু গুন গুন করে গানটি গাইতে গাইতে জানালা দিয়ে বের হয়ে গেলেন ।

পরের সপ্তায় নিখিলেশের নয় ভানু সিংহ ঠাকুরের মস্ত বড় বড় তিনটে কবিতা ছাপা হলো "ভোরের কুসুম" দৈনিকের পুজো সংখ্যায় । পাড়ার লোক নিরাশ হলেও নিখিলেশ কিন্তু একেবারেই নিরাশ হলো না । কেননা সে ইতিমধ্যে ভানু সিংহ ঠাকুরের পরিচয় জেনে ফেলেছে। দু'জনার মধ্যে বন্ধুত্বও জমে উঠেছে বেশ । ভুতে মানবে এমন প্রেম জগৎসংসারে দেখেনি আগে কেউ। রাত্রি নেমে এলে প্রায়শ:ই ভানু সিংহ বাবু চলে আসেন নিখিলেশের কাছে । ভরা পূর্ণিমা কিংবা অমাবস্যায় দু'জন বসে বাদাম খেতে খেতে চুটিয়ে আড্ডা মারেন আর তারই ফাকে ফাকে চলে কাব্য চর্চা।

কি মশাই, আপনি চেনেন তো ভানু সিংহ ঠাকুরকে ?

শেষ ।
বাবন

৩১.০৭.২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২৩ রাত ৯:১৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×